কুন্তলকাহন I টেক্সচার ট্রিক
সটান সোজা, ঢেউখেলানো কিংবা একদম কোঁকড়া—প্রাকৃতিকভাবে চুল যেমনই হোক, সুন্দর থাকবে আপন আলোয়
ত্বকের ধরন কিংবা হেয়ার টেক্সচার, সে তো প্রকৃতিপ্রদত্ত। এর ওপর কারও হাত নেই। তাই যা আছে, তা নিয়ে খুশি থাকাই শ্রেয়; সেটাই বছরের পর বছর বোঝানো চেষ্টা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাতে যে খুব একটা কাজ হয়নি, তার প্রমাণ মিলেছে বিউটি মার্কেটগুলোতেই। দেদার বিকোচ্ছে স্ট্রেইটনার, কার্লারের মতো বিউটি টুলগুলো। বিশেষজ্ঞদের কথায় কর্ণপাত না করেই স্ট্রেইট চুলের অধিকারীরা চুলে ব্যবহার করছেন বিগ ব্যারেলড কার্লার, আর কোঁকড়া চুল সোজা হয়ে যাচ্ছে স্ট্রেইটনারের চাপে। টেক্সচার রদবদলের এই খেলায় স্বাভাবিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চুল। হচ্ছে ভঙ্গুর; নেতিয়ে পড়ে হয়ে উঠছে প্রাণহীন। সমস্যা শোধরানোর উপায় তাহলে কী?
টেক্সচারের উৎসে
জন্মসূত্রে প্রাপ্ত হেয়ার টেক্সচার নির্ধারিত হয় জেনেটিকের কল্যাণে আর জাতিগতভাবে। তবে জীবনধারার নানা পরিবর্তন পরবর্তী সময়ে নির্ধারণ করে এর আসল রূপ। লন্ডন বেসড হেয়ার এক্সপার্ট অ্যাডাম রিডের মতে, মানুষের ডিএনএ হেয়ার টেক্সচারকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করে। প্রায় তিন দশকের হেয়ারস্টাইলিং অভিজ্ঞতার আলোকে তার এই মন্তব্য মোটেই হেলাফেলার নয়। তার তথ্যমতে, ফলিকলের আকারের ওপর নির্ভর করে চুল স্ট্রেইট, ওয়েভি নাকি কার্লি হবে। স্ট্রেইট ফলিকল হলে চুল হবে সোজা। ফলিকল অর্ধচন্দ্রাকৃতির হলে চুল হবে ঢেউখেলানো। আর ফলিকলে গভীর ভাঁজ থাকলেই চুল দেখাবে কার্লি। হেয়ার শ্যাফটের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য প্রভাবিত হয় নির্দিষ্ট আবহাওয়ায়। ফলে পাল্টে যায় টেক্সচার। এ ছাড়া কিউটিকলের পজিটিভ ও নেগেটিভ চার্জ পানির পজিটিভ ও নেগেটিভ চার্জের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে চুলের চেহারা পাল্টে দিতে পারে। এতে করে নেতানো ভাব বাড়ে, আরও কোঁকড়া দেখায়, উষ্কখুষ্ক হয়ে ওঠে। অ্যাডামের মতে, কয়েক বছর পরপরই হেয়ার টেক্সচারের পরিবর্তন দেখা যায়। এর পেছনে মূল কারণ, কী খাওয়া হচ্ছে, কোথায় থাকা হচ্ছে—এগুলোর সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত।
বলিউড অভিনেত্রী সোনাম কাপুর আহুজার বহু বছরের হেয়ারস্টাইলিস্ট হিরাল ভাটিয়ার কাছ থেকেও মিলেছে টেক্সচার-সংক্রান্ত নানা তথ্য। তার মতে, ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া আর পানি দারুণভাবে প্রভাবিত করে হেয়ার টেক্সচারকে। সেই সঙ্গে ডায়েট এবং যত্ন নেওয়ার ধরনেরও দীর্ঘস্থায়ী ছাপ পড়ে এতে। তাই টেক্সচারের পরিবর্তনের সঙ্গে পাল্টে নিতে হবে হেয়ার কেয়ার রুটিন আর স্টাইলিংয়ের ধরন। এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।
টেক্সচার মেনে যত্ন
স্টাইলিংয়ের দীর্ঘস্থায়িত্ব আর সৌন্দর্য বজায় রাখার জন্য সব ধরনের টেক্সচারের চুলেরই প্রস্তুতি প্রয়োজন। মাথার ত্বক আর চুলের ধরন বুঝে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনিং তো আছেই, সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে লিভ-ইন সেরাম অথবা কন্ডিশনার মিস্ট। চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য।
স্ট্রেইট স্টোরি
এ ধরনের টেক্সচারের চুল আয়ত্তে রাখা সবচেয়ে সহজ। শুধু প্রয়োজন একটা ভালো শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার। অবশ্যই স্ক্যাল্প ও চুলের ধরন বুঝে। লিভ-ইন কন্ডিশনার ব্যবহার মাস্ট। ব্যস, এতটুকুই যথেষ্ট। চুল যেহেতু প্রাকৃতিকভাবেই সোজা, তাই স্টাইলিংয়ে ক্ল্যাসিক ব্লো আউট পারফেক্ট অপশন। তবে মানানসই ব্রাশ আর হেয়ার ড্রায়ার বেছে নেওয়া খুব জরুরি। চুল থেকে যতটা সম্ভব ময়শ্চার দূর করার চেষ্টা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কয়েক ভাগে ভাগ করে নেওয়া যায় চুল। তারপর হেয়ার আয়রন ব্যবহার করলে মিলবে আরও স্লিক ফিনিশ। পারফেক্টলি স্ট্রেইট হেয়ারের জন্য শুরুটা করা চাই রুট থেকে। শুধু নিচের দিকে স্মুদেনিং ইফেক্ট চাইলে মিড লেন্থ থেকে শেষ পর্যন্ত আয়রন বুলিয়ে নেওয়াই যথেষ্ট।
ওয়েভি ওয়ে
ঢেউখেলানো চুলের জন্য গুটিকয়েক হেয়ার কেয়ার আর চুল শুকানোর টোটকা মেনে চললেই চলবে। এ ধরনের চুলে স্ট্রেইট হেয়ারের তুলনায় খানিকটা বাড়তি আর্দ্রতার প্রয়োজন হয়। একটা ভালো লিভ-ইন কন্ডিশনার আর এক ফোঁটা আরগান অয়েল দিয়েই মিটিয়ে নেওয়া সম্ভব সেই চাহিদা। চুলে জরুরি আর্দ্রতার জোগান দিয়ে উষ্কখুষ্ক ভাব নিয়ন্ত্রণে এনে এবার পালা স্টাইলিংয়ের। সেটা সারা যাবে হট টুল ব্যবহারে। অথবা সেগুলো ছাড়াই। ঢেউখেলানো চুল ন্যাচারালি শুকিয়ে নেওয়াই ভালো। আশি ভাগ শুকিয়ে যাওয়ার পর হালকা খোঁপায় বেঁধে নেওয়া যায়। এতে ওয়েভি ভাব আরও সুন্দর ফুটে উঠবে। হিটেড টুলেও মানা নেই। স্টাইলিংকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করে তুলতে সহায়ক এগুলো। ডিফিউজার অ্যাটাচমেন্ট দেওয়া হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে স্টাইলিং সারলে সফট ন্যাচারাল ওয়েভ মিলবে। টং ব্যবহার করা যায়, আরও ডিফাইনড মডার্ন বিচ ওয়েভ যাদের পছন্দ তাদের জন্য। স্ট্রেইটনার যেমন ন্যাচারালি স্ট্রেইট হেয়ারকে স্লিক লুক দেয়, ঠিক তেমনি টং ওয়েভি হেয়ারকে দেয় দীর্ঘস্থায়ী ঢেউখেলানো ভাব। এ ক্ষেত্রে ব্যারেল বেছে নিতে হবে কাঙ্ক্ষিত ওয়েভের সাইজের ওপর। হেয়ার এক্সপার্টদের পরামর্শ, হিটেড অ্যাপ্লায়েন্স ব্যবহারের আগে এতে যদি হেয়ার স্প্রে করে নেওয়া যায়, তাহলে মনঃপূত ফল মিলবে আরও সহজে।
কার্লি টেল
একে নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে কঠিন। এ জন্যই মাথাভর্তি কার্লি চুল যাদের, তাদের মধ্যে স্ট্রেইটনার আর স্মুদেনিং ট্রিটমেন্টের প্রতি এত আকর্ষণ। কিন্তু শুধু একটু ম্যানেজেবল করার আশায় ন্যাচারাল হেয়ার টেক্সচারে আসল সৌন্দর্যটাই নষ্ট হতে পারে, সে ব্যাপারটাও তো মাথায় রাখতে হবে। কার্লি চুলের আর্দ্রতা হারানোর প্রবণতা স্বভাবতই একটু বেশি। তাই একটু ভারী লিভ-ইন কন্ডিশনার ব্যবহারের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। একদম শুকনা অবস্থায় কার্লি চুল না আঁচড়ানোই ভালো। এতে করে নেতানো ভাব বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়; বরং ভালো কোনো কার্ল ক্রিম দিয়ে স্ক্রাঞ্চ করে নেওয়া যেতে পারে। অরগান অয়েল মেখে নিলে বাড়তি আর্দ্রতা মিলবে চুলে। কার্লগুলোকে নিজে নিজে ফর্ম হওয়ার জন্য মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে নেওয়া প্রয়োজন। তারপর সামান্য ভেজা চুলেই মেখে নিতে হবে পছন্দসই হেয়ার প্রোডাক্ট। আঁচড়ে নিয়ে ডিফিউজার দিয়ে আলতো করে ওপরের দিকে উঠিয়ে দিতে হবে চুল। তবে সময় নিয়ে সারতে হবে পুরো প্রক্রিয়া।
বিউটি ডেস্ক
মডেল: কনিকা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: নাইমুল ইসলাম