ফিচার I থার্স্টি থার্টি ফার্স্ট
থ্রি, টু, ওয়ান…হ্যাপি নিউ ইয়ার। শেষ অধ্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে ২০২৪। পাওয়া না পাওয়ার সরল অঙ্ক মিলবে এই দিনে। খুশির বাঁটোয়ারা চলবে। ঝলমলে রাংতায় মোড়ানো নতুনকে নিমন্ত্রণ জানিয়ে উদযাপন চলবে রাতভর
বছরের শেষ মাস চলছে। মনে মনে শুরু হয়েছে কাউন্টডাউন। এক দিন, এক দিন করে শেষ বিন্দুতে পৌঁছে যাচ্ছে ২০২৪। পুরো বছর ধরে হাজার রকম অনুভূতির সঙ্গে দেখা হয়েছে। ভালো লাগা, খারাপ লাগা, পাওয়া না পাওয়ায় কেটেছে বছর। তবু যখন শেষ দিন আসে ক্যালেন্ডারে, তখন একটু বিশেষভাবে সময়টাকে কাটানোর ইচ্ছা হতেই পারে। ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ উদ্যাপন সরাসরি আমাদের দেশের সংস্কৃতি নয়। কিন্তু এই গ্লোবাল ভিলেজ ফিলোসফিতে কোনো উৎসবকে সীমান্তে আটকানো খানিকটা অসম্ভবই বটে। বারো মাস যেমনই কাটুক, ডিসেম্বর এলে সমাপ্তির সূচনা নিয়ে ভাবনা আসে মনে।
প্রতিবছর বিশ্বের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে থার্টি ফার্স্ট উদযাপনের উদ্দেশ্যে সমবেত হয় মানুষ। রিও ডি জেনিরো, ফ্লোরিডা, লন্ডন, প্যারিস, নিউইয়র্ক, সিডনি। প্যারিস এগুলোর মধ্যে বিশেষ। কিন্তু সবাই তো আর দেশ ছেড়ে এসব শহরে চলে যাবেন না। তাহলে তাদের কী হবে? তারা কোনো একদিন এসব সেলিব্রেশন পয়েন্টে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেই জীবনসায়াহ্নে পৌঁছে যাবেন, তা তো কাম্য নয়! তাই নিজের আয়ত্তের মাঝে পরিকল্পনা করে কাটানো যেতে পারে বছরের শেষ দিন আর রাতটি।
আমাদের দেশের ফাইভ স্টার আর ফোর স্টার হোটেল, ক্লাব, বিচ রেস্টুরেন্টসহ বেশ কিছু স্থানে জিরো আওয়ার সেলিব্রেশনের নানা তরিকা দেখা যায়। সেখানে অতিথি হিসেবে যাওয়া যেতেই পারে। আগে থেকে পোশাক তৈরি করা, সাজ নিয়ে ভাবনা আর ভেন্যু সিলেকশন ছাড়া এই প্ল্যানে তেমন কিছু করার নেই। কিন্তু বাসায় নিজের মতো আয়োজন করতে চাইলে, পরিকল্পনা করা চাই আগে থেকেই।
আমন্ত্রণ গ্রহণ করে ঠিক কতজন অতিথি উপস্থিত থাকবেন, সে হিসাব করে নেওয়া যেতে পারে প্রথমে। তাহলে সেই সংখ্যা বিবেচনায় বাকি সবকিছু নিয়ে ভাবনা সহজ হবে। ইনডোর ও আউটডোর- এই দুই অপশনের মধ্য থেকে বেছে পছন্দসই জায়গা নির্ধারণ করা যেতে পারে। যেহেতু ডিসেম্বরের শেষ দিকে বেশ শীত পড়ে বাংলাদেশে, তাই অনেকে অন্দরেই সারেন সবটা। অতিথি তালিকা প্রস্তুত হলে তার ওপর নির্ভর করবে বাকিটা। বন্ধু দল, সহকর্মী, কাজিন অথবা পরিবার নিয়েই সাধারণত আয়োজন হয়ে থাকে। যারা আসবেন তাদের বয়স, সম্পর্ক, পছন্দ-অপছন্দকে মূল্য দিয়ে পরিকল্পনা করা যেতে পারে। প্রয়োজনে পরামর্শ নেওয়া যায় অতিথিদেরও। তাহলে স্বস্তিতে সবার কাটবে সময়টা।
গল্প-গানে
সবাই মিলে চায়ের কাপে ঝড় তোলার মতো গল্প করতে চাইলে একটি বড় কামরা প্রস্তুত করতে পারেন। যেখানে বিভিন্ন রকমের বসার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। তাহলে গল্প জমবে বেশ। তীক্ষ্ণ আলোর তুলনায় আরামদায়ক আলোই শ্রেয়। দেয়ালে ঝুলিয়ে দিতে পারেন এক সারি ফেইরি লাইট। স্পিকারে মৃদু শব্দে বাজতে পারে পছন্দের গান। খাবার হিসেবে ফিঙ্গার ফুড খুব জরুরি এখানে। সঙ্গে চা আর কফি থাকলে জমবে বেশ। ডিনারে রাখতে পারেন তেহারি। ১২টা ১ মিনিটে কাটতে পারেন কেক। রাতভর আড্ডার প্ল্যান থাকলে বেকারি আইটেম রাখা যেতে পারে একটু বেশি করে। ছবি তোলার জন্য তৈরি করতে পারেন একটি কর্নার। সাজাতে পারেন বেলুন, ডেকোরেটিভ আইটেম।
মুভি নাইট
প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো যেতে পারে পছন্দের কোনো মুভি দেখে। পপকর্ন, পটেটো ওয়েজেস, ওয়েফার, চিপস, কফি থাকতে পারে সঙ্গী হয়ে। টিভিতে কিংবা প্রজেক্টরের স্ক্রিনে রাখা যেতে পারে চোখ। আরামে বসার মতো আয়োজন থাকলে ভালো। বড় বড় কুশন দিয়ে জায়গাটি সাজালে বেশ আরামে কাটবে সময়। মৃদু আলো এমন স্থানের জন্য উত্তম। বেশ কিছু চলচ্চিত্র এই রাতের জন্য উপযোগী বলে মত পাওয়া যায় অন্তর্জালে। যেমন নিউ ইয়ারস ডে, ফ্যান্টম থ্রেড, গডফাদার টু, স্লিপলেস ইন সিয়াটল, দ্য গোল্ড রাশ, হোয়েন হ্যারি মেট শেলি, অ্যান অ্যাফেয়ার টু রিমেম্বার।
দ্য লেডিস নাইট
শুধু মেয়েরা মিলে হতে পারে সেলিব্রেশন। সবাই মিলে এক গাড়িতে করে ঘুরে আসা যায় পুরো শহরে। কাছে-পিঠে কোনো রিসোর্টেও সময় কাটানোর বিষয়ে ভাবা যেতে পারে। নেওয়া যেতে পারে স্পা। তাহলে কর্মব্যস্ত বছরটির শেষ সময়ে একটু রিল্যাক্স হবে শরীর। সবার মি টাইম মিলে আওয়ার টাইম কাটতে পারে। একসঙ্গে দেখে নেওয়া যেতে পারে একটি রম-কম মুভি। চলতে পারে হাস্যরস। একই প্ল্যানিং ছেলেরাও করতে পারেন অবশ্য। বন্ধুদের সঙ্গে দারুণ সময় কাটবে।
ক্যাম্প ফায়ার
বাসার বাইরে জায়গা থাকলে অথবা কোথাও ঘুরতে গেলে হতে পারে ক্যাম্প ফায়ার। হাসি-আনন্দে কেটে যাবে দারুণ সময়। মার্শমেলো, চকলেট, ক্রেকারস থাকতে পারে মেনুতে। আড্ডা শুরু করার উদ্দেশ্যে আইসব্রেকার গেমসে কাটানো যেতে পারে প্রথম কিছু সময়। তাহলে জমবে জমায়েত।
ওয়ান ডিশ পার্টি
সব আয়োজন একা না করে ভাগ করে নিতে পারেন। একেকটি ডিশ তৈরি করতে পারেন একেকজন। ভিন্ন স্বাদের সঙ্গে পরিচয় যেমন হবে, তেমনি আয়োজন সামলানোর ঝক্কিও কিছুটা কমবে। তবে এমন আয়োজনে আগে থেকে সবাই মিলে বিশদ আলোচনা করে নিলে মঙ্গল। তাহলে কে কোন আইটেম নিয়ে হাজির হবেন, সে বিষয়ে জানা থাকবে। একই ডিশ দুজনে বানিয়ে অযথা কষ্ট করবেন না।
ট্যুর
ঘুরে বেড়াতে পারেন বছরের শেষ দিনে। এবারে দিনটি পড়েছে মঙ্গলবার। সপ্তাহের মাঝখানে ছুটি সংগ্রহ করা সম্ভব হলে দুদিনের ট্রিপে বছরকে জানাতে পারেন বিদায়। আমাদের দেশে কক্সবাজারে নানাভাবে আয়োজন করা হয় থার্টি ফার্স্ট নাইট। পার্টি মুড থাকলে চলে যেতে পারেন সেখানে। আবার ইচ্ছা হলে একলাও হারাতে পারেন সাগরতীরে। খোলা আকাশের নিচে। এ ছাড়া ট্রু ডেস্টিনেশন হতে পারে কুয়াকাটা, সুন্দরবন, রাঙামাটি, শ্রীমঙ্গলের মতো অপার্থিব সুন্দর স্থান।
ফ্যামিলি গেম নাইট
ভাই-বোন আর বাবা-মা মিলে আয়োজন করতে পারেন। ছোটবেলার বোর্ড গেমগুলোতে মাতিয়ে রাখতে পারেন পুরো বাড়ি। লুডু, ক্যারম, মনোপলিতে জমাটি একদম। মায়ের আর বাবার পছন্দের খাবার রান্না করতে পারেন। অথবা ফরমায়েশি রেস্তোরাঁ থেকেও মিলতে পারে খাবারবাটি। হাসি-আনন্দে সুন্দর সময় পার করে বিদায় দিতে পারেন বছরটিকে। পরিবারে ছোট বাচ্চা থাকলে তার জন্য রাখতে পারেন বেলুন কাউন্টডাউনের আয়োজন। নম্বর লেখা বেলুন সে ফুটো করতে পারবে ঘড়ির সময় দেখে দেখে। শেষ মুহূর্তে শেষ বেলুনটি হাতে শুরু হবে তার উদ্যাপন।
উপহার
নতুন বছর উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানোর পরিকল্পনাও করতে পারেন এদিন। চকলেট, ফুল, ফটোফ্রেম, মগ, ব্রেসলেট, বই হতে পারে বছর শুরুর উপহার। বাচ্চাদের জন্য কালার পেনসিল, ক্যান্ডি, সফট টয় হতে পারে গিফট।
বিদায়ের পরেই আবার নতুনকে বরণের বাঁশি। হাজার রকম নতুনের সঙ্গে পরিচয় করাতে আসছে ২০২৫। যেন আনকোরা একটি বই। চিকন ঝরনা কলমে গোটা গোটা অক্ষরে নতুন করে স্বপ্ন লেখার সুযোগ।
সারাহ্ দীনা
ছবি: ইন্টারনেট