তনুরাগ I কোনটা রেখে কোনটা কিনি!
পরিষ্কারক দ্রব্য। পার্থক্য উপাদানে এবং মূলমন্ত্রে। ত্বকের চাহিদা বুঝে সিদ্ধান্তে হতে পারে সমাধান
সাবান। চেনা শব্দ, চেনা প্রসাধন। তেল-সাবানে ত্বকের যত্নের চল বহু আগের। সময়ের বিবর্তনে বেশ পাল্টেছে এই ক্লিনজিং প্রোডাক্ট লাইন। রকমারি বার সোপের পাশাপাশি শেলফ জুড়ে বডি ওয়াশও অবস্থান করে। কেনার সময় কোনটা বেছে নেওয়া হবে, এই সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে তাই দ্বিধায় ভোগেন অনেকে।
বার সোপ হোক অথবা বডি ওয়াশ—দুই-ই ক্লিনিং এজেন্ট। ধুলো, বালি, ঘাম, ময়লা—সবকিছু নিমেষে পরিষ্কারে এগুলোর সার্থকতা। সারাংশে মিল থাকলেও বাকি প্রায় সবকিছুতেই অমিল। প্রণয়ন এবং তৈরির প্রক্রিয়া ভিন্ন, তা বলা বাহুল্য। বার সোপের জন্ম ২৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। আর বডি ওয়াশের ১৭৮০ সালে। বয়সের দিক থেকে বার সোপই জ্যেষ্ঠ। তাই তার কথাই আগে আসে।
বার সোপ
বার সোপ তৈরির খটমট রাসায়নিক সূত্রে কাজ করে কস্টিক প্রক্রিয়া। সেখানে উপস্থিত থাকে তেল, মোমসহ আরও অনেক উপাদান। পানি একদমই ব্যবহার করা হয় না। এ কারণে সাবানে ব্যাকটেরিয়ার অবস্থানের ঝুঁকি কম। ভুলভাবে পানির সংস্পর্শে রাখা হলেই শুধু জীবাণুর আক্রমণ হতে পারে। তাই প্রিজারভেটিভ ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। ঘাম ও ময়লা শরীরের প্রাকৃতিক তেলের সঙ্গে মিশে ত্বকে জমতে শুরু করলে তাতে জীবাণুর জন্ম হতে পারে। বার সাবান এই তৈলাক্ত স্তরকে ভেঙে ত্বক পরিষ্কার করে।
বার সোপের প্যাকেজিংয়ের জন্য কাগজের প্যাকেট ব্যবহার করা হয়। প্লাস্টিক প্যাকেজিং আবশ্যক না মোটেই। কারণ, বার সোপ পানি ছাড়া অন্য কোনো কিছুর সংস্পর্শে অল্পতেই গুণমান হারায় না। অর্থাৎ বার সোপের মোড়কের বাজার তুলনামূলকভাবে পরিবেশবান্ধব বলা যেতে পারে।
বার সোপ ব্যবহার করে গোসল সারলে শরীরে অবশিষ্টাংশ থেকে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আবার বার সোপে পিএইচের মাত্রা উচ্চ হয়ে থাকে; যা ত্বকের জন্য ভালো নয়। পিএইচের স্কেলে এই সংখ্যা ৯ থেকে ১০ এর মধ্যে। তাই সাবান ব্যবহারে কারও কারও ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে; বিশেষ করে যাদের ত্বক সংবেদনশীল। কিছু কোম্পানি এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছে। কিন্তু মূল প্রক্রিয়ায় সাবানের পিএইচের মান কমানো সম্ভব হয়নি। তাই এখন উৎপাদন-সংশ্লিষ্টরা সাবান তৈরিতে তেল ও ময়শ্চারাইজার ব্যবহার বাড়িয়েছেন বলে বাজার সূত্রে জানা যায়।
বডি ওয়াশ
বডি ওয়াশ প্রস্তুতে পানি অন্যতম উপাদান। এ ছাড়া অন্য যা কিছু ব্যবহৃত হয়, তা ত্বকের জন্য কোমল। ত্বকের শুষ্কতা, ফ্লেকিং—সবই বডি ওয়াশ দিয়ে সমাধান করা যেতে পারে। এগুলোতে সাধারণত এমন উপাদান থাকে, যা ত্বকের আর্দ্রতা পুনরুদ্ধার করে। ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত করে না। অনেক সময়ে প্রসাধন ব্যবহারের কারণে ত্বকে প্রাকৃতিকভাবে উপস্থিত তেল কমে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। এতে ত্বক শুষ্ক হয়। সমস্যাটি সমাধানে প্রস্তুতকারীরা উপাদান বেছে নেওয়ার সময়ে এ বিষয়ে সচেতন থাকেন বলে জানা যায়। বেশ কিছু ব্র্যান্ড এমন সব উপাদান বেছে নেয়, যাতে ত্বকের প্রাকৃতিক অবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। অর্থাৎ ন্যাচারাল স্কিন অয়েল লেভেল যেন ঠিক থাকে। প্রাকৃতিক তেল ধরে রেখে ত্বক পরিষ্কারের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে দেখা যায় ইমোলিয়েন্ট ও সিরামাইড। এই প্রসাধনের ফর্মুলায় পিএইচের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ রয়েছে; যা ত্বকের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে বডি ওয়াশ এগিয়ে আছে। কারণ, এর প্যাকেজিং। টিউব অথবা বোতলে করে বাজারে আসে বডি ওয়াশ। তৈরিতে পানি ব্যবহার করা হয় বলে পানির সংস্পর্শে জীবাণু আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে। বিক্রিয়ার ফলে পণ্যমান নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকায় এতে প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয়।
বডি ওয়াশ প্যাকেজিংয়ে ব্যবহৃত প্লাস্টিক পরিবেশের ক্ষতির জন্য দায়ী। পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহার করা হলেও এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কারণ, তাতে ধরণি থেকে এই ক্ষতিকর উপাদানের পরিমাণ কমবে না।
বুঝে বাছাই
ত্বকের ধরন মেনে সিদ্ধান্ত নেওয়াই সঠিক হবে। সাধারণ ত্বকের জন্য প্রসাধন নির্বাচনে যতটুকু গুরুত্ব দিতে হয়, সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রে তা আরও বেশি হয়ে থাকে। এমন স্কিন ক্যাটাগরির জন্য সাবান বেছে নেওয়া যেতে পারে। তাতে অ্যালার্জির শঙ্কা কমে। এর রহস্য লুকিয়ে আছে সাবান তৈরির উপাদানে। সাবানে এমন কোনো উপাদান ব্যবহার করা হয় না, যাতে ত্বকে অস্বস্তি তৈরি হয়। আবার শুষ্ক ত্বকের জন্য লিকুইড সোপ বেশ কার্যকরী। কারণ, এতে ত্বকে উপস্থিত প্রাকৃতিক তেল ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। একজিমা কিংবা ব্রণের উপস্থিতি থাকলে বডি ওয়াশ ব্যবহারের পরামর্শ পাওয়া যায় বিশেষজ্ঞদের কাছে। আবার দেহের ত্বক থেকে মৃতকোষ তুলে নেওয়ার জন্য উপযোগী এমন বডি ওয়াশও রয়েছে।
বার সাবান নাকি বডি ওয়াশ—এই প্রশ্নের ইতি টানতে হলে বলতে হবে, দুটির কোনোটাকেই খারাপ কিংবা ভালোর ট্যাগ দেওয়া যাচ্ছে না। ত্বকের ধরন বুঝে দুই প্রসাধনই প্রয়োজনীয়। তবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সাবধান থাকা জরুরি। সহজ কিছু সতর্কতা প্রসাধন ব্যবহারে ক্ষতির ঝুঁকি কমিয়ে আনে। এ জন্য ত্বকের ধরন জানা থাকা চাই। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। বার কেনা হোক কিংবা বডি ওয়াশ—পণ্যের লেবেল পড়ে জেনে নিতে হবে কী কী উপাদানের উপস্থিতি আছে। তাহলে ত্বক থাকবে যত্নে।
বিউটি ডেস্ক
মডেল: মারিয়াম
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: নাইমুল ইসলাম