skip to Main Content

বিশেষ ফিচার I আ টাইমলেস ক্রাফট

প্রক্রিয়ার সুনিপুণ কারিগরির এমনই জাদু! প্রাণহীন চামড়াখণ্ড পরিণত হচ্ছে মাস্টারপিসে। আর এ থেকে তৈরি পণ্য মাতাচ্ছে গোটা ফ্যাশন বিশ্ব

সহস্র বছর ধরে চলে আসা রীতি। বলা হয়ে থাকে, প্রাচীন মিসরে জুতা ও বর্মের প্রথম নকশা খোদাই করার কাজ শুরু হয় চামড়ায়। এরপর মধ্যযুগে ব্যাগ ও বেল্টে কারুকার্য করা হতো এই প্রক্রিয়ায়। ধীরে ধীরে চামড়ায় খোদাই কাজ কারুকার্য ছাপিয়ে ব্যক্তিসত্তায় আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসা এক ঐতিহ্য; যা চামড়ায় তৈরি পণ্যের সৌন্দর্য তো বাড়ায়ই, সঙ্গে করে তোলে অনন্য। শুরুতে শুধু ব্যক্তিগত ছাপ রাখার জন্য করা হলেও বর্তমানে লেদার এমবসিং বা এনগ্রেভিং করা হয় পণ্যে বাড়তি টেক্সচার দিতে। আভিজাত্য যোগে।
লেদার এমবসিং ও এনগ্রেভিং
লেদার এমবসিংয়ে একটি থ্রিডি প্যাটার্নের স্ট্যাম্প, রোলার বা ছাঁচ দিয়ে চামড়ার ওপর চাপ প্রয়োগ করে নকশা তৈরি করা হয়। লেদার এনগ্রেভিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। এ ক্ষেত্রে নকশা আগে থেকে তৈরি করা থাকে। সেটি লেদারের ওপর বসিয়ে যেকোনো হ্যান্ড টুল, ছুরি অথবা লেজার মেশিনে কেটে কেটে লেদারকে একটা নির্দিষ্ট আকার বা ডিজাইন দেওয়া হয়।
কীভাবে করা হয়
লেদার এমবসিংয়ে সাধারণত লেদারের ওপর পছন্দসই কোনো প্যাটার্ন নকশা করা হয়। অতীতে কারিগরেরা চামড়ার ওপর আগে থেকে তৈরি করা ফর্মা বসিয়ে হাতে কেটে সারতেন পুরো প্রক্রিয়া। কিন্তু ধীরে ধীরে এই প্রথা বদলে দিয়েছে ডিজাইনের আধুনিকীকরণ। এখন স্ট্যাম্পিং, রোলিং, তাপ বা চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে লেদার এমবসিং করা হয়। এ ছাড়া পার্মানেন্ট ছাপ ফেলার জন্য চামড়ায় খোদাই করে নকশা করা হয়।
দুটো পদ্ধতিই চামড়ার ওপর বিভিন্ন ডিজাইন তৈরির কাজে ব্যবহার করা হলেও লেদার এমবসিং আর এনগ্রেভিংয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। এমবসিংয়ে লেদারে করা নকশা চোখে দেখা যায়, হাতে অনুভব করা যায়। এনগ্রেভিং নকশা কেটে লেদারে ভিন্নতা আনা হয়। নকশাটাও একটু জটিল হয়।
ডিজাইন বেছে নেওয়া
এমবসিং হোক বা এনগ্রেভিং—যেকোনো পদ্ধতিতে ডিজাইন করার আগে খেয়াল রাখতে হবে লেদারের কোয়ালিটি ও বৈশিষ্ট্যের ওপর। চাপ প্রয়োগ করে নকশার ছাপ ফেলা হয় বলে এমবসিংয়ের ক্ষেত্রে মোটা চামড়া বেছে নেওয়াই শ্রেয়। এনগ্রেভিংয়ের প্রক্রিয়া একটু জটিল, তাই লেদারকেও অপেক্ষাকৃত মজবুত হতে হয়। সে ক্ষেত্রে চামড়া মোটা বা পাতলা—উভয়ই হতে পারে। সেটা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কী ধরনের পণ্য তৈরি হবে, তা মাথায় রাখলেই চলবে।
কারিগরের কারিগরি
শুধু দক্ষতা নয়, এমবসিং ও এনগ্রেভিং—দুটো নকশার জন্যই প্রয়োজন ধৈর্য, নির্ভুলতা, স্থিরতা এবং আই ফর ডিটেইলিং। তবে যিনি এমবসিংয়ে দক্ষ হবেন, তিনিই যে আবার এনগ্রেভিংয়ে দক্ষ হবেন, তা কিন্তু নয়। বছরের পর বছরের অভিজ্ঞতা এবং লেদার নিয়ে যথাযথ জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমেই একজন কারিগর লেদারকে অলংকৃত করার কারিগরি দেখাতে পারেন।
কারুকার্যে আধুনিকতার ছোঁয়া
ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতেও সমানভাবে জায়গা করে নিয়েছে এই শিল্প। আধুনিক কনজিউমাররা সবখানে চান নিজস্ব ছাপ, আর তা-ই নিশ্চিত করছে এই দুই মাধ্যম। ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে ক্লদিং আর অ্যাকসেসরিজ সেক্টরে প্যাটার্ন, টেক্সচার ও স্টাইলে ভিন্নতা আনতে ডিজাইনাররা পাল্লা দিয়ে কাজ করছেন এমবসিং ও এনগ্রেভিং নিয়ে। হ্যান্ডব্যাগ, মানিব্যাগ, বেল্ট, জুতা ইত্যাদি ফ্যাশন অ্যাকসেসরিজে নতুনত্ব আনছে ভিন্ন ধরনের এই শিল্প। ঘড়ির স্ট্র্যাপের সূক্ষ্ম সব ডিজাইন কিংবা লেদার জ্যাকেটে স্পেশাল টাচ জুড়ে দেয় লেদার এনগ্রেভিং আর এমবসিং।
সেলিব্রিটি থেকে শুরু করে পলিটিশিয়ানরা তাদের স্বকীয়তার ছাপ তুলে ধরতে কিংবা কোনো ব্র্যান্ডের নিজস্বতাকে আরও হাইলাইট করে তুলতে ব্যবহার শুরু করেছেন কাস্টমাইজড লেদার এমবস বা এনগ্রেভ করা প্রোডাক্ট। ওয়ালেট, ব্যাগ, ঘড়ির বেল্ট বা লেদারের ফোন কেইস—অনেক ইনফ্লুয়েন্সারই তাদের ব্যক্তিত্বের ছাপ রাখতে নামের আদ্যাক্ষর এমবস বা এনগ্রেভ করাচ্ছেন পছন্দের প্রোডাক্টে নিজস্ব ফ্যাশন স্টেটমেন্ট তৈরিতে।
সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে লেদার প্রোডাক্টের এ রকম অভিনব ব্যবহার চুপিসারেই যেন মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে। ভক্তরা তাদের প্রিয় মানুষের ব্র্যান্ড বা প্রোডাক্টকে সহজে গ্রহণ করে নিচ্ছেন, কোনো দ্বিধা ছাড়াই।
চাই বাড়তি যত্ন
 খেয়াল রাখতে হবে, অতিরিক্ত তাপ বা ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গা—দুটোই লেদারের শত্রু। তাই পছন্দের পণ্যটি রাখতে হবে শুষ্ক জায়গায়। পানি বা ভেজা কাপড়ের সংস্পর্শ এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। কারণ, এতে মূল্যবান প্রোডাক্টটি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ফাঙ্গাস পড়ে ক্ষতি হতে পারে এর ডিজাইনেরও।
 সাধারণত বাইরের ধুলা পরিষ্কারের জন্য নরম কাপড় বা ব্রাশ ব্যবহার করলে সহজেই চামড়া পরিষ্কার হয়ে যায়। পরিষ্কারের সময় ভেজা কাপড় দিয়ে ঘষাঘষি করা যাবে না কোনোভাবেই।
 ময়লা, দাগ বা ধুলা পরিষ্কারের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে লেদার প্রোটেক্টিং কন্ডিশনারও।

 বিদিশা শরাফ
মডেল: সিয়াম ও মৃদুলা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: র নেশন
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top