ফিচার I মনসুন মাস্ক
রসদের খোঁজ আর বাইরে কেন! চোখ থাকুক রান্নাঘরে। বর্ষার মরশুমে বদলে যাক রূপ রুটিন। ত্বক আর চুল—দুয়েরই
বঙ্গে বর্ষা—সে তো অনিবার্য। সঙ্গে ত্বকে ব্রণ, অ্যালার্জির সমস্যার বাড়তি উৎপাত; বাড়ে সেই আশঙ্কাও। নিস্তেজ, প্রাণহীন দেখায়। কখনো ঝমঝমে, কখনো টিপ টিপ—বৃষ্টিতে যখন বাইরে বেরোবারও জো নেই, সমাধানের খোঁজ চলুক হাতের কাছে। রান্নাঘর অব্দি পৌঁছালেই মিলবে নানা উপায়।
নিষ্প্রাণে উজ্জ্বলতা যোগ
একটি আলু নিয়ে অর্ধেক করে কেটে নেওয়া চাই। সেই অর্ধেকটুকু মুখে আর গলায় এমনভাবে ঘষে নিতে হবে, যেন রস ভালো করে লেগে যায় ত্বকে। চোখের নিচের অংশও বাদ দেওয়া যাবে না। পাঁচ মিনিট এই রস মাখিয়ে রাখা চাই মুখে। তারপর একটি পাকা পেঁপে থেকে পরিমাণমতো টুকরা কেটে নিতে হবে। টুকরাগুলো ব্লেন্ড করে নিতে হবে পরিমাণমতো দইয়ের সঙ্গে। সঙ্গে মেশানো চাই এক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল। এই মাস্ক মুখে ও গলায় ভালো করে মাখিয়ে নিতে হবে। মিনিট পনেরো পরে ধুয়ে নেওয়া চাই। আলুতে থাকা ক্যাটেকোলেস নামক এনজাইম ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সহায়ক। সঙ্গে দাগছোপ দূরেও দারুণ। পেঁপের পেপেইন এনজাইমে থাকে আলফা-হাইড্রোক্সি অ্যাসিড, যা কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশনের মাধ্যমে কোষের পুনরুৎপাদন নিশ্চিত করে। আর ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েলের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রোপার্টি রুখে দেয় ব্রণ।
তেলে টি জোন সারাতে
বর্ষায় ত্বকের এমন সমস্যা সারাতে চাই মুলতানি মাটি। যার সঙ্গে অ্যালোভেরা মিশিয়ে ঘন স্ক্রাব তৈরি করে নেওয়া যায়। তারপর এই মিশ্রণ সমানভাবে মুখে মাখিয়ে রাখতে হবে। পনেরো মিনিট পর ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে মুখ। মুলতানি মাটির তেল শুষে নেওয়ার ক্ষমতা থাকায় তেলতেলে ব্রণযুক্ত ত্বকের জন্য এটি খুব উপকারী। এ ছাড়া শুকিয়ে যাওয়ার পর ত্বকে এর টাইটেনিং ইফেক্ট ত্বকের মাইক্রোসার্কুলেশনকে আরও ত্বরান্বিত করে। ত্বকের ক্যাপিলারিসগুলোর মাধ্যমে উদ্দীপ্ত করে তোলে অক্সিজেনের চলাচল।
প্রয়োজন উপশম
কমলার খোসা ত্বকের জন্য নানাভাবে উপকারী। ব্রণের ফলে ত্বকের লালচে ক্ষত কিংবা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মিতে পুড়ে যাওয়া ত্বক—সব সারাতেই দুর্দান্ত। প্যাক তৈরির জন্য এ ক্ষেত্রে কমলার খোসা নিয়ে গুঁড়া করে নিতে হবে মিহি হওয়া অব্দি। তারপর এর সঙ্গে মেশাতে হবে পরিমাণমতো গোলাপজল। এটি কাজ করবে ত্বকের লালচে ভাব আর বিবর্ণতা দূরে। চুলকানি আর অস্বস্তির সমস্যা থাকলে কাটবে তা-ও।
ব্রণে মুশকিল আসান
এ যেন সারাক্ষণের যুদ্ধ। পান থেকে চুন খসলেই ত্বকে ব্রণের ইতিউতি উঁকি। জ্বালাপোড়া, ব্যথা, লালচে ভাব। এ থেকে বাঁচতে এই মনসুন মাস্ক কাজ করবে জাদুর মতো। ফ্রিজে থাকা দুধ, সঙ্গে মিশিয়ে নেওয়া চাই পরিমাণমতো হলুদবাটা। মেখে নিতে হবে চেহারায়। দুধে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিডে আছে আলফা হাইড্রোক্সির গুণাগুণ; যা মৃত ত্বককোষ সারাবে, আটকে থাকা লোমকূপের মুখ খুলে দেবে। হলুদে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রোপার্টি সারাবে ব্রণের ব্যাকটেরিয়া। ফলে ক্রমেই কমে আসবে সৃষ্ট সংক্রমণ আর ফোলা ভাব।
হিট র্যাশ রুখতে
রাইস ওয়াটার আর শসার রসের সঙ্গে পরিমাণমতো দই মিশিয়ে নিয়ে তা ত্বকে মাখলেই মিলবে মুক্তি। রাইস ওয়াটারের ফেরুলিক অ্যাসিড আর অ্যালেনটয়েন ত্বককে দেবে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি আর অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের উপকারিতা। অন্যদিকে শসার রসে সারবে ত্বকের ফোলা ভাব। ভারসাম্য রক্ষায়ও দারুণ এর ভিটামিন সি আর ফলিক অ্যাসিড।
এই চটচটে তো এই নেতিয়ে পড়া, আবার হঠাৎ উষ্কখুষ্ক—বর্ষায় চুলের হুটহাট রূপবদল খুবই স্বাভাবিক। আর্দ্রতার অদলবদল আর দূষণের দাপটটাই এ ক্ষেত্রে মূল কারণ। বাঁচতে করণীয়—
চিপচিপে স্ক্যাল্পের জন্য
গরমা গরম গ্রিন টিতে কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল আর কয়েকটি পুদিনাপাতা ছেড়ে দিতে হবে। মিশ্রণটি ঠান্ডা করে নিয়ে কটন প্যাড দিয়ে আস্তে আস্তে অ্যাপ্লাই করে নিতে হবে মাথার ত্বকে। মিনিট বিশেক পর ভালো করে ধুয়ে নেওয়া চাই। গ্রিন টি স্ক্যাল্পের তেল নিঃসরণের হার কমাবে। টি ট্রি অয়েলও তা-ই। পুদিনাপাতার অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ আর স্যালিসাইলিক অ্যাসিডের মতো বৈশিষ্ট্য স্ক্যাল্পের তেলে ভাব কমিয়ে লোমকূপের পুষ্টি গভীরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য মুখ খুলে দেবে।
ফ্লেকিনেস সারাই
অ্যাপল সিডার ভিনেগারের সঙ্গে পরিমাণমতো পানি আর কয়েক ফোঁটা লেমনগ্রাস এসেনশিয়াল মিশিয়ে নিতে হবে। আরও দিয়ে দিতে হবে পরিমাণমতো দানাদার চিনি। অ্যাপল সিডার ভিনেগার স্ক্যাল্পের পিএইচের ভারসাম্য রক্ষা করবে। লেমনগ্রাস অয়েলের অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ সারাবে জীবাণুসংক্রান্ত সমস্যা। আর চিনির দানা কাজ করবে ন্যাচারাল স্ক্যাল্প স্ক্রাব হিসেবে, যা নতুন কোষ তৈরিতে সহায়তা করবে।
আবার ফ্রিজি ভাব
পানিভর্তি একটি বোলে চাল ভিজিয়ে রাখতে হবে রাতভর। পরদিন সকালে এতে অ্যালো জেল ঢেলে ভালো করে মিশিয়ে নেওয়া চাই। পুরে নিতে হবে স্প্রে বোতলে। পুরো চুলে এ মিশ্রণ স্প্রে করে নিয়ে বিশ মিনিট রেখে দিতে হবে। তারপর ধুয়ে নিতে হবে ভালো করে। চালের দানায় থাকা স্টার্চ কনটেন্ট অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আর মিনারেলে পরিপূর্ণ। এ ছাড়া এই স্টার্চ চুলে পাতলা পরত তৈরি করে দেয়, ফলে ঘন অনুভূত হয় চুল।
অনুজ্জ্বলে উপায়
বেকিং সোডা, দই আর ডিমের সাদা অংশ—এই তিন দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে মসৃণ মিশ্রণ। গোড়া থেকে ডগা অব্দি ভালো করে মাখিয়ে শাওয়ার ক্যাপ পরে নেওয়া চাই মাথায়। আধঘণ্টা অপেক্ষার পর চুল ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। দইয়ে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড স্ক্যাল্পে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করবে; দেবে পরিষ্কার উজ্জ্বল চুল। বেকিং সোডা এক্সফোলিয়েটর হিসেবে চমৎকার। ডিম প্রোটিনের উৎস হলেও এর সাদা অংশের এনজাইম বিল্ডআপ দূর করে; চটচটে আঠালো ভাব পরিষ্কার করে দেয়।
ভঙ্গুরতা বাড়লে
এ ক্ষেত্রে ডিমের কুসুমের কাজ জাদুকরি। এতে চুল মজবুতকারী, সালফার ছাড়াও মিলবে প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার লেসিথিন। শুষ্ক, নেতিয়ে পড়া চুল সারাতে যার জুড়ি নেই। ব্যবহারের জন্য একটি ডিমের কুসুম নিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে এতে মেশাতে হবে আমন্ড অয়েল। মিশ্রণটি গোড়া থেকে ডগা অব্দি ভালো করে মাখিয়ে মাথায় শাওয়ার ক্যাপ পরে নিতে হবে। ১৫-২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিলেই চলবে। এ ক্ষেত্রে আমন্ড অয়েল কাজ করবে এমোলিয়েন্ট হিসেবে। আর ডিমের কুসুমের হাই প্রোটিন কনটেন্ট সারাবে ড্যামেজ।
বিউটি ডেস্ক
মডেল: মৃদুলা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল