ফিচার I বর্ষাস্নাত
শুধু নীলই কি বৃষ্টির রং? নাকি খামখেয়ালি এ মৌসুমে পোশাকে প্রাণের সঞ্চারে কালার প্যালেটেও লেগেছে বদলের ছোঁয়া?
কালার প্যালেট ফ্যাশন ডিজাইনারদের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রং নির্বাচন করতে কালার স্কিম নির্ধারণ প্রয়োজন পড়ে। তিন থেকে ছয়টি রঙের সমন্বয়ে তৈরি হয় এক একটি নির্দিষ্ট সংকলন।
বাজারবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান জিওন মার্কেট রিসার্চের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে বিশ্বে রেইনওয়্যার মার্কেটের আকার ছিল ২ হাজার ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি বছর থেকে ২০৩২ সালের মধ্যে এই বাজার বাড়বে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ বাজারের কলেবর বাড়ছে নিয়মিত।
রেইনওয়্যারসহ যেকোনো পোশাকের ক্ষেত্রেই রং রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বর্ষাকালের পোশাক বলতে রেইনকোট, রেইন পাফার ইত্যাদি প্রাধান্য পায়। তবে এ সময়ে রেগুলার ওয়্যার নিয়েও কাজ হয়। উভয় ক্ষেত্রেই রং বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
এ বিষয়ে ফ্যাশন ডিজাইনারদের মত পাওয়া যায় ফাইবার টু ফ্যাশনের ওয়েবসাইটে। তাদের মতে, ইন্ডিগোর উজ্জ্বল শেড আর সবুজ বর্ষার পোশাকের জন্য উপযুক্ত। এ ছাড়া এই ঋতুর জন্য তাদের ফেবারিট কালার প্যালেটে আছে পার্পল, লেমন ইয়েলো ও সাদা। এর বাইরে ফুশিয়া পিংকের লাইট শেড আর গোলাপির মায়াময় দ্যুতি, কমলা, পিচ। কালো, বাদামিও আছে এই তালিকায়।
বর্ষায় প্রকৃতি বড় বেশি আনকোরা। মেঘ-গুড়গুড় আকাশ যখন হয়, তখনকার ঝিমিয়ে থাকা চারপাশের রং যেন তমসাচ্ছন্ন। কী এক ঘোর অমানিশার আশঙ্কায় থম ধরে থাকে সবকিছু! এরপরে যখন বৃষ্টি নামে, প্রকৃতি ধ্যানমগ্ন হয়। জল নিমগ্ন। বৃষ্টি শেষে আসে অস্ফুট আলো। সবকিছু সিক্ততায় লজ্জাবনত। আবার যখন রোদ আসে ধীর পায়ে, চারদিক তখন উৎফুল্ল। সবুজ তখন আরও সবুজ। নীল তখন আরও নীল। দীর্ঘ সময়ের বর্ষা মনকে বিষণ্ন আর স্মৃতিকাতর করতে পারে। কারণ, বৃষ্টি ছন্দময় এবং একটানা বর্ষণ জীবনকে খানিকটা স্থবির করে তোলে। এসব সময়ে নস্টালজিয়ায় মন হারানো সহজ। তারই সূত্র খোঁজা হয় বিষণ্ন মনের সঙ্গে। সেখান থেকেই কালার প্যালেটে নীল, ধূসর আর সবুজের প্রাধান্য খুঁজে পান ডিজাইনাররা।
পুরো সময়টার সঙ্গে বিষাদের যোগাযোগ নিগূঢ় বলেই মত ফ্যাশনবোদ্ধাদের। অন্তর্জালে ভূরি ভূরি উদাহরণ পাওয়া যায় এ নিয়ে। এই স্ফূর্তি-শূন্যতা পুষিয়ে দিতে কালার প্যালেটের উজ্জ্বল রঙের পোশাকে নিজেকে সাজানোর পরামর্শের সংখ্যাই বেশি। আবার সলিড ও প্রিন্ট—দুই ক্ষেত্রেই এই মতামত। লালের বিভিন্ন শেড ব্যবহারের বিষয়ে জানা যায়। যেমন চেরি, ফ্রেশ রেড, ব্লাশ, টিল। পপ টোন হিসেবে থাকতে পারে ধূসর, বাদামি। আবার বর্ষাকে বিষণ্ন সময় না ভেবে রঙের দুনিয়ায় হারিয়ে যাওয়ার পরামর্শও আছে। সেখানে ফুশিয়া, হলুদ ও ট্রপিক্যাল গ্রিন ব্যবহারের পরামর্শ। যেগুলো প্রকৃতির উপাদানে উপস্থিত। হলুদ ও ফুশিয়া দেখা যায় ফুলের রঙে আর সবুজের সমারোহ বৃষ্টি শেষের মিষ্টি রোদে।
রং নিয়ে কাজ করে এমন ওয়েবসাইটের মধ্যে অন্যতম স্কিম কালার। সেখানে পাওয়া তথ্যমতে মনসুন কালার প্যালেটে থাকছে মোট ছয়টি রং। নীল থেকে সবুজ ছুঁয়ে গেছে এই ছয় বর্ণ।
প্যাস্টেল ব্লু
ক্যাডেট গ্রে
স্টেল টিল
পুলিশ ব্লু
ডিপ অ্যাকুয়ামেরিন
ডার্ক সি গ্রিন
নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইক ফল/উইন্টার ২০২৪-২৫ এর রানওয়েতে ফ্যাশন ডিজাইনাররা বৃষ্টির সময়কার ফ্যাশনের জন্য ১০টি রংকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করেছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—
রয়্যাল ইন্ডিগো
বারগেন্ডি রেড পিচ
রেডিশ অরেঞ্জ
পিচ ব্ল্যাক
নেভি অন নেভি
ব্রোঞ্জ
প্যাস্টেল মেটালিক
ওয়ার্ম আর্দি কালার।
বাংলাদেশের ফ্যাশন বাজার মূলত উৎসবকেন্দ্রিক। তবে ডিজাইনার ব্র্যান্ডগুলোতে ঋতুকে কেন্দ্র করে কাজ হচ্ছে বহু আগে থেকে। বর্ষাকে উপলক্ষ করে বিশেষ সংকলন নিয়ে আসতে দেখা যায় দেশীয় ঘরানার ফ্যাশন প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এ বিষয়ে বাংলাদেশি ফ্যাশন ব্র্যান্ড কে ক্রাফটের ম্যানেজিং পার্টনার এবং মাল্টিব্র্যান্ড দেশীদশের কো-ফাউন্ডার খালিদ মাহমুদ খান ক্যানভাসকে বলেন, ‘প্রধানত নীল রঙের বিভিন্ন শেড নিয়ে বর্ষা ঋতু উপলক্ষে কাজ করা হয়। এর সঙ্গে সাদা এবং বেইজও ব্যবহার করা হয়। আর সমসাময়িক পছন্দের রং ব্যবহার করা হয় রঙের সংমিশ্রণ দৃশ্যমান করতে।’
সারাহ্ দীনা
মডেল: ইলিয়াস ও নিধি
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: তান
ছবি: নাইমুল ইসলাম