ফরহিম I এসেনশিয়াল বুস্ট
শিকড়, বীজ, ছাল থেকে নিয়ে অন্যান্য উদ্ভিজ্জাত উপাদান থেকে সংগৃহীত। শুধু সুগন্ধিতে সীমাবদ্ধ নয়; সম্পর্কিত সৌন্দর্য এবং সুস্বাস্থ্যও
এসেনশিয়াল অয়েলের চর্চা বহু পুরোনো। তো পুরুষদের জন্য কোনটা সেরা, সেই প্রশ্ন মনে জাগা স্বাভাবিক। কিন্তু সুখবর হচ্ছে, লৈঙ্গিকভেদ নেই এসেনশিয়াল অয়েলের। তবে কিছু কিছু আছে, যেগুলো পুরুষ বা নারীর ত্বকভেদে বেশি কার্যকর। আবার অগ্রাধিকারে পাল্টায় পছন্দ। কোনো নারীর একটু পুরুষালি সুগন্ধি ভালো লাগতেই পারে। আবার পুরুষের পছন্দের তালিকায় থাকতে পারে কোমল মেয়েলি সুবাস। তাতে ক্ষতি কিছু নেই। তারপরও পুরুষদের হাতের নাগালে থাকতে পারে বিশেষ কতগুলো এসেনশিয়াল অয়েল।
পুরুষালি পছন্দে
বার্গামট থাকতে পারে তালিকার শীর্ষে। সিট্রাসি, সতেজ সেন্ট প্রোফাইল। কিছুটা কমলাঘেঁষা তবে ফুলেল সুবাসের উপস্থিতি মেলে। রাউন্ড নোটে লেবু যুক্ত হয় মিশ্রণে। ডিপ্রেশন, দুঃখ, মন খারাপের মহৌষধ এর কম্পাউন্ডগুলো। প্রশান্তিদায়ক অনুভূতি দেয় বলে পুরুষদের জন্য জুতসই। স্নায়বিক ও মানসিক উত্তেজনা কমিয়ে আনতে পারে নিমেষে। কার্ডিওভাসকুলার রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কার্যকর, যাতে নারীদের তুলনায় পুরুষদের আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি।
সিডারউড এসেনশিয়াল অয়েলের নাম থাকবে এর পরপরই। কাঠ কাঠ গন্ধটাই প্রবল, সঙ্গে সিট্রাসি আন্ডারটোনের এই তেলে রয়েছে বালসামিক হিন্ট। কেমোফোরাস সুগন্ধির উপস্থিতি থাকায় ছেলেদের সুগন্ধিতে এর ব্যবহার অহরহ। শুধু কি তাই! ত্বকের যত্নেও দুর্দান্ত এটি। নতুন দাড়ি গজাতে সহায়ক। দেহের তেল উৎপাদনের হারকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বলে দাড়ির নিচের ত্বককে রাখে ব্লেমিশ-ফ্রি। এ জন্যই বিয়ার্ড অয়েলগুলোতে সিডারউড অয়েল মাস্ট। এ ছাড়া স্ক্যাল্প ট্রিটমেন্টেও এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। চুল পড়ার গতি ধীর করে। মানসিক স্বচ্ছতা আর লক্ষ্যে দৃঢ়তা দিতে সক্ষম এর সুগন্ধ।
ফ্র্যাঙ্কিনসেন্স কাঠের মিষ্টি সুবাস ছড়ায়। সামান্য লেবুর গন্ধও মেলে এ থেকে। হাজার বছর ধরে তাই ব্যবহার হয়ে আসছে মেনজ সেন্ট আর পারফিউমে। একদম কমন বেস নোট হিসেবে। মাটির গন্ধঘেঁষা, মসলাদার এর সুবাসকে অনেকে অধ্যাত্মের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। অনেকের কাছে আবার সেনসুয়ালিটি সম্পর্কিত। অ্যারোমাথেরাপিতে এর জনপ্রিয়তা ক্লান্তি দূর আর খারাপ মেজাজ ঠান্ডা করতে। আত্মবিশ্বাসও বাড়াতে সহায়ক। স্ট্রেসড আউট অনুভূত হলেই ডিফিউজারে কয়েক ফোঁটা দিয়ে এর ব্যবহার মুহূর্তেই মনকে শান্ত করে তুলবে। অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস আর অনেক কাশির সমস্যা থাকলেও তা সারাবে। প্রদাহ দূরেও সক্ষম এই এসেনশিয়াল অয়েল। একে অন্য কোনো উচ্চমানের ক্যারিয়ার অয়েল অথবা পছন্দের কোনো এসেনশিয়াল অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকেও ব্যবহার করা হয়; যা দাগসংক্রান্ত সমস্যা সারানোর জনপ্রিয় উপায়। গ্রেপফ্রুট সামান্য মেয়েলিঘেঁষা সুবাস হলেও পুরুষদের সুগন্ধিতে এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। কোল্ড প্রেসিং এবং স্টিম ডিসটিলিংয়ের মাধ্যমে সংগৃহীত হয় এটি। মিষ্টি, সিট্রাসি গন্ধযুক্ত। গলা ও রেসপিরেটরি ইনফেকশন দূরে জাদুকরি। কমায় ক্লান্তি আর পেশির বেদনা। ডিপ্রেশন ও নার্ভাস ব্রেকডাউনের সমস্যা সারাতেও অব্যর্থ।
ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল পুরুষদের জন্য সেরা। ডিসট্রেস ক্ষমতাসম্পন্ন হওয়ায় আলট্রা সুদিং ভাইব দেয় এর সুবাস। শ্রান্তি সারায়। অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপার্টি থাকায় ত্বকের জ্বালাপোড়াসংক্রান্ত প্রদাহ দূরে দুর্দান্ত। কমাতে পারে লালচে ভাব। শেভিংয়ের সময় যারা কাটাছেঁড়ার সমস্যায় ভোগেন, তাদের হাতের কাছে থাকলে দ্রুত সারাই সেরে নেওয়া সম্ভব। পানিতে সামান্য গুলিয়ে ত্বকে এর ঝাপটা দিয়ে নিলেই চলবে। ইরেকটাইল ডিসফাংশনের সমস্যা সারানোতেও কার্যকর এই এসেনশিয়াল অয়েল। স্লিপিং টু সেক্স—সবেতেই জাদুকরি।
সুইট অরেঞ্জও থাকতে পারে পুরুষদের পছন্দের তালিকায়। ভার্সাটাইল এ সেন্ট অ্যারোমাথেরাপিতে খুবই জনপ্রিয়। এর মন উৎফুল্ল করা সুগন্ধ নিমেষে অন্তর চাঙা করে তুলতে পারে। ঠান্ডা, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে অনুজ্জ্বল ত্বকের সমস্যা সারাতে সচেষ্ট এটি।
এ ছাড়া ওয়াইল্ড পাইনের নামও শোনা যায় অহরহ। চুলের বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রেসক্রাইব করা এসেনশিয়াল অয়েল এটি। এতে উপস্থিত এন্টিমাইক্রোবিয়াল প্রোপার্টির কারণে হেয়ার কেয়ার আর স্টাইলিং প্রোডাক্টে এই উপাদানের ব্যবহার কার্যকারিতা বাড়ায়। মাথার চুলকানি আর প্রদাহ কমিয়ে চুলের মসৃণতা ও উজ্জ্বলতা বাড়ানোয় দারুণ কার্যকর এই তেল।
ব্যবহার্যে
সমস্যা অনুযায়ী ব্যবহারবিধি নির্ধারিত হবে। দাড়ি বাড়াতে, ত্বক সমস্যা সারাইয়ে, ক্লান্ত পায়ের সমস্যা উপশমে কিংবা পেশির বেদনা দূরে এসেনশিয়াল অয়েলের টপিক্যাল ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। অর্থাৎ সরাসরি ব্যবহার করা চাই। শ্যাম্পুতে কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে, তেলে মিলিয়ে কিংবা বডিওয়াশ আর আফটার শেভের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ব্যবহারের নজির মেলে। ব্যথাযুক্ত স্থানে মাসাজও করে নেওয়া যায় ক্যারিয়ার অয়েলের সঙ্গে মিলিয়ে। ডিফিউজারেও ব্যবহার করা যায় এসব এসেনশিয়াল অয়েল। দিনের শুরুটা হতে পারে এটি ব্যবহারে। এনার্জি বুস্ট, ফোকাস আর কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্য। এসেনশিয়াল অয়েলের রুম মিস্টও এ ক্ষেত্রে একই কাজে আসবে।
বিউটি ডেস্ক
মডেল: অর্কিড
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ওয়্যারড্রোব: ফিট এলিগেন্স
ছবি: কৌশিক ইকবাল