skip to Main Content

বিশেষ ফিচার I ফিরে দেখা ২০২৪

১১.২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের সম্ভাবনার সুখবর নিয়ে শেষ হয়েছিল বছরটি। নানা সমীকরণের যোগ-বিয়োগে কেমন কেটেছে সৌন্দর্যবিশ্বের সময়টা

এ বছরের বিউটি বিজনেসে পণ্যের মানকে দেওয়া হয়েছে সর্বাধিক গুরুত্ব। প্রিমিয়াম প্রোডাক্টে আগ্রহী ক্রেতার সংখ্যা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। অনলাইনে কেনাকাটায় আস্থা বেড়েছে মানুষের; বিশেষ করে মেকআপ ও সুগন্ধির ই-কমার্স বিজনেস রমরমা। কিছু ট্রেন্ড ফিরে এসেছে, কিছু নতুন করে হয়েছে সংযুক্ত। যত প্রলেপ, তত নিখুঁত মেকআপের ব্যাকরণ থেকে বহু আগে সরে এসেছিল এই বিশ্ব। এ বছর সেই সিঁড়ির আরও একধাপ এগিয়েছে। বছরের শুরু থেকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘স্কিনমালিজম’। অর্থাৎ অল্পতেই কার্যকরী যত্নের আশ্বাসে বিশ্বাস রেখেছেন সচেতনেরা। রাসায়নিকের ক্রিয়া-বিক্রিয়ায় ত্বকে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় এ নিয়ে চর্চা চলেছে বহু বছর। সমাধানে প্রকৃতির কাছে ফেরার পরামর্শ পাওয়া গেছে ২০২৪ এর প্রায় পুরোটা জুড়ে। এবারে শিকড়ে ফেরার চাহিদা পুরো সময় ধরেই চলেছে। সৌন্দর্যবিশ্ব পার করছে ব্যস্ত একটি বছর।
ফিরে আসা ধারা
নব্বই থেকে নব্য, মেকআপ নিয়ে হয়েছে নানা রকম নিরীক্ষা। এর মধ্যে কয়েকটি ফিরে এসেছে এ বছর। নাইনটিজ বিউটিকে স্বচ্ছন্দে গ্রহণ করেছেন মিলিনিয়ালস আর জেনারেশন জেডরা।
লিপ লাইনে লাইনার
ঠোঁটের চারপাশজুড়ে চিকন করে দাগ টেনে নেওয়ার কৌশল। পেনসিলের দাগের মতো সূক্ষ্ম। এ বছর ফিরেছে পুনরায়। সঙ্গতে লিপ ক্যানভাসে ক্রিমি লিপস্টিক ব্যবহৃত হয়েছে। লিপস্টিকের থেকে গাঢ় শেডের লাইনার ব্যবহারে স্পষ্ট ঠোঁটের অবয়ব। দুয়ের মিশেলে দারুণ নজরকাড়া ঠোঁট।
আই মেকআপ
এ বছর চোখের মেকআপকে আখ্যায়িত করা হয়েছে ‘ভিলেন এরা অব মেকআপ অ্যান্ড স্টাইলিং’। সবচেয়ে এগিয়ে থেকেছে সাইরেন আই মেকআপ। টানটান চোখের মেকআপ যেন রহস্যে ভরপুর। মানায় যেকোনো আকারের চোখে।
সাজসূত্র
সাজে এবার বেশ আগ্রহ দেখিয়েছেন সৌন্দর্যসচেতনেরা। ম্যাক্সিমালিজম মাথাচাড়া দিয়েছে যেহেতু, সাজ তো থাকবেই আলোচনায়। আবার সোশ্যাল হ্যান্ডেলও বেশ প্রভাবিত করেছে এ বছরের সাজের ধারাকে।
হাইলাইটার হাইপ
মেকআপে জনপ্রিয় হয়েছে এই প্রসাধন। সাজকে ঝাঁ-চকচকে করে তুলতে দারুণ সক্ষম। একসময় শুধু চিকবোনে ব্যবহার করা হতো। এ বছরে ব্যাপ্তি বেড়েছে। রাতের আয়োজনে ড্রামাটিক নাইট টাইম গ্লো তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে। নি লেন্থ এবং স্লিটেড পোশাক ব্যবহারে পা দৃশ্যমান হলে সেখানে এই প্রসাধনের প্রলেপের ব্যবহার বছরজুড়ে বেশ আলোচিত। এ ছাড়া আই মেকআপে, ফুলার লিপসে, আইশ্যাডোতেও দেখা যাচ্ছে।
সাইরেন আই
টানা টানা চোখের সাজ। আঁখিপল্লবের স্পষ্ট প্রকাশ। একসময় সিলভার স্ক্রিনের নেতিবাচক চরিত্রের মেকআপ ছিল এমন। এ বছর জনপ্রিয়তা পেয়েছে কম-বেশি সবার মাঝে।
মাসকারা ম্যাজিক
চোখের সাজে মাসকারার ব্যবহারও বহু পুরোনো। এ বছর এটি ব্যবহারের কারিকুরিতে এসেছে পরিবর্তন। চোখের পাপড়ির সবটা জুড়ে নয়, ব্রাশ শুধু আইল্যাশের অগ্রভাগ ছুঁয়ে গেলেই চলবে।
আরগান অয়েল
চুলে আর্দ্রতা সরবরাহ করে। মাথার ত্বক সুস্থ রাখে। চুল ম্যাড়ম্যাড়ে বা শুষ্ক হয় না। ন্যাচারাল হিট প্রটেক্টরও হিসেবেও চমৎকার। হেয়ারস্টাইলিংয়ের ক্ষেত্রেও কার্যকরী। তাই চলতি বছর বিউটি বক্সে এর উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য।
হায়ালুরনিক অ্যাসিড
ত্বকের উজ্জ্বলতা, আর্দ্রতা আর মসৃণতা বাড়ায়। চুলের সুস্বাস্থ্য রক্ষায়ও এই অ্যাসিড জাদুকরি। মাথার ত্বক আর্দ্র করে। প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দেয়। চুল হয় ঝলমলে ও সতেজ। চুলচর্চার উপাদানের তালিকায় এর দেখা মিলেছে বছরজুড়ে।
স্যালিসাইলিক অ্যাসিড
মাথার তালুর সমস্যায় ব্যবহারের উপযোগী। এক্সফোলিয়েশন ক্ষমতা আছে। ক্ল্যারিফায়িং শ্যাম্পু আর অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টগুলোর উপাদান তালিকার দিকে একটু তাকালেই এর উপস্থিতি পাওয়া যায়। এ বছর এর ব্যবহার বেড়েছে বহুগুণে।
ল্যাকটিক অ্যাসিড
ত্বককে সুন্দরভাবে এক্সফোলিয়েট করতে পারে। আবার ত্বকে আর্দ্রতা পৌঁছে দেয়। চুলের যত্নে কাজ করতে পারে। স্ক্যাল্পের ফ্লেকিং দূর করে। অতিরিক্ত তৈলাক্ততা কমায়। ফলে এরও কদর বেড়েছে অনেকটা।
গ্লাইকোলিক অ্যাসিড
ফ্লেকিং কমায়। চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। চুলে জরুরি পুষ্টি জোগাতে সক্ষম এই অ্যাসিড; যা ভঙ্গুরতা রোধ করে। গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ব্যবহারে চুলে জট পড়ে না। ফলে স্টাইলিং সেরে নেওয়া যায় সহজে। এ জন্যই বিকিয়েছেও বছরজুড়ে।
বি বি ক্রিমে বাজিমাত
ব্লেমিশ বাম বা বিউটি বাম। এটি মূলত হালকা টিন্টেড ময়শ্চারাইজার। ত্বকে জরুরি আর্দ্রতার জোগান এবং ফাউন্ডেশনের কাজ একই সঙ্গে করে বি বি ক্রিম। বেসিক বেজ মেকআপ প্রোডাক্টে তৈরি। চেহারায় ভারী প্রলেপে যাদের অনীহা, তাদের জন্য পারফেক্ট। এরও জনপ্রিয়তা থেকেছে তুঙ্গে।
অ্যান্টিপল্যুশন স্কিন কেয়ার
দূষণে দুর্দশাগ্রস্ত ত্বক। সমাধানে গুরুত্ব পেয়েছে অ্যান্টিপল্যুশন স্কিন কেয়ার। মূলত ত্বকে পরিবেশদূষণকারী উপাদানগুলোর ক্ষতির প্রভাব রুখতে বিশেষায়িত যত্ন নেওয়া হয় এই রূপচর্চায়। তৈরি করা হয় প্রতিরক্ষামূলক দেয়াল। ত্বকের এপিডার্মিসে দূষণ যেন কোনো প্রভাব ফেলতে না পারে, তাই নিয়ে কাজ করে অ্যান্টিপল্যুশন স্কিন কেয়ার। বছরের শুরু থেকেই এর কাটতি উল্লেখযোগ্য।
রিথিঙ্কিং রিসাইকেল
প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে বেশ আগে থেকে সৌন্দর্যবিশ্ব সচেতন। তারই পরিক্রমায় প্যাকেজিংয়ে পরিবর্তন আনতে চলেছে নানা প্রচেষ্টা। জনপ্রিয় বিউটি ব্র্যান্ডগুলো এ শিল্পের প্লাস্টিক সমস্যা মোকাবিলার আশ্বাস জুগিয়েছে। এ বছর প্রকৃতির প্রতি সচেতনতার কার্যকরী সমাধান খুঁজেছে অনেক ব্র্যান্ড। এথিক্যাল শপিংয়ে আগ্রহী নতুন প্রজন্মকে ক্রেতা হিসেবে পেতে তাদের তৎপরতা বেড়েছে খানিকটা। ইউনিলিভার, কোটি ও বায়ার্সডর্ফের মতো শীর্ষস্থানীয় সৌন্দর্যসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্লাস্টিক প্যাকেজিং পুনর্ব্যবহারযোগ্য বা কম্পোস্টযোগ্য কি না, তা ২০২৫ সালের মধ্যে নিশ্চিত করার কথা দিয়েছে। এস্টি লডার আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্যাকেজিংয়ের অন্তত ৭৫ শতাংশ পুনর্ব্যবহার ও পুনরুদ্ধারযোগ্য করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বয়স সংখ্যামাত্র
সৌন্দর্য আর বয়সের সম্পর্ককে বিপ্রতীপই ভাবতেন অনেকে। সেই দর্শনে এ বছর ইতিবাচক পরিবর্তন আশা জাগিয়েছে। বয়স একসময় স্কিন কেয়ার, মেকআপ—এই দুটিকেই উচিত-অনুচিতের শিকলে বেঁধে রাখত। এ বছর বেশ খানিকটা পরিবর্তন হয়েছে মানুষের মন। চল্লিশকে বুড়িয়ে যাওয়ার না বলে বরং নতুন করে বাঁচার বয়স বলা হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে বিউটি ওয়ার্ল্ডে। বয়সকে লুকাতে নয়, বরং আরও সুন্দর করে প্রকাশে কাজ করছে ব্র্যান্ডগুলো।
মনোযোগ-দেহযোগ
সৌন্দর্যের সঙ্গে হরমোনের সম্পর্ক মোটামুটি সবারই জানা। প্রাকৃতিক উপায়ে প্রাপ্ত এই প্রাণরসের কারণে উজ্জ্বল হয় ত্বক। গবেষণালব্ধ তথ্যমতে যে নারীরা সপ্তাহে অন্তত তিনবার অরগাজমের সুখানুভূতি পান, তাদেরকে অন্যদের তুলনায় প্রায় দশ বছর কম বয়সী দেখায়। সঙ্গী, সম্পর্ক আর সৌন্দর্যকে একই সুতায় বাঁধার সূত্র আলোচনায় থেকেছে চলতি বছর।
স্নান-শান্তি
সল্ট বাথ, পুষ্পস্নান, বাথ বম্বের নাচন—সবেতেই আগ্রহ দেখা গেছে এ বছর। পানির স্পর্শকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আলাদা। নোনাজলের গুণকাহনে মুগ্ধ হয়ে অনেকে নিয়েছেন সল্ট বাথ। ফুলের পাপড়ি ভেজানো বাথটাবে স্নান মোটেই নতুন কিছু নই। তবু সেই পুরোনোতেই ফিরেছেন অনেকে। বাথ বম্ব ব্যবহারে এক্সোটিক শাওয়ার ছিল অনেকের পছন্দের।
পুরুষের সৌন্দর্যসচেতনতা
আগের চেয়ে আরও বেশি সচেতন হয়েছেন পুরুষেরা। ভালো থাকা, ত্বক ভালো রাখা, সুন্দরতা ধরে রাখা—সব কটি নিয়েই ভেবেছেন বছরজুড়ে। এর মধ্যে ত্বক আর্দ্র রাখতে নানা কার্যক্রম মেনে চলতে দেখা গেছে। ব্রণ, ব্রেক আউট, অ্যালার্জি, আনইভেন স্কিন-টোনের মাধ্যমে দেহে লুকিয়ে থাকা রোগবালাই ঠাহর করার জন্য ফেস ম্যাপিংকে গুরুত্ব দিতে দেখা গেছে। সেই অনুযায়ী খোঁজা হয়েছে সমাধান। বাজার বড় হয়েছে ছেলেদের ত্বকের যত্ন ও প্রসাধনের। না, কোনো গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের ফল নয় এটি; বরং এই সংখ্যা পাওয়া গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের হ্যাশট্যাগ ব্যবহারের নম্বর দেখে। ১৯ মিলিয়ন মানুষ হ্যাশট্যাগ সংযুক্তিতে লিখেছে #মেনসস্কিনকেয়ার। ২০৩০ সালের মধ্যে বাজারটির আয়তন প্রায় ১১০ বিলিয়ন হবে বলে অনুমান বিশেষজ্ঞদের।
শিকড়সর্বস্ব
প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের প্রতি মনোযোগ বেড়েছে ক্রেতাদের। ফলে বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতে প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন উপাদান নিয়ে কাজের পরিধি বেড়েছে বিগত বছরগুলোর তুলনায়। এনভায়রনমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপের বরাতে পাওয়া তথ্যমতে ৬৫ শতাংশ ক্রেতাকে রাসায়নিক উপাদান এড়িয়ে প্রকৃতি থেকে খুঁজে বের করা উপাদানের ওপর বিশ্বাস রাখতে দেখা গেছে। সাসটেইনেবল বিউটিতে আগ্রহ বেড়েছে। তাই বায়োটেকে এখন গুরুত্ব পাচ্ছে টেকসই প্রসাধন তৈরি।
সোশ্যাল মিডিয়া
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটক এ বছর বিশেষভাবে বিউটি ওয়ার্ল্ডে ভূমিকা রেখেছে। ইন্টারনেটে পাওয়া তথ্যমতে এই প্ল্যাটফর্ম নিয়মিত যারা ব্যবহার করেন, তাদের মধ্য থেকে ৮৯ শতাংশ মানুষ ভিডিও কনটেন্টে দেখানো পণ্য কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এর পরের অবস্থানেই আছে ইনস্টাগ্রাম। সেখানকার ৬৯ শতাংশ মানুষ ভিডিও কনটেন্ট থেকে উৎসাহিত হয়ে শপিং করে থাকেন।
 সারাহ্ দীনা
ছবি: ক্যানভাস আর্কাইভ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top