skip to Main Content

টেকসহি I সত্যিই সাসটেইনেবল?

এই বিতর্ক তো বহু বছরের। তবে উচ্চমাত্রার কার্বন ফুটপ্রিন্টের দায় আর প্রাণীর প্রতি অসদয় আচরণের অভিযোগ নিয়ে টেকসই ফ্যাশন এলিমেন্ট হিসেবে বিবেচিত হওয়ার বাসনা কত দিন ধোপে টিকবে—দেখার বিষয়

সমর্থকেরাও কম যান না। চামড়া ব্যবহারকারী ব্র্যান্ড আর লেদার কোম্পানিগুলোর নতুন সওয়াল সম্প্রতি আবার আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তাদের মত অনুযায়ী মাংসশিল্পের প্রাকৃতিক উপজাত চামড়া। এর যথাযোগ্য ব্যবহার না করা কি অপচয়ের শামিল নয়? কিন্তু পরিবেশবাদীরা তা মানতে নারাজ। ভেগান অ্যাডভোকেসি গ্রুপ কালেকটিভ ফ্যাশন জাস্টিসের (সিএফজে) রিসার্চ এবং ডেটা-সংবলিত বিশেষ উদ্যোগ সার্কামফনায় প্রকাশিত তথ্য তো আরও বিস্ময়কর। গবেষণাপত্রটি অনুযায়ী, গরুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত না করে তা যদি স্বাভাবিক উপায়ে পচে যেতে দেওয়া হয়, এতেও পরিবেশ তুলনামূলকভাবে কম দূষিত হয়। ল্যান্ডফিলে ডিকম্পোজিংয়ের সময় প্রতি মিটার গরুর চামড়া থেকে ৯৪ কেজি কার্বন ডাই-অক্সাইড সমপরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়। ঠিক একই পরিমাণ চামড়া যখন প্রক্রিয়াজাত করা হয় পণ্য উৎপাদনের জন্য, তখন নির্গত গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১১০ কেজি কার্বন ডাই-অক্সাইড সমপরিমাণ। তাই পরবর্তী সময়ে চামড়া ব্যবহারের চেয়ে প্রাকৃতিকভাবে পচে যেতে দেওয়া বেশি পরিবেশবান্ধব বিকল্প। অবশ্য এতে একটা ব্যাপার পস্ট। চামড়া ল্যান্ডফিলে পচানোর জন্য পাঠানো হলে তা থেকেও কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি হয়, পরিমাণটা শুধু সামান্য কম।
তবে এ ব্যাপার নিয়ে পাল্টা মত রয়েছে চামড়া-অনুরাগীদের। অনেক চামড়া ব্যবসায়ীর মত, এই গবেষণাপত্রের দাবিগুলো অযৌক্তিক ও হাস্যকর। যেকোনো ধরনের কাঁচামালেরই কার্বন ফুটপ্রিন্ট না বাড়িয়ে তা থেকে অন্য কোনো পণ্য উৎপাদন মোটামুটি অসম্ভব। সার্কামফনা অনুসারে তাহলে ব্যাপারটা এমন দাঁড়ায়, কোনো উপাদান প্রক্রিয়াজাতকরণের ফলে নির্গত কার্বন যদি তা প্রাকৃতিকভাবে পচনের কারণে নিঃসৃত কার্বনের তুলনায় বেশি হয়, তা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। যৌক্তিকভাবে দেখতে গেলে এতে করে তাহলে প্রায় সবকিছুর প্রক্রিয়াজাতকরণই বাধাগ্রস্ত হবে। সহজ উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা বোঝানো যায়। একটা আপেলও সুপারমার্কেট অব্দি যদি পৌঁছাতে হয়, সে ক্ষেত্রে যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়, নিঃসন্দেহে তা প্রাকৃতিকভাবে পচতে দেওয়ার সময় নিঃসৃত গ্যাসের চেয়ে অনেক বেশি। তাহলে কি সবার আপেল খাওয়া ছেড়ে দেওয়া উচিত? এ ছাড়া সার্কামফনার তথ্যের সত্যতা আর হিসাব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
বিশেষজ্ঞদের মত, এই বিতর্কের পেছনের সবচেয়ে বড় কারণ তথ্য সংগ্রহের উৎস, যা পরিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান আর চামড়া ব্যবসায়ীরা নিজেদের সুবিধার্থে ব্যবহার করেন। সার্কামফনার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ইউনেসকোর কাছে থাকা গরু-সম্পর্কিত তথ্য ব্যবহারে বেশি স্বচ্ছন্দ। অন্যদিকে লেদার ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত গ্রুপগুলো তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয় দেশের কৃষি বিভাগে সংরক্ষিত উপাত্তে। বিতর্কের ক্ষেত্রে পস্ট প্রভাবক দুই পক্ষের ভিন্ন মতাদর্শ আর ব্যবসায়িক স্বার্থও।
বিজ্ঞানীদের নিয়মিত রিপোর্টগুলোতেও চামড়া-অনুরাগীদের জন্য তেমন কোনো সুখবর নেই। জলবায়ুর সংকটে অ্যানিমেল ফার্মিংয়ের প্রভাব উল্লেখযোগ্য। পৃথিবীতে নিঃসরিত মোট নাইট্রাস অক্সাইড আর মিথেন গ্যাসের অর্ধেকের উৎস এই খাত। দ্রুত উষ্ণায়নের ক্ষেত্রে এ দুটোই কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। এ ছাড়া জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, পানিদূষণ এবং অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার মতো সমস্যাগুলোর মাত্রা বাড়িয়ে দিতে দায়ী। লেদার প্রোডাক্টের ওয়াটার ফুটপ্রিন্টও একদম পরিবেশবান্ধব নয়। চামড়ায় তৈরি একটা হ্যান্ডব্যাগ উৎপাদনে যে পরিমাণ পানি খরচ হয়, তা দিয়ে একজন মানুষের ২৩ বছরের স্বাভাবিক পানির চাহিদা পূরণ সম্ভব। একটি লেদার বুট তৈরিতে পানি খরচ হয় ১২ হাজার ৩৭০ লিটার। আর জুতা বানাতে প্রয়োজন পড়ে ৭ হাজার ৬১২ লিটার।
তাই তো বিজ্ঞানীদের আহ্বান ফ্যাশন চর্চায় চামড়া ব্যবহার বাতিলের। পরিবেশগত এবং নৈতিক কারণে ক্রেতাদের মধ্যেও বাড়ছে সচেতনতা। অন্তত বিশেষ একটা গোষ্ঠীর মধ্যে। ফলে ভেগান লেদারের খোঁজ বেড়েছে ৬৯ শতাংশ অব্দি। একইভাবে সার্চ ইঞ্জিনে চামড়ার সন্ধানের হার কমেছে শতকরা ৩ দশমিক ৫ পর্যন্ত। ভেগান ফ্যাশনের গুরুত্ব বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এ নিয়ে উত্তেজনাটাই বেশি, সমর্থনযোগ্য তথ্য কমজোর। ফলাফল—বছর গড়াচ্ছে, বাড়ছে বিতর্ক। ফ্যাশনে চামড়ার ব্যবহারও থেমেছে কই! লেদার গুডস, বিশেষ করে হ্যান্ডব্যাগ আর জুতা বনে গেছে অভিজাত ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ। বিগেস্ট অ্যান্ড হাইয়েস্ট মারজিন ক্যাটাগরি। তবে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিও ওয়াকিবহাল আছে চামড়ার কার্বন ফুটপ্রিন্ট সম্পর্কে।

অ্যানিমেল ফার্মিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত এ সেক্টরের ট্যানিং প্রসেসে ক্ষতিকর কেমিক্যালের ব্যবহার পরিবেশ তো বটেই, কর্মীদের জন্যও ক্ষতিকর। সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, চামড়ার সবচেয়ে ভেগান বিকল্পও পেট্রোলিয়াম-বেসড। ব্যাপারটা তাহলে আর পরিবেশবান্ধব রইল কই? তাই চামড়াপ্রেমীদের মত, মাংস উৎপাদনের সময় উপজাত এই উপাদান অপচয় না করে বরং প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে ব্যবহারই হবে বুদ্ধিমানের। তার ওপর অনেক দিন টেকে এতে তৈরি পণ্য। বায়োডিগ্রেডেবলও। সে ক্ষেত্রে ‘বাই লেস, বাই বেটার’ এ নীতিও জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে।

 ফ্যাশন ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top