ফিচার I রিরাইটিং ফ্যাশন
দুর্বার, আনকোরা—এসব শব্দে বহুবার বিশেষায়িত করা হয়েছে এ প্রজন্মকে। পৃথিবী নিয়ে সচেতন। যুক্তিতে ক্ষুরধার। ফ্যাশনে, প্যাশনে—সবখানে
ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে জেনারেশন জেড শুধু একজন ক্রেতা হিসেবে প্রবেশ করেনি; একই সঙ্গে অনুসন্ধানী হিসেবেও নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে। তথ্য-উপাত্ত, যাচাই-বাছাই—এসবের বিশ্লেষণের পরেই কেনাকাটার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয় এই বয়সের মানুষেরা। জেন-জিদের কাছে ফ্যাশন মানে শুধু এক একটি পোশাক কিংবা অনুষঙ্গ নয়; নিজস্বতা প্রকাশের মাধ্যমও বটে।
অনলাইন গবেষণা
জেন-জিদের রোজকার রুটিনের একটি দীর্ঘ সময় তারা অনলাইনে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে। তাই এই অন্তর্জালেই তারা খুঁজে বেড়ায় ফ্যাশন নিয়ে তথ্য। জেন-জিরা স্বভাবগতভাবে হাইপারঅ্যাকটিভ। কারণ, তারা অল্প সময়ে যথাযথ তথ্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করে বলে জানা যায়। সাধারণত কী কী তথ্য জানাতে আগ্রহী এই প্রজন্ম, সে বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায় অডাসেসের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে। ব্রাজিলিয়ান এ প্রতিষ্ঠান কাজ করে ফ্যাশন বাজার-সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে। তারা জানায়, জেনারেশন জেড তাদের ফ্যাশন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জানার চেষ্টা করে পণ্যের ব্র্যান্ড সম্পর্কে। ফ্যাশন লেবেলটি যেসব তথ্য জনগণের সামনে প্রকাশ করছে, তার সত্যতা এবং নির্ভরযোগ্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা করে থাকেন এই প্রজন্মের তরুণেরা। এর বাইরেও কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর তারা খুঁজে থাকেন। এগুলো হচ্ছে—
ব্র্যান্ডটি পৃথিবীর ভালোর জন্য কতটুকু ভাবে
কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ
পানি খরচ করার ক্ষেত্রে সচেতনতা
মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা
অ্যানিমেল টেস্টিং করা হয় কি না
উৎপাদনে ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি
অ্যানিমেল টেস্টিংয়ের বিষয়ে মতামত
টেকসই তত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য
আউটফিট আইডিয়া
জেনারেশন জেড শুধু দেখতে সুন্দর, এই কারণে পোশাক কিনে গায়ে জড়িয়ে নেওয়ার আগ্রহ হারিয়েছে। তারা নিজেদের ভাবনা, মূল্যবোধ, নীতির প্রতিফলন পোশাকে দেখতে চায়। ফলস্বরূপ, রেডিমেড পোশাক থেকে সরে এসে তারা আউটফিট আইডিয়ায় আগ্রহী হয়েছে। পোশাকের প্রতিটি অংশকে সমান গুরুত্ব দিয়ে বেছে নেওয়ার মনোভাব তৈরি হয়েছে। ফ্যাশন ফর কজ তাই তাদের মূলমন্ত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পুনর্ব্যবহার
ফাস্ট ফ্যাশনের জোয়ারে আলমারি ভর্তি পোশাক একসময় সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছিল। সেখানে পরিবর্তন এসেছে। একটি পোশাক একবার নয়, একাধিকবার ব্যবহারের চল এসেছে। সেখান থেকে প্রি-লাভড পোশাক হিসেবে পুনরায় অন্যের ক্লজেটেও জায়গা করে নিচ্ছে ব্যবহারের উপযুক্ত ফ্যাশন আইটেম। ফ্যাশন বর্জ্যরে আগ্রাসনে অস্থির সময়ের সমাধানে একই পণ্য বারবার ব্যবহারে আগ্রহী হয়েছে জেন-জি।
ডু-ইট-ইওরসেলফ
নিজের পোশাক নিজেই নকশা করতে আগ্রহী এই প্রজন্ম। নিজস্বতা প্রকাশের ইচ্ছা থেকে পোশাককে ক্যানভাস রূপে ব্যবহার শুরু করে থাকে হরহামেশাই। অলংকরণের মাধ্যম হিসেবে গুরুত্ব পায় এমব্রয়ডারি, গ্রাফিক্যাল ডিজাইন, প্যাচ। এই ধারায় জনপ্রিয় হচ্ছে ফরমায়েশি কাজ। ব্যক্তিগত দর্শনের দৃপ্ত উচ্চারণে নিজেকে প্রকাশ করছে তারা। আবার অনেকে নিজ হাতেই কাঁচি সামলাচ্ছে। সুই-সুতার বুননেও দেখাচ্ছে মুনশিয়ানা।
ভিডিও কনটেন্ট
ফ্যাশনবিষয়ক সিদ্ধান্তের জন্য ইন্টারনেট নির্ভরশীলতা রয়েছে জেনারেশন জেডদের। তথ্য-উপাত্ত কিংবা প্রমাণ—যা কিছুই দরকার হোক না কেন, তাদের প্রথম ভরসার জায়গা ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে ইউটিউব ও টিকটক। ফ্যাশন পিকচার পারফেক্ট হবে—এই তত্ত্বে তারা মোটেই বিশ্বাসী নয়; বরং তাদের চাওয়া, সবকিছু বাস্তব রূপে দৃশ্যমান হোক, যা জীবনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। কৃত্রিমতা বিবর্জিত। সম্পূর্ণ বাস্তব এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক ফ্যাশন কনটেন্ট তাদের আগ্রহী করে। যার জন্য ব্যাপক পূর্বপ্রস্তুতি প্রয়োজন নয়। বরং যাপিত জীবনের সহজ উপস্থাপনে তাদের সব আকর্ষণ। এসব কারণে ভিডিও কনটেন্টে মনোযোগী তারা।
ইনফ্লুয়েন্সার’স ইনফ্লুয়েন্স
বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের প্রতি আগ্রহ থাকায় জেনারেশন জেডদের ভরসাস্থল সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা। এমন মানুষের সংখ্যা অনেক। তবে সবার কথায় মনোযোগ দেয় না এই প্রজন্ম। যারা বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে উপযুক্ত তথ্যের উপস্থাপন করতে পারে, তাদের কনটেন্টে আগ্রহী হতে দেখা যায়। রিয়েল লাইফ কনটেন্টের জনপ্রিয়তার পেছনে জেনারেশন জেডদের এই আগ্রহ অন্যতম। চিরচেনা পদ্ধতিতে পণ্যের বিজ্ঞাপন জেন-জিদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।
প্রথাগত ফ্যাশনে পরিবর্তন আসছে জেনারেশন জেডদের হাত ধরে। শুধু চোখধাঁধানো সৌন্দর্যে ক্রেতা আকৃষ্ট করার পন্থা এখন পুরোনো। যুক্তিতর্কে সিদ্ধান্ত নিতেই বরং বেশি স্বচ্ছন্দ এই প্রজন্ম।
সারাহ্ দীনা
মডেল: জারিফ ও ষড়ঋতু
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল