skip to Main Content

বিশেষ ফিচার I মুক্তিযুদ্ধ: আব্বা ও তার আলোকচিত্র

আব্দুল হামিদ রায়হান। বীর মুক্তিযোদ্ধা। মহান মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য ছবি তুলেছেন। জন্ম ১৯৩২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর, কুষ্টিয়ায়। এই কীর্তিমান ১৯৬৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তারও আগে, কুষ্টিয়া থেকে ভাষা আন্দোলনও করেছেন। তার তোলা একাত্তরের আলোকচিত্রের ওপর আলোকপাত করেছেন তারই সন্তান- চিত্রশিল্পী, শিক্ষক, লেখক এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক (প্রযোজনা বিভাগ) আব্দুল হালিম চঞ্চল

আব্বার তোলা ছবি নিয়ে কথা বলা আমার পক্ষে বহু দিক থেকেই মুশকিল। আবার শৈশব থেকে দেখার ফলে আলোকচিত্র হিসেবে না দেখে এগুলোকে আমি পরিবারের অংশ মনে করি। এগুলোকে ঘিরেই ধীরে ধীরে বড় হয়েছি। চারুকলায় এসেছি, দৃশ্যমাধ্যমে পড়েছি, আবার সেই বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই। ফলে দৃশ্যের উপস্থাপন এবং এর যে রাজনীতি থাকে, তা নিয়ে আমাকে পাঠদান করতে হয়। সেই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের যে প্রচলিত বয়ান আছে, সেই সব বয়ান নিয়ে নানা তর্ক, বিতর্ক বিদ্যমান, তা-ও আমাদের জানা।

আব্দুল হামিদ রায়হান

ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি, আব্বার কাছে নানা পর্যায়ের লোকজন, বিবিধ গবেষক এসে ছবি নিয়ে যান। তবে তার তোলা ছবি আমরা এভাবে কখনো দেখিনি। এসব ছবির যে ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে, তা শৈশবে বুঝতে পারিনি। ১৯৯২ সালে ঢাকায় আসার পর যখন চারুকলায় (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ) প্রথম বর্ষে পড়ি, সে বছর তার তোলা প্রথম ছবি নিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ২০০-২৫০টি। সেখানকার লাইব্রেরিতে তার একটি গ্যালারিও আছে। এর আগে বগুড়া, যশোর ও ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট তার তোলা ছবি নিয়েছে; তবে সেগুলো তেমন বড় আয়োজন ছিল না। প্রকৃতপক্ষে, চারুকলায় ভর্তি হওয়ার পর আমার আরেকটি জগৎ খুলে গিয়েছিল। মফস্বল থেকে রাজধানীতে আসা, দৃশ্যমাধ্যমের সঙ্গে জড়িত হওয়ার পর এসব ছবির ব্যাপ্তি ও গুরুত্ব অন্য উচ্চতায় পৌঁছাল আমার কাছে। আব্বার ইমেজ এবং সেই ইমেজ থেকেই আরেকটি জায়গায় নেতৃত্ব দেওয়া, যার একটি জাতীয় গুরুত্ব রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ঘটনায় আমার মনে প্রশ্ন জাগল, কেন অন্যান্য জাদুঘর আব্বার তোলা ছবি নেয় না। এত বড় একটি ইতিহাস, পাঁচ শতাধিক ছবি, যেগুলোর মধ্যে ১০০ থেকে ১৫০টি আমরা দেখি, এর বাইরে চোখে পড়ে না, নেগেটিভ আছে অথচ ডিজিটালাইজ করা নেই, মূল জাদুঘরে এখনো আব্বার তোলা ছবি নেই- এসবই রাজনীতির অংশ। আমরা ইতিহাস বিকৃতি ও ধামাচাপা দেওয়ার কথা শুনেছি। নব্বইয়ের দশকের শেষ লগ্নে এসে উপলব্ধি করি, এসব ইমেজের পেছনের রাজনীতিটা আসলে কী! বলে রাখি, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ও আমার বাবা আব্দুল হামিদ রায়হান বাল্যবন্ধু এবং একসঙ্গে ক্লাস টু থেকে একটি দীর্ঘ সময় সহপাঠী ছিলেন। ২০১২ সালে আব্বার ৮০ বছর যখন পূর্ণ হয়, তখন ঢাকা আর্ট সেন্টারে আমি একটি এক্সিবিশনের আয়োজন করেছিলাম। সেখানে আমীর-উল ইসলাম বলেছিলেন, ‘আব্দুল হামিদ রায়হান আমার রাজনৈতিক উপদেষ্টা।’ কুষ্টিয়া অঞ্চল বা সামগ্রিক রাজনীতি তারা একই সঙ্গে করেছেন। এ রকম অনেক যোগাযোগ থাকার পরেও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কখনো তাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এই স্বীকৃতি না দেওয়াও একটা রাজনীতি।
আব্দুল হামিদ রায়হান কিন্তু সকলেরই। রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের সাধারণ মানুষ, সকলেই তাকে মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্রী হিসেবেই চেনে। অথচ তার নাম তেমনভাবে আসে না। সেটা কি তার ছবির মানের কারণে? আমরা দেখছি, না, তার ছবির কারণে নয়; বরং আব্বা অপরাজনীতির শিকার। জানি, আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি কিংবা পুরস্কারে আব্বার মতো মানুষের কিছু যায় আসে না; তবু তার তোলা ছবিগুলো এমনকি মুজিবনগর সরকারের ডকুমেন্টেশনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তর্ক-বিতর্ক ঊর্ধ্বে রেখে এসব ডকুমেন্টেশন কিন্তু করা যেত।
১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘মুক্তিযোদ্ধা ভলান্টিয়ার কোর’ নামে একটি সংগঠন করা হয়েছিল, যার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম। তার আগে আব্বা করিমপুর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের ইনচার্জ হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম করিমপুরে এলে মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে আবারও তাদের যোগাযোগ গড়ে ওঠে। মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত তাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল না। ফটোগ্রাফার হিসেবে আব্বার বেশ নামডাক ছিল। আমীর-উল ইসলাম তখন আব্বাকে কলকাতায় গিয়ে ফটোগ্রাফির মাধ্যমে ডকুমেন্ট করার আহ্বান জানান। ভলান্টিয়ার কোরের কাজ ছিল মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারকে সহায়তা করা। আব্বার তোলা ছবিগুলো দিয়ে ডকুমেন্ট তৈরি করে সারা বিশ্বকে দেখানো কেন্দ্রচাহিদায় ছিল। পরে আব্বার কাছ থেকে জানতে পারি তৎকালীন ব্রিটিশ মেম্বার অব পার্লামেন্ট ডোনাল্ড চেজ ওয়ার্থের কথা। তার আর্কাইভ খুঁজতে খুঁজতে এই অ্যালবাম ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায়। এসব ছবি দিয়ে মুজিবনগর সরকারের ক্যাম্পেইন চালানো হয়। ছবিগুলোর নয়টি কপি নিয়েছিলেন বাঙালি সাহিত্যিক মৈত্রেয়ী দেবী, আরেকটি নিয়েছিলেন ওই সাবেক ব্রিটিশ এমপি। বিভিন্ন প্রোপাগান্ডার বাইরে থেকে বলতে গেলে, আব্বার ছবি গুরুত্বপূর্ণ। তার সন্তান হিসেবে বলছি না, একজন দৃশ্যশিল্পী হিসেবে বলতে চাই, এই এক্সিবিশনের মধ্য দিয়ে আসলে সাধারণ মানুষের দেখার কিছু আছে।
পেশাগত দিক থেকে আব্বা ফটোসাংবাদিক নন। মজার ব্যাপার হলো, একাত্তরে যখন তিনি ছবি তুলছিলেন, তখনো প্রতিষ্ঠিত ফটোগ্রাফার নন। মূলত শখের বশে মুক্তিযুদ্ধের ফটোগ্রাফি করার তাড়না অনুভব করেন। তার তোলা ছবিগুলোতে রাজনৈতিক ভাষ্যের চেয়ে জনযুদ্ধের ইমেজ বেশি আসে। মুক্তিযুদ্ধ ও মুজিবনগর সরকারের যেসব ডকুমেন্ট করা হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে প্রচার, প্রোপাগান্ডার বাইরে এটা যে যুদ্ধরত জনজীবনের আকাক্সক্ষা, তার তোলা ছবিগুলোর মধ্যে আমরা সেটি দেখতে পাই। আমি মনে করি, এসব ছবির অ্যাসথেটিক্যাল ও ডকুমেন্ট ভ্যালু অনেক বেশি।
আলোকচিত্র ১
এই ছবি কলকাতার জলঙ্গীর একটি শরণার্থীশিবিরে তোলা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নারীদের নিয়ে বেশির ভাগ প্রচারণা ছিল বীরাঙ্গনা হিসেবে। তারাও যে সমান কাতারে যুদ্ধ করতে নেমেছিলেন, এর ডকুমেন্ট খুব কম। এ ছবিতে যারা আছেন, তারা সবাই গ্রামের সাধারণ মানুষ। যুদ্ধের প্রশিক্ষণরত। ছবিতে তাদের যে বলিষ্ঠতা দেখা যায়, তা প্রাণশক্তির বহিঃপ্রকাশ। এটিই প্রতীক হিসেবে মানুষকে ওসব শক্তি জুগিয়েছে। ছবির মানুষগুলোর বেশভূষা দেখলেই বোঝা যায়, এরা আমাদের বাংলাদেশের মানুষ। এই বেশভূষা বর্তমান সমাজের সঙ্গে বৈপরীত্য তৈরি করে। সত্তরের দশকে আমাদের জনজীবনে এরা ছিলেন একেবারেই সাধারণ মানুষ; উচ্চবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত নয়। তাদের বেশভূষা ও বলিষ্ঠতা আমাদের ভাবায় এবং তা এই ছবির মাধ্যমেই। যত সময় যায়, এসব ছবি তত নতুনভাবে আবিষ্কৃত হয়। ছবিটি প্রথমবার আমার চোখে পড়ে ২০০০ সালে। দেখেই ভেবেছিলাম, এই নারীদের আমরা এখন দেখতে পাই কি না। আরেক বেশে হয়তো পাই; তাদেরও যুদ্ধ আছে, বলিষ্ঠতা আছে। মনে হয়েছে, এ ছবি ১৯৭১ নিয়ে আমাদের ভাবাবে। অনেক ছবির মধ্যে এটি অন্যতম, যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ যে একটি জনযুদ্ধ ছিল, সেই ধারণা আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়।
আলোকচিত্র ২
ছবিটি মুজিবনগর সরকারের একটি ইন্টারেস্টিং ডকুমেন্ট। এতে নতুন দেশের সরকারের কার্যক্রমের পদক্ষেপ ফুটে উঠেছে। পেছনে সাইনবোর্ডে লেখাও আছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। দিনাজপুরের বুড়িমাড়ীকে মুক্তাঞ্চল করা হয়েছে এবং সেখানেই ভিসা দেওয়া হচ্ছে। মুজিবনগর সরকার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের হয়ে ভিসা দিচ্ছে। সেই সরকারের অধীনে তৎকালীন ব্রিটিশ এমপি ডোনাল্ড চেজ ওয়ার্থকে ভিসা দেওয়া হচ্ছে। তার মানে, একজন বিদেশি নাগরিককে বাংলাদেশ ভিসা দিচ্ছে এবং তখনো আমরা স্বাধীন হইনি। বাংলাদেশের পক্ষ নিয়ে এই ব্রিটিশ এমপি কিন্তু অনেক কাজ করেছেন এবং বিগত সরকার তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করেছে। ইংল্যান্ড যে সে সময় আমাদের পক্ষে ছিল, তাতে এই ভদ্রলোকের অবদান অনেক। ছবিতে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামকেও দেখা যাচ্ছে। মূলত তার উদ্যোগেই ডোনাল্ড চেজ ওয়ার্থের আগমন। শুধু স্বাধীনতা ঘোষণায় আটকে না থেকে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র যে চলছে এবং অন্য নাগরিককে ভিসা দিচ্ছে, সেই সাক্ষ্য দেয় ছবিটি। এটি সম্ভবত সেপ্টেম্বরে তোলা। রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব নেওয়ার ঘটনাও এই ছবিতে বিদ্যমান। একে আমার কাছে একটি ঐতিহাসিক দলিল মনে হয়।
আলোকচিত্র ৩
ছবিটির লোকেশন সাতক্ষীরার দেবহাটা। যুদ্ধে ট্রেনিংয়ের সময় বন্দুক তাক করে আছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেহ উদ্দিন। ১৯৭১ সালের ৬ নভেম্বর এলাকাটি মুক্ত হয়। সেদিন মুজিবনগর সরকারের স্বরাষ্ট্র, কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামরুজ্জামান সেখানে গিয়েছিলেন। আব্বাও তাদের সঙ্গে গিয়েছিলেন। সেদিনের আরও কিছু ছবি আছে তার কাছে। নানা কার্যক্রমের মধ্যে মোসলেহ উদ্দিন সেদিন আব্বাকে ডেকে ছবিটি তুলে দেওয়ার অনুরোধ জানান। ছবিটিতে ওই মুক্তিযোদ্ধার পাশাপাশি আলোকচিত্রীরও ছায়া আছে। এ যেন এক ছায়া যুদ্ধ! প্রত্যেকেই উপস্থিত। দৃশ্যমাধ্যমের জায়গা থেকে ব্যাপারটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক শিল্পী আছেন, যারা এটি নিয়েই কাজ করেন। তারা তাদের ছায়া, চিহ্ন, পরিচিতি রেখে দেন। আব্বা ব্যাপারটি কিন্তু উদ্দেশ্যবিহীনভাবেই করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের শক্তির বয়ান এখানে উপস্থিত। এখানে প্রত্যেকেই যোদ্ধা হিসেবে হাজির। ২০০৬ সালে রাজধানীর দৃক গ্যালারিতে আব্বার ছবি নিয়ে একটি এক্সিবিশন হয়। তত দিনে ঢাকায় আমি পরিচিত মুখ এবং দৃকের সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল। প্রদর্শনীর প্রচারণার ব্যাপক চেষ্টা চালাচ্ছিলাম। তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই বিষয় আলোচিত হয়। দৈনিক সমকালে একটি বড় ফিচার স্টোরি প্রকাশ পায় আব্বার ছবি নিয়ে, যেখানে এই ছবি ছিল স্পটলাইটে। ছোটবেলায় এর প্রভাব ছিল বাকি সকল মুক্তিযুদ্ধের ছবির মতো। তবে আলোকচিত্র বা দৃশ্যশিল্পের ভাষায় এটি খুব মাস্টারফুল একটি কাজ। ছবিটি আমার বন্ধুমহলে আলোড়ন তুলেছিল। আমরা সবাই তখন পরিণত, প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষ, নানা মাধ্যমে কাজ করছি। কবি-সাহিত্যিক মহলে আড্ডা হতো বেশ। বন্ধুরাই বড় করে ছেপেছিল ছবিটি। সমকালে ছাপা ছবিটি মোসলেহ উদ্দিনের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সহধর্মিণী প্রথম দেখতে পান এবং তিনি তার ছেলেদের দেখান। ছেলেরা প্রথম বিশ্বাস করতে পারেননি, এটি তাদের বাবার ছবি। উনি তত দিনে দাড়ি-টুপি পরা একজন বয়স্ক মানুষ। সেই তরুণ স্মার্ট-হিরোইক বিষয়টি আর নেই। মোসলেহ উদ্দিন ছবিটি দেখে নিজেকে শনাক্ত করেন। পরবর্তীকালে তারা সপরিবারে এই প্রদর্শনীতে এসেছিলেন। ১৯৭১-এ তোলা এ ছবির মুক্তিযোদ্ধার নাম আব্বার মনে ছিল না। তবে প্রদর্শনীতে তাদের কথা হয়েছে এবং একে অন্যকে জড়িয়ে ধরেছিলেন।
দৃকের প্রদর্শনীতে মিডিয়াম ফরমেটে আব্বার বেশির ভাগ ছবি ছিল ওয়েল কম্পোজড। বিন্যাসে স্পষ্ট পেশাদার ফটোগ্রাফারের ছাপ। সাধারণত প্রফেশনালি যারা সাউন্ড হন, তাদের ক্ষেত্রে এটি দেখা যায়। ওনার ছবি তোলার ইতিহাস ধাপে ধাপে! শৈশবে, ১৯৫২ সালে প্রথম ক্যামেরা কেনেন। সেটি অবশ্য মাত্র দু-চার দিন ব্যবহার করেছিলেন। অর্থনৈতিক অনটনে পড়াশোনা ছেড়ে চাকরিতে যোগ দেন; যথারীতি আলোকচিত্রের শখও ছাড়তে হয়। ১৯৬৫ সালে প্রথমবার গুরুতরভাবে প্রেমে পড়ে যান ফটোগ্রাফির। ক্যামেরা কিনে প্রথম কিছুদিন ছবি তোলেন। এতে বেশ খরচও করতে হতো তাকে, যার বড় ধরনের চাপ পড়ত উপার্জনে। দেখলেন, ছবির রিল ডেভেলপমেন্ট, প্রিন্ট করতে নিজ প্রয়াসে কলকাতায় আসা-যাওয়ার বিকল্প নেই। সাধ ও সাধ্যের দ্বন্দ্বে তাই এসব কাজ নিজে নিজেই করতে থাকলেন। কিছু লেন্সও সংগ্রহ করলেন।
১৯৬৫ সাল থেকে তিনি রাজনীতিতেও সক্রিয়। সে বছরই বাংলার তরুণসমাজ আবারও জেগে উঠতে থাকে। আব্বাও সেই জাগরণের অংশ হন, তবে ফটোগ্রাফিকে সঙ্গে রাখেন। পাশাপাশি নিজ কাঁধে থাকা একটি বড় পরিবারের ভারও সামলেছেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের প্রচারণার ছবি তুলেই মূলত তার প্রাথমিক খ্যাতি বা স্বীকৃতি আসে। অতি সতর্ক থেকে তুললে অনেক সময় ছবির প্রাণশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। খেয়াল করে দেখেছি, আব্বার ছবির ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেনি। মান, নিজস্বতা, দৃশ্যভাষ্যের সৌন্দর্যে তার তোলা ছবিগুলো অনন্য।

অনুলিখন: ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: আব্দুল হামিদ রায়হান
[আব্দুল হালিম চঞ্চলের সৌজন্যে)

আলোকচিত্র ১
আলোকচিত্র ২
আলোকচিত্র ৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top