লোগো লিগ্যাসি I শ্যানেল
১৯২৫ থেকে ২০২৫ সাল, এক শ বছর বয়স। ব্র্যান্ডের লোগোতে সরলতা আর সমৃদ্ধির সন্ধি। শত বছরে একবিন্দু পরিবর্তন হয়নি; বরং কোকো শ্যানেলের পরিচয় আরও উদ্ভাসিত হয়েছে দিন দিন।
‘লেস ইস মোর’ গ্যাব্রিয়েল বনয়্যর শ্যানেলের বহুল জনপ্রিয় উক্তি। তার বিখ্যাত লাক্সারি ফ্যাশন ব্র্যান্ড শ্যানেলের লোগোকে অনুপ্রাণিত করেছে এই লাইন। বোঝা যায় বাহুল্যহীনেই তিনি বিশালতা খুঁজে পেয়েছিলেন। জাতে ফরাসি ছিলেন এই ফ্যাশন ডিজাইনার। কিন্তু তার আলোকচ্ছটার বিচ্ছুরণ বিশ্বজুড়ে। ফ্যাশন জগতের অন্যতম পথিকৃৎ তিনি। বদলে দিয়েছেন নারীদের পোশাক ভাবনা। সব্যসাচী তিনি। নিজ ব্র্যান্ডের লোগোটিও তারই সৃজনশীল সৃষ্টি। বোল্ড, মিনিমালিস্টিক। অতিরঞ্জনের বালাই নেই। কাট-কাট, ছাঁট-ছাঁট। পুরোনো হওয়ার জো নেই। টাইমলেস যাকে বলে আরকি! বিলবোর্ড থেকে শুরু করে ব্যাগ, জুয়েলারি, পোশাক, কিংবা সুগন্ধির বোতল—সবকিছুকেই আলোকিত করতে সক্ষম।
নকশা
ইংরেজি বর্ণমালার তৃতীয় অবস্থানে থাকা ‘সি’ ব্যবহার করা হয়েছে লোগো ডিজাইনে। উদ্যোক্তা কোকো শ্যানেলের নামের এই দুটি অংশ থেকে প্রথম বর্ণটি নিয়ে তৈরি হয়েছে লোগো। বোল্ড আপারকেস টাইপোগ্রাফি করা হয়েছে। দুটি বর্ণ একটি অপরটির আয়নার প্রতিচ্ছবি। আবার একটি অন্যটির সঙ্গে সংযুক্ত।
অর্থ
গ্যাব্রিয়েল বনয়্যর শ্যানেল পরিচিত ছিলেন কোকো শ্যানেল নামে। এই বিশ্ববিখ্যাত ডিজাইনারের শিল্পনীতিতে ছিল আরামদায়কতা, জ্যামিতিক নকশা আর রেখার বিন্যাস। তারই প্রতিফলন দুই সি এর অবস্থানে। আবার এই অন্তরঙ্গ অবস্থান আরও একটি বিষয় বোঝাতে চায়। সেটি হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্কের পাশাপাশি অবস্থান। লোগোর বেসিক রং কালো। এটি রহস্য, আভিজাত্য আর শক্তিকে প্রকাশ করে। আবার এই ব্র্যান্ডের সিগনেচার পিস, লিটল ব্ল্যাক ড্রেসের কথাও মনে করিয়ে দেয়। কিছু প্রোডাক্টের লোগোতে আবার সোনালি রং ব্যবহৃত হয়ে থাকে; যা আবেগ, সম্পদ, বিলাস আর সমৃদ্ধিকে বোঝায়।
ইতিহাস
১৯২৫ সালে তৈরি করা হয় এই লোগো। সে সময়ে কালো রঙের ব্যবহার খুব একটা ইতিবাচকভাবে দেখা হতো না বললেই চলে। অন্তত পোশাকের দুনিয়াতে কালো ছিল অনাহূত। তখন ‘লিটল ব্ল্যাক ড্রেস’ তৈরি করে দারুণ আলোচনায় শ্যানেল। পুরো ফ্যাশন বিশ্বের গল্প সেখানেই বাঁক নেয়। কালো জয় করে ফ্যাশন দুনিয়ার আঁধার। ম্যাডাম শ্যানেল একাই কালোর আলোকবর্তিকা নিয়ে পথ হেঁটেছেন।
ফন্ট
শ্যানেলের লোগোতে যে ফন্ট ব্যবহার করা হয়েছে, সেটির নাম কতুর। লোগোটিতে সমতা রক্ষা হয়েছে। তাই দেখতে সহজ-সরল। দীর্ঘদিন মনে রাখার মতো।
মিথ
কোকো শ্যানেলের ছোটবেলা কেটেছে অনাথ আশ্রমে। প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল উবাজিন চ্যাপেল। প্রচলিত আছে, সেই স্থাপনার কোনো এক কাচের জানালার দাগ তার লোগোর নকশাকে প্রভাবিত করেছিল। যদিও কখনো দালিলিক প্রমাণ মেলেনি। জগদ্বিখ্যাত এই ফ্যাশন ডিজাইনার নিজের অতীত নিয়ে রেখে গেছেন রহস্য।
সারাহ্ দীনা
ছবি: ইন্টারনেট