skip to Main Content

ফিচার I মনসুনিং মান্ত্রা

পুরুষ ফ্যাশনিস্তাদের পোশাকে বর্ষা বাদ সাধবে, সে সাধ্যি আছে নাকি! শুধু সামান্য সচেতনতা আর স্টাইলিংয়ের পরিষ্কার ধারণা চাই ফুলপ্রুফ মনসুন লুকের জন্য; ব্যস

বৃষ্টিতে পরা হবে না ভেবে যে সাদা শার্ট আলমারির এক কোণে তুলে রাখা হয়েছিল, সেটিই হয়ে উঠতে পারে এবারের বর্ষা ক্যানভাস। বর্ষায় সাদা রং? কোথাও ভুল হচ্ছে মনে হতেই পারে। তবে ফ্যাব্রিক নির্বাচন যদি সঠিক হয়, হয় বর্ষার উপযোগী, তাহলে বর্ষাতেও অনায়াসে সাদা পরে নেওয়া যায়। এমনকি পরা যায় এথনিক স্টাইলের পোশাকও। বর্ষার আসলে নির্দিষ্ট কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সাদা কিংবা যেকোনো পছন্দসই রং নিয়ে এ সময় খেলা যেতে পারে। সঙ্গে যোগ হোক মজার সব অনুষঙ্গ। মনসুন স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরিতে।
হালকা টেক্সটাইল
বর্ষা মৌসুমে উপযুক্ত টেক্সটাইল নির্বাচন করাই মূলত প্রথম কাজ। এমন কিছু বেছে নিতে হবে, যেন ভিজে গেলেও সমস্যা না হয়। শরীর দৃশ্যমান হবে না, খুব আঁটসাঁটও নয়; বরং সহজে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া যায়—পরা চাই এমন পোশাক। ফ্যাব্রিক হওয়া চাই হালকা, যা ত্বকে লেগে না থাকে বা দ্রুত শুকিয়ে যায়। যেমন সুতি, লিনেন বা কিছু বিশেষ স্যাটিন জাতীয়। এ ফ্যাব্রিকগুলোর প্রতিটাই বৃষ্টির দিনে আরাম ও স্টাইল—কোনোটার সঙ্গে আপোস করে না। পাশাপাশি যে কাপড়গুলোতে সাধারণত বৃষ্টির পানির দাগ পড়ার ভয় থাকে না, সেগুলোও থাকতে পারে পছন্দের তালিকায়। পরা যাবে শার্ট, কুর্তা, ফতুয়া, শেরওয়ানি। ফ্যাব্রিক সঠিকভাবে বেছে নিতে পারলে বর্ষাতেও অনায়াসে গায়ে চাপানো যাবে ক্যাজুয়াল থেকে এথনিক—সব ধরনের পোশাক।
রঙে প্রাণজাগানিয়া
বর্ষা যেহেতু ঘন ঘন রং পাল্টায়, ফ্যাশনেও কিন্তু তার আবহ থাকা চাই। কখনো মেঘ, কখনো বৃষ্টি আবার কখনো শুষ্ক চিড়বিড়ে রোদ—এ সবকিছু মাথায় রেখে পোশাকের রং ম্যাচিংটাও হওয়া চাই তেমন। তবে ফ্যাশন বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষা গাঢ় রং নিয়ে খেলার ঋতু। ফ্যাব্রিক হালকা হলে কী হবে, রং যেন হালকা না হয়। এ সময় নিরপেক্ষ টোন না মেনে রাজকীয় নীল, পান্না সবুজ, সরিষা হলুদ এবং আগুন লালের মতো রংগুলো বেছে নেওয়া যেতে পারে। কারণ, এই রংগুলো লুককে কেবল প্রাণবন্ত করেই তুলবে না; বরং বর্ষার ভেজা ভেজা ম্যাড়ম্যাড়ে পরিবেশে অন্য রকম উজ্জ্বলতা যোগ করবে।
জ্যাকেটে লেয়ারিং
বর্ষাকালে, অনিশ্চিত আবহাওয়ায় প্রস্তুত থাকার জন্য লেয়ারিং হবে বুদ্ধিমানের কাজ। সাদা শার্ট বা টি-শার্টের ওপর হালকা-পাতলা রেইনকোট টাইপ স্টাইলিশ জ্যাকেট জড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে। ব্যান্ড-গলা, মুজিব কোট বা এমব্রয়ডারি করা ওয়েস্ট কোটকে মনসুন ফ্যাশন বলে বিবেচনা করা হয়। এথনিক লুককে আরও পরিমার্জিত করে তোলে এবং পাশাপাশি বৃষ্টি আবহাওয়ায় সুরক্ষার একটি স্তর তৈরি করে দেয়।
পপ-আপ স্টাইল
সাদা। বর্ষার সবচেয়ে জনপ্রিয় রং। অথচ কাদা লাগার ভয়ে এ সময় বেশির ভাগ মানুষ একে এড়িয়ে চলে। কিন্তু ফ্যাশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, সাদা অবশ্যই পরা যাবে, তবে তার সঙ্গে যোগ করতে হবে রঙিন সব অনুষঙ্গ। খুব আহামরি কিছু নয়; হতে পারে একটি উজ্জ্বল রঙিন ছাতা, কালারফুল স্নিকার্স বা বেল্ট। অথবা নিদেনপক্ষে একটি রঙিন বেল্টের ঘড়ি, যা ব্যক্তিত্বে একসঙ্গে হিউমার ও তারুণ্য যোগ করবে।
বর্ষাবান্ধব পোশাক
মেল ফ্যাশনে জিনস ও ট্রাউজার সব সময় জনপ্রিয়। কিন্তু বর্ষাকালে এগুলোকে ঠিক আদর্শ হিসেবে ধরা যায় না। পরিবর্তে, সুতি বা লিনেন শর্ট, ঢিলেঢালা পায়জামা, পাতলা প্যান্ট বা অন্যান্য হালকা বিকল্প বেছে নেওয়া যেতে পারে। অপ্রত্যাশিত বৃষ্টির দিনে এই পোশাক হুটহাট বিপদে ফেলে দেবে না। বাতাস চলাচলে খুব সুবিধা হয় বলে এগুলো খুব দ্রুত শুকিয়ে যায়। সাদা চিনো বা হালকা ওজনের সুতির ট্রাউজার থাকতে পারে তালিকায়। এই কাপড়গুলো পানি শোষণ প্রতিরোধ করে এবং তুলনামূলকভাবে দ্রুত শুকিয়ে যায়।
পানিরোধী জুতা
বর্ষাকালে পা শুকনো ও নিরাপদ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাবার সোলড স্যান্ডেল, লোফার বা ক্ল্যাসিক শুগুলোর মতো পানিরোধী জুতা থাকা চাই এ মৌসুমে; যাতে বৃষ্টির পানিতে ভিজলেও হাঁটতে সমস্যা না হয়। বর্ষার জন্য স্পেশাল জুতাও আছে, যা সাধারণত পানি প্রতিরোধী কাপড়ে তৈরি। তা ছাড়া এ মৌসুমে পিচ্ছিল ও কর্দমাক্ত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে যখন-তখন। সুতরাং জুতাও হওয়া চাই তেমন। একই সঙ্গে ফ্যাশনেবল এবং রেইন প্রটেক্টেড। সহজে ধুয়ে নেওয়া যায় এমন পানি প্রতিরোধী বা রাবার সোলসহ সাদা স্নিকারগুলো হতে পারে পছন্দনীয় অপশন। রাবার সোলের চামড়ার জুতা পরে নেওয়া যায়; বিশেষ করে যেগুলোতে সহজে পিছলে পড়ার ভয় থাকে না।
আনুষঙ্গিক
বর্ষায় আনুষ্ঠানিক বা ফরমাল পোশাকেও মজাদার অনুষঙ্গ করা যেতে পারে। যেমন রঙিন পাগড়ি, নানা প্যাটার্নের স্কার্ফ বা ব্রাইট পকেট স্কয়ার। বৃষ্টি থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস রক্ষা করতে বা সেগুলো নিরাপদ ও শুষ্ক রাখতে একটি পানি প্রতিরোধী মেসেঞ্জার ব্যাগ বা ব্যাকপ্যাক বেছে নেওয়া যেতে পারে। ঘড়ির স্ট্যাপ এবং ফোন কেসগুলোও যদি এ ধরনের হয়, তাহলে অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিপাতের সময়ও গ্যাজেটগুলো সঠিকভাবে কাজ করবে। নষ্ট হওয়ার ভয় থাকবে না।

 রত্না রহিমা
মডেল: আজরাফ
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: নাইমুল ইসলাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top