skip to Main Content

টেকসহি I লোকাল লাভ

কেনাকাটার এমন টেকসই বিকল্প স্থানীয় বিয়ের বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে প্রবলভাবে। এর পরিবেশগত সুবিধাও মেলা

সম্ভবত বিয়েই মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। আর বাঙালিদের জীবনে কাঙ্ক্ষিত বললেও হয়তো ভুল হবে না। বাঙালিই কেন, গোটা দুনিয়ার মানুষ বিয়ে নিয়ে আশা, স্বপ্ন দেখে একটি নির্দিষ্ট বয়স পেরিয়েই। একে ঘিরে গোটা একটা ইন্ডাস্ট্রিই আছে সমগ্র বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে। প্রাচ্যে শীতের সময়টা বিয়ের মৌসুম হিসেবে গণ্য হলেও পাশ্চাত্যে গ্রীষ্মে কিংবা শরতে। মৌসুমে বিয়ের ধুন্ধুমার অবস্থা হলেও বছরের অন্য সময়গুলোতেও যে ব্যস্ততা কম থাকে, তা কিন্তু বলা যায় না। ২০২২ সালে রাজধানী ঢাকায় আয়োজিত ওয়েডিং এক্সপোতে পাওয়া তথ্যমতে, সে বছর বিয়ের বাজারের আকার ছিল ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
বিয়ের পোশাক, গয়না কিংবা অন্যান্য অনুষঙ্গ প্রত্যেক হবু বর-কনের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। বিশেষত কনেরা মনের কোণে এই স্বপ্ন অনেক আগে থেকে বুনতে শুরু করেন। যদিও গায়ে একবারই চাপানো হয়, তবু! বিয়ের স্মৃতি চোখের সামনে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে স্মৃতিজড়িত পোশাকটি স্পর্শ করলেই। তাই এই বিশেষ পোশাক ও অন্যান্য পরিধেয় নির্বাচন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সবার জীবনে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কোথা থেকে এই বিশেষ অনুষঙ্গগুলো নির্বাচন করা উচিত। পছন্দের তালিকায় সবচেয়ে নামীদামি ব্র্যান্ডগুলো এ ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলেও যে ব্র্যান্ড বিশেষ দিনটির গুরুত্ব বুঝতে, পারিপার্শ্বিকতা আর অনুষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী বর-কনের সঙ্গে মানানসই পোশাক, গয়না ও অন্য জিনিসগুলো তৈরি করতে এবং বিশেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে পারবে, এমন কোনোটিকেই বেছে নেওয়া শ্রেয়।
এ ক্ষেত্রে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোকে এগিয়ে রাখার পরামর্শ বিশেষজনদের। সংস্কৃতি, পছন্দ, চলমান ফ্যাশন ও রীতি বুঝতে পারে এমন কোনো একটি বেছে নিলে নিঃসন্দেহে স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকবে বিশেষ পোশাকটি।
 পারস্পরিক বোঝাপড়া: দেশের ভোক্তাদের পোশাক কিংবা গয়নার রুচিবোধ সহজে অনুধাবন করতে পারে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। বর-কনের কাছে দিনটি যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ব্র্যান্ডগুলোর জন্যও কিছু কম নয়। কেননা এর সঙ্গে তাদের সুনাম ও প্রসার ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তারা সময়, পছন্দ, আবহাওয়া, অনুষ্ঠানের ধরন ও বাজেট অনুযায়ী পোশাক কিংবা গয়না নির্বাচন ও তৈরিতে যতটা সময় দিতে পারবে, ভিন্ন দেশের যত নামীদামি ব্র্যান্ডই হোক না কেন, সে সেবা কিন্তু মিলবে না।
 প্রয়োজনে পাশে থাকা: শেষ মুহূর্তের সমস্যা সমাধানে লোকাল ব্র্যান্ডকে পাশে পাওয়া যাবে হুটহাট। যেমন হঠাৎই কোনো জটিলতা দেখা দিল শেরওয়ানিতে; বাটন ছিঁড়ে গেল, কাপড়ে হঠাৎ দাগ লেগে যাওয়া কিংবা সাইজে সমস্যা—এসব ক্ষেত্রে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো মাত্র একটা ফোনকল দূরত্বে থাকে! শুরু থেকে শেষ অব্দি তাই সেবাগুলোও মিলবে দ্রুততম সময়ে।
 কমিউনিটি সাপোর্ট: পোশাক কিংবা গয়না—যেটাই বাছাই করা হোক না কেন, বিয়েতে সবার মতামত যেমন বিশেষ তাৎপর্য রাখে, তেমনি সবারই চাওয়া—প্রিয়জন পাশে থাকুক পুরোটা সময়। অন্যথায় বিয়ে কেবল দাপ্তরিক বিষয় হয়ে রয়ে যেত দুজনের উপস্থিতিতে। সবার অংশগ্রহণেই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা প্রাণ পায়, উৎসবে পরিণত হয়। দেশে শপিং করলে কনে চাইলেই তার প্রিয়জন; যেমন ভাই-বোন কিংবা বাবা-মা অথবা খালা-ফুফুও বিয়ের পোশাক কিংবা গয়না নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। এতে আনুষ্ঠানিকতার অংশ হয়ে ওঠেন সবাই।
 ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ: স্থানীয় কারিগরেরা সে দেশের সংস্কৃতি, সভ্যতা, ঐতিহ্য ও পরম্পরাকে ধারণ করেন, যা দেশটির পরিচায়ক। মসলিন, জামদানি, কাতান, মিরপুর বেনারসি, তসর—এসবের সঙ্গে আমাদের নারীদের সম্পর্ক যেন নাড়ির বাঁধনের মতো। বাঙালি নারী এসবের যেকোনো একটা গায়ে না জড়ালে যেন অপরিপূর্ণ থাকে বিয়ের রীতি। নিজেদের বাজার থেকেই তাই উৎকৃষ্ট পোশাক বেছে নেওয়া ভালো। গয়নার নকশার ক্ষেত্রে অঞ্চলভিত্তিক প্যাটার্ন কিংবা নকশায় ভিন্নতা দেখা যায়, যা ঐতিহ্যকে ধারণ করে। স্থানীয় রীতিগুলোকে দেশের কারুশিল্পী ব্যতিরেকে ভিন্ন দেশের কেউ হৃদয়ে ধারণ করতে পারবেন না এতটা।
 দেশীয় পণ্যের বাজার তৈরি ও প্রসারে সহায়তা: সমগ্র বিশ্বে পাশ্চাত্যের আগ্রাসী মনোভাব যেমন অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তার করেছে, তেমনি সংস্কৃতিতেও। অথচ দেশেই রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্য, রীতিগুলোর রয়েছে শিকড়, রয়েছে বর্ণাঢ্য ইতিহাস! যেহেতু বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় বাঙালিয়ানার ছাপ এখনো টিকে আছে, তাই এই বাজার সম্প্রসারণে এবং বর্ণিল এই ট্র্যাডিশন টিকিয়ে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বিয়ের কেনাকাটা।
 স্বনির্ভর অর্থনীতিতে অবদান: দেশের বাজারে বিয়ের কেনাকাটা সেরে নিলে দেশের টাকা দেশেই থাকবে। এতে চাকরির বাজার বড় হবে, ব্যবসার উন্নতি ঘটবে। এই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা শুধু শহুরেই নয়, উপভোগ করতে পারবে পিছিয়ে পড়া লোকাল ইন্ডাস্ট্রিগুলোও।
 টেকসই উন্নয়নে: লোকাল বিজনেসে বর্জ্য উৎপাদন থেকে কার্বন নিঃসরণ অনুপাত আপেক্ষিকভাবে বেশ কম। নামীদামি ব্র্যান্ড কিংবা ইন্ডাস্ট্রিগুলোই মূলত বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। লোকাল ব্র্যান্ডগুলো দেশীয় কাঁচামাল থেকে পণ্য উৎপাদন করলে পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব কম পড়বে। পুনর্ব্যবহারেরও সুবিধা থাকবে। দ্রুত পচনশীল দেশীয় তন্তু মাটিতে মিশেও মাটির গুণাগুণ অক্ষত রাখবে। ২০২৪ সালে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরে পৃথিবীর কার্বন শোষণের অনুপাত শূন্যের কোঠায়। তাই সবার উচিত যতটা সম্ভব পরিবেশবান্ধব উপায়ে জীবনযাপন করা।

 নাঈমা তাসনিম
মডেল: জেমিম
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: সাফিয়া সাথী
জুয়েলারি: রঙবতী
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top