skip to Main Content

টেকসহি I আদি রূপ আস্বাদন

চলছে অতিরঞ্জনের অধ্যায়। পাল্লা দিয়ে প্রসাধন-বাণিজ্যের প্রসার। কিন্তু তলানিতে প্রকৃতির ভালো থাকা। সমানুপাতে মনের অস্থিরতা। আগ্রাসী ভূমিকায় সৌন্দর্যের চাহিদা। প্রাকৃতিক সুন্দরতাকে ভুলে গিয়ে কৃত্রিমতার পূজা। উত্তরণে প্রযুক্তির আনকোরা আশীর্বাদ

প্রসাধন ব্যবসার কলেবর বৃদ্ধির প্রভাব ড্রেসিং টেবিলের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। সাজতে কিংবা ত্বকের যত্নের জন্য যেসব প্রসাধন প্রয়োজন, সেসবের বিশাল সংগ্রহ পরিণত হয়েছে সাধারণ বিষয়ে। মেকআপে যোগ হয়েছে একের পর এক লেয়ার। যত্ন মন্ত্রেও তাই। এত সব পণ্যের সংগ্রহ অদরকারিই বলা চলে। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষের কাছে দেখা যায় একাধিক বিকল্প। অপশন অবশ্যই সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দেয়। কিন্তু আবশ্যক নয়।
কেনাকাটা বেড়েছে হু হু করে। শুধু যে প্রয়োজনেই বিউটি আইটেম কেনা হচ্ছে, তা কিন্তু একদম নয়; বরং অনেকে মনে করতে শুরু করেছেন, সুন্দরতা ধরে রাখতে নানা রকম প্রসাধন প্রয়োজন। সমাজের বাঁধাধরা সৌন্দর্যমান অনুযায়ী নিজেকে সাজিয়ে নেওয়ার চাহিদা থেকে এ ধরনের বিষয় নিয়ে আগ্রহের সূচনা। একজন একজন করে ধীরে ধীরে এ নিয়ে ভাবনায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েছেন অনেকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভূমিকাও এখানে প্রবল। সুন্দর ছবিতে হাজারো লাইক, কমেন্টের ফাঁদে আটকে পড়ছেন কোটি কোটি মানুষ। মিলেনিয়াল ও জেনারেশন জেডদের মাঝে যা সবচেয়ে বেশি।
ফটো এডিটিং অ্যাপের সহজলভ্যতা মেকআপের প্রতি আগ্রহের পারদ আরও উসকে দিয়েছে। গত এক দশকে মেকআপের বিপুল পরিবর্তন দেখা গেছে। আগের জমকালো সাজ বর্তমান সময়ে অনেকের নিত্যদিনের সাজে পরিণত হয়েছে। মেকআপ ম্যাক্সিমালিজমে মুগ্ধ বিশ্ব। সৌন্দর্য সুখবার্তা এনে দেয়। এর চর্চা ইতিবাচক অবশ্যই। কিন্তু এর ব্যাপকতার পেছনে নিজেকে সুন্দর করে তোলার চাহিদা মুখ্য। অনেক ক্ষেত্রে সেই চাহিদা বাস্তব থেকে অবাস্তবেও পৌঁছে যায়। নিজেকে সুন্দর করে তোলার প্রতিযোগিতায় একের পর এক প্রসাধন কেনায় আগ্রহ বাড়ে। সমানুপাতিক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রকৃতি এবং এতে বসবাসকারীরা। রাসায়নিকের যথেচ্ছ ব্যবহার, প্লাস্টিকের আগ্রাসন, মনোজগতের টানাপোড়েনে বিপর্যস্ত সব দিক। সমাধান খুঁজে চলেছেন পরিবেশসচেতনেরা। প্রযুক্তিতে খোঁজ মিলেছে বিশেষ এক সমাধানের। অ্যান্টি ওয়েস্ট বিউটি অ্যাপ। সুন্দরতার কুৎসিত দিককে লুকিয়ে নয়, বরং সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানেই হতে পারে এর ব্যবহার।
চিত্র-বিচিত্র
ফটো অ্যাপের ব্যবহার এখন এক বুড়ো আঙুলের; বিশেষ করে তরুণদের মাঝে। স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে ফটো এডিট করে নিতে দেখা যায় তাই হরহামেশা। ফিল্টার কিংবা ইফেক্ট ব্যবহার এ ক্ষেত্রে সহজতম কৌশল। কিন্তু এর প্রভাব মোটেই সরল অঙ্কে মেলানোর মতো নয়। ছবিকে আমূল বদলে দেওয়ার পাশাপাশি মানব মনে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে ফিল্টারের ব্যবহার। সমাজেও প্রতিফলিত হয় তা। সৌন্দর্য নিয়ে অবাস্তব আকাক্সক্ষা তৈরি হয়। অ্যান্টি-বিউটি ওয়েস্ট অ্যাপ এসব ফিল্টার এবং ইফেক্ট সরিয়ে দিয়ে প্রাকৃতিক রুপ প্রকাশ করতে সক্ষম। উদ্দেশ্য—মানুষ যাতে অতিরিক্ত প্রসাধনে সমাধান খুঁজে না বেড়ান।
অতিরঞ্জন
গ্লামারস লুক তৈরি করার বিভিন্ন টুল ব্যবহৃত হচ্ছে হরহামেশা। সাধারণ টাচআপ হয়ে যাচ্ছে ভারী মেকআপ। অ্যান্টি-বিউটি অ্যাপ ছবি, ভিডিও থেকে গ্ল্যামিফিকেশনের মিথ্যে জেল্লা ঝেঁটিয়ে বিদায় করবে। মেকআপ সরিয়ে দিতে সক্ষম। আলোর অতিরঞ্জনকে বাই বাই করারও সুযোগ রয়েছে। মানুষের চেহারা যে প্রাকৃতিকভাবে নিখুঁত হয় না, খুঁত থাকা বড্ড সাধারণ সেটিকেই প্রকাশ করবে। দাগছোপ, ভাঁজসহ নানা ধরনের অসংগতি দৃশ্যমান হবে। উদ্দেশ্য—মানুষকে সৌন্দর্যের প্রাকৃতিক রূপ মনে করিয়ে দেওয়া।
নিজেই এক শতে এক শ
পজিটিভ সেলফ টক, সেলফ লাভ, মেন্টাল হেলথ সাপোর্ট, হেল্পিং ইস্যুর মতো বিষয়গুলো মানুষের ব্যক্তিত্বকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখে। অ্যান্টি-বিউটি অ্যাপে এ ধরনের অপশন অ্যাড করা হয়েছে। এসব ইতিবাচক বিষয় মানুষের মনকে প্রভাবিত করতে পারে। দর্শন ও জীবনযাপনের মান বাড়াতেও ভূমিকা রাখে।
সত্যি নাকি মিথ্যা
ফিল্টার ব্যবহারে হেভি মেকআপ লুক তৈরি করে দেয় বেশ কিছু বিউটি অ্যাপ। সেসবের জায়গায় অ্যান্টি-বিউটি ওয়েস্ট অ্যাপে থাকে রিয়েলিটি চেক অপশন। সেটি চেহারা থেকে মেকআপের ভারী লেয়ার সরিয়ে দিয়ে প্রাকৃতিক চেহারা প্রকাশ করে। দাগ আড়াল করে মিথ্যা মসৃণতার দৃশ্যায়ন করে না।
প্রত্যাশার বাস্তব-অবাস্তব
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দেখা যাচ্ছে ফিল্টার অপশন। এই দৌড়ে এগিয়ে আছে ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট। অ্যান্টি-বিউটি অ্যাপ সেসব ফিল্টারকে আনফিল্টার করে ফিরিয়ে আনে ব্যবহারকারীর আসল চেহারা।
অন্তরা
ইনস্টাগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাটের রিভার্সড ফিল্টার অপশন এ ক্ষেত্রে একটি জুতসই উদাহরণ হতে পারে। কারণ, এই দুই অ্যাপের ব্যবহারকারীর সংখ্যা নিয়মিত বাড়ছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি অ্যাপ তৈরি করেছেন প্রযুক্তিবিদেরা। রিয়েল ইউ, বিউ ইউ—এই দুটি প্রাকৃতিক সুন্দরতার প্রকাশে ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
সুপারফিশিয়াল বিউটি স্ট্যান্ডাডের বাইরে গিয়ে নিজের আনকোরা সৌন্দর্যকে গুরুত্ব দিতে কাজ করবে এই প্রযুক্তি। অতিরঞ্জিত মোড়ক, বাড়তি উৎপাদন, অবাস্তব সৌন্দর্যের প্রচার বন্ধ করবে। এই দর্শন নিয়ে তৈরি অ্যাপের প্রসারে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার কমে আসবে। এথিক্যাল এবং ইকো-ফ্রেন্ডলি পণ্যের বাজার বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। রিসাইকেল, রিফিলের মাধ্যমে সার্কুলার ইকোনমিতেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে। কমিয়ে আনবে বিউটি ওয়েস্ট। ক্রেতাদের শিক্ষিত করে তুলবে; যা থেকে নিজের প্রতি নিজের ভালোবাসা তৈরি হতে শুরু করবে। সৌন্দর্য নিয়ে অস্বস্তি ও পরশ্রীকাতরতা কমিয়ে আনবে। আসল আত্মবিশ্বাসে ভরে উঠবে মন।

 সারাহ্ দীনা
মডেল: ইলা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top