skip to Main Content

ফরহিম I শীতে শ্রুত

শীতে আবার ময়শ্চারাইজার কেন? কেনই-বা সানস্ক্রিন? আলাদা করে বিয়ারড কেয়ারের তো কোনো প্রয়োজনই নেই! সব সমস্যার সমাধান শুধু উষ্ণ জলে। সত্যি, নাকি মিথ্যা?

পুরো বছরের রাগী সূর্যের রুদ্র প্রতাপে এ সময়ে জল ঢেলে দেয় কুয়াশা। হিম হিম হাওয়ার পরশ ত্বক ছুঁয়ে যায়। ফলাফল—কোমলতা উবে যায় কর্পূর হয়ে। রুক্ষতায় যাচ্ছেতাই অবস্থা হয় ত্বকের। এমন অসময়ে যত্ন বড্ড প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়। ত্রাহি ত্রাহি অবস্থায় ত্বক চায় মমতার কোমল ছোঁয়া। কিন্তু আমাদের দেশে প্রচলিত বেশ কিছু ধারণায় অনেকে ভাবেন, গোসলের সময় মুখ ধোয়া বা কাজ থেকে ফিরে এসে একবার সাবান দিয়ে মুখ ধুয়ে সামান্য পেট্রোলিয়াম জেলি বা ক্রিম মেখে ফেললেই হয়ে গেল উইন্টার কেয়ার। সেগুলো এবার ধুর ছাই বলে উড়িয়ে দেওয়ার সময় এসেছে!
মিথ ১: ময়শ্চারাইজারের নেই প্রয়োজন
ছেলেদের ত্বক তুলনামূলক বেশি তেল নিঃসরণ করে। এ কারণে কোমল থাকে। কিন্তু শীত এলে ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায়। ছেলে-মেয়ে দুই দলের ক্ষেত্রেই এটি সত্যি। ঠান্ডা বাতাস, কম আর্দ্রতা ত্বককে বদলে দেয়। আলাদা করে ছেলেদের ত্বকে শীতের প্রভাব কম পড়ে না। ফলাফল ত্বকের শুষ্কতা। যা থেকে হয় অস্বস্তি। ত্বকে তেলের পরিমাণ সামান্য কম-বেশি থাকলেও আর্দ্রতা নিয়ে সচেতনতা আবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়। লাইটওয়েট, নন-কমেডোজেনিক ময়শ্চারাইজার ব্যবহারে পাওয়া যেতে পারে সমাধান। এতে পোরস বন্ধ হয়ে যাওয়া কমবে। প্রাকৃতিক আর্দ্রতাও বজায় থাকবে। আবার ময়শ্চারাইজার ত্বকের ওপরে একটি প্রলেপ তৈরি করে; যা পরিবেশের বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদানের হাত থেকে বাঁচায় ত্বক। জেল অথবা ওয়াটার বেসড ময়শ্চারাইজার ব্যবহারে উপকার পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে হায়ালুরনিক অ্যাসিড অথবা গ্লিসারিন উপস্থিত থাকলে অতিরিক্ত তেল ব্যবহারের আর প্রয়োজনীয়তা থাকবে না।
মিথ ২: শীতের স্নানে উষ্ণ জল
শীতের দিনে অনেকের রুটিনেই হট শাওয়ার ইজ আ মাস্ট। কারণ, বাইরে যখন হিমশীতল বাতাস, তখন স্নানঘরের কয়েক মুহূর্তের উষ্ণতার আকর্ষণ এড়ানো কঠিন। আবার অনেকে বিশ্বাস করেন, গরম পানিতে গোসলের উপকারিতা অনেক। এর মধ্যে দেহ উষ্ণ রাখা এবং আর্দ্রতা নিয়ে নিশ্চিন্তির আশাজাগানিয়া গল্প অন্যতম।
অথচ গরম পানি ত্বকের জন্য মোটেই শতভাগ ভালো নয়। প্রয়োজনে দশ-পনেরো মিনিট হালকা গরম পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। এর বেশি না হওয়াই মঙ্গল। কারণ, দেহের চামড়া গঠনগত দিক থেকে বেশ পাতলা। আর গরম পানিতে গোসলে পুরো দেহের ত্বকই উষ্ণ পানির স্পর্শ পেয়ে থাকে। ফলাফল—ত্বক থেকে প্রাকৃতিক তেলের বিদায়, ত্বকের শুষ্কতা এবং অস্বস্তি। একজিমা, সোরায়সিস অথবা যেকোনো ত্বকের সমস্যা থাকা অবস্থায় গরম পানিতে গোসল করার বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো। নয়তো তাপমাত্রার ভিন্নতার এই সময়ে আরও বেশি ভুগতে হতে পারে।
মিথ ৩: সানস্ক্রিন শুধুই গ্রীষ্মের জন্য
সানস্ক্রিন প্রয়োজন সব সময়। ছয় ঋতুর এই দেশে বছরজুড়ে। শীত এলে আলমিরায় তুলে রাখার জো নেই মোটেই। যদিও অনেকে বিশ্বাস করেন, সান প্রোটেকশন শুধু গ্রীষ্মেই প্রয়োজন; শীতের সময়ে নয়। কারণ, এই সময়ের সূর্যের রশ্মি নাকি মোটেই কোনো ক্ষতি করে না। আসলেই কি তাই? বিজ্ঞান বলে, এমন কোনো যুক্তি কোথাও নেই। সব সময় রোদে ইউভি রশ্মির উপস্থিতি থাকে; যা ত্বকের সমস্যার কারণ হতে পারে। এমনকি কুয়াশামাখা সময়েও থাকে এই শঙ্কা। সূর্যের আলট্রা ভায়োলেট রে ত্বকের ভেতরে পৌঁছে গিয়ে বয়সের ছাপ তৈরি করতে পারে। অকালে বুড়িয়ে দিতে পারে ত্বককে। স্কিন ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ায়। বছরের সব দিনেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করার পরামর্শ দেন ত্বক বিশেষজ্ঞরা। এসপিএফের মাত্রাতেও রাখতে বলেন নজর। অন্তত ত্রিশ হলে তা ব্যবহারে উপকার পাওয়া যাবে বলে মত দেন বেশির ভাগ রূপবিশেষজ্ঞ।
মিথ ৪: প্রয়োজন নেই এক্সফোলিয়েশন
ত্বকে মৃতকোষ সব সময় জমে। গরম পেরিয়ে শীত এলে মৃতকোষ শীতনিদ্রায় চলে যায় না। তাই সব সময় এক্সফোলিয়েশন জরুরি। প্রকৃতিতে আর্দ্রতা কমে এলে ময়শ্চারাইজার ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বাড়ে। আর নিয়মিত এক্সফোলিয়েট করে মৃতকোষ সরিয়ে নিতে পারলে ময়শ্চারাইজার পৌঁছে যায় ত্বকের গভীরে।
ঠান্ডা আবহাওয়ায় ত্বক ঠিকভাবে পরিষ্কার করা না হলে মৃতকোষ জমে মলিন করে তোলে। এমনকি ত্বকের পোরস বন্ধ করে ফেলে। প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুবার এক্সফোলিয়েট করা যথেষ্ট। এ জন্য প্রয়োজন একটি জেন্টল স্ক্রাব অথবা আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড কিংবা বেটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড উপস্থিত আছে এমন কোনো এক্সফোলিয়েটর।
মিথ ৫: দাড়িও থাকুক যত্নে
দাড়ি ত্বককে আড়াল করে রাখা মানেই ত্বক সুরক্ষিত, এমনটা কিন্তু মোটেই নয়। শীত এলে এই জায়গার ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। সেখান থেকে হতে পারে খুশকি। ফলাফল—ত্বক যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি দাড়িও। এসব কারণে শীতের সময়ে বিয়ারড কেয়ার রুটিনে ময়শ্চারাইজার ও কন্ডিশনার যোগ করা খুবই জরুরি। প্রতিদিন বিয়ারড অয়েল অথবা বাম ব্যবহার করে ময়শ্চারাইজ ও কন্ডিশনিং করে নেওয়া যেতে পারে। নিত্যদিন গোসল সারার মতো করে পানিতে দাড়ি পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপরে মৃদু কোনো ক্লিনজার ব্যবহারে পরিষ্কার করে নেওয়া গেলে ভালো। প্রাকৃতিক তেলযুক্ত প্রসাধন বেছে নিলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।

 বিউটি ডেস্ক
মডেল: সানাহ
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: নাইমুল ইসলাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top