skip to Main Content

সঙ্গানুষঙ্গ I জলস্পর্শেও জৌলুশদীপ্ত

বর্ষা উদ্‌যাপনে যেন বাদ না সাধে শখের অলংকার। উপাদানের উপযোগিতা যাচাই-বাছাইয়ে জরুরত এড়ানোর উপায় নেই। সেই তরিকাই বাতলাচ্ছেন সারাহ্ দীনা

অলংকার শুধু উৎসবের অনুষঙ্গ নয়, নিত্যদিনের আউটফিটের অংশ হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। জবরজংয়ের জরুরত নেই। মাত্র ছোট একটি গয়নাই সই। সেই এক রত্তিই বদলে দিতে পারে সবকিছু। জুয়েলারিকে বলা যেতে পারে গেইম চেঞ্জার। কিন্তু ঋতুবদলে বর্ষায় পা রাখলেই কি গয়না সব তুলে রাখতে হবে আলমিরাতে? রং জ্বলে যাওয়ার ভয়ে ছাড়তে হবে অলংকারের ব্যবহার?
পুরোটা বর্ষাকাল ঘরবন্দি হয়ে কাচের জানালার পাশে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে সময় কাটানো যায় শুধু কল্পনাতে। বাস্তবে সে আশার গুড়ে বালি! বৃষ্টি মাথায় নিয়েই প্রচুর দৌড়ঝাঁপে কাজ শেষ করতে হবে—এটাই বাস্তব। ঝিরিঝিরি থেকে ঝুমঝুম—কোনো অবস্থাতেই যেমন ঘরে বসে থাকার জো নেই, তেমনি সাজে গয়না বাদ দিয়ে আলুথালু হয়ে বেরিয়ে যাওয়ারও কিছু নেই। পারিপাট্য সুন্দর। পোশাক আর সাজ পূর্ণতা পায় যথাযথ অলংকার ব্যবহারে। বর্ষাকালে যেকোনো সময় বৃষ্টি নামাই স্বাভাবিক। আগাম সেই সংবাদ মিলুক আর না-ই মিলুক, প্রস্তুতি চাই সব সময়ের জন্য।
কারণ, সাধারণ অলংকার আর্দ্রতায় নাজুক হয়। সৌন্দর্য হারায়। এ কারণে বৃষ্টিতে ভিজলে উপযোগিতা নষ্ট হয়। পানিরোধী অলংকারের গুরুত্ব তাই এ সময়ে বেশি। তাতে নিজেকে যেমন মনমতো সাজানো যাবে, তেমনি প্রিয় অলংকার হেলায় হারানোর ঝুঁকিও থাকবে না।
গুণপনা
বর্ষাকালের অলংকার হতে হলে প্রথমে উতরে যেতে হবে পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ার পরীক্ষায়। ইচ্ছে করে বৃষ্টিবিলাস কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত ভিজে যাওয়া—সব ক্ষেত্রে অলংকারের অস্তিত্ব রক্ষার শক্তি জরুরি। নয়তো রং জ্বলে যাবে; জং ধরবে। মূল্য যাবে বিফলে।
কোন গয়না পরা হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বৃষ্টির সঙ্গে গয়নার উপাদানের রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। আর্দ্রতায় মরিচা তৈরি করে এমন উপকরণ এ সময়ের জন্য নয়। ধাতুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যথাযথ ধারণা থাকলে বর্ষাকালের গয়না নির্বাচন সহজ হবে। ব্র্যান্ডেড জুয়েলারির ক্ষেত্রে লেবেলের তথ্য মনোযোগের সঙ্গে পড়তে হবে। ‘রাস্ট রেসিস্ট্যান্ট’ অথবা ‘নন-কোরোসিভ’ লেখা আছে কি না দেখে নেওয়া যেতে পারে।
পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিক, রাবার, অ্যাক্রিলিক, বিডস, কাচ, স্টোন আর স্টেইনলেস স্টিল এ সময়ে উপযোগী। কারণ, জলে টিকে থাকার ক্ষমতা এদের আছে।
টিকে থাকে, ঠিক রাখে
পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিক
প্লাস্টিক পানিতে নষ্ট হয় না—এ কথা সবার জানা। ওয়াটারপ্রুফ হওয়ায় এতে তৈরি গয়না ঝড়-জলে টিকে থাকে। প্লাস্টিক ক্ষতিকর বটে, কিন্তু এই রিসাইকেলড হলে তা পরিবেশের কোনো ক্ষতিও করে না। ইতিমধ্যে ব্যবহৃত হয়েছে এমন প্লাস্টিকের বোতল বেছে নেওয়া হয় পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিক তৈরির জন্য। রং আর নকশা সৃষ্টিতে সৃজনশীলতার সুযোগ থাকে বলে বৈচিত্র্যময় জুয়েলারি পিস তৈরি করা সম্ভব হয়, তাই জনপ্রিয়তার পারদ বেশ উঁচু।
রাবার
জুয়েলারি তৈরির জন্য প্রচলিত এই প্রাকৃতিক উপাদান। তবে বর্ষাকালের গয়না গল্পে রাবারের আগমনের কারণ একটাই; তা হচ্ছে, এটি পানি শোষণ করে না। তাই এ থেকে তৈরি গয়না ব্যবহার করা যেতে পারে কোনো দুশ্চিন্তা না করেই। শুধু আকস্মিক বৃষ্টির অল্প ছাঁটে টিকে থাকা নয়, ব্যবহার শেষে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কারও করে নেওয়া যায়। তাই বর্ষাকালে রাবারের গয়না তালিকায় রাখা যেতেই পারে।
অ্যাক্রিলিক
সিনথেটিক ম্যাটেরিয়াল। পানিতে নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিহীন। আবার সুন্দর নকশাও তৈরি করা যায় সহজে। ওজনেও হালকা। টিকে থাকার ক্ষমতা দুর্দান্ত। অনেকটা কাচের মতো দেখতে হলেও আদতে এত পলকা নয়। আবহাওয়ার প্রভাবে প্রভাবিত হয় না। আর্দ্রতা ছিটেফোঁটাও ভড়কে দিতে পারে না। পরিষ্কার করা সহজ। বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেলে কোনো ক্ষতির সম্মুখীন তো হবেই না; বরং পরিষ্কার হবে।
কাচ
কাচভাঙা গয়নার গায়ে পানি আটকে থাকার সম্ভাবনা নেই। তাই জুয়েলারি প্রোডাক্ট লাইনে কাচ ব্যবহার হতে দেখা গেছে অনেক আগে থেকে। এখনো চলমান আছে সেই ধারা। পুরো গয়নাও হতে পারে, আবার গয়নার অলংকরণেও হতে পারে কাচের ব্যবহার। বৃষ্টির সময়ে একটু গর্জাস অলংকার চাইলে অনায়াসে বেছে নেওয়া যেতে পারে।
পাথর
পাথরের গয়নার অনেক রকম গুণ। জমকালো কিংবা সাধারণ—দুই ধরনের অলংকারের জন্যই যথার্থ। পানিতে ক্ষতির শঙ্কা নেই। প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ার কারণে স্পর্শে শীতলতা অনুভূত হয়।
স্টেইনলেস স্টিল
পানির সংস্পর্শে স্টেইনলেস স্টিল ক্রিয়াশীল নয়। তাই পানি এই কঠিন পদার্থ থেকে তৈরি কোনো গয়নার ক্ষতির কারণ হতে পারে না। মরচে তৈরির আশঙ্কা নেই; বরং উচ্চ মানের গয়না প্রস্তুত করার জন্য উপযোগী।
ব্রাস
ব্রাস জুয়েলারিকে যত্ব করলে দীর্ঘস্থায়ী হয়। পানির ভয় নেই। বীরদর্পে উজ্জ্বল আভার বিকিরণ ঘটায়। বর্ষায় সোনালি রং জুয়েলারিতে সাজতে চাইলে ব্রাস হতে পারে বেশ ভালো অপশন।
এ ছাড়া মনসুন জুয়েলারি হিসেবে বিডস সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। ইতিহাস বহু পুরোনো। মূলে থাকতে পারে নানান রকম উপাদান। কাচ, জেমস্টোন, কাঠ, প্লাস্টিক, ধাতু, সিরামিক, শেল, হর্ন, সিড—এগুলো রয়েছে তালিকার শীর্ষে। উজ্জ্বল রঙে রাঙানো বিডসের গয়নার একটি ডেডিকেটেড ফ্যান বেইজ বিশ্বজুড়ে আছে। যার জন্য কখনো বিডস আউট অব দ্য ফ্যাশন হয়নি। হাইপ কমছে-বেড়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। কিন্তু একদম হারিয়ে যায়নি।
কেমন গয়না পরা যাবে, সে তো জানা হয়েই গেল। শেষ বাক্যে সযতনে গয়না রাখার পরামর্শ। পানিতে ক্ষতি না হলেও ভিজে গেলে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে তবেই সংরক্ষণ করা ভালো। প্রয়োজন শেষে দূর ছাই নয়, বরং যথাযথ যত্বে প্রিয় গয়না ভালো থাকে।

মডেল: কণিকা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: নাইমুল ইসলাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top