skip to Main Content

ফরহিম I স্পর্শকাতরতাই সংকেত

‘কী আর হবে, পুরুষ মানুষই তো!’—এ বলে আর পার পাবার উপায় নেই! পণ্য তো বটেই, রূপচর্চার প্রক্রিয়াও হতে হবে ত্বকের জন্য কোমল

নতুন কোনো পণ্য ব্যবহারের পরপরই ত্বকে জ্বালাপোড়া, চুলকানি, লালচে ভাব আর অস্বস্তি বাড়ছে? উত্তরটা যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, তবে জেনে রাখা ভালো, এর সব কটিই ত্বকের স্পর্শকাতর হওয়ার নির্দেশক। এ থেকে পরিত্রাণের উপায়? কঠিন কিছু নয়।
ব্যাক টু বেসিক
পুরুষেরা সাধারণত প্রতিদিনকার স্কিন কেয়ার রুটিনে গোড়াতেই গোলমাল বাধিয়ে ফেলেন! স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য ক্লিনজার ও ময়শ্চারাইজার—এই দুই-ই সই। প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য একটা মাইল্ড ক্লিনজার বেছে নেওয়া যেতে পারে। ধুলোবালি জমতে দেওয়া যাবে না কোনোভাবেই; কারণ, এতে বাম্প অথবা অ্যাকনে সৃষ্টি হতে পারে। মাইল্ড ক্লিনজারের ক্ষেত্রে কোনো সুবাসিত ক্লিনজার ব্যবহার না করাই ভালো। অনেক ক্ষেত্রে কেমিক্যাল সমৃদ্ধ ক্লিনজার ব্যবহারেও ত্বকে র‌্যাশ দেখা দেয়। এ রকম অবস্থার সম্মুখীন হলে ঘরে তৈরি ন্যাচারাল ক্লিনজার ব্যবহার করা যেতে পারে। চালের গুঁড়া বা বেসন পরিমাণমতো পানিতে মিশিয়ে ত্বকে অ্যাপ্লাই করা যেতে পারে। কিছুক্ষণ রেখে ক্লকওয়াইজ সার্কেলে মাসাজ করে ধুয়ে নিলেই চলবে।
এবার আসা যাক ময়শ্চারাইজারে। যারা সারাক্ষণ এসির নিচে কাজ করেন, অথবা কাজের জন্য সারা দিন রোদে ঘোরাঘুরি করতে হয়, তাদের জন্য ত্বকের স্বাভাবিক ময়শ্চার ধরে রাখা দারুণ চ্যালেঞ্জের। আর তাই ময়শ্চারাইজার ব্যবহারে গড়িমসি করা যাবে না কোনোভাবে। এ ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া যায় হালকা ও কোমল কোনো ময়শ্চারাইজার, যা সহজে ত্বকের সঙ্গে মানিয়ে যায়। ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট মাস্ট।
দেয়াল হোক সুরক্ষার
এ ক্ষেত্রে মোক্ষম হাতিয়ার হতে পারে সানস্ক্রিন। ত্বককে তারুণ্যোজ্জ্বল রাখতে, দাগছোপের ঝামেলা এড়াতে সানস্ক্রিনের সঙ্গে কোনো আপোস করা চলবে না কোনোভাবেই। তবে অনেক সানস্ক্রিন বা সানক্রিম একটু ভারী হওয়ায় ত্বকের ওপর একটা আলাদা লেয়ার তৈরি করে ফেলে, যা স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য মোটেই উপযোগী নয়। এ ক্ষেত্রে অস্বস্তি এড়াতে সানমিল্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। খানিকটা লাইটওয়েট হওয়ায় ত্বকের সঙ্গে খুব সহজে মানিয়ে যায় এটি। পুরুষ ত্বক পুরু বলে রিঅ্যাপ্লাই করার সময় একটু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। সানস্ক্রিন বা সানমিল্ক ব্যবহারে যাদের ত্বক ঘেমে যায়, তারা সঙ্গে রাখতে পারেন ওয়েট টিস্যু। এটি ত্বকের বাড়তি ঘাম শুষে নিয়ে ত্বক আরও প্রাণবন্ত রাখে।
এড়াতে হবে যা কিছু
ত্বকে যদি খুব সহজে অস্বস্তি দেখা দেয়, তবে সাবধানতা একটু বেশিই জরুরি। দৈনন্দিন যে সামগ্রী ব্যবহার করা হয়, সেগুলো যেন কেমিক্যাল ফ্রি হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা চাই। সাধারণত সুগন্ধিসমৃদ্ধ প্রোডাক্ট ব্যবহারে ত্বক আরও সংবেদনশীল হয়ে পড়তে পারে, তাই এগুলো পরিহার করাই শ্রেয়। এ ছাড়া অ্যালকোহলযুক্ত প্রোডাক্ট ত্বকে ইরিটেশন তৈরি করতে পারে। পুরুষদের ত্বকের এপিডার্মিস অর্থাৎ ত্বকের উপরিভাগ যতই পুরু হোক না কেন, অ্যালকোহল বেসড প্রোডাক্ট ব্যবহারে অনেকের ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ ছাড়া সোডিয়াম লরেট সালফেটসমৃদ্ধ প্রসাধনীগুলো ত্বকের উপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত করে। প্রয়োজনীয় স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট বাছাই করার সময় এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখা যেতে পারে।
অস্বস্তি উদ্রেককারী শনাক্তে
সেনসিটিভ ত্বক যে শুধু প্রসাধনীতেই ভালো থাকবে, এমনটা কিন্তু নয়। যাদের ত্বক জেনেটিক্যালি সেনসিটিভ, তাদের কিসে অস্বস্তি হয়, তা বের করার কাজটা জরুরি। এসির ঠান্ডা বাতাস, বাইরের রোদ, এই গরম এই ঠান্ডা আবহাওয়া, ধুলোবালি, এমনকি শুধু ঘাম থেকেও সেনসিটিভ স্কিনে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হতে পারে। এ জন্য নিজের ত্বক সম্পর্কে জানা জরুরি।
হুজুগে নয়, ত্বকের যত্ব নেওয়া চাই বুঝে-শুনে। যে স্কিন কেয়ার রুটিন একজনের জন্য কাজ করছে, সেটি অন্যের জন্য উপযোগী না-ও হতে পারে। আবার নারী-পুরুষ সেনসিটিভ স্কিনের ধরন ভিন্ন হওয়ায় নারীদের প্রোডাক্টগুলো এড়িয়ে যাওয়াই মঙ্গল।
স্ক্রাবিংয়ে সাবধান
সেনসিটিভ ত্বকে অতিরিক্ত ঘষাঘষি মানেই ত্বকের অবস্থা নাজেহাল। নিয়মিত শেভিং না হলে আবার মৃত ত্বককোষ জমে মলিনতা বাড়তে পারে। এ থেকে বাঁচতে অনেকের পছন্দ স্ক্রাবিং। তবে নিয়ম মেনে না করলে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হয়ে যেতে পারে। ত্বক সংবেদনশীল হওয়ায়, স্ক্রাবিংয়ে ত্বকে পিম্পল দেখা দিতে পারে। সপ্তাহে দুই দিনের বেশি স্ক্রাব করলে ত্বকে বলিরেখাও দেখা দিতে পারে। এই সমস্যার সমাধানে বেছে নেওয়া যেতে পারে কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর। নিয়ম মেনে ব্যবহার করলে ত্বকের মরা কোষ, ব্ল্যাকহেডস-হোয়াইটহেডস থেকে খুব সহজে মুক্তি মেলে।
এত কিছুর পরেও যদি ত্বকটা সুস্থ না থাকে? তাহলে পরিবর্তন আনা চাই খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামরীতিতেও। ইয়োগাও কিন্তু ত্বকের হারানো জেল্লা ফিরিয়ে দিতে সক্ষম। জীবনযাত্রার ছোট ছোট পরিবর্তন ত্বকে আনতে পারে বড় ধরনের বদল।

 বিদিশা শরাফ
মডেল: সিয়াম
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top