ফিচার I ফেশিয়াল রোলার
দূষণ দূর করে। দাগ ও ফোলা সারায়। ব্রণ আর বলিরেখা সরায়। ত্বকের লাবণ্য বজায় রাখে
স্কিন ব্রাইটেনিং, চোখের নিচের ফোলা ভাব দূর করা কিংবা ফাইন লাইন এবং রিঙ্কেলের সঙ্গে মোকাবিলা করা- সবকিছুর জন্যই চাই নিয়মিত এবং পৃথক স্কিনকেয়ার রুটিন। তবে এসবের সমাধান যদি ছোট্ট একটা যন্ত্রই করে দেয়, তাহলে মন্দ হয় না। ফেশিয়াল রোলার এমনই একটি যন্ত্র।
অনেকটা পেইন্ট রোলারের মতো এটি। স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট লিস্টে জায়গা করে নিতে পারে খুব সহজে। এর মাধ্যমে ঘরে বসেই পাওয়া যেতে পারে কার্যকর ফেশিয়াল ম্যাসাজ। যারা কোনো রকম ঝামেলা ছাড়া স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও কোমল ত্বক চান, ফেশিয়াল রোলার তাদের জন্য। ফেস সিরাম কিংবা ময়শ্চারাইজার মুখে মেখে এটি ব্যবহার করতে হয়। অথবা ত্বকে ময়শ্চারাইজার লাগানোর তিন থেকে পাঁচ মিনিট পরে মুখে রোল করে নিতে হয়। এটি হ্যান্ডেল এবং স্টোনের সমন্বয়ে তৈরি।
ফেশিয়াল রোলার ব্যবহারের ফলে যেকোনো স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট ত্বক খুব ভালোভাবে শুষে নিতে পারে। এটি ত্বক ডিটক্সিফাই করে। অ্যান্টি-এজিং টুল হিসেবে কাজ করে। রোলারের ব্যবহার ত্বকের ব্লাড সার্কুলেশন বুস্ট করে। ফলে চটজলদি উজ্জ্বল ও কোমল হয়ে ওঠে ত্বক। এ ছাড়া মুখম-লের নিচের পাফিনেস দূর করে এই রোলার। ত্বক ফুলে যাওয়া রোধ করাও এর একটি কাজ।
ত্বকের বিভিন্ন প্রয়োজন অনুযায়ী পার্থক্য রয়েছে রোলারের ধরন কিংবা কার্যকারিতায়। তাই কেনার সময় ত্বকের প্রয়োজনীয়তা আর ধরন বুঝে নিতে হয়।
জেড রোলার
জেড রোলার এমন এক বিউটি টুল, যা ত্বক টানটান রাখে এবং ফোলা ভাব দূর করে। এটা দিন কিংবা রাতের ত্বকচর্চার রুটিনে ব্যবহার করা যেতে পারে। ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে। এই রোলার এক বা দুটি জেডস্টোন হেড নিয়ে তৈরি। এটি চোখের নিচের অতিরিক্ত ফ্লুয়িড সরিয়ে নিতে সহায়তা করে। জেড রোলারের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। অ্যান্টি-এজিং জেড রোলার ত্বকের অকালে বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। জেনুইন জেড রোলারে রয়েছে একটি বড় এবং আরেকটি ছোট জেডস্টোন। বড় স্টোনটি কপাল কিংবা গালে এবং ছোটটি নাক কিংবা চোখের নিচে ব্যবহার করার জন্য। জেড রোলার সাধারণত সবুজ রঙের হয়। কিন্তু অ্যাগেট জেড স্টোন দিয়ে তৈরি রোলার খয়েরি। তবে এতে এর কার্যকারিতায় কোনো তফাত ঘটে না। জেড রোলার মূলত ত্বকে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে। বলিরেখা, চোখের চারপাশের কালো দাগ এবং টক্সিন কমিয়ে দেয়।
ডার্মা রোলার
সূক্ষ্ম সুচে তৈরি ফেশিয়াল রোলার। এর সুইগুলো ত্বকে বেশি যন্ত্রণাদায়ক নয় বলে এই যন্ত্র ফেস ম্যাসাজে খুব নিরাপদ। মুখত্বকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল আভা আনতে এটি সাহায্য করে। কেনার সময় অবশ্যই মাইক্রো নিডল অর্থাৎ ০.২৫ মিলিমিটারের নিডলবিশিষ্ট রোলার কিনতে হবে। এগুলো ঘরে বসে কোনো এক্সপার্টের সাহায্য ছাড়াই ব্যবহার করা যায়। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, সপ্তাহে একবার ব্যবহারেই ভালো ফল পাওয়া যায়। ডার্মা রোলারের ব্যবহার মূলত অ্যাকনের চিহ্ন কিংবা অন্যান্য কালচে দাগ আর ত্বকরঙের অসামঞ্জস্য দূর করে। তবে যাদের ত্বক স্পর্শকাতর, এই রোলার তাদের ব্যবহার না করাই ভালো। ইনফেকশন এড়ানোর জন্য ব্যবহারের আগে এবং পরে ডার্মা রোলার অ্যালকোহল জাতীয় তরলে রাখতে হবে।
মাইক্রোকারেন্ট রোলার
এটি মুখ ও গলায় ইলেকট্রনিক ম্যাসাজের জন্য। রোলারটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, ঘরে বসেই যাতে প্রফেশনাল ম্যাসাজের অনুভূতি দিতে পারে। সার্কুলেশনের সুবিধার্থে এই রোলারে দুটি হেড ব্যবহার করা হয়। মুখ ও গলার জন্য তৈরি হলেও শরীরের যেকোনো স্থানে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। প্ল্যাটিনাম কোটিংয়ের এ রোলার সংবেদনশীল ত্বকের জন্য খুব ভালো এবং এই কোটিং স্কিন রি-অ্যাকশন কমিয়ে আনে অনেকাংশে। অ্যান্টি-এজিংয়ের জন্যও ভালো। অন্যদিকে এতে মাইক্রোকারেন্টের ব্যবহার থাকায় প্রেগন্যান্ট কিংবা হার্টের রোগীদের এটি ব্যবহার না করাই শ্রেয়।
আইস রোলার
স্কিনকেয়ারে বরফের ব্যবহার প্রতিনিয়তই হয়ে থাকে। এটি বাড়তি জনপ্রিয়তা পেয়েছে ফেশিয়াল রোলারের আবির্ভাবের পর। সাধারণত আইস কিউব ত্বকের প্রদাহ, ব্রণ ও রোদপোড়া কমায়। তবে এই আইস কিউবের গুণাগুণই যখন একটা রোলারে নিয়ে আসা হয়, তখন এর কার্যকারিতা যথেষ্ট বেড়ে যায়। তা রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে কমপ্লেকশনকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে ত্বকে আনে প্রশান্তিকর সতেজতা। এ ছাড়া এটা মুখত্বকের লালচে ভাব দূর করে। লোমকূপ সংকোচনে সহায়তা করে। তবে এটা আকারে বড় হওয়ায় মুখত্বকের অপেক্ষাকৃত ছোট স্থানে পৌঁছতে পারে না।
রোজ কোয়ার্টজ রোলার
সব ধরনের রোলারের মধ্যে দেখতে সবচেয়ে সুন্দর। মিসরীয়দের মতে, এই রোজ কোয়ার্টজ স্টোনে অ্যান্টি-এজিং ম্যাটেরিয়াল রয়েছে। কম্পন ও উষ্ণতার জন্য এটি তাদের মধ্যে ‘লাভ স্টোন’ নামে পরিচিত। রোজ কোয়ার্টজ স্টোনে ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, অক্সিজেনসহ প্রচুর মিনারেল রয়েছে। তাই এই রোলার ত্বকের জ্বলুনি কমিয়ে নতুন সেল তৈরি করতে সক্ষম। অক্সিজেনের সঞ্চার ঘটিয়ে ত্বককে আরও সজীব করে তোলে।
যেকোনো ধরনের ফেশিয়াল রোলার ব্যবহার থেকে যেসব সুবিধা পাওয়া যেতে পারে-
মুখের পেশিগুলো চাঙা করে
লিমফেটিক ড্রেইনেজের মাধ্যমে ত্বকশোধনে সাহায্য করে
পরিচর্যার উপাদান ত্বকে শুষে নিতে সাহায্য করে
চোখের নিচের ফোলা আর কালো দাগ দূর করে
ত্বক মসৃণ করে তুলতে সাহায্য করে
ত্বক পরিষ্কারে অবদান রাখে
রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে ত্বকে দীপ্তি আনে
বলিরেখা রোধ করে
যেকোনো ফেশিয়াল রোলার রেফ্রিজারেট করে রাখার পর ব্যবহার করলে আরও ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। রোলারের স্টোনগুলো যথাসম্ভব পরিষ্কার রাখা উচিত।
শিরীন অন্না
মডেল: পূজা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন