skip to Main Content

ফরহিম I বরের প্রস্তুতি

গ্রুম’স গ্রুমিং নিয়ে এখন আর রাখঢাক নেই; বরং যত্নহীনতাতেই বিস্ময়। দেশের মেনস গ্রুমিং স্যালনগুলো ঘুরে বিস্তারিত ফুয়াদ রূহানী খানের বয়ানে

সাধারণত দেশে ব্রাইডাল সিজন শুরুর যে সময়টা, তখন তাপমাত্রার নিম্নগতি। আর্দ্রতাও হাঁটে একই পথে। ত্বক তাই এ সময়ে বেশ খানিকটা রুক্ষ হয়। আর সঠিক যত্নে সারিয়ে তোলা না হলে বিয়ের দিনের সৌন্দর্য পণ্ড!
সমাধানে বরের পারলারে যাওয়া জরুরি। তবেই ত্বকে ফিরতে পারে কোমলতা। উপযুক্ত ফেসিয়ালে ত্বক পরিষ্কার হওয়ার পাশাপাশি মসৃণতাও বাড়ে। তাই বিয়ের তারিখ ঠিক হলে বিউটি এক্সপার্টের শরণাপন্ন হলে পরিকল্পনা হবে যথাযথ। জীবনের এই বিশেষ দিনে নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য অনেকে তাই হাই-এন্ড ফেসিয়াল বেছে নেন। তাই বলে শুধু এক দিন করিয়ে নিলেই সব ঠিকঠাক—এমন ভাবনার ভিত্তি নেই। সাধারণ ক্রিম বা ফেসপ্যাক দিয়ে রাতারাতি ত্বকের জৌলুশ ফেরানো যায় না; বরং ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। আবার দিনের পর দিন ত্বকের যত্ন না নিলে মুখে ময়লার আস্তরণ পড়ে; পাশাপাশি মৃত কোষ জমতে থাকে। ফল—ত্বক অক্সিজেন থেকে বঞ্চিত হয়। পোরস ব্লক হয়ে ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডসের সমস্যা বাড়ে। নিয়মিত ক্লিনজার, ময়শ্চারাইজারের সাহায্য নিয়ে ত্বক পরিষ্কার করলে পাওয়া যায় সমাধান। কিন্তু কী ধরনের ফেসিয়াল করলে বরেরা এ সময়ে বেশি উপকৃত হবেন, জানা দরকার। অনুষ্ঠানের আগে এমন ফেসিয়াল করানো উচিত, যা ত্বকে রক্তসঞ্চালন বাড়াবে, ত্বক দেখাবে জেল্লাদার।
স্কিন কেয়ার
এ বছর বিয়ের পাত্রের জন্য হাইড্রা ফেসিয়ালকেই তালিকার প্রথমে রাখছেন বিউটি এক্সপার্টরা। বেশ খরচসাপেক্ষ, কিন্তু ফল মিলবে শতভাগ। হাইড্রা ফেসিয়ালে মেশিনের সাহায্যে ত্বকের গভীর স্তরে সেরাম পৌঁছে দেওয়া হয়। ফলে ত্বকের যে টিস্যুগুলো শুষ্ক হয়ে যায়, সেগুলো আবার আর্দ্র হয়ে ওঠে। এতে ত্বক তার হারানো সজীবতা ফিরে পায়। এ ফেসিয়ালের মাধ্যমে বিশেষায়িত কিছু জেলকে ত্বকের গভীরে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়। এতেও ত্বকে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। সব শেষে ব্যবহার করা হয় এলইডি মাস্ক।
সাধারণ ফেসিয়ালের চেয়ে এটি একটু আলাদা। বিশেষ ধরনের একটি মেশিনে এই মাল্টি স্টেপ ফেসিয়াল ট্রিটমেন্ট করা হয়। প্রথমে কয়েক ধাপে ক্লিনজিং এবং এক্সফোলিয়েশন সেরে ত্বকে মাখানো হয় কেমিক্যাল পিল। তারপর চলে হরেক রকমের এক্সট্রাকশন প্রসেস। সব শেষে সেরাম মেখে নেওয়া হয় পুরো মুখত্বকে। মেয়েদের ত্বকে হাইড্রা ফেসিয়াল করানোর সময় ত্বকবান্ধব ব্লিচিং এজেন্ট ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু ছেলেদের ত্বকে এমন প্রোডাক্ট ব্যবহার না করার পরামর্শ অভিজ্ঞদের।
অনেক ফেসিয়াল সম্পন্ন করা হয় হাতের স্পর্শে। হাতের তালুর চাপে ধীরে ধীরে মুখে মাসাজ করা হয়। এর মুনশিয়ানায় ত্বকের অন্দরে রক্তসঞ্চালন বাড়ে। ত্বকের প্রতিটি কোষে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছে যাওয়ায় জৌলুশও বাড়ে দ্রুত। তবে হাইড্রা ফেসিয়ালে সম্পূর্ণ কাজটাই সারা হয় একটি বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে।
ফেসিয়ালটিতে একটি বিশেষ ধরনের মাস্ক ব্যবহার করা হয়, যা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া ত্বকের টেক্সচার উন্নত করতে, তারুণ্যদীপ্ত দেখাতে এই ফেসিয়ালে ব্যবহৃত যন্ত্রে নানা রকম ফিচার যুক্ত থাকে।
এই ট্রিটমেন্ট করালে নানা উপকার মিলবে।
 ত্বকে রক্তসঞ্চালন বাড়ার কারণে উজ্জ্বলতা বাড়বে
 শুষ্কতা হটিয়ে হয়ে উঠবে কোমল
 ত্বকের টেক্সচার উন্নত হয়
 আর্দ্রতার মাত্রা বজায় থাকে
 পরিপুষ্ট দেখাবে ত্বক
 ত্বকের ভাঁজ ও বলিরেখা মুছতে শুরু করে।
হাইড্রা ফেসিয়াল সব ধরনের ত্বকে করা যেতে পারে। ক্ষতির আশঙ্কা নেই। বিনিময় মূল্য প্রায় ৫ হাজার টাকা। তবে ট্রিটমেন্ট সেরেই এর সমাপ্তি নয়। এরপরেও নিতে হবে যত্ন।
 দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করা
 রাতে পরিমিত ঘুম
 পর্যাপ্ত পানি পান
 যতটা সম্ভব বাইরে কম যাওয়া; বেরোলেও মাস্ক ব্যবহার জরুরি।
কেয়ার ফর হেয়ার
সাধারণত ছেলেরা দিনের একটি বড় সময় বাইরে থাকে। তাই রোদ, ধুলাবালুতে চুল রুক্ষ হয়। কোমলতা হারায়। এ ছাড়া চুল পড়া, খুশকিসহ নানা সমস্যাও দেখা দিতে পারে। বিয়ের দিন হুট করে হেয়ারস্টাইল পরিবর্তন করলে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। নতুন যেকোনো কিছুতে বরকে অভ্যস্ত হতে কিছুটা সময়ের দরকার। বিয়ের দিনে স্টাইল পরিবর্তন করলে আত্মবিশ্বাসেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এমন হলে তার প্রতিফলন ঘটে পুরো অবয়বে। তাই আমূল পরিবর্তন না করে বরং টুকটাক কাস্টমাইজ করা যেতে পারে হেয়ারস্টাইল। চুলে একই সঙ্গে কালারিং ও শাইনিং ট্রিটমেন্ট নিলে অপেক্ষাকৃত ভালো দেখায়। কিন্তু ডাই ব্যবহারের অল্প সময় পরেই শুষ্কতা দেখা দিতে পারে। তখন আবার বিশেষ যত্নের প্রয়োজন পড়ে।
এর জন্য হেয়ার স্পা চমৎকার অপশন হতে পারে। কারণ, এতে চুল মসৃণ, মোলায়েম ও সিল্কি হয়। নিয়মিত হেয়ার স্পা ও অয়েল মাসাজে চুল পড়ার আশঙ্কা কমে অনেকখানি। কিন্তু চুলের ধরন কোঁকড়া হলে ভালো সমাধান রিবন্ডিং। চুল সোজা দেখানোর কৃত্রিম ও রাসায়নিক পদ্ধতি এটি। বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহারেও ইলেকট্রনিক যন্ত্রের তাপের সাহায্যে চুল সোজা করা হয়। রিবন্ডিংয়ের কেমিক্যাল চুলের প্রাকৃতিক বন্ধন ভেঙে দিয়ে কোঁকড়া ও ঢেউ খেলানো ভাব দূর করে। পরে হেয়ার সেটিং মেশিন দিয়ে চুল জেল বা স্প্রে দিয়ে যতটুকু সম্ভব সেট করে নেওয়া যায়।
হুট করে চুলের ট্রিটমেন্টে দৃশ্যত ভালো ফল দেখায় না, তাই নিয়মিত বাসায় এর পরিচর্যা দরকার। বিয়ের অন্তত এক মাস আগে থেকে চুলের যত্ন নিতে হবে। তাই বলে রোজ স্যালনে যাওয়ার কথা মোটেও বলেননি বিশেষজ্ঞরা; বরং ঘরেই আছে সমাধান। পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে চুলের গোড়ায় পেঁয়াজের রস ব্যবহার করা যেতে পারে। রুক্ষতা দূর করতে এক টেবিল চামচ মধু, লেবুর রস আর অলিভ অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। তারপর ২৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি করা যেতে পারে সপ্তাহে তিন দিন।
এ ছাড়া সপ্তাহে তিন দিন গোসলের আধা ঘণ্টা আগে চুলের গোড়ায় হালকা গরম তেল মাসাজ করা যায়। খুশকি দূরে তেলের সঙ্গে সমপরিমাণ পেঁয়াজের রস মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। চুল পড়ার সমস্যা থাকলে দুই ভাগ সাধারণ হেয়ার অয়েলের সঙ্গে এক ভাগ ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করলে মিলবে উপকার।
বিয়েতে অনেকে নতুন হেয়ারস্টাইল পছন্দ করে। কারও এমন ইচ্ছা থাকলে আগে থেকে চেষ্টা করা যেতে পারে। তাহলে বোঝা যাবে ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তা মানানসই কি না। বিয়ের অন্তত এক মাস আগে হেয়ার স্পা কিংবা মানানসই হেয়ার ট্রিটমেন্ট করানো উচিত।
বড় বড় মেনজ স্যালনে মিলবে ১-২ দিনের ওয়েডিং প্যাকেজ। হেয়ার কাট, শেভ, অয়েল ফ্রি হেয়ার স্পা, মিল্ক পলিশ, হোয়াইটেনিং ফেসিয়াল, পেডিকিউর, মেনিকিউর, মেকওভার, ফ্লাওয়ার ফেসিয়াল, হেয়ার সেটিংয়ের মতো সেবাগুলো থাকে এর মধ্যে। কোনো প্যাকেজ হয় এক দিনের তো কোনোটা দিন দুয়েকের। প্যাকেজে মোট সেবার সংখ্যা, ধরন এবং মান অনুযায়ী দাম ওঠানামা করে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়।

মডেল: সিয়াম
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ওয়্যারড্রোব: ওটু
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top