তনুরাগ I চিকেন স্কিন
নামে খটমট হলেও খুব সাধারণ ত্বক সমস্যা। শীতে সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা খানিকটা বেশি। সেরে ওঠে নিয়মমাফিক যত্ন আর সচেতনতায়
সাধারণত বাহু, ঊরু, গাল বা নিতম্বের ত্বকে কেটারোসিস পিলারিস বেশি হতে দেখা যায়। ছোঁয়াচে নয়। চুলকানিও হয় না বলে অনেকে একে এড়িয়ে যান। কিন্তু চোখে পড়লে অস্বস্তি বাড়ায়। শীতে ত্বক অতিমাত্রায় শুষ্ক থাকে বলে চিকেন স্কিনের দৈন্যদশা বেড়ে যায় বহুগুণ।
চিকেন স্কিন ত্বকের স্বাভাবিক অবস্থার বিপরীত মাত্র। এটি কোনো রোগ নয় বলে পথ্যও খুব একটা প্রচলিত নেই। বয়স ত্রিশের কোঠায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে এটি নিজে নিজে সেরে যায়। তবে হাত লাগলেই বিরক্তির সূত্রপাত ঘটে বলে এর থেকে পরিত্রাণ পেতে চান অধিকাংশ আক্রান্ত ব্যক্তি।
কেন হয়
লোমকূপের গোড়া বন্ধ হয়ে লালচে বা কালো হয়ে গেলে, গায়ে কাঁটা দিলে লোমকূপ দেখতে যেমন লাগে, ঠিক তেমনটাই দেখায় চিকেন স্কিন। স্পর্শে দানা দানা অনুভূত হয়। এই অবস্থায় ত্বক লোম ছাড়ানো মুরগির মতো দেখায় বলেই এর নাম চিকেন স্কিন। সাধারণত লোমশ দেহত্বকেই এর দেখা মেলে।
স্পর্শে ত্বক সিরিশ কাগজের মতো অনুভূতি দিলে, লালচে দানা বা চামড়া ওঠা ভাব দেখা গেলেও ধরে নিতে হবে, ত্বকে দেখা দিয়েছে কেটারোসিস পিলারিস।
হেয়ার প্রোটিন, কেরাটিনের উপস্থিতির ফলে লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায়। পরে এটিই ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হয় চিকেন স্কিনে। ত্বকে কেরাটিন প্রোটিন কেন জমে, এর উত্তর মিলবে ডার্মাটোলজিস্টদের কাছে। অধিকাংশেরই মত, এর কারণ মূলত জেনেটিক্যাল অথবা এটোপিক ডার্মাটাইটিস নামে একধরনের স্কিন কন্ডিশন।
চিকেন স্কিনে সাধারণত নারী, শিশু আর টিনএজারদের বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। তবে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক, কিংবা ত্বকে একজিমা থাকলে যে কেউ এই সমস্যায় ভুগতে পারেন।
এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় নারীদের মধ্যে হরমোনাল ইমব্যালেন্স থাকলে কিংবা টিনএজ হরমোনের জন্যও চিকেন স্কিন হতে পারে।
কেটারোসিস পিলারিস কোনো রোগ নয় বলে এর প্রতিকারও তেমন নেই। তবে ডার্মাটোলজিস্টদের সঠিক পরামর্শ বা নিয়মিত ত্বকযত্নে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া অনেকটাই সম্ভব।
চিকিৎসকদের মতে
চিকেন স্কিন যদি ত্বকের অনেকটা জায়গা জুড়ে থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে টপিক্যাল ক্রিমের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ইউরিয়া বা ল্যাকটিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ ময়শ্চারাইজারও ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে অবশ্যই। যদি কোনো দৃশ্যমান কারণ ছাড়াই চিকেন স্কিনের উপক্রম বাড়তে থাকে, তবে চিকিৎসকেরা রেটিনল ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কেমিক্যাল পিলিং এবং মাইক্রোডার্মাব্রেশন জাতীয় অ্যাসথেটিক স্কিন ট্রিটমেন্টও এই সমস্যা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
তবে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন স্কিন কেয়ার স্পেশালিস্টের পরামর্শ মানা উচিত। বাহ্যিকভাবে যেকোনো ধরনের কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট নেওয়ার আগে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নতুবা ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
ঘরোয়া উপায়ে প্রতিরোধ
কেটারোসিস পিলারিসের পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে থাকলে কিছু ঘরোয়া টোটকার মাধ্যমে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। পুরোপুরি হয়তো মিলিয়ে যাবে না, তবে দৃষ্টিকটুও দেখাবে না।
ঈষদুষ্ণ স্নান
দীর্ঘ সময় ধরে গোসল মনকে প্রফুল্ল করলেও ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ছিনিয়ে নিতে পারে। এমতাবস্থায় কুসুম গরম পানিতে অল্প সময়ে গোসল সেরে নিলে ধরে রাখা যায় ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা। এতে লোমকূপের গভীরে জমে থাকা ময়লা যেমন দূর হবে, তেমনি ত্বক থাকবে কোমল।
এক্সফোলিয়েশন
ত্বকে সাবান কিংবা বডিওয়াশ মাখার সময় লুফা বা পিউমিস স্টোন ব্যবহার করা যায়। এতে করে ত্বকের এপিডার্মিসে জমে থাকা অতিরিক্ত মৃতকোষ দূর হবে; ত্বক থাকবে কোমল। কেমিক্যালযুক্ত রুক্ষ এক্সফোলিয়েটর নয়, এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় চাল বা ডালের গুঁড়া। প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বককে সুস্থ ও সতেজ করে তুলতে।
ময়শ্চারাইজিং লোশন
এ ধরনের ত্বক সমস্যায় ময়শ্চারাইজার ব্যবহারের ধাপটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের লোমকূপগুলো নরম রাখতে সব সময় হাইড্রেটিং লোশন কিংবা ময়শ্চারাইজার ব্যবহারের বিকল্প নেই।
আঁটসাঁট আর নয়
অতিরিক্ত টাইট কাপড়ে ত্বকে একরকম ঘর্ষণ সৃষ্টি হয়। এ অবস্থার ফলে ত্বকে আরও বেশি শুষ্কতা তৈরি হতে পারে। তাই যাদের চিকেন স্কিনের সমস্যা আছে, তাদের জন্য আঁটসাঁট পোশাক একদম মানা।
হিউমিডিফায়ার
ঘরে হিউমিডিফায়ারের ব্যবহার বাতাসের আর্দ্রতা ধরে রেখে ত্বকে ময়শ্চার লক করে দেয়। এতে শুষ্কতা কমে। চুলকানি ও জ্বালাপোড়া থেকে রেহাই মেলে।
চিকেন স্কিন সাধারণত আবহাওয়া, জেনেটিক আর হরমোনের ওপর নির্ভর করে কম-বেশি অনেকের ত্বকে দেখা যায়। একে খোঁটাখুঁটি না করাই শ্রেয়। নিয়ম মেনে ত্বকের স্বাভাবিক পরিচর্যায় পুরোপুরি সারানো সম্ভব।
বিদিশা শরাফ
মডেল: শাকিরা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল