skip to Main Content

এডিটর’স কলাম I সঙ্গী বাছাইয়ের আগে

সম্পর্কটির ভেতরে নিজের আকাক্সক্ষা ও প্রয়োজনগুলোকে শনাক্ত করা না গেলে বিপদের শঙ্কা প্রবল। তা ছাড়া, সমাজ ও সংস্কৃতি অনেক সময় আমাদের ভুল বার্তা দেয়

‘তোমার নাম লেখার জন্যে আমি/ নিসর্গের কাছ থেকে ধার করছি বর্ণমালা—/ আগুন, বৃষ্টি, বিদ্যুৎ, ঝড়—আর,/ সভ্যতার কাছ থেকে—একটি ছুরি/ —এই সব অক্ষর দিয়ে তোমার নাম আমি লিখছি, তোমার নাম:/ অগ্নিময় বৃষ্টিতে তুমি ঠান্ডা, হিম, সোনালি ছুরি প্রিয়তমা!’ শহীদ কাদরীর কবিতার মতো, প্রেম এমনই থরোথরো আবেগের শিহরণ ছড়ানো অনুভূতি। যুক্তির সীমারেখা পেরিয়ে, মুগ্ধতার নির্মল বার্তাবাহী। শুরুটা সাধারণত ভালো লাগা থেকে; তারপর ভালোবাসায় রূপ নিয়ে চূড়ান্ত পরিণতি—প্রণয়ের স্বপ্ন বোনা। সেই স্বপ্ন কোনো কোনো যুগলের ক্ষেত্রে বাস্তব হয়ে ধরা দেয়; কারওবা দেয় না। যাদের দেয় না, ভালোবাসা তাদের কাছে তীব্র নেতিবাচক অনুভূতির জ্বালাতন করে চলে হয়তো আমৃত্যু; তাদের প্রসঙ্গ বরং থাক। যারা আপাতদৃষ্টে সফল, অর্থাৎ যাদের প্রেম পরিণতি পায় প্রণয়ে, সংসার গড়ায়, তাদের প্রসঙ্গেই করা যাক আলাপ! মুগ্ধতার ঘোরে আবেগের অদৃশ্য অথচ দাপুটে ডানায় ভর করে উড়ে যাকে বেছে নিয়েছেন সঙ্গী হিসেবে, তিনি যথাযোগ্য তো? কেননা, ‘প্রেম মানুষকে অন্ধ করে দেয়’—কথিত থাকলেও ‘জীবন পুষ্প বিছানা নয়’—এ কথাও সত্য। নানা বাঁকে ছড়ানো-ছিটানো অগুনতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কাঁটার বাধা পেরিয়ে একসঙ্গে জীবনতরী পাড়ি দেওয়ার পক্ষে সেই সঙ্গী চিরকাল আপনার প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা, সোজা কথায় ভালোবাসার মানুষ হয়ে থাকবে তো?

দুই
সম্পর্ক যতই তুমুল আবেগপূর্ণ হোক, প্রেমিক বা প্রেমিকাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেওয়ার আগে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। বিভিন্ন সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণসূত্রে দেখা যায়, একটি সম্পর্ক থেকে আমরা আসলে কী চাই, তা অনেক সময় জানা থাকে না আমাদের। যত দ্রুত সম্ভব, এটি নিংড়ে বের করা দুজনের জন্যই মঙ্গল। কেননা, সম্পর্কটির ভেতরে নিজের আকাক্সক্ষা ও প্রয়োজনগুলোকে শনাক্ত করা না গেলে বিপদের শঙ্কা প্রবল। তা ছাড়া, সমাজ ও সংস্কৃতি অনেক সময় আমাদের ভুল বার্তা দেয়। প্রথমত কিছু ভ্রান্ত ধারণা ও বুলির মাত্রা ছাড়ানো উদাহরণ সামনে হাজির করার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর সম্পর্কের শিল্প ও বিজ্ঞান বিষয়ে আমাদের অজ্ঞ থাকার এবং যুক্তিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে, শুধুই আবেগে ভর দিয়ে রোমান্টিক সম্পর্ককে ‘নিজস্ব গতি’তে এগিয়ে নেওয়ার আর নিজ তাড়নায় চালিত হয়ে বাকিটা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেওয়ার উৎসাহ জোগায়; যা একই সঙ্গে বিভ্রান্তিমূলক ও বিপজ্জনক ফল বয়ে আনতে পারে।

তিন
সঙ্গী বাছাইয়ে কিছু বিষয় খেয়াল না রেখে বরং চলতি ধারণার ওপর ভরসা করলে সম্পর্কে সুখের বদলে হানা দিতে পারে মনোযাতনা। এমনকি টেনেও আনতে পারে যবনিকা। উদাহরণ হিসেবে অন্ধ-বধির রোমান্টিকতার কথা বলা যেতে পারে। সহজ কথায়, চোখ-কান বন্ধ রেখে সম্পর্ক চালানো। কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন, সম্পর্ককে টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী করতে এমনটাই নিয়ামক। তর্কের খাতিরে ধরা যাক, কিছুকালের জন্য ভালোবাসাবাসিতে পরস্পরের প্রতি ভালো লাগার তীব্র আবেগে ভেসে বেড়ানো দোষের নয়। কিন্তু অন্ধ আবেগ সাধারণত কখনোই কোনো নিরেট সম্পর্ক ও দাম্পত্যের গাঁথুনি হতে পারে না। পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার আবেগের চেয়ে আরও বেশি কিছু থাকা চাই। অন্যথায় কোনো প্রতিবন্ধকতা কিংবা চ্যালেঞ্জের সামনে পড়লে খড়কুটোর মতো ভেসে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। তা ছাড়া প্রিয় মানুষটি যতই পছন্দের হোক, তার সব আবদার বিনা বাক্যে মেনে নেওয়াও কাজের কথা নয়। এতে হয়তো সাময়িক প্রশান্তি মিলবে; কিন্তু স্থায়িত্ব দুরাহত বাসনা!

চার
টেকসই জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন গবেষণাসূত্রে বিশেষজ্ঞরা কিছু সর্বজনীন পরামর্শ দিয়ে থাকেন। শুরুতেই গুরুত্ববহ বন্ধুত্ব। শুধু প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা, স্বামী কিংবা স্ত্রী হয়ে ওঠা নয়; বরং প্রগাঢ় বন্ধুত্বও থাকা চাই দুজনের মধ্যে। শক্তিশালী বন্ধুত্বের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমন সামঞ্জস্যপূর্ণ রসবোধের সঙ্গে জীবনের সব কাজ ভাগাভাগি করে নেওয়া; পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ; কৌতূহল, আনন্দ অনুভব ও পছন্দের মানুষজন ইত্যাদি বিষয়ে পরস্পরের যথেষ্ট মিল থাকা; এবং সর্বোপরি সততা। তা ছাড়া এই মানুষকে এমন হওয়া চাই, যাকে দেখলে বা যার সান্নিধ্যে এলে সব ধরনের ধকল সত্ত্বেও মনে হবে ‘এ তো আমার নিজের মানুষ!’

পাঁচ
‘জীবনের সবচেয়ে ভালো বিষয় হলো একে অপরকে ধরে রাখা,’ বলেছেন ব্রিটিশ অভিনেত্রী, ফিল্ম ও ফ্যাশন আইকন অড্রে হেপবার্ন। শুধু আবেগের ভেলায় ভেসে এমন অনুভূতি উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। এর জন্য শাণিত যুক্তিবোধ আর প্রগাঢ় জীবনবোধও প্রয়োজন। সঙ্গী বাছাইয়ে তাই আবেগের পাশাপাশি উপলব্ধি ক্ষমতারও সন্নিবেশ ঘটা শ্রেয়।

জীবন সুন্দর হোক সবার। জীবনসঙ্গী হোক যথাযোগ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top