সঙ্গানুষঙ্গ I হোসিয়ারি হোস্টিং
একান্ত ব্যক্তিগত হিসেবেই সূচনা। কারও কাছে দায়সারা, কারও কাছে সচেতনতার অংশ। ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহনকারী বরাবরই। আধুনিকায়নে কলেবর বৃদ্ধি
হোসিয়ারি শব্দের সঙ্গে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত মানুষের পরিচয় ছিল ঘরোয়া। কেমন সেটা? পুরুষের অন্তর্বাস আর মোজা। এর বাইরে তেমন কিছু নয়। কোনোভাবেই এই দুই পণ্য লাক্সারি আইটেম হিসেবে বিবেচিত হতো না। পোশাকের বাজারের তস্য গলির ভেতরের দিকে দেখা যেত হোসিয়ারির দোকান। সাইনবোর্ডে উপস্থিত থাকত জাঙ্গিয়া, স্যান্ডো গেঞ্জি আর মোজা নামের হোসিয়ারি পণ্য। শখ নয়, বরং প্রয়োজন হিসেবেই বিবেচিত হতো।
ইতিহাসের বেশ পুরোনো অধ্যায়ে পাওয়া যায় হোসিয়ারির কথা। প্রাচীন মিসরে ঘটেছিল এর উদ্ভব। উদ্দেশ্য শুধু পা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত ঢেকে রাখা। ছেলে-মেয়ে উভয়েই ব্যবহার করতে পারতেন। তবে সেগুলো মোটেই কোনো ফ্যাব্রিকের তৈরি ছিল না। পশুর খাদ্যনালিকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পা ঢেকে রাখার জন্য প্রস্তুত করা হতো। সে সময় সৌন্দর্য নয়, গুরুত্ব পেয়েছিল প্রয়োজন। মধ্যযুগীয় সভ্যতার অংশ ছিল এটি। সময়ের হিসাবে এই ক্লদিং লাইনের বয়স বর্তমানে অন্তত দুই শ বছর। আর এখন চিত্রপট বদলে গেছে আমূল।
হোসিয়ারি এখন ফ্যাশনেবল অ্যাকসেসরিজ। কালার প্যালেটের সব রংই তাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। শুধু সাদা আর কালোয় আটকে নেই একদম। এ বছরের উইন্টার ফ্যাশনে দেখা যাচ্ছে হোসিয়ারির নতুন রূপ। সে আবার কেমন? রেসিপিতে চিরায়তের ভাগটাই বেশি। তার সঙ্গে এক চিমটি নতুনত্বের মসলা। ব্যস! তাতেই দশে দশ।
টাইটস
কোমর থেকে গোড়ালি অবধি লম্বা। আঁটসাঁট। ফ্যাব্রিক হিসেবে ব্যবহৃত হয় নাইলন নয়তো স্প্যান্ডেক্স। জেনারেশন জেডদের কাছে জনপ্রিয় যোগাযোগমাধ্যম টিকটকের কল্যাণে বিভিন্ন আনকোরা ফ্যাশন কোরের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে পৃথিবী। সেই তালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ কোর ‘ব্যালেরিনা’। যেখানে অনুষঙ্গ হিসেবে লাইমলাইটে ছিল সাদা টাইটস। এই ফ্যাশন কোরের অনুসারীরা ছিল মূলত টিনএজ মেয়েরা। এর বাইরেও কয়েকটি নকশার প্রতি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
পলকা ডট: স্বচ্ছ ফ্যাব্রিকে স্নো বলের মতো মোলায়েম পলকা ডট অম্লান। কখনো ক্ষুদ্র বিন্দু হয়ে তো কখনো আবার পিংপং বল সাইজের। এর বেশি বাড়েনি বৃত্তের ব্যাস। সলিড কালারের একঘেয়েমি ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে সাধারণ এই নকশা বিজয়যাত্রার বাদ্য বাজিয়ে যাচ্ছে বেশ।
স্পার্কলি: স্বচ্ছ কালো ফ্যাব্রিকে তৈরি টাইটসের পেছন দিকে শুধু একটি সেলাইয়ের রেখা। পুরো পায়ে কালোর রাজত্বে সোনালি আভাস। পার্টিওয়্যার হিসেবে একদম জুতসই।
ভিকটোরিয়ান প্যাটার্নস: ফুলের মোটিফে তৈরি। ফ্যাশনের বিভিন্ন পণ্যে দেখা গেছে এটিকে। এবারে সেই ফুল রাজত্ব করছে টাইটসেও। স্বচ্ছ ফ্যাব্রিকের মাঝে ভিকটোরিয়ান প্যাটার্নের সৌন্দর্য মাতোয়ারা করে রেখেছে টিন থেকে অ্যাডাল্ট—সবাইকে।
জুয়েল টোন: মহামূল্যবান রত্ন সব সময় ইন ট্রেন্ড। সেসবের জাঁকজমক রংগুলোও দেখা যাচ্ছে টাইটসে; বিশেষ করে ফুশিয়া আর পার্পলের উদ্ভাস এবার স্পর্শ করেছে ফ্যাশনিস্তাদের।
স্টকিংস
পা থেকে ঊরু অথবা কোমর ছুঁয়ে যাওয়া বটম অ্যাকসেসরিজ। তৈরিতে ব্যবহৃত ফ্যাব্রিক বেশির ভাগ সময় স্বচ্ছ হয়। তবে নিটেড স্টকিংসও তৈরি হয়। এবারের ফ্যাশনে শিয়ার স্টকিংসের প্রতিই বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন ফ্যাশনসচেতনেরা। সলিডের পাশাপাশি সেলফ টেক্সচারডের উপস্থিতিও নজর কাড়ছে।
পেন্টি হোস
স্টকিংস আর পেন্টির যুগলবন্দী। বিল্ট ইন পেন্টি ডিজাইন। সেলাইবিহীন গঠনগত নকশায় তৈরি। ভিন্নতা আছে পুরুত্ব ও নকশা—দুয়েই। পলিশড লুকের জন্য পারফেক্ট।
স্পোর্টস সক
অ্যাথলেটদের জন্য তৈরি। তাদের পারফরম্যান্সে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে বলে জানা যায়। বেশ কিছু বিশেষ গুণসম্পন্ন। যেমন কুশনিং, যা পায়ের আরাম নিশ্চিত করে। আবার আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম এমন উপাদানে তৈরি হওয়ার কারণে পা শুকনো রাখার গুণসম্পন্ন। ব্লিস্টার তৈরি হতে দেয় না। এসব গুণ খেলোয়াড়দের স্বচ্ছন্দ নিশ্চিত করে। ইদানীং মানুষ যেহেতু স্পোর্টস অ্যাটেয়ারে আগ্রহী হচ্ছেন, তাই এই পণ্যের চাহিদাও বাড়ছে।
নি-হাই সক
হাঁটু অব্দি লম্বা মোজা। ক্যাজুয়াল ও ফরমাল—দুয়ের সঙ্গেই পরিধানযোগ্য। পায়ের উষ্ণতা যেমন নিশ্চিত করে, তেমনি ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হিসেবেও কার্যকরী। স্কার্ট ও শর্টসের সঙ্গতে দারুণ।
অ্যাংকেল সক
এটি দুই ধরনের হতে পারে। গোড়ালি ঢেকে রাখে এমন, আবার ঠিক গোড়ালি ছুঁয়ে শেষ হয়ে গেছে এমন। গ্রীষ্মের সময়ের পোশাকের সঙ্গে ব্যবহারের চল রয়েছে। স্নিকার এবং লো কাট শুর সঙ্গে পরতে দেখা যায়। এই পণ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে পায়ের আরামই মুখ্য।
কম্প্রেশন সক
পায়ের সুস্থতা শরীরের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পায়ের অসুস্থতাকে রেড ফ্ল্যাগ হিসেবে চিহ্নিত করেন অনেক চিকিৎসক। হোসিয়ারির আধুনিকায়নে বাদ যায়নি সুস্থতার সঙ্গে সকসের সম্পর্কের ভাবনাও। আর তাই প্রেশারের মাধ্যমে পায়ের রক্ত চলাচলের মাত্রা বাড়াতে পারবে এমন মোজা আবিষ্কৃত হয়েছে। কার্যকরী হওয়ার কারণে বাহবাও কুড়াচ্ছে ব্যবহারকারীদের। এ বছরের স্বাস্থ্যসচেতনদের ওয়্যারড্রোব প্ল্যানিংয়ে স্থান করে নিয়েছে অনায়াসে।
ফিশনেট স্টকিং
নাইলন অথবা স্প্যান্ডেক্স ব্যবহারে তৈরি স্টকিং। প্যাটার্ন হয়ে থাকে হীরার মতো। বোল্ড ফ্যাশন স্টেটমেন্ট তৈরিতে চমৎকার অপশন। লুকে দেয় লাস্যময় সৌন্দর্য। বিভিন্ন পোশাকের সঙ্গে পেয়ার আপ সম্ভব। লঞ্জারের সঙ্গেও দারুণ মানায়।
ক্রু সকস
গোড়ালি থেকে খানিকটা ওপরে শেষ হয়। প্রতিদিনের পোশাক হিসেবে আলমিরায় জায়গা করে নিয়েছে বহু আগে। কুশনিং সম্পন্ন। তাই পা পায় বাড়তি সুরক্ষা। নিত্য ব্যবহৃত হচ্ছে অসংখ্য মানুষের হোসিয়ারি হিসেবে।
থাই-হাই স্টকিংস
ঊরু অথবা কোমর পর্যন্ত হয়। শেষ প্রান্তে থাকে ইলাস্টিক অথবা সিলিকন ব্যান্ড। কাভারেজ তো দেয়ই, বেশ সিডাকটিভ লুকও তৈরি করে। ইন্টিমেট ওয়্যার হিসেবেও এর ব্যবহার বেড়েছে।
এবারের ফ্যাশন উইকগুলোতে স্পট লাইটের বিচ্ছুরণ এড়িয়ে যায়নি হোসিয়ারির হইচই। এর মধ্যে চমক জাগিয়েছে কানাডিয়ান মেকআপ ব্র্যান্ড ম্যাক। তারা মডেলদের পায়ে মেকআপের মাধ্যমে তৈরি করেছিল নি হাই সকস লুক। স্প্রিং সামার ২০২৫ আইসবার্গ শোতে তাদের তেলেসমাতি দেখে থ হয়েছেন অনেকে। কারণ, সেখানে রিয়েল হোসিয়ারির সঙ্গে সঙ্গে মেকআপে তৈরি স্টকিংও দেখা গেছে। এ ঘটনাই খানিকটা প্রমাণ করে, হোসিয়ারি নিজেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে নিজের ব্যাপ্তি।
ফ্যাশন ডেস্ক
মডেল: এফা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: ব্লুচিজ
ছবি: কৌশিক ইকবাল