skip to Main Content

কুন্তলকাহন I একের ভেতর দুই

সৌন্দর্য বাড়বে, সারবে শ্রান্তিও। বছর পুরোনো এই রূপ রেওয়াজ তাই আজও হেয়ার এক্সপার্টদের গো-টু থেরাপি

একটা লম্বা ক্লান্ত ভারাক্রান্ত দিন শেষে আরামের মুহূর্ত কোনটা হতে পারে? জিজ্ঞেস করলেই হয়তো একটা কমন উত্তর মিলবে—হেড মাসাজ। বিভিন্ন জরিপ বলছে, নারী-পুরুষনির্বিশেষে স্পা অথবা সেলফ কেয়ার ডের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো হেড মাসাজের সময়টা। শুধু যে শরীরকে প্রফুল্ল করে তোলার জন্য নয়, মাসাজ মনেও এনে দেয় প্রশান্তি। নিমেষেই চাঙা করে তোলে।
খুব বেশি সৌন্দর্যসচেতন নন এমন মানুষেরাও স্ক্যাল্প মাসাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা দেখান না। চটজলদি চাঙা হয়ে উঠতে কিংবা পুরো দিনের শ্রান্তি দূরে এই মাসাজ ম্যাজিকের মতো কাজ করে। স্ক্যাল্প মাসাজ কি শুধুই রিল্যাক্সিং একটা বিউটি সেশন, নাকি তার চেয়েও বেশি কিছু?
চুলের বেড়ে ওঠায়
স্ক্যাল্প মাসাজ মানেই চুল টানা—ধারণাটি ভুল। যত্নের অভাবে যাদের চুলের গোড়ায় পুষ্টি পৌঁছাতে পারে না, তাদের জন্য দারুণ কাজের এটি। স্ক্যাল্প মাসাজের একটা অসাধারণ দিক হলো, এতে চুলের গোড়ায় রক্তসঞ্চালন বাড়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, স্ক্যাল্প মাসাজ চুলের বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। বিষয়টি পুরোপুরি না হলেও আংশিক সত্য। নিয়মিত স্ক্যাল্প মাসাজ চুলের গোড়ায় রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, চুল মজবুত হয়। যাতে চুল পড়ার পরিমাণও কমে। পরোক্ষভাবে চুল বাড়ছে মনে হলেও আসলে চুল পড়া কমায় বলে এমন ঘন ভাব তৈরি হয়।
স্ট্রেস কমাতে
দিন শেষে ঘুমোতে যাওয়ার আগে জম্পেশ একটা হেড মাসাজ কার না ভালো লাগে! শুধু স্ক্যাল্প হেলদি রাখার জন্য তা কিন্তু নয়, বরং স্ট্রেস কমিয়ে দিতে পারে দারুণ এই ফিলিং। আর মাসাজ যদি নেওয়া যায় ভালোবাসার মানুষের কাছে, তাহলে তো কথাই নেই! স্ট্রেস হরমোনগুলো কমাতে এবং হার্টবিট রেট স্বাভাবিক রাখতে কাজ করবে সবচেয়ে কার্যকর উপায়ে।
হেলদি স্ক্যাল্প নিশ্চিতে
যাদের আউটডোরে বেশি কাজ করতে হয় বলে সহজে চুল ময়লা হয়, খুশকি দেখা দেয় অথবা অ্যালার্জিজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে হয়, তাদের জন্য স্ক্যাল্প মাসাজ হতে পারে পারফেক্ট সল্যুশন। এতে মাথার ত্বকে জমে থাকা ফ্লেকি ডেড স্কিন উঠে আসে। ফলে বাড়তি সিবামও চুলকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে না। চুলের গোড়া এক্সফোলিয়েট করতেও এর বিকল্প নেই। এ ছাড়া স্ক্যাল্পের একদম ভেতর পর্যন্ত অক্সিজেন পৌঁছে দিতে পারে একটা ভালো স্ক্যাল্প মাসাজ।
টাইম ফ্রেম
অনেক গুণ আছে বলেই যে সুযোগ পেলে স্ক্যাল্প মাসাজ নিতে হবে, তা কিন্তু নয়। এ ক্ষেত্রে মানতে হবে নিয়মকানুন। চুলের ধরন ও লেন্থ বুঝে সপ্তাহে ৪-২৫ মিনিট নেওয়া যেতে পারে একটা স্ট্রেস রিলিফিং স্ক্যাল্প মাসাজ। এই সময় কেমন প্রসাধনী ব্যবহার করা হচ্ছে, সেদিকে খেয়াল রাখাটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।
স্ক্যাল্প মাসাজ সেশন
ঘরে কিংবা স্যালনে—কোথায় বসে আরামদায়ক স্ক্যাল্প মাসাজ নেওয়া যায়? এটা পুরোপুরি নির্ভর করবে ব্যক্তিপছন্দের ওপর। তবে স্ক্র্যাল্প মাসাজ কীভাবে করতে হয়, তা কিন্তু একটা ইউনিভার্সাল ব্যাপার। বিশেষ কোনো টুলের চেয়ে বেশি জরুরি সঠিক মাসাজ টেকনিকের প্রয়োগ। সঙ্গে বেছে নেওয়া যেতে পারে পছন্দসই একটা এসেনশিয়াল হেয়ার অয়েল। যারা তেলের চিটচিটে ভাব এড়াতে চান, তারা বাড়তি কোনো কিছু ব্যবহার না করে শুধু আঙুলের সাহায্যে স্ক্যাল্প মাসাজ করিয়ে নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে হাত পরিষ্কার করে আঙুলগুলোকে আড়াআড়ি রেখে ধীরে ধীরে চাপ দিতে হবে। এরপর সার্কুলার মোশনে মাথার সামনের স্ক্যাল্পের অংশ থেকে একদম ঘাড়ের দিক পর্যন্ত মাসাজ করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, স্ক্যাল্পও যেন পরিষ্কার থাকে।
এসেনশিয়াল অয়েলের সঙ্গতে
অনেকে তেল বলতে বেশির ভাগ সময় শুধু নারকেল তেলকে বোঝেন। থ্যাংকস টু সোশ্যাল মিডিয়া, যার কল্যাণে কিছুটা হলেও এ ধারণা পাল্টেছে। স্ক্যাল্প মাসাজের পুরো কার্যকারিতা উপভোগের জন্য বেছে নেওয়া যেতে পারে বিভিন্ন ধরনের এসেনশিয়াল অয়েল। তবে এর ব্যবহার ঘরোয়া স্ক্যাল্প মাসাজের চেয়ে স্যালনেই বেশি দেখা যায়। বাসায় বসে করতে চাইলে চুলের ধরন, স্ক্যাল্পের অবস্থা বুঝে তবেই নিজের জন্য এসেনশিয়াল অয়েল বাছাই করে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অল্প পরিমাণ জোজোবা বা রোজমেরি অয়েল হাতের তালুতে নিয়ে ঘষে এরপর স্ক্যাল্প মাসাজ করা যেতে পারে সার্কুলার মোশনে। উপকারিতা তো মিলবেই, অনুভূত হবে একদম সতেজতা।
শাওয়ারে
কুসুম গরম পানির নিচে গোসলের অভ্যাস থাকলে সে সময় স্ক্যাল্প মাসাজ আইডিয়াল চয়েজ। এ ক্ষেত্রে চুলকে প্রথমে পুরোপুরি ভিজিয়ে নিতে হবে। হাতের তালুতে পরিমাণমতো শ্যাম্পু নিয়ে আঙুলের কিংবা স্ক্যাল্প মাসাজারের সাহায্যে সার্কুলার মোশনে ৩-৪ মিনিট মাসাজ করা যেতে পারে। তবে দীর্ঘক্ষণ ধরে না করাই শ্রেয়। কেননা, এই সময় চুলের গোড়া নরম থাকে বলে অতিরিক্ত মাসাজে চুল পড়ার পরিমাণও বাড়তে পারে।
স্ক্যাল্প মাসাজ সঠিকভাবে করতে পারলে চুলের সৌন্দর্য বাড়ে বহুগুণ। তবে নিজে নিজে স্ক্যাল্প মাসাজ না দিতে পারলে সাহায্য নেওয়া যেতে পারে প্রিয় মানুষের। এমনকি নিজেকে গিফট করা যেতে পারে একটা স্পা ডে। মন্দ হবে না কিন্তু ব্যাপারটা।

 বিদিশা শরাফ
মডেল: এফা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top