ফোকাস I গ্লিসারিনের গুণে
বদলে যাওয়া মৌসুমে শুষ্ক, রুক্ষ ও দুর্বল ত্বকে প্রয়োজন পরিপূর্ণ পরিচর্যা। সঙ্গে সুরক্ষার সরল সূত্র রয়েছে সহজলভ্য এই উপাদানে
শীতে রুক্ষতার কার্যকর দাওয়াই গ্লিসারিন। নিয়মমাফিক এই উপাদানের ব্যবহারে মিলবে মখমলে মসৃণ অনুভূতি—প্রতিদিন। গ্লিসারিন শব্দটি মূলত এসেছে গ্রিক ‘গ্লাইকিস’ থেকে, যার অর্থ মিষ্টি। স্বাদে সুমিষ্ট হলেও দেখতে বর্ণহীন এবং গন্ধহীন গ্লিসারিন মূলত একধরনের ট্রাইহাইড্রোক্সি সুগার অ্যালকোহল। ন্যাচারাল ও সিনথেটিক গ্লিসারিন দুই ধরনের। প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ চর্বি থেকে হাইড্রোলাইসিস প্রক্রিয়ায় মেলে প্রাকৃতিক গ্লিসারিন। আর সিনথেটিক গ্লিসারিনের জন্য প্রয়োজন হয় পেট্রোলিয়াম, প্রোপেলেন আর ক্লোরিনের বিক্রিয়া।
গ্লিসারিন হিউমিকটেন্ট হিসেবে দারুণ। ফলে এটা সহজেই ত্বকের দ্বিতীয় স্তর থেকে পানি টেনে নিয়ে আসে ত্বকের উপরিভাগে। এমনকি বাতাস থেকেও জলীয় অংশ টেনে নেওয়ার জাদুকরী ক্ষমতা আছে গ্লিসারিনের। ফলে শীতে মৃতকোষ সারিয়ে আর্দ্রতা সঞ্চার করতে পারে গ্লিসারিন। আর এটি শুধু শুষ্ক ত্বকের জন্য, তৈলাক্ত কিংবা স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য উপযোগী নয়—এমন ধারণা ভুল। সব ঋতুতে কমবেশি ব্যবহার হলেও শীতে এর চাহিদা বেশি। ত্বকের নানা উপকারে কাজে আসতে পারে এই গ্লিসারিন। ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে।
ময়শ্চারাইজার রূপে
ত্বকে আর্দ্রতা প্রদান ও রক্ষার সামর্থ্য রয়েছে গ্লিসারিনের। এ থেকে তৈরি হতে পারে চমৎকার ময়শ্চারাইজার। ২৫০ মিলি গ্লিসারিনের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ তাজা লেবুর রস মিশিয়ে নিতে হবে। রাতে ঘুমানোর আগে এ মিশ্রণ মুখে মাখিয়ে নিলে পরিবর্তন টের পাওয়া যাবে পরদিন সকালেই। এ ছাড়া এক কাপ গরম পানিতে এক চা-চামচ গ্লিসারিন, এক চা-চামচ আমন্ড অয়েল আর কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়েও তৈরি হতে পারে ময়শ্চারাইজার। সমপরিমাণের ভিটামিন ই তেল, ভ্যাসলিন আর গ্লিসারিন মিশিয়ে গোসলের আগে মাখানো যেতে পারে ত্বকে। পরে গোসল সেরে নিলেই দেখবেন ত্বক মসৃণ।
বুড়িয়ে যাওয়া রোধে
অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্টের ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর উপাদান গ্লিসারিন। সূক্ষ্ম রেখা, বলিরেখাসহ বুড়িয়ে যাওয়ার সব ধরনের চিহ্ন রোধে সক্ষম। তবে এ ক্ষেত্রে শুধু গ্লিসারিন নয়, দরকার হবে আরও বেশ কিছু উপাদান। একটা ডিম ফেটিয়ে নিয়ে, তাতে এক চা-চামচ করে গ্লিসারিন ও মধু মিশিয়ে নিতে হবে। মিশ্রণটি ত্বকে মাখিয়ে বিশ মিনিটের অপেক্ষার পর ধুয়ে নেওয়া চাই। নিয়মিত ব্যবহারে শীতেও ত্বক দেখাবে তারুণ্যোজ্জ্বল।
ব্রণ ঠেকাতে
গ্লিসারিন দিয়েও ব্রণ রোধ করা সম্ভব। তবে এর সঙ্গে মেশাতে হবে বাড়তি কিছু। মিশ্রণটি মাখতে হবে নিয়ম করে, প্রতিদিন। এক টেবিল চামচ গ্লিসারিনের সঙ্গে, অর্ধেক টেবিল চামচ বোরাক্স পাউডার আর সামান্য কর্পূরগুঁড়া নিয়ে পানি দিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। ব্রণযুক্ত স্থানে মাখিয়ে রাখতে হবে শুকিয়ে যাওয়া অব্দি। তারপর বরফঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নিতে হবে।
ত্বকের বালাই সারাতে
শীতে শুষ্কতা ছাড়াও ত্বকের নানা রোগের সংক্রমণ বাড়ে। সোরায়সিস, র্যাশের মতো সমস্যা লেগেই থাকে। এ ক্ষেত্রেও সমাধান রয়েছে গ্লিসারিনে। চার টেবিল চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে এক চা-চামচ গ্লিসারিন ও সামান্য পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। সংক্রমণের স্থানে সার্কুলার মোশনে মাখাতে হবে এটি। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে নিতে হবে।
এক্সফোলিয়েটর
গ্লিসারিনের সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে মিশ্রণটি ঠোঁটে মাখাতে হবে। কিছুক্ষণ পর ঘষে তুলে ফেলতে হবে। এতে দূর হবে ঠোঁটের মৃতকোষ। বডি এক্সফোলিয়েটর তৈরির জন্য শুধু গ্লিসারিন পানির মিশ্রণই যথেষ্ট। তবে আরও কার্যকর করতে চাইলে সমপরিমাণ গ্লিসারিন আর চিনির মিশ্রণে যোগ করতে হবে অ্যালোভেরা। মুখসহ সারা শরীরে আলতো করে ঘষে নিতে হবে এটি। মৃতকোষ দূর হবে। ত্বক থাকবে আর্দ্রতায় উজ্জ্বল।