skip to Main Content

কভারস্টোরি I ডিজাইনার ইন ডিমান্ড

বাজার আর শপিং মল অধ্যায় পেরিয়ে আলোচনায় এখন ডিজাইনার ব্রাইডাল লাইন। সাক্ষাৎ পেতে আগে থেকেই বুকিং। তারপরে সবিস্তার আলোচনা। বর-কনের মনোবাঞ্ছা আর ফ্যাশন ডিজাইনারের মতামতের মিশেলে স্বপ্নময় বিয়ের পোশাক। ড্রিমি ওয়েডিং ওয়্যার যাকে বলে। বিয়ের পাত্র-পাত্রীর আগেই এবার ডিজাইনারের দোরগোড়ায় ক্যানভাস টিম। বিস্তারিত বয়ানে সারাহ্ দীনা

ওয়্যারড্রোব: সারাহ করিম কতুর

বিয়ের বাজার বাংলাদেশে গত এক দশকে বদলে গেছে অনেকটাই। একসময় দিনের পর দিন দল বেঁধে দোকান ঘুরে কেনা হতো বর-কনের পোশাক। মিরপুর বেনারসিপল্লি, গুলশান আর বেইলি রোড অধ্যায়ের শেষে ইস্টার্ন প্লাজার ক্রেজ ছিল দীর্ঘদিন। তারপরে আসে বহুতল বসুন্ধরা সিটি আর জেএফপির আন্ডার ওয়ান রুফ ওয়েডিং শপিং। এক ছাদের নিচে সবকিছু! এসবের পরে যোগ হয়েছে নতুনধারা। ডিজাইনার ব্রাইডাল লাইন। এ যে একদম আনকোরা, তা কিন্তু মোটেই নয়। তবে কলেবর বেড়েছে গত এক দশকে।
ডিজাইনার কনসালটেশনের কনসেপ্ট পছন্দ করছেন ক্রেতারা। হাজার কোটি টাকার বিয়েবাজারের একটি বড় অংশ একসময় দেশের বাইরে চলে যেত; বিশেষ করে ভারতে। আবার অনেকে পোশাক আনাতেন পাকিস্তান থেকেও। সেখানে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। দেশের ডিজাইনার ব্রাইডাল লাইনে ভরসা বাড়ছে। দেশের টাকা দেশেই থাকছে। দেশীয় টেক্সটাইলের ব্যবহারে উপকৃত হচ্ছেন তাঁতশিল্পীরা। কারিগরেরা দেখাচ্ছেন কারিকুরি। কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। সৃজনশীল পেশার দিকে আগ্রহী হচ্ছেন তরুণেরা।
ফ্যাশন লেবেল থেকে বিয়ের পোশাক বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে মনস্তত্ত্বও প্রভাব ফেলে। কারণ, বিয়ের পোশাক নিয়ে বেশির ভাগ মানুষের আলাদা স্বপ্ন থাকে; বিশেষ করে কনের মনে সেই কিশোরী বেলা থেকে নিজেকে বউ সাজে দেখার স্বপ্ন দানা বাঁধে। সে গল্প বহু পুরোনো। ছোটবেলায় পুতুলের বিয়ে দিতে দিতে নিজের বিয়ের সাজপোশাক নিয়ে মনে মনে মুডবোর্ড সাজাতে শুরু করেন মেয়েরা। সেই ভাবনার বাস্তব রূপ দেওয়ার কান্ডারি হিসেবে ফ্যাশন ডিজাইনাররাই অনেকের প্রথম পছন্দ। কারণ, শপিং মলে জাঁকজমকপূর্ণ শাড়ির পসরার বিশাল সংগ্রহ থাকলেও আনকোরা কিছু কমই দিতে পারেন দোকানিরা। সৃজনশীলতার সে জাদুর কাঠি শুধু ডিজাইনারদের কাছেই যে থাকে!

ওয়্যারড্রোব: সাফিয়া সাথী

ডিজাইনার ডেট
অতীতে বিয়ের পাকা কথার পরে অনেক পরিবার বর-কনেকে একটু আলাদা করে দেখা করার সুযোগ করে দিত। সেটাই হতো তাদের প্রথম ডেট। এখন ডেট হয় ডিজাইনারের সঙ্গেও। সেখানেও উত্তেজনার কমতি নেই। বিয়ে নিয়ে ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষার বয়ান শুনে তবেই তিনি বসেন পেনসিল-ট্রেস পেপার নিয়ে। কেমন হবে রং, ফ্যাব্রিক, মোটিফ আর কারুকাজ; সেসব নিয়ে হয় বিস্তারিত আলাপ। এটিও এখন বিয়ের পর্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর-কনে দুজনের পরিবার, প্রিয়জনেরা মিলে চলে যাচ্ছেন ডিজাইনারের স্টুডিওতে। অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখছেন আগে। সেখানে সবাই মিলে আনন্দঘন পরিবেশে সেরে নেওয়া হচ্ছে পোশাক পরিকল্পনার পুরো প্রক্রিয়া।
বিয়ে বলে কথা! টিম ক্যানভাস কি আর পিছিয়ে থাকতে পারে? দেশের শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন ডিজাইনারদের সঙ্গে ডেট সেরে নিয়ে ইতিমধ্যে সংগ্রহ করা হয়ে গেছে। কেমন হবে এবারের বাংলাদেশি ব্রাইডাল লাইন। ক্রেতাপ্রিয় দশ ব্রাইডাল ব্র্যান্ডের বরাতে তৈরি হয়েছে ক্যানভাস ব্রাইডাল ফোরকাস্ট।
কনের পোশাক
বিয়েতে কনের পোশাক নিয়ে আগ্রহ আকাশচুম্বী। সবাই জানতে চায় ঠিক কোন পোশাক পরবেন তিনি, রং কী হবে আর তাতে অলংকরণটাই-বা কেমন। একসময় এ দেশে বউয়ের পোশাক মানেই ছিল শাড়ি। রং হতো লাল অথবা গোলাপি। সেখান থেকে ধীরে ধীরে পটপরিবর্তন। যোগ হয়েছে লেহেঙ্গা, ঘাগরা, শারারা, ঘারারা। আবার কালার প্যালেটেও এসেছে নতুনত্ব। মোটামুটি সব রংকেই ছুঁয়ে গেছে ফ্যাশন ডিজাইনারদের তৈরি ড্রাফট। সাদা, কালো, সোনালি, সবুজ, নীল—কোনোটাই বাদ যায়নি। দীর্ঘদিন প্যাস্টেলের জয়গান ছিল। অলংকরণে ছিল জারদৌসি, হাতের কাজ, মেশিন এমব্রয়ডারি, অ্যাপ্লিক।

ওয়্যারড্রোব: ডুরি

বছর বছর নতুন ট্রেন্ড আসে ফ্যাশন বাজারে। আবার জৌলুশ হারায় নতুনের আগমনে। তবে এবার বিশ্বজুড়ে আলোচিত ফ্যাশন ট্রেন্ড ম্যাক্সিমালিজম। বিয়ের ট্রেন্ডেও সেই ছাপ বেশ স্পষ্ট। পুরোটা বুঝতে ক্যানভাস কথা বলেছে দশজন আলোচিত ব্রাইডাল ডিজাইনারের সঙ্গে। সেখান থেকে পাওয়া তথ্যমতে, এবারে শাড়ির জনপ্রিয়তার পাশাপাশি ঘারারা থাকবে আলোচনায়। লেহেঙ্গা প্রায় এক দশক ধরে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। তবে হালের ব্রাইডাল সিজনে সেখানে কিছুটা ভাগ বসাতে পারে এই আউটফিট। শাড়ির ক্ষেত্রে জামদানির জৌলুশ এবারের কনেদেরও মাত করবে মনে হচ্ছে। এর পাশেই থাকতে পারে কাতান।
ক্রেতাদের পছন্দের কালার প্যালেটকে প্যাস্টেল শেডগুলো জড়িয়ে রেখেছিল একটা লম্বা সময়। সেই ধারায় লাইলাক তালিকার বেশ সামনে থাকতে পারে এবার। বেবি ব্লুও যোগ হতে পারে। সাদা থেকে আইভরি, মন মাতাবে স্নিগ্ধ সুন্দর সব রং। লালের ফিরে আসা এবার চমকে দেওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। গাঢ় রং নিয়ে তাই আগ্রহ বাড়বে এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। পার্ক অব প্যাস্টেলকে ছাপিয়ে যেতে পারে ডার্ক ফ্যান্টাসি।
অলংকরণে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে এগিয়ে আছে জারদৌসি। বলা যায় এই এমবেলিশমেন্ট টেকনিক জাঁকিয়ে বসবে। গর্জাস পোশাকে এমন অলংকরণ এবারে কনেদের পছন্দে প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে। এর পাশাপাশি হাতের কাজ, মেশিন এমব্রয়ডারিও থাকবে চর্চায়। ধারণা করা হচ্ছে, বেশ জমকালো ব্লাউজ এবার পছন্দ করবেন কনেরা। আর বিয়ের ওড়নার লেন্থ ও স্বচ্ছতা—বাড়বে দুই-ই। ফ্যাশন ডিজাইনারদের দেওয়া মতামতের বিস্তারিত থাকছে পাঠকদের জন্য।

ওয়্যারড্রোব: আদ্রিয়ানা এক্সক্লুসিভস

রিনা লতিফ
প্রথিতযশা ফ্যাশন ডিজাইনার। লাক্সারি ওয়েডিং অ্যাটায়ার তৈরিতে তার জুড়ি মেলা ভার। কাজ করছেন বহু বছর ধরে। স্বনামেই ব্র্যান্ডের পরিচিতি। দেশের ফ্যাব্রিক ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক মানের পোশাক তৈরিতে সিদ্ধহস্ত। বর ও কনের জন্য পোশাক পাওয়া যাবে এই ডিজাইনারের ঠিকানায়।
 রিনা লতিফের ব্রাইডাল কালেকশনে এবার সাদার বিভিন্ন শেড নিয়ে কাজ রয়েছে। প্লেইন হোয়াইট, আইভরি, ক্রিম—এসবে ব্যবহার হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এর সঙ্গে থাকবে গোলাপি, লাইলাক আর বেবি ব্লু। সোনালির উপস্থিত থাকবে আভিজাত্য যোগে।
 ফ্যাব্রিকে সব সময়ের মতো এবারও থাকবে দেশি টেক্সটাইলের ব্যবহার। নিজস্ব তত্ত্বাবধানে তৈরি সিল্ক, মসলিন থাকবে তালিকার শীর্ষে।
 মোটিফে প্রকৃতির উদ্ভাসন থাকবে। বিভিন্ন ফুল, পাখি আর গাছের উপস্থিতি নজর কাড়বে।
 অলংকরণে জারদৌসির জাঁকজমক উপস্থাপন প্রাধান্য পাবে তারই ধারায়। ২৪ ক্যারেট গোল্ড জড়ানো সুতার সূক্ষ্ম নকশাও দেখা যাবে ব্র্যান্ডটির এবারকার বিয়ের পোশাকে।
 ওড়নায় ব্যবহৃত হবে সি-থ্র ফ্যাব্রিক। লং ভেইল প্যাটার্নের কদর বাড়বে এ বছর।

ওয়্যারড্রোব: জুরহেম

সারাহ করিম কতুর
নানির দেখানো পথে হেঁটে চলেছেন এই ফ্যাশন ডিজাইনার। সারাহ করিম নামেই পরিচিতি। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কারুকাজ আর ফ্যাব্রিকের জৌলুশ ধরে রাখার প্রত্যয় তার প্রতিটি কাজে। হলুদ, বিয়ে আর ওয়ালিমা—তিন রকমের আয়োজনের জন্য পোশাক তৈরি করেন।
 এবারে সারাহ করিমের বিয়ের সংকলনে লাল রং পাবে বিশেষ গুরুত্ব। প্যাস্টেল নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। সেসব রংও বাদ পড়ছে না। কিন্তু রেড রিভাইব হবে প্রধান আকর্ষণ।
 শাড়ির প্রতি আগ্রহ সব সময় এ দেশে। এবারও থাকবে, পাশাপাশি ঘারারার আলাদা চাহিদা তৈরি হবে।
 ফ্যাব্রিকে টিস্যু ও সিল্ক পাবে প্রাধান্য। সারাহ করিম টিস্যুর আরও আধুনিক সংরক্ষণ ব্যবহার করছেন তার এবারের ব্রাইডাল কালেকশনে। এর বিশেষত্ব বুননে। শক্তিশালী কারিগরি দিক এ ফ্যাব্রিককে আরও টেকসই করেছে।
 জারদৌসি জাদুতে এই ডিজাইনার মাত করেছেন বহু আগে। এবারেও তারই ছোঁয়া নজর কাড়বে ক্রেতাদের।
সাফিয়া সাথী
সমকালীন নকশার বিয়ের পোশাক তৈরিতে নাম করেছেন এই ডিজাইনার। সাফিয়া সাথী নিজের নামেই তৈরি করেছেন ব্র্যান্ড। ট্র্যাডিশনাল থেকে ওয়েস্টার্ন—সব ধরনের বিয়ের পোশাক নিয়েই কাজ করেন তিনি। ব্রাইডাল লাইনে সব্যসাচী বলা চলে।
 সাফিয়া সাথীর এবারের ব্রাইডাল কালেকশনে লাইলাক ও ল্যাভেন্ডার গুরুত্ব পাবে। আইভরি কালার নিয়েও কাজ থাকবে। এর পাশাপাশি প্যাস্টেল প্যালেট নিয়ে ক্রেতা আকর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
 ফ্যাব্রিকে ডুয়াল টোন তসর, ক্রাশ সিল্ক, ডুপিয়ান সিল্ক ব্যবহৃত হবে।
 প্রকৃতিপ্রাণিত এমবেলিশমেন্ট প্রাধান্য পাবে নকশায়। এগুলোর মধ্যে গাছ, ম্যানগ্রোভ বন, ঝোপ, পশুপাখি, প্রজাপতি, পাখা, পালকির উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য।
 জারদৌসি, হাতের কাজ ও মেশিন এমব্রয়ডারিতে কারুকাজ সম্পন্ন হবে।
 ব্লাউজে ভারী কাজ থাকবে; বিশেষ করে হাতা, গলা ও পিঠের অংশে।
 ওড়নার দৈর্ঘ্য বাড়বে। কায়দা করে দুটি ওড়না পরার চল এবার বেশ জনপ্রিয়তা পাবে।
আদ্রিয়ানা এক্সক্লুসিভস
লাক্সারি কতুর ব্র্যান্ড। ডিজাইনার নাজিয়া হাসানের ব্রেইন চাইল্ড। এক্সক্লুসিভ ড্রেস, শাড়ি আর ব্রাইডাল ওয়্যারের জন্য নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠেছে। তবে বাড়তি কদর রয়েছে ব্রাইডাল লাইনের।
 এবারের কালেকশনে লাল, সোনালি, নেভি ব্লু, রয়্যাল ব্লু, জাম রং, রাস্ট অরেঞ্জ, খয়েরি, ম্যাজেন্টা, কমলা রং নিয়ে বেশি কাজ করা হবে।
 তুলনামূলক নরম ফ্যাব্রিক ব্যবহার করা হবে আরাম বিবেচনায়। এগুলোর মধ্যে থাকবে সিল্ক, জর্জেট, বেনারসি। শাড়িতে প্রাধান্য পাবে জামদানিও।
 বরাবরের মতো এবারও জারদৌসি কাজে বিশেষ মনোযোগ থাকবে। পাশাপাশি হ্যান্ড এমব্রয়ডারির চাহিদাও।
 জমকালো ব্লাউজের প্রতি আগ্রহী হবেন কনেরা। এমবেলিশমেন্টে ট্যাসেল, দপকা দেখা যাবে।
 বিয়ের ওড়নায় লং টেইল ডিজাইন থাকবে পছন্দের তালিকায়।

ওয়্যারড্রোব: নিডেলওয়ার্ক

থ্রেড
জামদানি বুননের ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে সংরক্ষণ করার ইচ্ছা থেকে থ্রেডের যাত্রা শুরু। চিরায়তের সঙ্গে সমকালীনের বন্ধনে সৃষ্ট প্রতিটি পিস। সৈয়দা সাদিয়া আফরিনার থ্রেড কনেদের আস্থা ধরে রাখতে অবিচল।
 বাংলাদেশি বউদের পছন্দের তালিকায় বরাবরই জামদানির অবস্থান বেশ ওপরের দিকে। অনেক কনে বিয়ের শাড়ি হিসেবে পরেন আবার অনেকে রাখেন হলুদ, মেহেদি কিংবা বউভাতের জন্য। এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। জামদানি ব্র্যান্ড থ্রেডের এবার ব্রাইডাল কালেকশন তৈরি হয়েছে সূর্যাস্তের অনুপ্রেরণায়।
 থাকবে লালের বিভিন্ন শেড। কারণ, দেশে এখনো বিয়ের শাড়ির রং হিসেবে লালের প্রাধান্য।
 ট্র্যাডিশনাল মোটিফের ব্যবহার থাকবে বেশি।
আফসানা ফেরদৌসী
দেশীয় ফ্যাব্রিকে ঐতিহ্যবাহী নকশার প্রতিফলন আফসানা ফেরদৌসীর নিজস্বতা। ইকো ফ্রেন্ডলি ফ্যাশনকে উদ্‌যাপন করেন তিনি। বিয়ের পোশাকেও টেকসই তত্ত্বকে ধরে রাখার একান্ত চেষ্টা করে এই ডিজাইনার ব্র্যান্ড।
 রঙে থাকবে লাল, গোলাপি, সবুজ, সোনালি আর সবুজ।
 পোশাকে শাড়ি প্রাধান্য পাবে। জামদানি, কাতান, বেনারসি থাকবে।
 এর পাশাপাশি মিনিমালিস্টিক গাউন ও লেহেঙ্গা জায়গা করে নেবে। এসবের জন্য সিল্ক থাকবে এগিয়ে।
 হ্যান্ড এমব্রয়ডারি, জারদৌসির মতো এমবেলিশমেন্ট থাকবে ব্রাইডাল ওয়্যারে। জমকালো কাজের ব্লাউজ আর নেটের ওড়না পরিপূর্ণতা পাবে লুক।
হুর বাই সৌমিন আফরিন
তরুণ ফ্যাশন ডিজাইনার। সমকালীন ও চিরায়ত—দুই ধরনের নকশায় সিদ্ধহস্ত। বিয়ের পোশাকের অলিগলিতে মুনশিয়ানা আছে তার।
 কালার প্যালেট থেকে প্যাস্টেল রঙের ব্যবহার বেশি হবে। পাশাপাশি অফ হোয়াইটের চাহিদাও থাকবে।
 এ দেশের অফিশিয়াল ব্রাইডাল সেশন যেহেতু শীতের সময়, তাই একটু ভারী ফ্যাব্রিকের ব্যবহার বেশি হবে। ভেলভেট, কাতান, তসর, সিল্ক এগিয়ে রাখছেন।
 জমকালো কাজের ব্লাউজের প্রতি আগ্রহী হবেন কনেরা।
 একটি নয়, দুটি ওড়না ব্যবহারের প্রতি আগ্রহ বাড়তে পারে। বিশেষ করে লেহেঙ্গার সঙ্গে ডাবল ড্রেপিং দেখা যাবে।

ওয়্যারড্রোব: জুবাইদা ফাইজা ক্লোদিং

ডুরি
বিয়ের মূল অনুষ্ঠানের আগেও বেশ কিছু পর্ব রয়েছে। সেখানেও পোশাক নিয়ে ভাবতে হয় বর আর কনের। প্রি-ওয়েডিং প্রোডাক্ট লাইন নিয়ে কাজ করছে দেশি ব্র্যান্ড ডুরি। ডিজাইনার নওরীন সুলতানা আদুরী। দেশীয় ফ্যাশনের সাবেকি ধারাকে নতুনভাবে উপস্থাপন করে ক্রেতার মনোযোগ আকর্ষণে কাজ করে যাচ্ছে এই ব্র্যান্ড।
 ডুরি এবার বেইজ, সাদা, সোনালির নানান শেড, লাল রং নিয়ে বেশি কাজ করবে; পাশাপাশি অন্য রংও থাকবে। তবে কালার যেটাই হোক, তাতে শিমারি ফিনিশিং পাবে জনপ্রিয়তা।
 মসলিন, সিল্ক ও বলাকা সিল্ক ব্যবহার করা হবে পোশাক তৈরিতে।
 প্যাটার্ন হবে ফিউশন। ঘারারার সঙ্গে ইউনিক প্যাটার্নের টপ, লম্বা ওড়না থাকবে।
 কারুকাজে ব্যবহার করে হবে ফ্লোরাল মোটিফ। ডুরি ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পোশাকের নকশা করে থাকে। তাই কনের পছন্দ সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। অনেকে পার্সোনাল টাচ যোগ করতে চান। যেখানে প্রিয় কোনো স্মৃতি মিশে আছে। যেমন পোশাকের জমিনে ফুটে ওঠা কফি কাপ, পদ্ম ফুলের প্রিন্ট বা এমব্রয়ডারির মতো এমবেলিশমেন্ট। এই ব্র্যান্ড সেসবকে গুরুত্ব দিয়েও কাজ করে।
জুবাইদা ফাইজা ক্লোদিং
বিয়ের কনের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে ব্র্যান্ডটি। রং, নকশা, অলংকরণ—সবেতেই কনেকে আনকোরা দেখানোর প্রচেষ্টা। বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশগুলোর ঐতিহ্য থেকে অনুপ্রাণিত। ডিজাইনার জুবাইদা ফাইজা।
 এবারের ব্রাইডাল কালেকশনে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের ঐতিহ্যের সন্ধি নিয়ে কাজ করছে ব্র্যান্ডটি। এই তিন দেশের ব্রাইডাল ফ্যাশনে বেশ মিল খুঁজে পাওয়া যায় বলে কালেকশন তৈরি হচ্ছে এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে।
 প্রোডাক্ট লাইনে থাকবে শারারা, ঘারারা, লেহেঙ্গা আর গাউন। অর্নামেন্টেশন সম্পন্ন হবে জারদৌসি আর এমব্রয়ডারিতে।
 রং হিসেবে এবার ম্যাজেন্টা, লাল আর মেরুন হবে প্রথম পছন্দ। এর সঙ্গে প্যাস্টেল প্যালেটও থাকবে।
 ফ্যাব্রিকে মসলিন ব্যবহার করা হবে বেশি।
বরের পোশাক
বরের পোশাক মানেই কি শেরওয়ানি, ওনলি? না! এখনকার বর ভেবে-চিন্তে, হিসাব-নিকাশ করে তবেই সিদ্ধান্ত নেন কোন পোশাক কখন পরবেন। কুর্তা আর পাজামা এ দেশের গ্রুম ওয়্যারে সব সময় ছিল। এবারও ব্যতিক্রম নয়। কটিও যোগ হতে পারে হলুদের অনুষ্ঠানে। শেরওয়ানি এবারও মাতাবে বিয়ের আয়োজন। সঙ্গে যোগ হবে আচকান; ইন্দো-ওয়েস্টার্ন স্টাইলিংয়ে যাদের ঝোঁক, সেসব বরের জন্য। বউভাত, ওয়ালিমা কিংবা রিসেপশনে দেখা যাবে স্যুট অথবা টাক্সিডো। পাগড়ির চল থাকবে। সঙ্গে কিছু গয়নাও দেখা যাবে আরও জমকালো দেখাতে। গ্রুম ওয়্যারের জনপ্রিয় দুই বাংলাদেশি ব্র্যান্ড থেকে জানা গেল বিস্তারিত।
জুরহেম
বরের জন্য পোশাক তৈরি করে জনপ্রিয়তা পেয়েছে জুরহেম। বাংলাদেশের লাক্সারি ফ্যাশন ব্র্যান্ড। এথনিক থেকে ওয়েস্টার্ন—সব মিলবে এই লোকাল ডিজাইনার লেবেলের শপে। মেহরুজ মুনির আর সাদাত চৌধুরীর যৌথ উদ্যোগ।
 এবারের ব্রাইডাল কালেকশনে বরের পোশাকে আকদ্‌এর জন্য কুর্তা-পাজামা রয়েছে। এর সঙ্গে হলুদে যোগ হবে কটি।
 বিয়ের অনুষ্ঠানে শেরওয়ানি আর বউভাতে থ্রিপিস স্যুট অথবা টাক্সিডো থাকবে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে।
 বর এবার অনুষঙ্গ হিসেবে পাগড়ি, এমব্রয়ডারি করা শাল, জুয়েলারি ব্যবহার হবে; তবে মিনিমালিস্টিক লুক ধরে রেখে।
 উচ্চ মানের ফ্যাব্রিক ব্যবহার করা হবে উল ব্লেন্ডেড ফ্যাব্রিক, র সিল্ক থাকবে পছন্দে।
 শেরওয়ানি আর কুর্তায় মনোক্রোমাটিক শেড, অফ হোয়াইট, আইভরি, বেইজ, ক্রিম শেড থাকবে। আবার স্যুট আর টাক্সিডোর জন্য গুরুত্ব পাবে নেভি ব্লু ও কালো।
 অলংকরণ সম্পন্ন করা হবে টোন অন টোন থ্রেড এমব্রয়ডারিতে।

ওয়্যারড্রোব: ওটু

ওটু
গ্রুম ওয়্যার নিয়ে বাংলাদেশি ব্র্যান্ড ওটু কাজ করছে বহু বছর ধরে। ট্র্যাডিশনাল থেকে কনটেম্পরারি—দুই ধরনের স্টাইলিংয়েই দারুণ পারদর্শী এই লেবেল।
 ফিউশন ডিজাইন নিয়ে সম্পন্ন হয়েছে এবারের কালেকশন। বিশেষ আয়োজন শার্ক। এটি শেরওয়ানি ও শার্টের কম্বিনেশনে তৈরি পোশাক। যার দৈর্ঘ্য হাঁটুর ওপরে শেষ হবে।
 বটমে থাকবে লুজ ফিটিং প্যান্ট।
 রঙে প্রাধান্য পাবে প্যাস্টেল প্যালেট।
 ফ্যাব্রিকে প্লেইন সিল্ক, জামেভার, সেলফ টেকচারড সিল্ক।
 মোটিফে অ্যাবস্ট্রাক্ট, অ্যারাবিক ইন্সপিরেশন। প্রাণ জোগাবে বরের পোশাকে।
 অলংকরণ সম্পন্ন হবে জারদৌসি ও হাতের কাজে।
২০২৪-২৫ ব্রাইডাল সিজনে মূলত বিয়ের পিঁড়িতে বসবে জিলেনিয়ালরা। এই মাইক্রো জেনারেশনের বয়স ২৫ থেকে ৩৮ এর মধ্যে। বিয়ের আয়োজনে পরিবার আর প্রিয়জনকে রাখতে ভালোবাসে তারা। ড্রেস কোড মানতে চায় না। নিজেদের পছন্দের পোশাকে বিয়ে সেরে নেয়। আবার মিলেনিয়াল এবং জেনারেশন জেডের কিছু জুটিও আবদ্ধ হবে বিবাহবন্ধনে। ইন্টিমেট ওয়েডিংয়ে আগ্রহ বেশি জেনারেশন জেডদের। বাজেট ওয়েডিং তাদের পছন্দ। অন্যদিকে মিলেনিয়ালরা বড়সড় আয়োজনে বিয়েতে আগ্রহী। পোশাক খাতে বেশ খরুচে তারা।
বাংলাদেশে এ বছরে বিগ ফ্যাট ওয়েডিংয়ের পরিমাণ গত বছরের চেয়ে হয়তো কমে আসবে। যার প্রভাব ব্রাইডাল ফ্যাশন মার্কেটকেও প্রভাবিত করবে। ফ্যাশনে মিনিমালিজমকে পাশ কাটিয়ে ম্যাক্সিমালিজমের যে জয়জয়কার, তার আধিপত্য থাকবে বিয়ের পোশাকেও। সময়ের প্রেক্ষাপটে ডিজাইনারদের পরামর্শে সাজপোশাকে আরও কতটা স্বতন্ত্র হয়ে ওঠেন এবারের বর-কনেরা, তা-ই দেখার পালা।

মডেল: সাবা, প্রান্তর দস্তিদার, সুনেরাহ্, বর্ণ, হাসিন, নন্দিতা, শাওন, সাফা কবির ও সাফা মারওয়া
মেকওভার: পারসোনা
জুয়েলারি: জড়োয়া হাউজ
কনসেপ্ট ও স্টাইলিং: নুজহাত খান
ফ্যাশন ডিরেকশন: মাহমুদুল হাসান মুকুল
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top