skip to Main Content

কুন্তলকাহন I ধূসরিমার মাধুর্য

সামাজিক ট্যাবু ভেঙে পরিণত হয়েছে স্টেটমেন্ট হেয়ারস্টাইলে। নেতিবাচকতা এড়িয়ে নানা নিরীক্ষায় তাই সৌন্দর্য বাড়ানোর চেষ্টা সচেতনদের

জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কবিতা ‘বনলতা সেন’। যার বিদিশার নিশার মতো চুলের আকর্ষণ আজ অব্দি উপেক্ষা করতে পারেননি অনেকে। দীঘল কালো চুল ভালোবাসেন—এমন মানুষের সংখ্যাই হয়তো বেশি। কেশবতী কন্যাদের নিয়ে প্রশংসার বহরও বিশাল। তাহলে কি শুধু কালো চুলেই সুন্দরতার আবাস? তা কিন্তু নয়। কালো চুলের মাঝে খানিকটা জায়গাজুড়ে এক গোছা ধূসর চুলের অবস্থানও কম আকর্ষণীয় নয়।
বয়স হলে চুল পাকবেই, এই কনসেপ্ট এখানে খাটছে না। সিলভার লাইনিং বলে আদুরে ডাক আছে যে সাদা চুলের, সেটার কথাও বলা হচ্ছে না। এখানে প্রসঙ্গ ভিন্ন রকম ধূসর চুল; যা মাথার যেকোনো অংশে একটি নির্দিষ্ট জায়গাজুড়ে দেখা যেতে পারে। বয়স বেড়ে যাওয়া সেখানে প্রাসঙ্গিক নয়। বিজ্ঞানমতে, চুলের এমন বরণ হয় মেলানিনের অনুপস্থিতির কারণে। কোনো একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে মেলানিন কমে গেলে অথবা সম্পূর্ণরূপে না থাকলে চুলের রং বদলে ধূসর হয়ে যেতে পারে। দেহের যেকোনো হেয়ারি এরিয়াতেই হতে পারে। যেমন মাথার ত্বক, আইব্রাও, আইল্যাশ। পুস্তকীয় নাম পোলিওসিস। বাহিত হয় বংশগতিতে। পৃথিবীতে ৪০ হাজার মানুষের মাঝে মাত্র একজন এই বিরল চুল পেয়ে থাকেন। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ককেশীয় অঞ্চলের মানুষের চুলে।
গ্রে হেয়ার নিয়ে একটা সময় পর্যন্ত লুকোচুরি গল্প ছিল খুব চেনা। শুরুতেই আঁতকে উঠতেন বেশির ভাগ মানুষ। কিন্তু দিনবদলের গল্পে সেসব আজ ইতিহাস। অনেকে এখন আর চুলের রং নিয়ে চিন্তিত নন। কালো চুলের আবেদন কমেনি বটে, কিন্তু সেই নব্বইয়ের দশক থেকে নানা রঙে সাজছে চুল। গ্রে স্ট্রিকে তাই আর অস্বস্তিতে ভোগেন না অনেকেই, বরং উচ্ছ্বসিত হন। আগের মতো দুশ্চিন্তার জাল বিছায় না ধূসর বর্ণের কেশ। আগ্রহসহকারে স্টাইলিং সারতে দেখা যায় অনেক নারী-পুরুষকে।
অবশ্য এই ভিন্ন রকম চুলের অনন্য স্টাইলিংয়ের সূচনা করেছিলেন একজন নারী। ভারতীয় জাঁদরেল রাজনীতিবিদ ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তার ছিল এমন চুল। নিজ থেকেই তার কপালের ডান দিক ঘেঁষে বেড়ে উঠেছিল এমন কিছু চুল। সেলিব্রিটি হেয়ারস্টাইলিস্ট জাভেদ হাবীবের বাবা হাবীব আহমেদ তখন ইন্দিরা গান্ধীর চুল স্টাইলিং করতেন। ভারতের স্বাধীনতার আগে যখন ইংরেজ রাজত্ব চলমান, ব্রিটিশ রাজা লর্ড মাউন্টব্যাটেনকেও তিনি এই সেবা দিতেন। ধারাবাহিকতায় জওহর লাল নেহরুও যেতে শুরু করেন এই স্টাইলিস্টের কাছে। তরুণ রাজনীতিবিদ হিসেবে যাত্রার শুরুর সময় থেকেই। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরবর্তী সময়েও হাবীবের কাছে চুলসংক্রান্ত নানা সেবা নিতেন নেহরু। পিতৃদেবের পদবি ধারণ না করলেও হেয়ারস্টাইলিস্ট কিন্তু একই রেখেছিলেন কন্যা ইন্দিরা। তার কেশসজ্জা হিসেবে অসাধারণ তকমা পাওয়া হেয়ারস্টাইলটি কিন্তু আদতে খুব সাধারণ ছিল। টিপিক্যাল ফেঞ্চ ক্রিয়েশন। ইন্দিরার চুলের টেক্সচার ছিল কোঁকড়ানো। ঘাড় অবধি নেমে সামনের দিকে দৈর্ঘ্য খানিকটা বেশি ছিল। হাবীব আহমেদ সাধারণত দুই সপ্তাহে একবার ইন্দিরা গান্ধীর চুল নিয়ে কাজ করতেন। কোঁকড়া চুল হওয়ার কারণে তার চুলে একটু বেশি সময় স্টাইলিং ট্রিক টিকে থাকত বলে জানা যায় বিখ্যাত পত্রিকা টেলিগ্রাফের অনলাইন ভার্সনের বরাতে।
যত্নযোগ
 গ্রে হেয়ার কেয়ারের জন্য বিশেষ শ্যাম্পু এরই মধ্যে বাজারে এনেছেন হেয়ার কেয়ার এক্সপার্টরা। এই স্পেশাল শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল আর্দ্রতায় পরিপূর্ণ থাকে। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল থাকার পাশাপাশি এর সৌন্দর্য বাড়ে।
 গ্রে হেয়ারের জন্য মসৃণতা বেশ জরুরি। তাই নিয়মিত কন্ডিশনিং করলে ভালো।
 সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি কালো চুলের সঙ্গে সঙ্গে গ্রে স্ট্রিককেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই সূর্য থেকে নিরাপদে রাখতে হ্যাট অথবা স্কার্ফ ব্যবহার করা যেতে পারে; ইউভি প্রটেকশন লোশন অথবা স্প্রেও।
 মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা জরুরি। পিএইচ ব্যালেন্স নষ্ট করে এমন কোনো প্রোডাক্ট প্রসাধন তালিকায় না থাকা ভালো। তাতে স্ক্যাল্প স্কিন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে।
স্টাইলিং
নিত্যদিনের জন্য গ্রে স্ট্রিক স্টাইলিং কীভাবে করা যেতে পারে, সে বিষয়ে ভাবনা থাকা খুবই স্বাভাবিক। তবে কোনোভাবেই অস্বস্তিতে ভোগা যাবে না।
গ্রে স্টিকের ভলিউম ও টেক্সচার—দুই দিককেই বিবেচনা করে স্টাইলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলে ভালো। কারণ, ঘনত্ব ও গঠনবিন্যাস—দুয়েই ভিন্নতা থাকতে পারে। ভালোভাবে বিষয় দুটি বুঝে তবেই স্টাইলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া শ্রেয়।
হেয়ারস্টাইলিংয়ের জন্য হিট ব্যবহার করতে চাইলে মাথায় রাখতে হবে, সেটি যেন রোজকার রুটিনে জেঁকে না বসে। যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়া উত্তম। আর যদি তাপেই হয় আকাঙ্ক্ষিত সমাধান, তাহলে যতটা সম্ভব কম তাপমাত্রায় হেয়ার টুলস ব্যবহার করা ভালো। তার আগে হিট প্রটেক্টর লোশন কিন্তু মাস্ট।
বেনি, টুইস্ট অথবা বান করে রাখলে চুলকে প্রাকৃতিক দূষণ থেকে খানিকটা রক্ষা করা সম্ভব—মত দেন হেয়ার স্পেশালিস্টরা। তাই এক্সপোজারের ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব সচেতন হলেই ভালো। কারণ, বাতাসে উপস্থিত ধুলাবালু এবং বিভিন্ন ক্ষুদ্রতর পার্টিকেল চুলকে আঘাত করতে পারে। গ্রে স্ট্রিকেও পড়তে পারে ক্ষতিকর প্রভাব। তাই আঁটসাঁট করে বেঁধে নিলে চুলের ক্ষতি কিছুটা কমানো সম্ভব।

 বিউটি ডেস্ক
মডেল: ইকরা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top