skip to Main Content

মনোজাল I উৎসবে উৎকণ্ঠা!

নানামুখী চাপে পড়ে হলিডে সিজনের স্পিরিটটা যেন ভেস্তে না যায়। কেয়ারফুল কিউরেশনে আগেভাগেই সেরে নেওয়া যেতে পারে প্রস্তুতি

হলিডে সিজন এসেই গেল। এবার হয়তো বেড়াতে যাওয়া হবে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের দাওয়াত মিলবে। নানা ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডেও অংশ নিতে হতে পারে। এতেই কি চাপ অনুভূত হচ্ছে? প্রথমে মনে হতেই পারে ছুটি কাটাব, শরীর-মন এমনিতেই ফ্রেশ হয়ে যাবে। তার আবার চাপ কী? সত্যি কথা। সাধারণ অর্থে তাই মনে হয়। কিন্তু একটু গভীরে ভাবলে এর অন্য রকম অর্থও দাঁড় করানো যায়। এবং তা মোটেই অর্থহীন নয়। রীতিমতো যাচাই-বাছাই করে গবেষকেরা বলছেন এ কথা। নাগরিক জীবনে হাজার রকম চাপের মধ্যে ইদানীং যোগ হয়েছে নিরবচ্ছিন্ন ছুটি কাটানোর বিষয়টাও। যা মানসিক সুস্থতাকে প্রভাবিত করে। কীভাবে? বলা যায়, সামাজিক প্রত্যাশা এবং তুলনার ফাঁদ এই চাপের প্রধান প্রভাবক। আর্থিক টানাপোড়েন এবং বাজেটের সঙ্গে সময়ের সীমাবদ্ধতা, নিজেকে যথাযথভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা ইত্যাদি নানা কারণ থেকে এর সৃষ্টি। যা একসময় মানসিকভাবে চাঙা করার পরিবর্তে নিস্তেজতার জন্ম দেয়। আনন্দ ও উৎসবের সময়গুলো হয়ে ওঠে ভীতিকর।
সবচেয়ে বড় চাপ শুরু হয় ছুটিগুলোকে পিকচার পারফেক্টভাবে উদ্‌যাপন করার সামাজিক প্রত্যাশা থেকে। যে তালিকায় থাকে সাজসজ্জা থেকে শুরু করে পোশাক পর্যন্ত। এ যেন নিজেকে অসাধারণ করে উপস্থাপন করার নির্দিষ্ট মান পূরণের চাপ। সোশ্যাল মিডিয়া যাকে আরও উসকে দেয়। কারণ, আপাতদৃষ্টে নিখুঁত উদ্‌যাপনের প্রমাণস্বরূপ সংগৃহীত ছবিগুলো বারবার অপর্যাপ্ততার অনুভূতির জন্ম দেয়। সমালোচনার আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ার ভয় কাজ করে সেখানে। সেই চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্য তাই আগে থেকে প্রস্তুতি রাখা প্রয়োজন। যাতে আত্মবিশ্বাস বজায় থাকে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমস্যা না হয়।
অগ্রিম পোশাক পরিকল্পনা
ছুটি কীভাবে কাটানো হবে, কোথায় কোথায় যাওয়া হবে বা কী কী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে হবে, তা নিশ্চয়ই আগে থেকেই পরিকল্পনা করা থাকে। জানা থাকে, কোন জায়গায় একই পোশাক পুনরায় পরা যাবে না কোনোভাবেই, তা সে যত দামিই হোক না কেন! যেমন কেউ বিচে যে ধরনের পোশাক পরবে, মরুভূমিতে তো আর সেটি মানানসই হবে না। খুবই মামুলি উদাহরণ, কিন্তু এটি বোঝানোর জন্য যথেষ্ট যে ইভেন্ট অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করা আসলেই জরুরি। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরিবর্তে প্রতিটি ইভেন্টের জন্য পোশাক পরিকল্পনার কাজ আগেভাগেই সেরে রাখা যায়। এতে করে কখন কী পরব, তা ভেবে অযথা মাথা ঘামাতে হবে না। লুকে বৈচিত্র্য আনা যাবে সহজে, সময়ও বাঁচবে। সর্বোপরি শেষ মুহূর্তের আতঙ্ক প্রতিরোধে এটি ম্যাজিকের মতো কাজ করবে।
অগ্রাধিকার আরাম
নিজেকে স্টাইলিশ দেখানো যতটা জরুরি, তার চেয়েও বেশি আরামকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। এমন পোশাক বেছে নিতে হবে, যাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ হয়, অস্বস্তি নয়। পরিহিত পোশাকটি যেন ব্যক্তিত্বকে প্রতিফলিত করে, সেটিও জরুরি। এই নির্বাচনই আত্মবিশ্বাসের চাবিকাঠি খুঁজে দেবে। অন্যকে দেখানোর জন্য ভারী, ঝকঝকে, চকমকে ট্রেন্ডি পোশাক পরতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। নিজের ভালো লাগলে ভিন্ন কথা; না হলে সূক্ষ্ম কারুকাজের, মার্জিত বিকল্পগুলো বিবেচনায় থাকতে পারে। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ক্যারি করতে পারলে যেকোনো পোশাকেই মিলবে ফেস্টিভ ভাইব।
বহুমুখী বিকল্প
বহুমুখী বিকল্পে বিনিয়োগ করা চাই। অর্থাৎ একই পোশাক; যা ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় নানাভাবে স্টাইলিং করে গায়ে তোলা যাবে। একটু ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে, নানা রকম স্টেটমেন্ট জুয়েলারি যোগ করে যে পোশাকগুলো পরলে ভিন্ন ভিন্ন লুক তৈরি করে নেওয়া যাবে সহজে, এমন। একটি ক্ল্যাসিক ড্রেস, নিউট্রাল প্যান্ট বা একটা স্টাইলিশ ব্লেজার এ ক্ষেত্রে অনেকভাবে সাহায্য করতে পারে; বিশেষ করে একাধিক ইভেন্টের জন্য আলাদাভাবে স্টাইল করার জন্য দারুণ কি-পিস এগুলো।
অনুষঙ্গে অনন্য
ফ্যাশন গবেষকদের মতে, যেকোনো লুক আপডেট করার সহজ উপায় হলো স্টেটমেন্ট গয়না। সাদাসিধে পোশাক বা সাজকে মুহূর্তে সেটি অসাধারণ করে তুলতে পারে। তাই খুব চিন্তাভাবনা করে পোশাক এবং ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই এমন সব অনুষঙ্গ নির্বাচন করে ব্যাগে পুরে নিতে হবে। তালিকায় থাকতে পারে চমৎকার সব জুয়েলারি পিস, বেল্ট বা ফেস্টিভ মুড বুস্ট করে এমন কোনো ব্যাগ। সঙ্গে থাকলে, প্রয়োজন অনুযায়ী আউটফিটের সঙ্গে যোগ করলেই লুক পাল্টে যাবে মুহূর্তের মধ্যে।
আরামদায়ক জুতা
ঘুরতে যাওয়ার সময় সবচেয়ে কাজের সঙ্গী কী? এক জোড়া আরামদায়ক জুতা। স্টাইলিশ, ব্র্যান্ডেড বা পোশাকের সঙ্গে মানানসই অথচ আরামদায়ক নয় এমন জুতা থেকে শত হাত দূরে থাকতে হবে। তা ছাড়া উৎসব ইভেন্টগুলোতে প্রায়শই অনেক সময় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হতে পারে কিংবা কখনো কখনো অনেক হাঁটতেও হয়। তাই যাওয়ার আগে অবশ্যই এমন জুতা বেছে নিতে হবে, যা একই সঙ্গে স্টাইলিশ ও আরামদায়ক হয়। হয়তো হিল পরলে অনেক সুন্দর দেখাবে, কিন্তু দীর্ঘ সময় সেটি পায়ে থাকাটা অস্বস্তিকর। তাই একে নির্দ্বিধায় এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। চটকদার ফ্ল্যাট, ওয়েজ বা ব্লক হিল বেছে নেওয়া যেতে পারে। ব্যথা দেবে না এবং দেখতেও ভালো লাগবে।
সহজ মেকআপ ও চুলসাজ
সব সময় হেয়ারস্টাইল এবং মেকআপ করতেই হবে, এমন কোনো কথা নেই। মেকআপবিহীন মুখ এবং সাধারণ আঁচড়ানো চুলেও যে কাউকে সুন্দর দেখাতে পারে। আবার কেউ হয়তো সাজতে পছন্দ করেন, সে ক্ষেত্রে সহজ হয় এমন চুলসাজ বা মেকআপ বেছে নেওয়া উচিত। কোনো রকম বাধ্যবাধকতায় যাওয়ারই দরকার নেই। স্বচ্ছন্দ বুঝে একটি মার্জিত মেকআপ টেকনিক বেছে নেওয়া যেতে পারে, যা দীর্ঘ সময় বজায় রাখাও সহজ হবে।
লেয়ার ম্যাজিক
হলিডে সিজনগুলোতে বেশির ভাগ সময় জমিয়ে ঠান্ডা পড়ে। তাই এ সময় লেয়ার ড্রেসে নিজেকে সাজানোর মোক্ষম সুযোগ মেলে। বেছে নেওয়া যেতে পারে রঙিন আড়ম্বরপূর্ণ জ্যাকেট, শাল, কেপ, টুপি ইত্যাদি। এগুলো উষ্ণ ও আরামদায়ক রাখার সঙ্গে সঙ্গে ড্রেসি স্টাইলকেও দেবে নতুনত্ব। তাই দ্বিধা ছাড়াই খুব সাধারণ কিছু পরেও লেয়ার ম্যাজিকের জাদুতে নিজেকে অসাধারণ করে তোলা সম্ভব।
আত্মবিশ্বাসে অটুট
পোশাক-আশাক, সাজসজ্জা নিয়ে তো অনেক কিছু জানা হলো। এরপর মনে রাখতে হবে, স্মার্ট ও স্টাইলিশ দেখানোর জন্য আত্মবিশ্বাস হলো সেরা অনুষঙ্গ। যা-ই পরা হোক না কেন, সেটি যদি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উপস্থাপন করা যায়, তবে স্টাইলিশ হয়ে ওঠা কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।

 রত্না রহিমা
ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top