ত্বকতত্ত্ব I চিবুক থেকে নিশ্চিহ্নে
হরমোনের তারতম্যে সৃষ্ট। তাই রাতারাতি বদল—সে আশার গুড়ে বালি। রূপ রুটিন থেকে জীবনযাপন, নিয়মের আওতায় নিয়ে এলেই মিলবে সুফল
অস্বস্তি আর ব্যথা, এরপর আবার ফেলে যাওয়া দাগ—সব মিলিয়ে বিরক্তিকর এক ত্বকের সমস্যা অ্যাকনে। সাধারণত গাল, কপাল, নাকের ডগায় ব্রণ দেখা গেলেও চিবুকে অ্যাকনে যেন একটু বাড়তি অস্বস্তির সৃষ্টি করে। সারতেও সময় নেয় বেশি।
চিবুকেই কেন
সাধারণত স্ট্রেস, হরমোনাল ইমব্যালেন্স, এলোমেলো লাইফস্টাইলের কারণে যে কারোরই চিবুকে ব্রণ হতে পারে। এর সঙ্গে ত্বক থেকে যখন অতিরিক্ত তেল বেরোতে শুরু করে, তার সঙ্গে ঘাম আর ময়লা মিশ্রিত হয়ে লোমকূপ বন্ধ হয়ে গেলে, তখন চিন অ্যাকনের উৎপাত বেড়ে যায়।
শুধু তা-ই নয়, অনেকের অভ্যাস হাতে চিবুক ঠেকিয়ে রাখার। হোক তা হোমওয়ার্ক সারার সময় কিংবা অফিস করা অথবা চিন্তার রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে—হাতে লেগে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলো সংক্রমিত করে চিনকে। ফলাফল, অ্যাকনে! ময়লা বা আধোয়া বালিশের কভার থেকে মোবাইল ফোনের স্ক্রিন—ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে সংক্রমিত করতে পারে চিনকে। চিন অ্যাকনে যেন মনে করিয়ে দেয়, এখন সময় হয়েছে ফোনটাকে একটু স্যানিটাইজ করার, পিলো কভারটাকে এবার ড্রাই ওয়াশে দেওয়ার!
অনেক নারীই হরমোনজনিত সমস্যায় ভোগেন। ত্বকের টি জোনে সিবাম সিক্রেশন বেশি হওয়ায় চিন অ্যাকনে নিয়ে ভুগতেও হয় বেশি।
অন্যান্য অ্যাকনের তুলনায় চিন অ্যাকনে ত্বকের গভীরে হয় বলে ব্যথাও একটু বেশি। এর থেকে মুক্তি মিলতেও লেগে যায় সপ্তাহখানেক। আর অ্যাকনে স্পট যেন সারতেই চায় না।
চিন অ্যাকনে আসলে হরমোনাল অ্যাকনে হলেও এটি যে শুধু বয়ঃসন্ধিকালে দেখা দেয়, তা নয়। হরমোনাল ইমব্যালেন্স বা লাইফস্টাইলের তারতম্যের কারণে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে যেকোনো বয়সেই।
ভয়ের নয়তো?
কোনো ব্রণই আসলে ভয়ের কিছু নয়, যদি সময় থাকতে এর প্রতিকার করা যায়। চিন অ্যাকনের প্রধান কারণ হরমোনাল ইমব্যালেন্স। এ ছাড়া ব্রণপ্রবণ ত্বকে এর উপদ্রব লেগেই থাকে। যাদের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেশি থাকে, তারাই বেশির ভাগ সময় চিন অ্যাকনেতে ভুগে থাকেন। এ ছাড়া ঘর্মগ্রন্থি বেশি থাকলে বা অয়েলি স্কিনে চিন অ্যাকনে দেখা দেয় একটু বেশি।
সারাই সমীকরণ
অনেক সময় চিন অ্যাকনে বা ব্রণ নিজেই মিলিয়ে যায়। তবে ডার্মাটোলজিস্টদের মতে, বাড়তি দেখভাল প্রয়োজন এ ক্ষেত্রে। ব্রণ-পরবর্তী প্রদাহ বন্ধ করতে বা ব্রণের দাগ থেকে মুক্তি পেতে একজন ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া যায়। এ ছাড়া সংক্রমিত জায়গাটা খুঁটলে অনেকের থুতনিজুড়ে ব্রণ ছড়িয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, যেন ইনফেকশন বা অ্যালার্জি দেখা না দেয়।
মিলবে মুক্তি
হরমোনের কারণে চিন অ্যাকনে হচ্ছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করে নিতে ডার্মাটোলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া যেতে পারে। অনেক সময় ওরাল মেডিকেশনেই চিন অ্যাকনে সারিয়ে ফেলা সম্ভব। তবে এতেও খুব একটা কাজ না হলে বাসায় বসেই সহজ সব উপায়ে মিলবে চিন অ্যাকনের সমাধান!
বিশেষ স্কিন কেয়ার রুটিন তৈরির মাধ্যমে রুখে দেওয়া যেতে পারে চিন অ্যাকনে। নিয়ম মেনে ক্লিনজার, ময়শ্চারাইজার ও সানস্ক্রিন ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সহজেই সেটা সম্ভব। যাদের সানস্ক্রিন রিঅ্যাপ্লাই করতে সমস্যা হয়, তাদের জন্য সমাধান সান পাউডার।
যাদের থুতনিতে ঘাম বা তেল জমে লোমকূপ সহজে ভরাট হয়ে যায়, তাদের জন্য কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি লোমকূপে ময়লা জমা প্রতিরোধ করে ত্বক কোমল রাখে। অ্যাকনেও প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।
যাদের ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত, বেনজয়েল পার-অক্সাইড তাদের জন্য সেরা উপাদান। ডার্মাটোলজিস্টদের মতে, এটি ভেতর থেকে ত্বক পরিষ্কার করে বলে ত্বকে অতিরিক্ত ব্যাকটেরিয়া জমতে পারে না। শুধু থুতনিতেই নয়, রুখে দিতে পারে যেকোনো ধরনের অ্যাকনে। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে ময়শ্চারাইজার ব্যবহারে। বেনজয়েল পার-অক্সাইড ত্বক শুষ্ক করে দিতে পারে, তাই ভারী ময়শ্চারাইজার ব্যবহার জরুরি।
সৌন্দর্যবিশ্বে এখন রেটিনয়েডের জয়জয়কার। এটি যেমন ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে, তেমনি ভেতর থেকে প্রাণবন্ত করে তোলে। কিছুটা সময়সাপেক্ষ হলেও, যারা চিন অ্যাকনের সমস্যায় অতিষ্ঠ, তাদের জন্য এই উপাদানের ব্যবহার একটা লং টাইম ইনভেস্টমেন্ট হতেই পারে।
বিদিশা শরাফ
মডেল: শ্রাবণী
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল