skip to Main Content

সেলুলয়েড I পারফেক্ট ডেজ

চিত্রনাট্য: ভিম ভেন্ডার্স, তাকুমা তাকাসাকি
পরিচালনা: ভিম ভেন্ডার্স
চিত্রগ্রহণ: ফ্রাঞ্জ লুস্টিগ
সম্পাদনা: টনি ফ্রশহ্যামার
অভিনয়: কজি ইয়াকুশো, তোকিও এমোতো, আয়োই ইয়ামাদা
সময়ব্যাপ্তি: ১২৪ মিনিট
ভাষা: জাপানিজ
দেশ: জাপান, জার্মানি
মুক্তি: ২০২৩
‘নিউ জার্মান সিনেমা’র অন্যতম পোস্টার বয়, জার্মান মাস্টার ফিল্মমেকার ভিম ভেন্ডার্সের জাপানি সিনেমা ‘পারফেক্ট ডেজ’ তুমুল গতিশীল এই সময়কালে জীবনকে ধীরতালে ও স্নিগ্ধ চোখে দেখার এক দারুণ উদাহরণ। কেন্দ্রীয় চরিত্র হিরামায়া একজন মিতভাষী ব্যক্তি। বয়স ষাটের ঘরে। ভোর হওয়ার বেশ আগেই, সড়কে ঝাড়ুদারের ঝাড়ুর প্রথম আওয়াজ কানে আসতেই ঘুম থেকে উঠে যায়। তারপর নিজের সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত হয়ে বেরিয়ে পড়ে ঘর থেকে। বেরোনোর পথে স্ট্রিট ভেন্ডিং মেশিন থেকে নেয় কফির একটি ক্যান। নিজের ছোট্ট ভ্যান চালিয়ে নেমে পড়ে কাজে। তার কাজ টোকিওর পাবলিক টয়লেটগুলো পরিষ্কার করা। গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ সারে সে। ফাঁকে দম নেয় নিকটবর্তী পার্কে। পুরোনো দিনের ক্যামেরা দিয়ে তোলে গাছের ছবি। নিঃসঙ্গ এই মানুষ পারতপক্ষে কথা বলে না। তার অস্তিত্বের উপস্থিতি অন্যদের চোখে বলতে গেলে ধরাই পড়ে না একদম। যেন সে বেঁচে থেকেও একধরনের মৃত মানুষ।
পুরোনো দিনের গান শোনে সে। শোনে ক্যাসেট বাজিয়ে। যন্ত্রসভ্যতার অত্যাধুনিক এ যুগে ক্যাসেট যেন দূর অতীতের স্মৃতি; অনেকটাই অ্যান্টিক। হিরামায়া নিজেও যেন সুদূর অতীতের কেউ। যান্ত্রিকতার বাইরে যে দুনিয়া, সেটিতেই এখনো মন্ত্রমুগ্ধ। জীবনকে ভীষণ মৃদুভাবে দেখে সে, বলা বাহুল্য। এরই মধ্যে স্মৃতি, পিছুটান, জাগতিক ও দৈহিক অনুভূতির হাওয়া তাকে কখনো কখনো দোলা দেয় ঠিকই; তবু সে গা ঝাড়া দেয়। তার নিজস্ব শৃঙ্খলার জীবনে একদিন হাজির হয় এক কিশোরী। তার ভাগ্নি। বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা। তাতে হিরামায়ার অতীত সম্পর্কে জানা হয় দর্শকদের। ব্যক্তিজীবনে বেশ ধনী ছিল সে। তবু এমন জীবন বেছে নিয়েছে নিজস্ব জীবনবোধে ভর করে। হয়তো মারাত্মক কোনো অভিঘাতের প্রতিক্রিয়ায়, যা কখনোই খোলাসা করেননি ফিল্মমেকার।
ধীরতালের এ জীবনে হিরামায়ার হৃদয়ে মৃদু দোলা দেয় এক মধ্যবয়সী নারী, যে একটি রেস্তোরাঁ চালায়। একদিন সন্ধ্যায়, নিজ শৃঙ্খলা ভেঙে সে উঁকি দেয় তখনো বন্ধ রেস্তোরাঁটিতে। সেই নারীকে দেখতে পায় এক পুরুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থায়। তারপর বেদনাহত হয়ে ফিরে আসে নদীর কাছে। সেখানে এসে পৌঁছায় সেই পুরুষও। জানায়, ওই নারী তার সাবেক স্ত্রী। বিচ্ছেদের পর গেল সাত বছরে একবারও দেখা হয়নি তাদের। আজ এসেছিল, কেননা সে মৃত্যুপথযাত্রী; তাই শেষবারের মতো দেখার ইচ্ছে পূরণের জন্য। সেই পুরুষের প্রতি অন্যতর এক হৃদ্যতা অনুভব করে হিরামায়া। শিশুদের মতো দুষ্টুমির খেলায় মেতে ওঠে তারা দুজন। সেখানেই নেমে আসে সিনেমার সমাপ্তি।
জীবনকে কাব্যিকভাবে দেখার এমন অনবদ্য সৃষ্টি একজন পুরোনো ওস্তাদের শেষ ভেলকির মতোই ধরা দিয়েছে ভেন্ডার্সের ফিল্মোগ্রাফিতে। সহসাই পরিণত হয়েছে মাস্টারপিসে। ফিল্মটি হিরামায়া চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা অভিনেতার পুরস্কার এনে দিয়েছে জাপানি অভিনেতা কজি ইয়াকুশোকে।

 আরিফুল ইসলাম

কুইজ
১। ফিল্মটির প্রেক্ষাপট কোন দেশের?
[ক] জাপান
[খ] চীন
[গ] জার্মানি
[ঘ] কম্বোডিয়া

২। হিরামায়ার বর্তমানে পেশা কী?
[ক] ব্যবসা
[খ] লেখালেখি
[গ] কবিরাজি
[ঘ] পরিচ্ছন্নতার কাজ

৩। হিরামায়া নিয়মিত কিসের ছবি তোলে?
[ক] ফুলের
[খ] নারীর
[গ] গাছের
[ঘ] টয়লেটের

গত সংখ্যার বিজয়ী
১. ফারজানা লিসা, বনশ্রী, ঢাকা
২. সুমিত দেবনাথ, কলেজ রোড, ময়মনসিংহ ৩. ফাতেমা জান্নাত শিউলি, বহদ্দার হাট, চট্টগ্রাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top