skip to Main Content

বহুরূপী I পেয়ারার পৃথিবী

মৌসুমি ফল আম, জাম, কাঁঠাল লিচুর পরই গ্রীষ্ম শেষে কিংবা বর্ষার শুরুতে যে রসাল ও মুখরোচক ফলের দেখা মেলে, সেটি পেয়ারা। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এ ফলে রয়েছে ভিটামিন সি, ফোলেট, ক্যারোটিনয়েড, ফাইবার, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, লৌহসহ প্রচুর খনিজ উপাদান থাকায় উচ্চ রক্তচাপ থেকে শুরু করে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি থেকেও সুরক্ষা দেয়। সুমিষ্ট এই ফলের পৃথিবীব্যাপী শতাধিক জাতের উল্লেখ পাওয়া যায়। আমাদের দেশে সহজলভ্য—এমন কয়েকটি জাতের কথা জানা যাক।
 কাজী: আশির দশকে থাইল্যান্ড থেকে আনা বেশ বড় আকারের পেয়ারার জাতটি এ দেশে কাজী পেয়ারা নামে পরিচিতি পেয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিজ্ঞানী কাজী এম বদরুদ্দোজার নামে এই নামকরণ করা হলেও এর উদ্ভাবনের সঙ্গে তার সরাসরি সম্পর্ক নেই; বরং পেয়ারাটি দেশের বাজারে প্রথম যখন আসে, তখন ভালোবেসে তার অনুসারীরা এ নামকরণ করেছেন।
 স্বরূপকাঠি: পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠিতে ব্যাপক চাষ হওয়ার ফলে এমন নামকরণ। দেড় শতাধিক বছর ধরে বাংলাদেশে এর সহজলভ্যতা। কথিত আছে, জনৈক পূর্ণচন্দ্র মণ্ডল আনুমানিক ১২৫০ বঙ্গাব্দে ভারতের গয়াধাম দর্শনের পর সঙ্গে করে নিয়ে আসেন এ জাতের পেয়ারা। কিছুদিন পূর্ণমণ্ডলীয় জাত হিসেবে পরিচিত পেলেও পরবর্তীকালে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র তীর্থধাম গয়া থেকে আনা ফলটি স্থানীয়ভাবে ‘গয়া’ বা ‘গইয়া’ নামে পরিচিতি পায়।
 কাঞ্চননগর: চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চননগরের নামানুসারে এ পেয়ারার নাম। সেখানকার আঞ্চলিক ভাষায় পেয়ারাকে বলে ‘গোঁয়াছি’। চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে প্রতি মৌসুমে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বাগানে উৎপাদিত হয় ২০-৩০ কোটি টাকার পেয়ারা। এ জাতের পেয়ারা কাঞ্চননগরের গোঁয়াছি নামে সুপরিচিত।
 আঙুর: থোকায় থোকায় ধরে বলে এর নাম আঙুর পেয়ারা। অস্ট্রেলিয়ান জাতের এই বারোমাসি পেয়ারা দেখতে সুন্দর; স্বাদ হালকা টক ও মিষ্টি। ছাদবাগান উপযোগী আঙুর পেয়ারা রোগবালাই কম ও উচ্চ ফলনশীল পেয়ারার জাতগুলোর মধ্যে অন্যতম।
 থাই: ঈষৎ গোলাকার থেকে বেলুনাকৃতির; ওজনে হালকা; শাঁস পুরু ও কচকচে; অল্প বীজসংবলিত এ জাতের পেয়ারার জন্মস্থান থাইল্যান্ড। তাই এমন নামকরণ। উন্নত জাতের এ বারোমাসি পেয়ারা শীতকালে বেশি মিষ্টি এবং ওজনে ৩০০-৮০০ গ্রাম হয়ে থাকে।
 বীজহীন আপেল: মূলত থাইল্যান্ডের একটি উচ্চ ফলনশীল পেয়ারার জাত। আপেলাকৃতির এই পেয়ারার আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, এতে কোনো বিচি থাকে না। বিচিহীন আপেল পেয়ারা আকারে ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ২০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। এর ফলন বছরব্যাপী।
 এলাহাবাদী সুরখা: আপেলাকৃতির এই পেয়ারা ভারতের উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদে বেশি চাষ হওয়ায় একে এলাহাবাদী সুরখা বা এলাহাবাদ সেওয়াইয়া বলা হয়। সুরখা শব্দের অর্থ লাল। লাল ত্বকের এ পেয়ারা ভেতরে রসাল ও গাঢ় গোলাপি বর্ণের।
 রেড মালয়েশিয়ান: থাই মেরুন বা বেগুনি পেয়ারা নামেও পরিচিত। অত্যন্ত ফলপ্রসূ এ জাতের পেয়ারা এশিয়া, আফ্রিকা, মেক্সিকো এবং গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে বেশি চাষ হয়। আকর্ষণীয় এই গাছের ফুল, পাতা, ফল—সবকিছুই বেগুনি বর্ণের। সুমিষ্ট এই পেয়ারার জাতের ফলন বছরে একাধিকবার।
 সীতাকুণ্ডের লাল: সীতাকুণ্ডের লাল পেয়ারার বাইরের রং সবুজ কিংবা হলদে হলেও ভেতরের অংশ লালচে। আকর্ষণীয় রং ও স্বাদের কারণে ‘বাংলার আপেল’ নামেও খ্যাত। বর্ষা মৌসুমে সীতাকুণ্ডে উৎপাদিত অন্যতম ফল এটি। পৌর সদর চন্দ্রনাথ পাহাড় ও বাড়বকুণ্ড পাহাড়ে সর্বাধিক চাষ হয়।
 হংকং পিংক: হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের রাস্তার পাশে বন্য উদ্ভিদের মতো এ জাতের পেয়ারা দেখতে পাওয়া যায়। মূলত হংকংয়ে উদ্ভাবিত এই পেয়ারা বতর্মানে বাংলাদেশেও প্রচুর মেলে। এর ত্বক পাতলা, সবুজ থেকে হলুদ বর্ণ এবং ভেতরের অংশ রসাল, অত্যধিক বীজসমৃদ্ধ ও গোলাপি বর্ণের। আবাদের এক বছর পর এ জাতের পেয়ারাগাছ ফল দেওয়া শুরু করলেও পরবর্তীকালে সারা বছর ফল দিতে পারে।
এ ছাড়া বাংলাদেশে পেয়ারার বিভিন্ন জাতের মধ্যে মুকন্দপুরী, ইপসা পেয়ারা, বাউ পেয়ারা, বারি পেয়ারা, সৈয়দী, এল-৪৯, চেরি পেয়ারা, কাশি পেয়ারা ইত্যাদি জাত উল্লেখযোগ্য।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top