skip to Main Content

ফোকাস I মসলার ইতিকথা

জুতসই মসলা না হলে খাবার একেবারেই জমে না। রন্ধনশৈলীর সঙ্গে মসলার সম্পর্ক তাই ওতপ্রোত জড়িয়ে। কীভাবে মানুষের পাতে জায়গা করে নিল মসলা? কাদের হাতে, কবে, কোন মসলার আবিষ্কার ঘটেছিল? খাদ্য ইতিহাসবিদেরা এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছেন। তার রেশ থেমে নেই আজও। উৎস সন্ধানে সবাই যে একমতে পৌঁছতে পেরেছেন, তা নয়। রয়েছে নানা বিভ্রান্তিও। তবে মানবসভ্যতায় আদিকাল থেকেই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, প্রার্থনা, সংরক্ষণ, ওষুধ এবং নানা কাজে মসলা নিঃসন্দেহে জীবনের একটি বিশেষ অংশ হয়ে রয়েছে। অধিকাংশ ইতিহাসবিদের মতে, মসলার প্রথম অস্তিত্ব মেলে গ্রিক ও রোমান সভ্যতায়, প্রায় সাত হাজার বছর আগে।
সুদূর অতীতকাল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে মসলা ছিল বৈদেশিক বাণিজ্যের মূল উপাদান। মিসর, আরব, মেসোপটেমিয়া, চীন ও সুমেরিয়ায় মসলার বাণিজ্য করত ভারত। প্রথম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন লেখালেখিতে মসলার, বিশেষত লবঙ্গের উল্লেখ মেলে। অতীতকালে উটের কাফেলায় করে কালিকট, গোয়া ও পূর্ব থেকে কার্থেজ, আলেকজান্দ্রিয়া ও রোমে পাঠানো হতো ভারতীয় মসলা। সে সময় অনেক বণিকই দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এবং ঝুঁকি নিয়ে এক স্থান থেকে অন্যত্র এসব মসলা আনা-নেওয়া করতেন। ভালো মানের মসলা-বাণিজ্য আয়ত্ত করতে অন্যান্য শক্তিশালী সাম্রাজ্য থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে দীর্ঘ পথ, এমনকি বিপৎসংকুল সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে প্রতিযোগিতামূলকভাবে আসতেন ব্যবসায়ীরা। এখন তো এগুলো প্রস্তুত করা আকারে খুব সহজলভ্য।
পশ্চিমা বিশ্বে ভারতীয় মসলার সরবরাহ শুরু হয় আরব বণিকদের হাত ধরে। সেটি সাত থেকে পনেরো শতকের কথা। অবশ্য ব্যবসার স্বার্থে সে সময় মসলার মূল উৎস তারা গোপন রাখতেন। এদিকে, নিজেদের তুলনামূলক কম স্বাদের খাবারকে আরও সুস্বাদু করতে এসব মসলার ওপর নির্ভরশীল ইউরোপীয়রা মসলার উৎসের সন্ধানে সমুদ্র অভিযান শুরু করেন। তবে মসলার চাহিদা যত বেশিই থাকুক না কেন, এগুলো সংগ্রহ করা মোটেই সহজ ছিল না; বরং ছিল ভীষণ কঠিন। সে সময় মসলা ছিল সোনার চেয়ে দামি। বলা হয়ে থাকে, মধ্যযুগে এক পাউন্ড আদার দাম ছিল একটি ভেড়ার দামের সমান। এক পাউন্ড জয়ত্রীর দাম তিনটি ভেড়া বা অর্ধেক গরুর সমান।
আরেকটি হিসাব থেকে জানা যায়, মধ্যযুগের শেষ ভাগে প্রায় এক হাজার টন মরিচ এবং আরও এক হাজার টন অন্যান্য সাধারণ মসলা প্রতিবছর আমদানি করত পশ্চিম ইউরোপ। এসব মসলার মূল্য ছিল তখনকার ১৫ লাখ লোকের বার্ষিক শস্য সরবরাহের সমান!
মসলার জন্য যুদ্ধও কম দেখেনি পৃথিবী। বলা হয়, পার্থিয়ান যুদ্ধের মূল কারণ, ভারতে মসলার বাণিজ্য রুট তাদের জন্যই খোলা থাকবে, রোমানরা এমনটা নিশ্চিত করতে চেয়েছিল। ভারত ও চীন থেকে মসলা এবং সিল্ক রুট খুঁজে পেতে পশ্চিম ইউরোপকে সাহায্য করেছিল তারা।
মসলার এত চাহিদার পেছনে শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ানোই নয়, মসলাগুলোর নিজস্ব গুণাগুণেরও ভূমিকা রয়েছে। পুষ্টিবিদদের মতে, দারুচিনি রক্তে শর্করার মাত্রা ও কোলেস্টেরল কমায় এবং প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে। অন্যদিকে, বেসিলে রয়েছে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো ব্যাকটেরিয়ানাশক উপাদান। মানসিক চাপ এবং হজমতন্ত্রের বিভিন্ন বালাই কমানোতেও এই মসলা উপকারী। হলুদে রয়েছে প্রদাহরোধী গুণ, শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভৃতি। হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতে যা সহায়ক। পেটের গোলমাল সারাইয়ে আদা বেশ কাজের। অন্যদিকে, হৃদ্‌যন্ত্রের নানা সমস্যা; যেমন স্ট্রোক এবং ধমনিতে চর্বি জমা থেকে সুরক্ষা দেয় পার্সলে।
মসলার গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না! তা ছাড়া এককথায়, মসলা ছাড়া সুস্বাদু খাবারের কথা ভাবাও যেন অচিন্তনীয়!

 ফুড ডেস্ক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top