সেলুলয়েড I শপলিফটার্স
কাহিনি, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: কোরে-এদা হিরোকাজু
প্রযোজনা: মাতসুজাকি কাওরু, ইউসে আকিহিকো, তাগুচি হিজিরি
সংগীত: হারুওমি হোসোনো
সিনেমাটোগ্রাফি: কোনদো রিউতো
সম্পাদনা: কোরে-এদা হিরোকাজু
দৈর্ঘ্য: ১২১ মিনিট
মুক্তিকাল: ১৩ মে ২০১৮
একাত্তরতম কান চলচ্চিত্র উৎসবে সবচেয়ে আলোচিত ও প্রশংসিত সিনেমা কোরে-এদা হিরোকাজু পরিচালিত জাপানের চলচ্চিত্র ‘শপলিফটার্স’। গ্লোবালাইজেশন, ভোগবাদ ও লগ্নিপুঁজির রণরক্তসাফল্যের বাস্তবতায় চৌর্যবৃত্তির ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা টোকিও শহরে বসবাসকারী একটি পরিবারের সদস্যরা একদিন শহরের বিপণি থেকে অপরিচিত এক শিশুকন্যাকে পেয়ে যান। চৌর্যবৃত্তির মতো সামাজিকভাবে ঘৃণিত পেশার মানুষদের মধ্যেই মানবিক তাড়না ও আবেগ প্রকাশিত হয় ওই শিশুকন্যাকে তাদের পরিবারে নিয়ে আসার ঘটনার মধ্য দিয়ে। এই ন্যারেটিভ অতিসাধারণ হলেও, সমাজজীবন, নাগরিক প্রেক্ষাপট, সাব-অলটার্ন সোসাইটি এবং এসবের মধ্যে শ্রেণিসমাজের বিভাজন, বৈষম্য- ইত্যাদি ছাপিয়ে মানবিকতাকেই কেন্দ্রে নিয়ে আসার কারণে এ ছবি সবার মন কেড়েছে। কিন্তু শুধু ন্যারেটিভ নয়, ছবির নান্দনিক ভাষাও সিনেমার গথিক অ্যাপ্রোচকে উপেক্ষা করে যে নতুন করে নিওরিয়্যালিজম বা নব বাস্তবতার অন্দরে ঢুকে যাওয়ার ফিল্মিক ফর্মকে সামনে এনেছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে। আর জাপানি সিনেমা বলতেই আমাদের চোখের সামনে কেবল জাপানি মাস্টারদের যে ক্ল্যাসিক্যাল রূপকল্প ফুটে ওঠে, বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি নির্মাণে সেটি এখন আর ততটা কার্যকর নয়, তা এই ছবির পোশাকসজ্জা ও কেশসজ্জা দেখলেই বোঝা যায়।
ক্ল্যাসিক্যাল জাপানি সিনেমার পরিচালকদের চলচ্চিত্রে চরিত্রায়ণে পোশাক ও কেশসজ্জায় সে দেশের ঐতিহ্য অনুসরণের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সোহেই ইমামুরার মতো কিছু পরিচালকের ছবিতে পাশ্চাত্যের আবহ জাপানি প্রেক্ষাপটের সঙ্গে মিলেমিশে গেলেও, তারাও ফিরে ফিরে এসেছেন জাপানের চিরন্তন অনুষঙ্গে ও লোকপরম্পরায়। তাই জাপানি সিনেমা বলতেই দর্শকেরা ক্লাসিক্যালি যেটা বুঝে থাকেন, তা হলো ‘হোয়ারি’ পোশাক পরা পুরুষ আর কিমোনো পরা জাপানি খোঁপায় কেশসজ্জিত নারী ও তাদের উপস্থিতিনির্ভর অডিও-ভিজ্যুয়াল ন্যারেটিভ। কিন্তু সময় পাল্টেছে।
বিশ্বায়নকে কেন্দ্র করে দেশকাল-সীমানার বেড়া যে অনেক ক্ষেত্রেই ভেঙে ফেলেছে লগ্নিপুঁজি, তা আর বলার অপেক্ষা থাকে না। তাই জাপান বলতেই এখন আর হোয়ারু আর কিমোনোকেই অপরিহার্য রূপসজ্জার উপাদান হিসেবে কল্পনা করে নিতে হয় না। জাপানি সিনেমায় প্রকাশিত বাস্তবতার রূপকল্প এখন পাশ্চাত্য এবং সব দেশ ও সমাজের চলতি ফ্যাশন রীতির সঙ্গেই সংগতিপূর্ণ। যদি না তা কোনো সমসাময়িক বিশেষ ঐতিহাসিক অথবা লৌকিক বা মিথিক্যাল প্রেক্ষাপটে নির্মিত হয়। সে বিবেচনায়, এই ছবির পোশাক ও কেশসজ্জা অতি সাধারণ এবং তা প্রতিটি গ্লোবাল ভিলেজের সাব-অলটার্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। মেয়েদের মিডলেন্থ ড্রেস, ক্যাজুয়াল শার্ট, টি-শার্ট, ছেলেদের ঢিলেঢালা টি-শার্ট ইত্যাদি অতিসাধারণ পোশাকে এই ছবির চরিত্রগুলোকে দেখা গেছে। কেশসজ্জার ক্ষেত্রেও শর্ট-বব ছাড়া তেমন কোনো বিশেষত্ব চোখে পড়েনি।
কারণ, পোশাক ও কেশসজ্জায় অতিসাধারণ অ্যাপ্রোচই এই ছবির মুড, যা গ্লোবাল সাব-অলটার্ন রিয়্যালিজমকে সামনে নিয়ে এসেছে।
অতনু সিংহ
কুইজ
১. জাপানি মহিলাদের ট্র্যাডিশনাল পোশাক কোনটি?
ক. ফ্রক খ. কিমোনো গ. গাউন
২. জাপানের কোন শহরকে কেন্দ্র করে এই ছবির প্লট?
ক. ওকায়ামা খ. হিরোশিমা গ. টোকিও
৩. কোন চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবি সবচেয়ে প্রশংসিত হয়েছে?
ক. কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল খ. কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব গ. মস্কো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল
গত সংখ্যার বিজয়ী
১. আবু হায়দার, রামপাল, বাগেরহাট।
২. সাদিকা সুলতানা, গুলশান, ঢাকা।
৩. সাজেদুল ইসলাম, চকবাজার, চট্টগ্রাম।