skip to Main Content

ত্বকতত্ত্ব I অ্যালার্জি-আতঙ্ক!

অনাহূত অতিথি। হুট করে আসে। আদতে শত্রুসম। পরিণামের চেয়ে প্রতিকার কার্যকরী। সচেতনতায় সমাধান একশ-তে এক শ

হঠাৎ গাল লাল হয়ে যাওয়া মানেই যে লজ্জায় রাঙা, তা কিন্তু নয়। এমন হতে পারে অ্যালার্জির আক্রমণেও। সংবেদনশীল ত্বকের অধিকারীদের কাছে এ এক আতঙ্কের নাম বলা যায়। নতুন কোনো প্রসাধনপণ্য ব্যবহারের আগে তখন মনের কোণে মেঘ জমে। কিন্তু সব মেকআপ আইটেমেই কি অ্যালার্জি হবে? না। এমন কোনো কথা নেই। তবে বিউটি বক্সের প্রসাধনে যদি এমন কোনো উপাদান থাকে, যা ত্বকের সঙ্গে সহাবস্থানে স্বচ্ছন্দ নয়, তাহলে সেখান থেকে তৈরি হতে পারে অস্বস্তি। চুলকানি, জ্বালাপোড়া, লালচে ভাব—যা-ই হোক না কেন, সবকিছুর জন্য দায়ী অ্যালার্জি। তিল থেকে তাল তৈরির যে প্রবাদ আছে, এই বিষয়ও কিছুটা তেমন। সরিষা দানার মতো ক্ষুদ্র র‌্যাশ থেকে সারা দেহে ছড়িয়ে যেতে পারে এর সংক্রমণ।
সাজ থেকে সাজা
মেকআপের কারণে তৈরি অ্যালার্জিকে কসমেটিক অ্যালার্জিও বলা হয়। সাধারণত মুখমণ্ডল, ঠোঁট, চোখ, কান ও গলায় এর সংক্রমণ বেশি হয়। এমনকি ফোসকাও পড়তে পারে। বিউটি প্রোডাক্ট থেকে সাধারণত দুই ধরনের অ্যালার্জি হয়। প্রথমটি ইরিট্যান্ট কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস। এর কারণে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জ্বালাপোড়া, চুলকানি, হুল ফোটার মতো অনুভূতি এবং ত্বক লাল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। অন্য যে ধরন সম্পর্কে জানা যায়, সেটিতে যুক্ত থাকে ইমিউন সিস্টেম। একে অ্যালার্জিক কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস বলা হয়। লক্ষণের মধ্যে ত্বকের রং বদলে লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানির সৃষ্টি গুরুত্বপূর্ণ। প্রসাধনের কারণে এই সমস্যা তৈরি হলে নির্দিষ্ট জায়গায় তার প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। যেমন কারও যদি আইশ্যাডোর কোনো উপাদানের কারণে অস্বস্তি হয়ে থাকে, তাহলে সেটি ব্যবহারের পরে চোখ ও এর চারপাশ ফুলে উঠতে পারে। চোখের পাতাও আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু বাকি জায়গাতে, যেমন গাল কিংবা গলায় বিস্তারের আশঙ্কা কম।
মূল সমস্যা মূলে
গবেষণায় পাওয়া তথ্যমতে কিছু উপাদানের উপস্থিতিতে ত্বকে সংবেদনশীলতার পরিমাণ বেড়ে যায়। যেমন সুগন্ধি, প্রসাধন সংরক্ষণে ব্যবহৃত প্যারাবেন, সালফেট, ফরমালডিহাইড, সোডিয়াম বেনজয়েট প্রভৃতি। প্রাকৃতিক কিছু উপাদানও আছে এই তালিকায়। যেমন উদ্ভিদ নির্যাস কিংবা তেল। এসব থেকে তৈরি অ্যালার্জি পৌঁছাতে পারে একজিমা, হাইভ, সেবোরিয়েক অবধি।
আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব অ্যালার্জি, অ্যাজমা অ্যান্ড ইমিউনোলজি থেকে পাওয়া তথ্যমতে ১০০ পূর্ণবয়স্ক মানুষের মধ্যে ৫৫ জন একজিমায় আক্রান্ত হয়। অস্বস্তিকর চুলকানি হতে পারে। ত্বক ভরে উঠতে পারে ছোট ছোট গোটাতে। ত্বকের রং বদলে হয়ে যেতে পারে লালচে। সারা দেহে ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তো থাকছেই। তবে কনুই, হাঁটু ও ঘাড় বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। হুট করে শুরু হয়েছে বলে মুহূর্তেই মিলিয়ে যাবে, বিষয়টি মোটেই এমন নয়; বরং থেকে যেতে পারে দীর্ঘদিন। এক বছর থেকে এক জীবন অবধি। যার প্রমাণ পেয়েছেন বহু মানুষ। এসবের সঙ্গে অনেক সময় জ্বর আর অ্যাজমাও হানা দেয়। এই সমস্যা সমূলে উৎপাটন সম্ভব নয় বলে মত দেন চিকিৎসকেরা। সুস্থতার জন্য কিছু ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন এবং নিয়মিত যত্ন-ই থাকে প্রেসক্রিপশনে।
নিরসন
বিউটি প্রোডাক্ট লাইনের কলেবর বিশাল। তবে এর মধ্যে সাবান, ডিটারজেন্ট, অ্যান্টিপারসপিরেন্টস, আই মেকআপ, ময়শ্চারাইজার, শ্যাম্পু, লং ওয়্যারিং লিপ কালার, নেইল পলিশ, হেয়ার ডাই থেকে সবচেয়ে বেশি অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়। এই তালিকার কোনো পণ্য ব্যবহারের আগে কিছু বিশেষ সাবধানতা হতে পারে সমাধান।
 বিশ্বজুড়ে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, যারা প্রসাধনের মান নিয়ন্ত্রণ করে। পণ্যের বিস্তারিত বিবরণে এ-সম্পর্কিত তথ্যের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়ে কেনা যেতে পারে। তাতে প্রাথমিকভাবে আইটেমটির কোয়ালিটি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ, যুক্তরাজ্যের সিটিপিএ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইসি এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এই দায়িত্ব পালন করে।
 অ্যালার্জি প্রন স্কিনকে শান্ত রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। চটজলদি সেরে ওঠার কোনো কার্যকর ট্রিক নেই এ ক্ষেত্রে। তাই ত্বককে অযথাই বিচলিত করবে না এমন পণ্যগুলোয় আস্থা রাখাই সই।
 সুগন্ধিতে যদি সমস্যা থাকে, তাহলে ফ্র্যাগরেন্স ফ্রি অথবা উইদাউট পারফিউম লেখা আছে কি না দেখে নিতে হবে।
 প্রোডাক্টের গায়ে লেখা প্রতিটি উপাদানের নাম মনোযোগসহ পড়লে জানা যাবে, এতে কোনো অ্যালার্জিক উপাদান উপস্থিত আছে কি না।
 কসমেটিক অ্যালার্জি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্যাচ টেস্টিং কার্যকরী। এ জন্য নির্দিষ্ট একটি প্রসাধনী দিনে দুবার টানা ১০ দিন ঠিক একই স্থানে ব্যবহার করলে ধারণা মিলবে এর প্রতিক্রিয়া ত্বকের জন্য ক্ষতিকর কি না। তবে নতুন কোনো পণ্য কেনার ক্ষেত্রে এই দীর্ঘক্ষণের পরীক্ষায় যেতে না চাইলে স্বল্প সময়েও সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপায় রয়েছে। প্রোডাক্ট স্যাম্পল কবজির ভেতরের অংশে অথবা কনুইতে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা প্রয়োগ করে সেখানে কোনো প্রকার অস্বস্তি তৈরি হয় কি না, সেটি দেখে নেওয়া যেতে পারে। এতে করেও বড় ধরনের বিপদ থেকে নিরাপদ থাকা যাবে।
চিকিৎসকের কাছে যাবেন কি না, তা নিয়ে দোলাচল খুব বেশি দীর্ঘ না করাই ভালো। ত্বকের যত্নে কিংবা সাজে কোনো বিউটি প্রোডাক্ট ব্যবহারের পরে যদি অস্বস্তি অনুভূত হয়, তবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে সমাধানে পৌঁছানো যাবে সহজে। জানা যাবে এই সমস্যার মূলে কোনো বিউটি আইটেম আছে কি না। যদি থাকে, তাহলে ত্বকের সমস্যা দূর করার সঙ্গে সঙ্গে বাতিলের খাতায় নাম লেখাতে হবে সেই পণ্যেরও।
শেষ পাতে মিষ্টি নয়, থাকছে তেতো সত্যি। প্রোডাক্টের লেবেলে উল্লেখ করা ক্লিন বিউটি, ন্যাচারাল কিংবা হাইপোঅ্যালার্জেনিক—কোনোটিরই শতভাগ সত্যতা খুঁজে পাননি বিশেষজ্ঞরা। অনেক ক্ষেত্রে তারা প্রমাণ পেয়েছেন, এসব শুধুই মুখের বুলি। মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি। তাই দু-এক শব্দে নয়, উপাদানের বিস্তারিত জেনে তবেই সিদ্ধান্ত নিলে ভুগতে হবে না। আনন্দের সঙ্গে সাজ ও যত্ন—দুই-ই সারা যাবে।

 সারাহ্ দীনা
মডেল: মৃদুলা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top