নখদর্পণ I টিকিয়ে রাখার ট্রিক
রীতিমতো গবেষণায় পাওয়া সব তথ্য। জানতে হবে কৌশল। থাকতে হবে সচেতন। একদম প্রথম থেকে শেষ অবধি
শুধু এই সেবা নিতে কেউ কেউ নিয়মিত বিউটি পারলারে হাজিরা দেন। আবার কেউ বাসাতেই সারেন নিজের মতো। যেখানেই সম্পন্ন হোক না কেন, এর স্থায়িত্ব সবার কাম্য। প্রথম ধাপ থেকেই সচেতন থাকলে দীর্ঘ সময় টিকে থাকবে জেল্লা। স্যালনে মেনিকিউর করাতে গেলে কোন ধরনটি বেছে নেওয়া হচ্ছে, তা স্থায়িত্বের ওপর অনেকটা নির্ভর করবে। সাধারণত দুটি ধরনের জনপ্রিয়তা বেশি।
ট্র্যাডিশনাল মেনিকিউর
এই মেনিকিউর সুন্দর থাকে বড়জোর এক সপ্তাহ। তারপরে ধীরে ধীরে জৌলুশ কমতে শুরু করে। টিকিয়ে রাখার জন্য নখের স্বাস্থ্য অতি গুরুত্বপূর্ণ।
রাশিয়ান মেনিকিউর
জেল পলিশ ব্যবহার করে সম্পন্ন করা হয় রাশিয়ান মেনিকিউর। কিউটিকলের গা ঘেঁষে ব্যবহার করা হয় এটি। তিন থেকে চার সপ্তাহ সুন্দরভাবে টিকে থাকে।
ডু ইট ইওরসেলফ
নেইল কেয়ার অনেকে বাসায় সেরে নিতে চান। তাদেরও উদ্দেশ্য থাকে, মেনিকিউর দীর্ঘদিন টিকে থাকুক। কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন করতে হয় নখের এই যত্ন। প্রথম থেকে শেষ—পুরোটাতেই সচেতনতা খুব দরকারি। ভালোভাবে পুরো প্রক্রিয়া বুঝে তবেই শুরু করলে সহজ হবে সারা।
নখে নেইলপলিশ থাকুক অথবা না থাকুক, নেইল রিমুভার ব্যবহার করে নিলে ভালো। তাহলে নেইল সারফেসে কোনো তেল অথবা ময়লা থাকলে সেগুলো পরিষ্কার হবে। কাঠের চিকন কিউটিকল পুশার ব্যবহার করা যেতে পারে নখের চারপাশ পরিষ্কার করার জন্য। নিজের ঘরে স্যালনের মতো মেনিকিউরের শুরু এর মাধ্যমেই হতে পারে।
নখ নিয়মিত কাটতে হবে, সে তো ছোটবেলার শিক্ষা। এখন অবশ্য বিভিন্ন শেপে নখ-নকশার চল বেড়েছে। বিশেষজ্ঞ মতানুযায়ী নখ বেশি বড় না করে মাঝারি আকারের রাখলেই ভালো। এখানে নিরীক্ষা কম করলে টেকসই থাকে নখ। তাই বারবার আকার পরিবর্তন না করে সুন্দরভাবে শুধু ফাইল করে নিলেই যথেষ্ট। তবে তা হতে হবে সময়মতো। হেলাফেলায় সমস্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়ে যায়।
লম্বা নখের তুলনায় দৈর্ঘ্যে ছোট নখ কম ভাঙে। আবার যত্ন নেওয়াও সহজ। ময়লা কম জমে। কোনো ঝক্কি ছাড়াই পরিষ্কার করা যায়।
এসবের পরেই আসে বেইসকোট পর্ব। পুষ্টিমানসমৃদ্ধ উচ্চ মানের বেইসকোট ব্যবহার করলে মেনিকিউর বেশ দীর্ঘ সময় টিকবে। নখ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা কমবে। অল্পতেই দাগ বসে যাবে না।
নখে পলিশ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। পলিশ ব্রাশে ঠিক কতটুকু নেইল কালার নিলেই পুরো নখ রাঙানো যাবে, তা বুঝে ঠিক ততটুকু তুলে নিলে ভালো। নয়তো নেইলপলিশ শুকানোর পরে উঁচু-নিচু মনে হতে পারে।
মাত্র তিনবার ব্রাশ স্ট্রোকে পলিশ ব্যবহার সম্পন্ন করতে পারলে মসৃণ হবে প্রলেপ। দুই পাশ এবং মাঝ বরাবর—এভাবে পুরো নেইল সারফেসকে তিন ভাগে বিভক্ত করে পলিশিং শেষ করা যায়। পরের ধাপে যাওয়ার আগে ঘড়ি ধরে অন্তত দুই মিনিট অপেক্ষা করা চাই। কোনোভাবেই তাড়াহুড়া করা যাবে না।
নেইল কালারের পরে টপ কোট ব্যবহারের ধাপ আসে। ক্লিয়ার এই কোট ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য রাঙানো নখকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা। এ সময় নখের টিপ এবং নখের শেষ অংশের দিকে আলাদা দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। কারণ, এই অংশ দুটি বিভিন্ন কাজের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা বেশি।
যত্ন
মেনিকিউর শেষ হলেই দায়িত্ব শেষ—বিষয়টি এমন নয়; বরং পরবর্তী সময়টি যত্ন নেওয়ার। নেইল অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে নিয়মিত। তাতে নখ শুষ্ক হয়ে যাওয়ার শঙ্কা কমবে। নেইলপলিশ নিয়মিত ব্যবহারে আর্দ্রতা কমে যায়; যা ভঙ্গুরতাকে ত্বরান্বিত করে। নেইল অয়েল ব্যবহারে নখের ময়শ্চারের পরিমাণ ঠিক থাকবে। নখের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য—দুই-ই বাড়বে।
প্লেইন শেডের থেকে গ্লিটারি শেড বেশি সময় টিকে থাকে বলে জানা যায়। তাই কোনো ট্যুর কিংবা উৎসব উপলক্ষে লম্বা সময় মেনিকিউর টিকিয়ে রাখতে চাইলে ঝিকিমিকি শেড বেছে নেওয়া যেতে পারে। তাহলে দ্রুত নষ্ট হওয়ার ভয় কিছুটা হলেও কমবে।
বিগ নো
মেনিকিউরের আগে পানিতে নখ ভেজানোর অভ্যাস আছে অনেকের। বৈজ্ঞানিকভাবে এর কোনো ভালো দিক নেই; বরং এহেন কাজে পানি শুষে নখ ফুলে থাকতে পারে। এমন অবস্থায় মেনিকিউর সম্পন্ন করা হলে দ্রুতই হতাশ হতে হয়। কারণ, নখ থেকে পানি যখন সরে যায়, তখন ব্যবহৃত নেইলপলিশের টেক্সচার নষ্ট হয়।
মেনিকিউরের আগে নখ পরিষ্কার করতে গিয়ে কিউটিকল চাপ দিয়ে পেছনে সরিয়ে না দেওয়াই ভালো। এতে নখের বেইসকোট নষ্ট হতে পারে। তাতে মেনিকিউরের সৌন্দর্য পুরোটাই ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। নখের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে মেনিকিউর টিকে থাকবে, এটুকু বোঝা যায় বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে। তাই ডায়েটে, জীবনযাপনে নখের স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
বিউটি ডেস্ক
ছবি: সংগ্রহ