নখদর্পণ I হাইপোনিকাম
ময়লা আর জীবাণু থেকে নখ সুরক্ষিত রাখাই মূল কাজ। কিন্তু বেশি বাড় বাড়লেই তৈরি করে অস্বস্তি
নামটাই শুধু খটমটে। ব্যাপারটা খুব সাধারণ। একটু খেয়াল করলেই ধরা পড়ে চোখে। নখের নিচে বেড়ে থাকা মাংসল অংশ। আসলে যার পুরোটাই চামড়ার পরত। বাড়তে শুরু করলে নেইল বেড থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে অনেক সময়। আঙুলের মাথার কাছাকাছিও পৌঁছে যেতে পারে।
নখের ভেতরে যেন বাইরে থেকে কোনো ধুলাময়লা বা জীবাণু প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এটি। এই অংশের ত্বকে থাকা হোয়াইট ব্লাড সেল সংক্রমণ রোধে কার্যকর। সবই তো ইতিবাচক, তাহলে সমস্যা কোথায়!
হাইপোনিকাম কী
এটি মূলত একটি টিস্যু, যা নখের নিচে অবস্থিত। নেইল প্লেটকে আঙুলের ডগায় সংযুক্ত করে রাখে। প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়াকে আঙুলের ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়। নখের প্রান্তভাগের কাছাকাছি এর অবস্থান। তাই একটু বাড়তি হলেই বাড়ায় সমস্যা। তখন স্বস্তিতে নখ কাটা যায় না। ছোট করে কাটতে গেলেই মাঝে আসে এই হাইপোনিকাম। খোঁচা লাগে। অসাবধানতায় অনেক সময় কেটেও যেতে পারে। তখনই বাড়ে বিপত্তি।
ওভারগ্রোন হাইপোনিকাম
এই অংশের টিস্যু অত্যধিক বাড়ার ফল এটি। এ ছাড়া চামড়াও পুরু হতে দেখা যায় অনেক সময়। শুধু হাতের নখ নয়, পায়ের নখও আক্রান্ত হতে পারে সমস্যায়। কিন্তু কেন বাড়ে হাইপোনিকাম? বিশেষজ্ঞদের ব্যাখায় জিনগত কারণ সবচেয়ে বেশিবার উল্লেখ করা হয়েছে। জন্মসূত্রেই অনেকের এই সমস্যা থাকতে পারে অথবা জীবদ্দশায় যেকোনো সময় হতে পারে। লুপাসের মত, অটোইমিউন কন্ডিশনকে দায়ী করা হয় এর জন্য। এ ছাড়া বাহ্যিক নানা কারণেও ওভারগ্রোন হাইপোনিকাম দেখা দেয় নখে। উদাহরণস্বরূপ, সবচেয়ে বেশি উল্লেখ মেলে দীর্ঘ সময় ধরে জেল আর অ্যাক্রিলিক নেইল পরে থাকা। এ ছাড়া কনটাক্ট ডার্মাটাইটিসের ফলেও হতে পারে এ সমস্যা। নখ আঘাতপ্রাপ্ত হওয়াকেও অনেকে হাইপোনিকামের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তালিকায় আরও আছে নেইল সোরায়সিস আর ফাঙ্গাল ইনফেকশনের নাম।
সোরায়সিস
ত্বকসংক্রান্ত এই সমস্যায় স্কিন সেলগুলো দ্রুত বাড়তে থাকে। এটা দেহের কোনো অংশের ত্বকেই হতে পারে। নখও এর বাইরে নয়। নেইল সোরায়সিস নখের অনেক অংশে হতে পারে। হাইপোনিকাম ও নেইল বেড এতে আক্রান্ত হলে এ অংশের কোষও দ্রুত বাড়তে শুরু করে। দেখা দেয় স্কেলিং আর বিল্ডআপ। এই ওভারগ্রোথকে বলা হয় সাবাঙ্গুয়াল হাইপারকেরাটোসিস। এতে করে নখের নিচের এই ত্বক পুরু হতে শুরু করে। হয়ে যায় বর্ণহীন; দেখায় খড়ির মতো খসখসে। পুরুত্ব খুব বেশি বাড়লে দেখা দিতে পারে অনিকোলাইসিস; যা ধীরে ধীরে নেইল প্লেটকে নেইল বেড থেকে আলাদা করে দেয়।
ফাঙ্গাল ইনফেকশন
অনিকমিকসিস নামে পরিচিত নখের এ সংক্রমণ। যখন ত্বকের কোনো ছত্রাক নখকে সংক্রমিত করে, তখন এই সমস্যার উদ্ভব ঘটে। এটা নখ এবং এর নিচে থাকা টিস্যু—দুটোরই পুরুত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে। এ ছাড়া সাদা ও হলুদাভ বাদামি রং ধারণ করতে পারে নখ। নখের আকারটাই পাল্টে যায় এর দরুন। হয়ে ওঠে ভঙ্গুর ও মোটা। নখের ওপর অনেক সময় গর্ত আর দেবে যাওয়ার ভাব তৈরি হয়। নখের নিচের চামড়া পুরু হয়ে যাওয়ায় মনে হয় নখ উঠে আসবে। এসব সমস্যার শুরুয়াত কিন্তু হাইপোনিকাম থেকে; যা পরে নেইল প্লেট আর বেডে ছড়ায়।
এ ছাড়া চমকে দেওয়ার মতো কিছু কারণও আছে ওভারগ্রোথ হাইপোনিকাম সৃষ্টির। নখ কামড়ানোর অভ্যাস এর মধ্যে একটি। অনেকের নখ খোঁটারও বদভ্যাস থাকে। তা-ও যথেষ্ট নখের নিচে বাড়তি চামড়া সৃষ্টির জন্য। আর একবার যদি দেখা দিয়েই দেয়, সাবধান! কোনোভাবেই টানাটানি বা খোঁটানো যাবে না। আর কেউ যদি বাড়তি চামড়ার অংশটা কাটার কথা চিন্তাও করে ফেলেন, সেই ভাবনা বাদ দিয়ে দেওয়াই ভালো। অংশটা যদি বিবর্ণ দেখায়, দুর্গন্ধ ছড়ায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া চাই কিন্তু।
চিকিৎসায়
সমস্যার সূত্রপাত জেনিটিক্যালি হলে সাবধানতা অবলম্বন করা ছাড়া কিছুই করার নেই। নখ ছোট করে কাটার সময় সাবধান থাকা চাই। ব্যবহার করা যায় কিউটিকল অয়েল অথবা রিমুভার, বেড়ে ওটা পুরু ত্বককে নরম রাখার জন্য। গোসলের পর হাইপোনিকামের ওপর তেল বা রিমুভার ঢেলে আস্তে আস্তে চাপ দিয়ে নখের ভেতরের দিকে ঠেলে দিতে হবে। এই কাজের জন্য কিউটিকল পুশারও ব্যবহার করা যায়। যদি সমস্যার কারণ হয় ঘন ঘন জেল ও অ্যাক্রিলিক নেইলের ব্যবহার, তাহলে তো সমাধান সহজ। কিছুদিনের জন্য বন্ধ করে দিতে হবে নখ সাজানোর কাজ; বরং বেসিক মেনিকিউরে ফিরে যাওয়াই শ্রেয়। বাড়তি যত্নও মিলবে এতে। নেইল সোরায়সিস কারণ হলে ডার্মাটোলজিস্টের দেওয়া পথ্যই ভরসা। টপিক্যাল করটিকস্টেরয়েড এ ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত। ছত্রাকের সংক্রমণ রুখতে রয়েছে ওরাল মেডিকেশন। এ ছাড়া নখের নিয়মিত যত্নে যোগ করা যেতে পারে নেইল সাইকেলিং। এরই মধ্যে এ সমস্যা সারানোর কার্যকর প্রক্রিয়া হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে এটি।
সাবধানতায়
হাইপোনিকাম তেমন গুরুতর সমস্যা নয়। যদি এ অংশ থেকে রক্ত ঝরে, ব্যথা হয়, বিবর্ণ দেখায়, গন্ধ ছড়ায়; তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে দেরি করা যাবে না। যাদের হাইপোনিকামের সমস্যা আছে, নেইলের যেকোনো সার্ভিস নেওয়ার আগেভাগেই তা জানান দিয়ে দেওয়া ভালো। এতে যেকোনো ধরনের ঝুঁকি এড়ানো যাবে সহজে।
বিউটি ডেস্ক
ছবি: সংগ্রহ