skip to Main Content

এডিটর’স কলাম I পরিবার পরিচর্যা

শব্দ ও অর্থের নিরিখে যত্ন ও ঝক্কির মধ্যে সংশ্লিষ্টতা থাকলেও পরিবারের যত্ন নেওয়া মোটেই দুরূহ কিছু নয়

শীতের প্রকৃতিতে ঘাসের ডগায় বিন্দু বিন্দু শিশিরের বুকে ভোরের সূর্যের কিরণ যখন আলো ছড়ায়, মনে হয় যেন আদিগন্ত ফুটে আছে মুক্তোদানা। এর নিগূঢ় তাৎপর্য উপলব্ধির জন্য মনেও থাকা চাই আলোর রেশ। যদি মনোজগতে চলে উথালপাতাল, অস্থিরতার ঢেউ; তাহলে শিশিরবিন্দুগুলো আদৌ নজর কাড়বে কি না, সন্দেহ। তার মানে, মনের যত্ন নেওয়ার গুরুত্ব এড়ানো দায়। অনুচিতও। কিন্তু মানুষের মন এমনই বৈচিত্র্যময় দোলাচলে নিরন্তর দুলতে থাকে, অনেক সময় খেয়াল এড়িয়ে যায় যত্নের প্রসঙ্গ। শুধু মন কিংবা শরীর নয়, ব্যক্তিমানুষের সমগ্র সত্তার তথা জীবনযাপনের সযত্ন সুশৃঙ্খলার বিষয়টি যাদের সাধারণত নজর এড়ায় না, তারা তার কাছের মানুষ। পরিবারের মানুষ। আর পরিবার হলো অনেকটা প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা সামাজিক বন্ধন। অথচ পরিবারের যত্ন নেওয়ার কথা অনেক সময় ব্যক্তিমানুষের মনে থাকে না।

দুই
পুস্তকীয় ভাষায়, সন্তানসহ বা সন্তানবিহীন এক বা একাধিক দম্পতির ছোট সংসার নিয়ে গড়ে ওঠে পরিবার। এর বিকাশে সন্ধানযোগ্য বংশগত সম্পর্ক সাধারণত জ্ঞাতি সম্পর্কের চেয়ে অগ্রাধিকার পায়। এই শৃঙ্খলার মধ্যে সদস্যরা সমাজের আর্থিক ও সামাজিক রেওয়াজসমূহ গড়ে তোলে। সহজ কথায়, পরিবার একটি সর্বজনীন পদ্ধতি। দুনিয়াজুড়েই একে গণ্য করা হয় সবচেয়ে গুরুত্ববহ সামাজিক ভিত্তি হিসেবে। বলা হয় সমাজ ও রাষ্ট্রের আয়না। শুধু তা-ই নয়, একজন মানুষের সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হলো পরিবার। এর সদস্যরা স্নেহ, মায়া, মমতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের বন্ধনে আবদ্ধ। তাই যেকোনো স্বার্থের ঊর্ধ্বে পরিবারই মানুষের মানসিক প্রশান্তি লাভের সেরা স্থান এবং নিরাপদ আশ্রয়স্থল। তবু জ্ঞাতসারে কিংবা অজান্তে আমরা অনেক সময় পরিবারের প্রতি নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হই কিংবা পাশ কাটিয়ে যাই; যা পরিবার তো বটেই; ব্যক্তিমানুষের জীবনেও ডেকে আনতে পারে গাঢ় অমানিশা।

তিন
বিরল ব্যতিক্রম বাদে পারিবারিক বন্ধনের প্রায় পুরোটাই মানুষের জন্য ভীষণ উপকারী। মোটাদাগে কিছু বিষয়ের ওপর নজর বোলালে এ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব। যেমন যেকোনো আবেগাত্মক সহযোগিতার জন্য পরিবারই সেরা জায়গা। এর সদস্যদের সঙ্গে নিজের চিন্তা-ভাবনা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আনন্দের বিষয়গুলো নিরাপদে ও নির্ভাবনায় ভাগ করে নেওয়া যায়। ফলে কমে আসে মানসিক চাপ; উন্নতি ঘটে মেজাজের। আপনবোধ অনুভব, আত্মপরিচয় শনাক্ত এবং আবেগাত্মক স্থিরতার যথাযোগ্য বোধশক্তিও এনে দেয় পরিবার। নিজের মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও আচরণের আকার গড়ে তুলে ব্যক্তিগত বিকাশে রাখে অপরিসীম ভূমিকা। তা ছাড়া বিভিন্ন গবেষণা বলছে, যারা শক্তিশালী পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ, তাদের জীবনযাত্রা অন্যদের তুলনায় অধিক টেকসই ও স্বাস্থ্যকর।

চার
শব্দ ও অর্থের নিরিখে যত্ন ও ঝক্কির মধ্যে সংশ্লিষ্টতা থাকলেও পরিবারের যত্ন নেওয়া মোটেই দুরূহ কিছু নয়। আর একে বিরাট বোঝা ভেবে ভড়কে যাওয়াও কাজের কথা নয় মোটেই; বরং খুব সহজে পরিবারের প্রতি যত্নশীল আচরণ ও জীবনচর্চার অনুশীলন করা সম্ভব। শুরুতেই চাই মন খোলা রাখা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে উদারচিত্তে ও সততার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা প্রয়োজন। একে অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং বিনা দ্বিধায় দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেওয়া চাই। হাজারো ব্যস্ততার মধ্যে যতটা সম্ভব একসঙ্গে ভালোভাবে কাটানোর মতো সময় বের করা জরুরি। পরস্পরের প্রয়োজনকে সমীহ করে যথাযোগ্য সমর্থন, ভালোবাসা ও মমত্ব দেওয়া; সদস্যদের প্রত্যেককে সম্মান করা; প্রত্যেকের ব্যক্তিসত্তার উন্নতি সাধনে উৎসাহ জোগানো এবং উদারতার নজির স্থাপন প্রভৃতি চর্চার মাধ্যমেও পরিবারের পরিচর্যা করা সম্ভব।

পাঁচ
‘জীবনের ঝোড়ো সমুদ্রে পরিবার হলো লাইফ জ্যাকেট’—বলেছেন হ্যারি পটারখ্যাত ব্রিটিশ সাহিত্যিক জে কে রাওলিং। আর জানা কথা, পরিবারের যত্ন নেওয়া মানে পরোক্ষ ও কার্যকরভাবে নিজেরই যত্ন নেওয়া।
নতুন বছরে ভালো থাকুন সবাই। ভালো থাকুক সবার পরিবার। পরিবারের প্রতি যত্নশীল হোন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top