skip to Main Content

সেলুলয়েড I লায়লা

কাহিনি: দারিউস মেহরজুই, মাহনাজ আনসারিয়ান
পরিচালনা: দারিউস মেহরজুই
চিত্রগ্রহণ: মাহমুদ কালারি
সম্পাদনা: মোস্তফা খেরগেহপুশ
অভিনয়: লায়লা হাতামি, আলি মোসাফা, জামিলে শেখি
সময়ব্যাপ্তি: ১১০ মিনিট
ভাষা: ফার্সি
দেশ: ইরান
মুক্তি: ২০২০

এক ভোজ অনুষ্ঠানে দেখা। তারপর দ্রুতই ভালো লাগা, ভালোবাসা আর বিয়ে। তেহরানের তরুণ শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত যুগল লায়লা ও রেজার দাম্পত্যজীবন বেশ মধুর কাটছিল। মনের মতো সাজানো নতুন সংসার। সেই স্বপ্নময় আকাশে প্রথম কালো মেঘ ভেসে আসে বিবাহ-পরবর্তী লায়লার প্রথম জন্মদিনে। পরিবারঘনিষ্ঠ জীবনের সেই চিরচেনা প্রশ্ন ছুড়ে আসে তাদের দিকে- কবে সন্তান নেবে তারা? সংসারে সন্তান থাকার স্বপ্ন বুনতেই হবে- এমন বাধ্যবাধকতা অনুভব করে না রেজা কিংবা লায়লা। তবু ভাবে, সন্তান হলে মন্দ নয়। চিকিৎসাবিষয়ক পরীক্ষা শেষে জানা যায়, লায়লার পক্ষে মা হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এ নিয়ে রেজার কোনো ভ্রুক্ষেপ না থাকলেও লায়লার মনের আকাশে মেঘের স্তর বাড়তে থাকে। আর তাতে জোরজবরদস্তিমূলক রসদ জোগায় তার শাশুড়ি। নানাভাবে চাপ দিতে থাকে, স্বয়ং লায়লাই যেন দ্বিতীয় বিয়ের ব্যাপারে রেজাকে রাজি করায়। প্রথমে মজার ছলে হলেও সেই চাপে পড়ে স্বামীকে এ ব্যাপারে রাজি করাতে উঠেপড়ে লাগে। হালকা রসিকতায় চেপে রাখে মনের ব্যথা। বারবার প্রত্যাখ্যানের পর স্ত্রীর এমন নাছোড়বান্দা আবদারে শেষ পর্যন্ত সম্মতি দেয় রেজা। স্বামীকে নতুন কনে দেখতে যাওয়ার সময় সাজিয়ে দেয় স্বয়ং লায়লা। এগিয়েও দেয় অনেকটুকু পথ। কয়েকবারের কনে দেখা ব্যর্থ হলে একপ্রকার রাগের বশেই এক কনেকে বিয়েতে মত দেয় রেজা। তবে শর্ত থাকে, কনে যদি লায়লার পছন্দ হয়, তবেই বিয়ে। আরও শর্ত থাকে, বিয়ের পর লায়লা সংসার ছেড়ে যাবে না কিছুতেই।
অবশেষে আসে সেই দিন। নতুন স্ত্রীকে ঘরে তোলে রেজা। লায়লা তখন নিজেকে আড়ালে রাখে সবার। তারপর রাত গভীর হলে বেরিয়ে পড়ে ঘর থেকে। ছুটতে ছুটতে, বহুদূর পাড়ি দিয়ে, শহরের আরেক মাথায় নিজের বাবার বাড়িতে হাজির হয়। তার বের হয়ে যাওয়া টের পেয়ে পিছু নেয় রেজাও, কিন্তু খুঁজে পায় না। সারা রাত শহরজুড়ে খুঁজে না পেয়ে ভোরে হাজির হয় শ্বশুরালয়ে। লায়লাকে বোঝানোর চেষ্টা করে। নানা মিনতি করে সংসারে ফেরানোর জন্য। কিন্তু লায়লা থেকে যায় নির্লিপ্ত ও নিরুত্তর।
এর কয়েক মাস পর লায়লা জানতে পারে, রেজার নববধূ গর্ভবতী। আরও কিছুদিন পর জানতে পারে, কন্যার পিতা হয়েছে তার স্বামী। আরও বেশ কিছু দিনাতিপাতের পর জানতে পারে, সেই স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে রেজার। তবু লায়লা ফেরে না একদা নিজের সাজানো সেই স্বপ্নময় সংসারে। এর বহুদিন পর একদিন এক আচারনিষ্ঠ ভোজের খাবার নিয়ে, নিজের শিশুকন্যাকে সঙ্গে করে, আবারও লায়লার বাবার বাড়িতে আসে রেজা। সেই কন্যার দিকে স্নেহভরা চোখে তাকিয়ে, মনে মনে নিজের দাম্পত্যজীবনের স্মৃতিচারণা করে লায়লা। তার আর সংসারে ফেরা হয় না। রেজা আর থাকে না সেই আগের হাসিখুশি মানুষ। রেজার পৃথিবীজুড়ে লায়লাকে হারানোর ঘন কালো মেঘ চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে।
এক তারুণ্যদীপ্ত যুগলের দাম্পত্যজীবনের এমন বেদনাতুর পরিণতির ভেতর দিয়ে সমাজে বিদ্যমান নির্দয় মানসিকতার কাব্যিক এমন চিত্র সিনেমায় এঁকেছেন ইরানি মাস্টার ফিল্মমেকার দারিউস মেহরজুই। তার এই সৃষ্টি দেশ-কালের সীমানা পেরিয়ে পরিণত হয়েছে সর্বজনীন মানবচিত্রে।

 আরিফুল ইসলাম

কুইজ
১। লায়লা ও রেজার সংসারে ভাঙন ধরে কী কারণে?
[ক] বনিবনা না হওয়া
[খ] সামাজিক বৈষম্য
[গ] সন্তান না হওয়া
[ঘ] অর্থকষ্ট

২। রেজার দ্বিতীয় বিয়ের ধারণাটি কার?
[ক] তার মায়ের
[খ] তার স্ত্রীর
[গ] তার বাবার
[ঘ] তার বোনের

৩। রেজার পরিবারের আর্থিক অবস্থা কেমন?
[ক] সচ্ছল
[খ] হতদরিদ্র
[গ] অতি ধনী
[ঘ] দিন আনে দিন খায়

গত সংখ্যার বিজয়ী
১. সামারা সুলতানা, গুলশান, ঢাকা।
২. শামস আদনান, টাইগারপাস, চট্টগ্রাম।
৩. মানহা মুশারাত, উত্তরা, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top