skip to Main Content

মনোযতন I মনে শোষণ?

গ্যাসলাইটিং। কারও মানসিক স্বাস্থ্যে মারাত্মক হানি ঘটানোর মতো আচরণ। সাধারণত স্বামী, স্ত্রী বা একান্ত কাছের মানুষেরাই এই বিষ ছড়িয়ে দেন। চেনার ও সমাধানের প্রসঙ্গ হাজির করলেন আশিক মুস্তাফা

গ্রাম, খাল-বিল, নদ-নদী মাড়িয়ে চেনা শহরে হুট করে এসে লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া। একটুও কি টের পেয়েছেন, কখন শরৎ গিয়ে হেমন্ত এসে দোরঘণ্টি বাজিয়েছে আপনার শহরে? ঘুমভাঙা সকালে খেয়াল করেছেন সোনারঙা রোদ? ভরদুপুরের পথের উজ্জ্বলতা? ক্লাস কিংবা অফিস ফেরত বিকেল গড়ানো সন্ধ্যায় হঠাৎ আপনার নাকে এসে লাগেনি নতুন সুবাস? খুঁজে কি দেখেছেন আশপাশেই হয়তো আছে এক-দুটি শিউলিগাছ? নাকি জটিল সব ভাবনায় অবসাদগ্রস্ত দেহ-মন নিয়ে সেই আগ্রহটুকু হারিয়ে ফেলেছেন?
যে শহরে আপনার বসবাস, তাতে অনেক কিছু থাকলেও তার কাঁধে হাত রেখে ঘুরে বেড়ায় শূন্যতা! এখানে ছাতিমের বন নেই, ভরা ফসলের মাঠ নেই। নুয়ে পড়া কাশবন, ওপরে নীলাভ আকাশে হেমাঙ্গী রোদের খেলা নেই। তুমুল জোছনায় কুয়াশাভেজা রাত নেই। আপনি দেখেন না সুখসুপ্তিকার আলো। কানে শোনেন না নবান্নের সুর ঝংকার। নাগরিক ফাস্ট ফুড আর রেডি ফুড আপনাকে ভুলিয়ে দিয়েছে খেজুর রসের পায়েস আর নতুন ধানের পিঠা-পুলির স্বাদ। অথবা আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, মন পড়ে আছে গ্রামে; চেনা গ্রাম, খাল-বিল, নদ-নদীর মধ্যে। কিন্তু কেউ একজন আপনাকে ভাবতে বাধ্য করাচ্ছে, আপনি এসবে নেই। আপনার কোনো গ্রাম নেই। নেই আপনার মনের নীলাভ আকাশে হেমাঙ্গী রোদের খেলা। আরও যত ব্লা-ব্লা-ব্লা…!
একপর্যায়ে আপনি মেনে নিচ্ছেন, তার কথাই ঠিক! এই মেনে নেওয়াতে ধীরে ধীরে হতাশা গ্রাস করে আপনাকে। আরও ধীরে ধীরে কেউ একজন আপনার মনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আপনাকে নির্যাতনের মুখোশ পরিয়ে দেয়। তখন যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যান আপনি, তাকেই বলে ‘গ্যাসলাইটিং’। এই কেউ একজন আপনাকে আরও বলতে পারে, ‘তুমি তো কিছুই বোঝো না’, ‘আরে বোকা, তোমাকে দিয়ে এসব জটিল কাজ হবে না’, ‘আরে, ও তো শিল্পী মানুষ, এসব হিসাব বুঝবে নাকি’ ইত্যাদি। এমন আরও অনেক কটূক্তি আশপাশে ঘুরপাক খাবে, তবু আপনি প্রতিবাদ করবেন কি না, বুঝে উঠতে না পেরে মুখ বুজে থাকবেন। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এসব কথাবার্তাই গ্যাসলাইটিং।
গ্যাসলাইটিং আসলে কী
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, এটি একধরনের মনস্তাত্ত্বিক ম্যানিপুলেশন পরিস্থিতি। এতে অপর পক্ষের নিয়ন্ত্রণের কারণে নিজ বাস্তব ভাবনার ওপর নিজেরই সন্দেহ তৈরি হয়। আরও সহজভাবে বললে, একধরনের মানসিক শোষণ ও নির্যাতনকে বলে গ্যাসলাইটিং; যা দাম্পত্য সম্পর্কের পাশাপাশি পারিবারিক বা কর্মক্ষেত্রের যেকোনো সম্পর্কের মধ্যে ঘটতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের সমাজবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক পেজ সুইটের মতে, ‘কাউকে পাগল প্রমাণের চেষ্টাকেই গ্যাসলাইটিংয়ের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে।’
সম্পর্ক ও কর্মক্ষেত্রে গ্যাসলাইটিং নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করছেন এই অধ্যাপক। তার ভাষ্য, ‘গ্যাসলাইটাররা বাস্তবতাকে বিকৃত এবং তাদের নিজস্ব বিচার ও অন্তর্দৃষ্টি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে বাধ্য করে। অন্যের ওপর ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ অর্জন করতেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়।’
ইতিহাসে চোখ
মানুষের নেতিবাচক আচরণ বোঝাতে এ শব্দের প্রচলন শুরু ১৯৩৮ সালে। তা-ও একটি নাটকের মাধ্যমে। তবে ‘গ্যাসলাইট’ শিরোনামের নাটকটি মঞ্চায়িত হওয়ার পর একই গল্প ও শিরোনাম অবলম্বনে ১৯৪০ সালে মুক্তি পায় একটি চলচ্চিত্র। অবশ্য জনপ্রিয়তার তুঙ্গে আসে ১৯৪৪ সালে মুক্তি পাওয়া, চার্লস বয়ার ও ইনগ্রিড বার্গম্যান অভিনীত ‘গ্যাসলাইট’ সিনেমা থেকে। প্রতিটিতেই গল্পের মূল ভাবনা ছিল অভিন্ন। একজন পুরুষ প্রোটাগনিস্ট তার স্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করে, নারীটির সব ভাবনাই মিথ্যা, কল্পনামাত্র; এমনকি তাদের বাড়ির গ্যাসলাইটের জ্বলা-নেভাও। বাস্তবকে অবাস্তবরূপে স্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করে সে। এমনকি স্ত্রীও একপর্যায়ে সেসব কথা বিশ্বাস করে নেয় এবং নিজেকে পাগল ভাবতে শুরু করে।
বাস্তবেও ঠিক এমনটাই ঘটে, যখন কোনো ব্যক্তি গ্যাসলাইটিংয়ের শিকার হন। এটি একধরনের মানসিক শোষণ। অন্য সব শোষণের মতো এ প্রক্রিয়াতেও দুটো পক্ষ থাকে—শোষক বা গ্যাসলাইটার এবং শোষিত বা ভিকটিম। গ্যাসলাইটার ব্যক্তির চেষ্টা থাকে ভিকটিমের মনে নিজেকে নিয়ে সংশয়, আত্মবিশ্বাসের অভাব—এ ধরনের বিষয়গুলো পোক্ত করে দেওয়ার। মূলত অপর ব্যক্তির ওপর একধরনের মানসিক নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার এবং নিজেকে ক্ষমতাশীল পর্যায়ে রাখার জন্যই কিছু মানুষ এমন আচরণ করে।
আপনি শিকার?
গ্যাসলাইটিংয়ের শিকার আপনি কি না, তা বুঝতে কিছু লক্ষণে চোখ রাখা চাই।
 ‘তুমি সব সময় ভুলে যাও, নিশ্চয় এমনটি ঘটেনি’—নির্দিষ্ট কারও কাছ থেকে এ ধরনের বাক্য শুনে নিজেরই মনে হওয়া, আপনার ভুলে যাওয়ার রোগ আছে।
 কারও সঙ্গে কথা বললে আপনি বিভ্রান্ত হচ্ছেন বারবার।
 বারবার কেউ মিথ্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।
 যা হয়নি বা ঘটেনি, কেউ তা প্রমাণ করার বা ঘটানোর চেষ্টা করছে।
 বারবার আপনাকে মানসিক রোগী হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা চালাচ্ছে।
 আপনি নিজেই মনে করছেন, আপনার মানসিক ভারসাম্য প্রশ্নবিদ্ধ।
 আপনাকে হতাশা গ্রাস করে নিচ্ছে।
 আপনাকে মিথ্যাবাদী প্রমাণে উঠেপড়ে লেগেছে কোনো পক্ষ বা ব্যক্তি। তবে যে মিথ্যার কথা বলা হচ্ছে, সেটি আপনি বলেননি।
ভাবুন, এমন কোন উদাহরণের শিকার আপনি? গ্যাসলাইটিং মানে যে কেবল অন্যকে পাগল হিসেবে প্রমাণ করা, তা নয়। অনেক সময় নানাভাবে অন্যকে অপমান করা এবং নিজের ভাবনা অন্যের ওপর তার অজান্তে চাপিয়ে দেওয়াও হতে পারে। চলুন, বিস্তারিত জেনে নিই।
কাউন্টারিং
সত্যজিৎ রায়ের ‘বিপিন চৌধুরীর স্মৃতিভ্রম’ গল্পটির কথা মনে আছে? ওই যে, “‘কী বলছেন মিস্টার চৌধুরী? ঝরনা দেখতে গিয়ে পাথরে হোঁচট খেয়ে আপনার হাঁটু ছড়ে গেল। আমিই শেষটায় আয়োডিন এনে দিলুম। পরদিন নেতারহাট যাবার জন্যে আমি গাড়ি ঠিক করেছিলুম। আপনি পায়ের ব্যথার জন্যে যেতে পারলেন না। কিচ্ছু মনে পড়ছে না? আপনার চেনা আরেকজন লোকও তো গেসলেন সেবার—দীনেশ মুখুজ্যে। আপনি ছিলেন একটা বাংলো ভাড়া করে—বললেন হোটেলের খাবার আপনার ভালো লাগে না—তার চেয়ে বাবুর্চি দিয়ে রান্না করিয়ে নেওয়া ভালো। দীনেশ মুখুজ্যে ছিলেন তার বোনের বাড়িতে। আপনাদের দুজনের সেই তর্ক লেগেছিল একদিন চাঁদে যাওয়ার ব্যাপার নিয়ে—মনে নেই? সব ভুলে গেলেন? আরো বলছি—আপনার কাঁধে একটা ঝোলানো ব্যাগ ছিল—তাতে গল্পের বই থাকত। বাইরে গেলে নিয়ে যেতেন। কেমন—ঠিক কি না?’
বিপিনবাবু এবার গম্ভীর সংযত গলায় বললেন, ‘আপনি ফিফটি এইটের কোন মাসের কথা বলছেন বলুন তো?’
ভদ্রলোক বললেন, ‘মহালয়ার ঠিক পরেই। হয় আশ্বিন, নয় কার্তিক।’”
নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন গল্পের এই বর্ণনা পড়ে। মূলত এ ধরনের গ্যাসলাইটিংয়ে ব্যক্তি অন্যকে স্মৃতি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলে দেন। যেকোনো কিছু বলার বা কোনো মতামত দেওয়ার পর, ‘তুমি নিশ্চিত তো?’, ‘তুমি তো সব ভুলে যাও’—এ ধরনের কথাবার্তা নিয়মিত বলার মাধ্যমে এই চর্চা করা হয়। আর এর মধ্য দিয়ে ভিকটিম নিজেও একসময় বিশ্বাস করেন, তার কিছুই মনে থাকে না; তিনি আসলে বিষয়টি ভুলে গেছেন বা ভুল বলছেন।
উইথহোল্ডিং
ফাঁকিবাজ শিক্ষার্থীর ছলচাতুরীর নমুনা বুঝতে উইথহোল্ডিংয়ে নজর দিতে পারেন। মূলত উইথহোল্ডিং হচ্ছে কথোপকথনে গ্যাসলাইটিংয়ের আরেকটি পদ্ধতি। এর মাধ্যমে ব্যক্তি নিজেকে ইচ্ছা করেই নিষ্ক্রিয় রাখার চেষ্টা করেন, যেন অপর ব্যক্তি নিজের কথা নিয়ে অতি সচেতন হয়ে পড়েন। কিংবা তার মনে হয়, তিনি কিছুই গুছিয়ে বা বুঝিয়ে বলতে পারছেন না। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। নতুন আসা শিক্ষকদের সঙ্গে হরদম এমন আচরণ করতে দেখা যায় ফাঁকিবাজ ও অমনোযোগী শিক্ষার্থীদের।
ট্রিভিয়ালাইজিং
ট্রিভিয়ালাইজিং বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যকরণ হচ্ছে অত্যন্ত স্থূল, কিন্তু বহুল প্রচলিত গ্যাসলাইটিংয়ের নমুনা। অপর ব্যক্তিকে সারাক্ষণ হেয় করা, তার অনুভূতির যথাযথ মূল্য নেই—এমনটা মনে করানোর চেষ্টা চালানো হয় এ প্রক্রিয়ায়। বন্ধুদের দল বা কর্মক্ষেত্র, এমনকি পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি পর্যায়েই কোমল স্বভাবের মানুষদের সঙ্গে এমন চর্চা দেখা যায়। বিষয়টিকে হাস্যকর ধরে নিয়ে হাসাহাসি করার মাধ্যমে যে কারও মানসিক স্বাস্থ্যের কতটা ক্ষতি হচ্ছে, তারা কীভাবে অনেক বেশি সংশয়গ্রস্ত ও অনেক কম আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন—সেদিকে কম লোকই খেয়াল করেন। তাই হয়তো ছোটবেলায় খেলার সাথীদের ডাকা ‘দুধভাত’ তকমাটি অনেকেই আজীবন গায়ে নিয়ে ঘোরেন।
ডিনায়াল
সহজ করে বললে, ডাহা মিথ্যা বলা। এই মিথ্যা বলাই গ্যাসলাইটিংয়ের প্রধান হাতিয়ার। অতীতে কোনো কিছু করে বা বলে পরবর্তীকালে সুযোগ বুঝে সেটি একেবারেই এড়িয়ে যাওয়া, অস্বীকার করা ইত্যাদি ডিনায়ালের অংশ। নিজে মিথ্যা বলে অপর ব্যক্তিকে মিথ্যা প্রমাণের চেষ্টা চলে এতে।
স্টোরিওটাইপিং
ব্যক্তির লৈঙ্গিক পরিচয়, পেশা, এলাকা ইত্যাদি নিয়ে একটি আরোপিত ধারণার চর্চাই স্টোরিওটাইপিং। যেমন ‘নোয়াখালীর মানুষ তো, তাই খাবার পরই চলে যাচ্ছে’ বা ‘মেয়ে মানুষের বুদ্ধি!’—এ ধরনের খোঁচা মারা কথাবার্তার মাধ্যমে মানুষকে প্রতিনিয়ত গ্যাসলাইট করা হয়। এতে ভিকটিম যদি প্রতিবাদ করেন, তখন তিনি ‘মজা বোঝেন না’ বলে আবার তুচ্ছ করা হয়।
হলুদ সংকেতে যারা
যাদের মধ্যে গ্যাসলাইটার হওয়ার প্রবণতা দেখা যায় বা যারা থাকেন হলুদ সংকেতে, তারা মূলত নার্সিসিস্ট পারসোনালিটির মানুষ। ছোটবেলায় কেউ শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হলেও পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে এ ধরনের ব্যক্তিত্ব দেখা দিতে পারে। মিথ্যা বলার প্রবণতা যাদের বেশি, গ্যাসলাইটার হওয়া তাদের জন্য সহজ। এ ছাড়া কাছের মানুষ কিংবা সঙ্গীকে নিয়ে সন্দেহ কাজ করলে এই আচরণ করেন অনেকে।
সমাধানের পাঠ
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের সহকারী অধ্যাপক ও নিউরোলজিস্ট ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন, ‘যদি বুঝতে পারেন আপনি গ্যাসলাইটিংয়ের শিকার হচ্ছেন, তবে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, আপনাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেওয়াই গ্যাসলাইটারদের উদ্দেশ্য। আর কাউকে গ্যাসলাইটার বলে সন্দেহ হলে তাকে এড়িয়ে চলবেন। একান্ত যোগাযোগ করতে হলে সাবধানতা অবলম্বন করবেন। তবে যোগাযোগের খুঁটিনাটি রেকর্ড করে রাখবেন।’
এ ছাড়া কেউ কিছু বললে সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বাস করবেন না। আগে যাচাই-বাচাই করুন, তারপর বিশ্বাসের পথে হাঁটুন। চলার পথে আমরা নানা রকম যোগাযোগে সংযুক্ত হই। নানা মানুষের সঙ্গে মিশি। এদের কেউ সংবেদনশীল, কেউবা এর উল্টো। চোখ বুজে কেউই বলতে পারবেন না কখনো গ্যাসলাইটিংয়ের শিকার হননি বা মনের ভুলেও অন্যের সঙ্গে এমন আচরণ করেননি। তবে সচেতনতার কোনো নির্দিষ্ট সময়ব্যাপ্তি নেই; যেকোনো সময়ই এসব বিষয়ে একটু সচেতন, একটু সংবেদনশীল হওয়া যায়।
এ ছাড়া যেসব পথ ধরে সমাধানের পথে হাঁটতে পারেন—
 নিজেকে শান্ত রাখা: এমন আচরণ আপনার সঙ্গে হলে প্রথম ও প্রধান কাজ হলো, নিজেকে শান্ত রাখা। গ্যাসলাইটিং যারা করেন, তাদের হাতেনাতে ধরা বেশ কঠিন। কারণ, এরা সাধারণত খুবই ধুরন্ধর প্রকৃতির।
 বলুন সরাসরি: কোনো প্রকার ঝগড়া বা হাতাহাতিতে না গিয়ে খোলাখুলি বলে দিন আপনার সন্দেহের কথাটি। পর্যাপ্ত প্রমাণ থাকলে তা তুলে ধরুন গ্যাসলাইটারের সামনে।
 কাছের মানুষকে জানানো: তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের পরও যদি কাজ না হয়, ঘাবড়াবেন না। আপনি নিজের স্ত্রী, স্বামী কিংবা যিনি গ্যাসলাইটিং আচরণ করেন, তার কাছের কাউকে সব খুলে বলুন। মনে সন্দেহ চেপে রাখবেন না। এতে যন্ত্রণা দিন দিন বাড়তেই থাকবে।
 কাপল থেরাপি: বিষয়টি কারও সঙ্গে শেয়ার না করলে আপনার মানসিক রোগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। এ থেকে দ্রুত মুক্তির জন্য সাইকিয়াট্রিস্টের দ্বারস্থ হয়ে, কাপল থেরাপি বা একান্তে আলাপের মাধ্যমে নিজ নিজ প্রাইভেসি বজায় রেখেই সমাধান খুঁজে নিন।
 সাধারণ ধারণা: অনেকে মনে করেন, গ্যাসলাইটিং বিহেভ কেবল বিবাহিতদের মধ্যে বেশি হয়। কিংবা তা প্রেমিক-প্রেমিকার মাঝেই দেখা যায় শুধু। অথচ এমন ধারণা ভুল। যেকোনো সম্পর্ক কিংবা যেকোনো মানুষ এর শিকার হতে পারেন। অনেকে আবার গ্যাসলাইটিংকে সন্দেহবাতিক রোগ, ডিলিউশনাল ডিজঅর্ডার, ওথেলো সিনড্রোম, মেলিংগারিং বা ভং, কনভারশন ডিজঅর্ডার ইত্যাদি মনোব্যাধির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। ফলে সঠিক সমাধানের জন্য সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যেতে ইতস্তত করেন। তাদের বলব, সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শ নিন। তিনি সমস্যা শুনলেই রোগ শনাক্তের পাশাপাশি দিতে পারবেন সঠিক সমাধান।
সমাধানের সহজপাঠ নিয়ে, ভালো লাগার শিহরণ জাগিয়ে শরীর ও মনে প্রিয় মানুষটির হাত ধরে হারিয়ে যেতে এখন আর দ্বিধা কিসের? এ জন্যই হয়তো কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছিলেন, ‘অঘ্রাণ এসেছে আজ পৃথিবীর বনে/ সে সবের ঢের আগে আমাদের দুজনের মনে/ হেমন্ত এসেছে…’।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top