ফিচার I মেক আ স্যান্ডউইচ
খাবারের মেনুতে না থাকলেও স্টাইল ফাইল থেকে বাদ দেওয়া যাবে না এই সিজনে। টিকটকের ভাইরাল ক্যাপসুল ওয়্যারড্রোব ট্রিক বলে কথা। বিস্তারিত জাহেরা শিরিনের লেখায়
বিগত কয়েক বছরে টিকটক যতটা না বিনোদনের রসদ জুগিয়েছে, তার চেয়ে বেশি হয়ে উঠেছে ফ্যাশন ইন্সপিরেশনের গো টু প্লেস। এই সাইটে ট্রেন্ডিং অ্যাসথেটিক আর স্টাইলিং হ্যাকগুলো পাল্টে দিতে শুরু করেছে পুরো ফ্যাশন গেম। নানা অনুষঙ্গের যোগে স্নিকারকে সাজিয়ে নেওয়া, স্কার্ফ থেকে শার্ট তৈরি বা বটমকে হুটহাট টপ বানিয়ে ফেলার মতো হাজারো রকম ফ্যাশন হ্যাকের হাব এই টিকটক। সম্প্রতি সাড়া ফেলেছে স্যান্ডউইচ রুল বা আউটফিট স্যান্ডউইচিং। পোশাক পরার টিকটক অ্যাপ্রুভড এ প্রক্রিয়া না জানলে কিন্তু পিছিয়ে পড়তে হবে।
স্যান্ডউইচ রুলের সূত্রপাত
স্টাইলিস্ট লিডিয়া টমলিনসনের একটি ভাইরাল ভিডিও পোস্টের মাধ্যমে। প্রথম পোস্টে তিনি খুব সহজভাবে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে বলেন পুরো ব্যাপারটা। স্যান্ডউইচের কথা চিন্তা করতে বলেন। সে ক্ষেত্রে প্রথমে চোখে কী ভেসে ওঠে? একটা রুটি ওপরে এবং একটা রুটি নিচে, মাঝে একদমই ভিন্ন কিছু দিয়ে ফিলিং। পুরোটাই ভারসাম্যের পরিচায়ক। এই একই সুষমতায় সাজিয়ে নেওয়া যায় রোজকার আউটফিটও, সেটাই ছিল তার মূল ভাষ্য। শরীরের ঊর্ধ্বাংশে ও নিম্নাংশে সাদৃশ্য বজায় রেখে মাঝের অংশে একদম ভিন্ন কিছু পরে স্টাইলিং সেরে নেওয়াই স্যান্ডউইচ রুলের মূল সূত্র। শুরুটা হতে পারে একই রঙের দুটো পোশাক দিয়ে। স্যান্ডউইচের রুটির মতো ব্যবহার করা যাবে যেগুলো। আর মাঝে অন্য কোনো রঙের একটি পিস যোগ করতে হবে স্যান্ডউইচের ফিলিংয়ের মতো করে।
ব্রেড অ্যান্ড ফিলিং বাছাই
শুধু রং দিয়ে আউটফিট স্যান্ডউইচিং করতে হবে, ব্যাপারটা মোটেই তেমন নয়। পোশাকের লেয়ার, টেক্সচার, ফ্যাব্রিক, ওজন, অনুপাত—সব দিয়েই আউটফিটে এই ইফেক্ট তৈরি সম্ভব। তবে শুরুটা রং দিয়ে করলে ভালো। তুলনামূলক সহজ। এ ক্ষেত্রে টপ আর জুতার রং মিলিয়ে পরে কনট্রাস্ট কালারে স্কার্ট, শর্ট বা প্যান্ট যোগ করা যায় লুকে। যেমন টমলিনসনের ভিডিওতে তাকে ক্রিম কালারের জিনস আর সাদা সোয়েটার পরতে দেখা যায়। আর পায়ে চাঙ্কি ব্ল্যাক বুট। বটম হেভি দেখায় আউটফিটটি। পরে শুধু একটা কালো স্কার্ফ অথবা বেল্টের যোগে ভারসাম্য তৈরি করে ফেলেন তিনি। মূলত জুতার রং আউটফিটের টপে যোগ করে এই সমতা আনা হয়। আরও সহজে করা সম্ভব। কালো টপ, কালো জুতা আর সাদা প্যান্ট পরে। এখানে কালো টপ আর জুতা স্যান্ডউইচের রুটি এবং সাদা প্যান্ট হচ্ছে ফিলিং। এ ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় থাকে। কিন্তু কালো টপ যদি সাদা প্যান্ট আর জুতা দিয়ে পরা হয়, তখন আউটফিটটি টপ হেভি অনুভূত হবে। একইভাবে যদি এক জোড়া কালো জুতা একটি সাদা টপ আর প্যান্টের সঙ্গে পেয়ার আপ করা হয়, তাহলে চোখ গিয়ে জুতাতেই আটকাবে, পুরো পোশাকে আর যাবে না। একইভাবে ভারী ম্যাটেরিয়ালে তৈরি ওভারসাইজড টপ যেমন প্লেইড ব্লেজার, কোনোভাবেই স্লিম ফিটিং জিনস আর ডেন্টি ব্যালে ফ্ল্যাটের সঙ্গে ভালো দেখায় না; বরং এ ক্ষেত্রে ফুটওয়্যার বদলে লম্বা বুট বা লাগ সোলের জুতা বেশি জুতসই। এমন লুকে ব্লেজার আর বুট হচ্ছে স্যান্ডউইচের ব্রেডসম এবং স্লিম ফিটিং জিনস হচ্ছে ফিলিং।
ঢাউস আকারের পোশাকেও স্যান্ডউইচ রুল অ্যাপ্লাই করা সম্ভব। সে উপায় বাতলে দিয়েছেন টমলিনসন। প্যাডেড শোল্ডার দেওয়া সোয়েটার, কালো কোমরবন্ধ আর কালো স্কিনি জিনস দিয়ে পরলে টপ হেভি দেখানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়। তখন কোমরে বেল্ট আটকে গড়া শেপকেও আকর্ষণীয় দেখায় না। সে ক্ষেত্রে ওয়েস্টলাইনকে নজরকাড়া দেখাতে আর প্যাডেড শোল্ডারে ভারসাম্য তৈরিতে সামান্য চওড়া পায়ের প্যান্ট পরার পরামর্শ দেন টমলিনসন। এতে অনুপাতের ভারসাম্য বজায় রাখা যায়। এ ছাড়া ব্যাগি টপকে স্ট্রেইট লেগ প্যান্ট আর চাঙ্কি শু দিয়ে পরে নেওয়া গেলেও চমৎকার সামঞ্জস্য তৈরি হবে লুকে। অথবা প্যান্ট যদি ব্যাগি হয়, সে ক্ষেত্রে আঁটসাঁট টপ আর বেয়ারলি দেয়ার স্যান্ডেল সেরা জোড় হতে পারে।
প্রক্রিয়ার প্রকারান্তরে
স্যান্ডউইচিং আইডিয়া হরেক রকম হতে পারে। সে জন্য যে আবার আলাদা শপিং করতে হবে তা নয়, বরং ওয়্যারড্রোবে থাকা একদম বেসিক পোশাক দিয়েই শুরুটা হতে পারে।
লেইড-ব্যাক লাক্সারি
স্যান্ডউইচিং সারতে হবে ওয়্যারড্রোবের দুটো ব্ল্যাক পিস দিয়ে অথবা হতে পারে ভাইস ভার্সা। এ উপায়ে স্টাইলিং সারার এটাই সবচেয়ে সহজ উপায়। যেমন ব্ল্যাক টিউব টপের সঙ্গে পায়ে লেইড ব্ল্যাক কালো স্যান্ডেল পরে নেওয়া যায়। আর এ দুয়ের মাঝে সাদা লিনেন প্যান্ট থাকতে পারে। পশ সোফিয়া রিচি ইন্সপায়ারড লুকের জন্য।
ওয়ার্কওয়্যার ক্যাজুয়াল
স্যান্ডউইচিংয়ের সৌন্দর্য হচ্ছে, এটি তৈরি হওয়ার পুরো প্রক্রিয়াকে অনেক সহজ করে দেয়। তাড়াহুড়ার সময় খুব কাজের। অফিসের মিটিং কিংবা ক্লাসে যাওয়ার সময় নির্ঝঞ্ঝাটে ড্রেসআপ করে নেওয়া যায়। শুধু সংগ্রহে থাকা সাদা স্নিকার আর ক্ল্যাসিক হোয়াইট টি-শার্ট চড়িয়ে নিতে হবে গায়ে। সঙ্গে পরতে হবে ডেনিম ট্রাউজার। টাইমলেস স্টাইলিশ লুক, মিনিটের মধ্যেই।
নিউট্রাল স্যান্ডউইচ
প্রতিদিনকার লুকের জন্য পারফেক্ট অপশন। তবে ইভেন্টেও পরে নেওয়া যাবে অনায়াসে। নিউট্রাল প্যালেটের থেকে বেছে নেওয়া সলিড কালার কোনো আউটওয়্যারের সঙ্গে একই রঙের ফুটওয়্যার পরে নিতে হবে। আর মাঝে পরে নিতে হবে বিপরীত রঙের কোনো আউটফিট। যেমন ক্যামেল কালার ব্লেজার আর হিলের সঙ্গে লিটল ব্ল্যাক ড্রেস পেয়ার আপ করে নেওয়া যায় এ ক্ষেত্রে। সঙ্গে মিলিমাল গোল্ড জুয়েলারি। অ্যান্ড ইউ আর রেডি টু গো।
অফ-ডিউটি
শুধু রং দিয়ে স্যান্ডউইচ স্টাইলিং সারতে হবে, সেটা মোটেই ঠিক নয়। আউটফিটের অনুপাতও ভারসাম্য তৈরি করতে পারে। যেমন ব্যাগি ডেনিমের সঙ্গে ছোট ট্যাঙ্ক টপ আর মিনিমালিস্টিক জুতার পেয়ারিং।
অ্যাকসেসরি ফোকাসড
এ ক্ষেত্রে অ্যাকসেসরিজ কাজ করবে স্যান্ডউইচের ব্রেডের মতো। ম্যাচ করা যেতে পারে জুতা আর ব্যাগ। ব্যস!
মডেল: মৃদুলা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: ব্লুচিজ
ছবি: কৌশিক ইকবাল