ত্বকতত্ত্ব I মেল্টিং পয়েন্ট
প্রাচ্যের সৌন্দর্যবিশ্ব মোটামুটি মত্ত এই ফর্মুলায়। অ্যালকেমিক, ত্বকে স্পর্শেই গলে গিয়ে একাকার। প্রতিশ্রুতি—পরিষ্কার, মসৃণ ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বকের। এবার যাচাই করার পালা
সৌন্দর্যসচেতনেরা এরই মধ্যে শেলফে জায়গা করতে শুরু করেছেন নতুন ক্যাটাগরির এ পণ্যের জন্য। সেই পুরোনো সেরাম, তেল, ক্রিম, জেল আর এসেন্সে কদিনই-বা আটকে থাকবে মন! সম্প্রতি মজেছে মেল্টিং ফর্মুলায়। কারণ, ম্যাজিকের মতো রূপ বদলানোর ক্ষমতা। ব্যবহারের সময় সলিড বনে যায় লিকুইড, জেল হয়ে যায় তেল আর পানি পাল্টে যায় দুধে। দারুণ না! ভূরি ভূরি বিউটি ট্রেন্ডের মতো এই ফর্মুলারও উত্থান দক্ষিণ কোরিয়া আর জাপানে। কিন্তু শুধু এর অভিনব অ্যালকেমিক উইজার্ডিই কি ঝোঁকের মূল কারণ? মোটেই নয়। বিশেষজ্ঞদের মত, এই ফর্মুলায় তৈরি পণ্যগুলো তুলনামূলকভাবে কোমল; সহজে শুষে নিতে পারে ত্বক। সেই সঙ্গে ব্রেকআউট থেকে বুড়িয়ে যাওয়া ভাব রোধ করতে চমৎকার কাজ করে।
কেয়া বাত ক্লিনজার
বাজারে বিভিন্ন ধরনের ফর্মে বিকোয় মেল্টিং ক্লিনজার। একদম সলিড থেকে লোশন অব্দি। কিছু কিছুর ফর্মুলেশন শুনে তো যে কারও চোখ কপালে উঠে যেতে বাধ্য! যেমন জেলের মতো দেখাতে ক্লিনজার ত্বকের সংস্পর্শে মেল্ট হয়ে পাল্টে যায় তেলে, তারপর পানির সঙ্গে ইমালসিফাই করে পরিণত হয় দুধের মতো দেখতে প্রোডাক্টে। আধুনিক জীবনধারার কথা মাথায় রেখে নকশা করা হয়েছে মেল্টিং ফর্মুলা। এগুলো একদম সাদামাটা, কার্যকর; প্রতিদিনকার দৌড়ঝাঁপের জীবনের সঙ্গে সহজে মানানসই। মেল্টিং ফর্মুলার ক্লিনজার ব্যবহারের জন্য চমৎকার অপশন নানা কারণে। আঙুলে নিয়ে তারপর এটি ত্বকে মাখা হয় বলে দেহের তাপমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য তৈরির সুযোগ পায়। ফলে সহজে ত্বকের গভীরে পৌঁছে যেতে পারে। কার্যকরভাবে তুলে নিয়ে আসতে পারে জমে থাকা ময়লা আর দূষণ। তা-ও আবার ত্বকের প্রতিরক্ষা স্তরের কোনো ক্ষতি না করেই।
মাস্ক মাস্ট
মেল্টিং ফর্মুলার মাস্কের ধরন মূলত চারটি। এক্সফোলিয়েটিং শেরবেট, সেমি-সলিড ফর্মুলা, সলিড পেবল এবং কোরিয়ান ইন্সপায়ারড শিট মাস্ক। শেরবেট মূলত মিহিগুঁড়া পাউডার। যেগুলো পানির সংস্পর্শে দ্রবীভূত হয়ে ফেনায় পরিণত হয়। এক্সফোলিয়েট করে জমে থাকা মৃতকোষ সরায়। সবচেয়ে অভিনব ব্যাপার হচ্ছে, এগুলো প্রায়শই এক্সফোলিয়েটিং ও ময়শ্চারাইজিং উপাদানের মিশ্রণে তৈরি করা হয়। ফলে ত্বক দারুণ মসৃণ অনুভূত হয় এগুলোর ব্যবহারে, শুষ্ক ভাব তৈরি না করেই। সেমি-সলিড মাস্কের অ্যাপ্রোচ আবার ভিন্ন। জাপানের আরঅ্যান্ডডি ল্যাবে উদ্ভাবিত এ ফর্মুলেশন। এ ধরনের মাস্কে ভলকানিক রক থেকে সংগৃহীত জিওলাইটের মতো মিনারেলের উপস্থিতি মেলে; যার কেমিক্যাল বন্ড পানির সামান্য স্পর্শেই ভেঙে যায় এবং ৫০ থেকে ৫৫ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপ তৈরি করে; যা মূলত ত্বকের সিবামের মেল্টিং পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত। তাই এটি ব্যবহারের সময় গলে গিয়ে লোমকূপের গভীর থেকে পরিষ্কার করে নিয়ে আসে। সলিড পেবল তৈরি হয় হোলগ্রেইন ফার্মেন্টেড রাইস থেকে। এগুলোও পানিতে দ্রুত দ্রবীভূত হয়। সারায় হাইপার পিগমেন্টেশন থেকে ব্লেমিশ পর্যন্ত। সবশেষে শিট মাস্কের কথা না বললেই নয়। হাইপোজেল টেকনোলজিতে তৈরি একেকটি মাস্ক থেকে মিলবে পুরো এক বোতল সেরামের উপকারিতা। ত্বকে পুরোপুরি গলে গিয়ে করে তুলবে সতেজ, মসৃণ।
ময়শ্চারাইজার মার্ক
এই ফর্মুলার ক্লিনজারগুলো সাধারণত অয়েল কনটেন্ট বাড়িয়ে এবং ওয়াটার কনটেন্ট কমিয়ে মেল্টিং ইফেক্ট তৈরি করে। কিন্তু ময়শ্চারাইজারের অ্যাপ্রোচ ঠিক তার উল্টো। ক্রিমকে ক্রিমি টেক্সচার দেওয়ার জন্য দায়ী ফ্যাটি উপাদানগুলো যদি সরিয়ে ফেলা হয়, এর ফলাফল ওয়াটারবেসড সেমি-সলিড ফর্মুলা। জেলি টেক্সচারের এ ময়শ্চারাইজারগুলো ত্বকের সংস্পর্শে গলে যায়; দেয় একদম পানির মতো পলকা অনুভূতি। ওয়াটার জেল বেসড এসব ময়শ্চারাইজার লাইট ওয়েট টেক্সচারের হলেও ক্রিমের মতো হাইড্রেশন বেনিফিটে টইটম্বুর। তাই তৈলাক্ত ত্বকেও ব্যবহার উপযোগী। এগুলো ত্বক দ্রুত শুষে নেয়, চিপচিপে ভাব তৈরি করে না একদমই। ট্র্যাডিশনাল ক্রিমের চেয়েও বেশি আর্দ্রতা জোগানোর ক্ষমতা রয়েছে মেল্টিং ফর্মুলার ময়শ্চারাইজারগুলোর।
বিউটি ডেস্ক
মডেল: লিয়া
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল