ফিচার I ঈদ শপিং
ভার্চ্যুয়াল দোকান থেকে যেমন আয়েশ করে ঈদের কেনাকাটা করা যায়, তেমনি হাতে সময় নিয়ে ভিড়ভাট্টায় উপভোগ করা যায় শপিংয়ের আনন্দ
ঈদের কেনাকাটা রমজানের প্রথম দিন থেকে শুরু হয়। চলে একেবারে চাঁদরাত পর্যন্ত। তবে গত কয়েক বছরে শুধু পোশাকেই নয়, শপিং ট্রেন্ডেও পরিবর্তন এসেছে। অনলাইননির্ভর হয়েছেন অনেকে; আবার শপিং মল বা সেন্টারে গিয়েও কেনাকাটা করছেন। ক্রেতাদের সুবিধার জন্য বড় বড় ব্র্যান্ডও তাদের পণ্য অনলাইনে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। পছন্দ হলে সেখান থেকে কেনাকাটা করা যায়। রয়েছে হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা।
ক্যাটস আই, এক্সট্যাসি, ইয়েলো, সেইলর, জেন্টল পার্ক, লা রিভ, র নেশন, রেলুসে, রেড-এর মতো ব্র্যান্ডগুলো ঈদে নিয়ে এসেছে নতুন সব পোশাক। তারুণ্যনির্ভর ব্র্যান্ডগুলো পোশাকে এনেছে নতুনত্ব। পোশাকের কালার ও প্যাটার্নে এসেছে চমক। এ ছাড়া দেশি ব্র্যান্ড আড়ং, কে ক্র্যাফট, অঞ্জন’স, রঙ বাংলাদেশ, বিশ্বরঙ, নগরদোলা, আবর্তন, সাদাকালো ও নিপুণের আছে বিশেষ থিমের পোশাক।
ব্র্যান্ডগুলোর শোরুমে শুধু পোশাকই নয়, রয়েছে নানা ধরনের পণ্যও। এমনকি স্থান পেয়েছে প্রসাধনী। পেমেন্টের ক্ষেত্রে রয়েছে সুবিধা। বিকাশ, রকেট, ইউপে ছাড়াও ক্রেডিট, ডেবিট কার্ডে থাকছে ছাড়, ক্যাশব্যাক অফার।
এ ছাড়া রাজধানীসহ সারা দেশের প্রধান প্রধান মার্কেট, শপিং সেন্টার ঈদের পোশাক থেকে শুরু করে পণ্যের পসরা সাজিয়েছে। বিভিন্ন শপিং মলে এখন বিচিত্র অফারের মৌসুম। রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মল, যমুনা ফিউচার পার্ক, ইস্টার্ন প্লাজা, মৌচাক মার্কেট, নিউমার্কেট, রাপা প্লাজা থেকে শুরু করে বড় বড় মার্কেট ও শপিং মলে ঈদের কেনাকাটায় চলছে বিশেষ ছাড়। তাতে গাড়ি, টিভি, মোটরসাইকেল ছাড়াও সোনার গয়না, এলইডি টিভি, হীরার আংটি, স্মার্টফোনসহ অসংখ্য পুরস্কার থাকছে। আর এই মার্কেটগুলোতে ক্রেতারা পাবেন পোশাক, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, মোবাইল ফোন বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান, জুয়েলারি দোকান, জুতার দোকান, প্রসাধনী ও গিফট শপ ইত্যাদি। প্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যের দোকানও রয়েছে।
বাংলাদেশে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ই-কমার্সের ওয়েবসাইটগুলোতেও রয়েছে ঈদ নিয়ে আলাদা আয়োজন। বেশ কয়েকটি ব্যবসায়িক ওয়েবসাইটে সাড়ম্বরে ঈদের পণ্য বিকিকিনির ধুম চলছে। এই অনলাইন শপের কারণে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্য ঘরে বসে কেনা সম্ভব হচ্ছে। এতেও বিভিন্ন অফারের পাশাপাশি ডিসকাউন্ট, বাই ওয়ান গেট ওয়ানসহ নানা ধরনের গিফটের ব্যবস্থা থাকে। তবে শপগুলোতে পোশাকের প্রাধান্য বেশি। ঘড়ি, সুগন্ধি, অলংকার ও চামড়ার পণ্য বিক্রি হয়। পেমেন্টে নানা ধরনের সুবিধা থাকে। কেনার পর কোনো অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই পণ্য পৌঁছে যায় ক্রেতার দোরগোড়ায়। ঈদ উপলক্ষে নারী-পুরুষদের পাশাপাশি শিশুদের পোশাক বা পণ্যের পসরা রয়েছে। বড় বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ড তাদের অনলাইনগুলোকে ব্র্যান্ডিংয়ের কাজে ব্যবহার করছে।
প্রিয়শপ, আজকের ডিল, কিকসা, বাকডুম, দারাজ, পিকাবু, অথবা, চালডালসহ আরও যে জনপ্রিয় সাইটগুলো আছে, সেগুলোতে ঈদের কেনাকাটা বেশ জমে উঠেছে। স্বপ্ন লাইফস্টাইল, আড়ংসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের অনলাইনে কেনাকাটায় ব্যাপক সুবিধা রয়েছে। ফলে এগুলোয় ক্রেতার ভিড় বিপুল।
বর্তমানে অনেক অনলাইন শপ ও ফেসবুক পেজে পণ্যের সমাহার থাকে। অনলাইন শপের ক্রেতা নুসরাত ফারজানা বলেন, অনলাইন শপের ক্ষেত্রে এখন অনেক প্রতিযোগী। এ ছাড়া সাইট, পেজ প্রচুর হওয়ার কারণে কালেকশনও পাওয়া যায় বেশি। অন্যদিকে দরদামও সাধ্যের মধ্যে। মান ও পণ্য ডেলিভারির দিকে সঠিক নজর দিলে ই-কমার্স সেক্টরটি খুব দ্রুত এগিয়ে যাবে।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর (ইক্যাব) এক তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ই-কমার্সে জড়িত আড়াই হাজারের বেশি ওয়েবসাইট আর ১৫ হাজারের বেশি ফেসবুক পেজ আছে। এখানে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার ডেলিভারি হয়, যা প্রতি মাসে দাঁড়ায় ১০ লাখের মতো। ই-কমার্স এমন একটি সেক্টর, যেখানে ২৪ ঘণ্টা ব্যবসা হতে পারে। দিন দিন এটা আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
ফেসবুকভিত্তিক একটি অনলাইন শপ এজেড-এর স্বত্বাধিকারী নুজহাজ বলেন, থ্রি-পিস, শাড়ি, পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট, বাচ্চাদের পোশাক, জুয়েলারি, চশমা, ঘড়ি, প্রসাধনী, ওয়ালেট, ঘর সাজানোর সামগ্রী, ইলেকট্রনিকসসহ সব পণ্যই এখন অনলাইনে পাওয়া যায়। এর দরদামও নাগালের মধ্যে। তাই ঈদ সামনে রেখে জমে উঠেছে অনলাইন শপ।
অনলাইন শপ মালিকদের মতে, অন্যবারের তুলনায় এবার বিক্রি বেশি। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে। সেই সঙ্গে ই-কমার্স সাইটগুলোর সার্ভিসে গ্রাহকের মধ্যে একটা আস্থা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে ঈদ সামনে রেখে অনলাইন শপগুলো দিয়েছে মূল্যছাড়সহ বিভিন্ন রকমের অফার। সব মিলিয়ে অনলাইনে ব্যাপক জমেছে ঈদের কেনাকাটা।
দেশি-বিদেশি নানা ব্র্যান্ডের ঈদ পণ্য দিয়ে সাজিয়েছে বাংলাদেশ ব্র্যান্ডস ডটকম। অনলাইনে চাহিদা জানালে থাকছে মূল্যছাড়। কাছে কিংবা দূরে- যেখানেই থাকুন, এই ঈদে প্রিয়জনকে উপহার পাঠাতে পারবেন উপহার বিডি ডটকমের মাধ্যমে। ঈদ উপলক্ষে গিফট প্যাকেজও পাওয়া যাচ্ছে এখানে। ছেলেদের পাঞ্জাবি ও শার্ট এবং মেয়েদের সালোয়ার-কামিজের সম্ভার দিয়ে ঈদ উৎসব উদ্যাপন করছে ইউশপ ডটকম ডটবিডি। অপরদিকে ইসুফিয়ানার ঈদ সম্ভারে শুধু প্রসাধনীর প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। এসব ওয়েবসাইটের বাইরে ফেসবুক পেজের মাধ্যমেও ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে বিকিকিনি হচ্ছে নানা পণ্যের। সব ক্ষেত্রেই অর্ডার দিলে পণ্য বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে।
কেনাকাটায় টিপস
নিজের রুচি ও পছন্দসই কেনাকাটা কঠিন। এর মূল কারণ হলো অত্যধিক ভিড়। অনলাইনে কেনাকাটা করা যায় তবে শপিং মল, শোরুম বা মার্কেটে না গেলে আসল মজাটা থাকে না।
কেনাকাটায় যাওয়ার আগেই লিস্ট করুন। আগে ঠিক করে নিন কোথা থেকে কী কিনবেন। জায়গাগুলো আলাদা হলে ভিন্ন ভিন্ন দিনে যাওয়ার প্ল্যান করুন। একই দিনে দুটি জায়গায় যাওয়ার পরিকল্পনা না করাই ভালো।
সম্ভব হলে কোন খাতে কত খরচ করবেন, লিস্টের পাশে তা-ও ছোট করে লিখে ফেলুন। তাতে কেনাকাটায় সুবিধা হবে।
ভালো জিনিস কিনতে চাইলে শপিংয়ের জন্য একটি উপযুক্ত সময় বেছে নিন। হাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বের হবেন। তাড়াহুড়ো করতে গেলে কোনো কাজই ঠিকমতো করা যায় না। তাই এমন একটা সময় বেছে নিন, যা আপনার জন্য উপযুক্ত। এ ক্ষেত্রে ইফতারের আগে না গিয়ে ইফতারের পরে কেনাকাটায় বের হওয়াই ভালো।
কেনাকাটায় যাওয়ার সময় পরিবারের কাউকে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারলে ভালো হয়। কিংবা অভিজ্ঞ কোনো বন্ধুকেও সঙ্গে নিতে পারেন। এতে শপিং করতে বিরক্তি চলে যাওয়ার পাশাপাশি তার কাছ থেকে ভালো আইডিয়াও পাবেন।
ভিড়ের মধ্যে কেনাকাটায় ব্যাগ ও পকেট সামলে রাখুন। কারণ, ঈদের আগে মার্কেটের ভিড়ে পকেটমারের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়।
অনলাইন শপিংয়ে সাবধানতা
কোন শপ থেকে কিনছেন, কাদের কাছ থেকে কিনছেন, একটু যাচাই-বাছাই করে নিন। প্রয়োজনে কেনার আগে যে ওয়েবসাইট বা ই-কমার্স কিংবা ফেসবুক পেজ থেকে কিনবেন, সেটি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করুন। পেমেন্টের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করুন। সবচেয়ে ভালো, ভেলিভারি নেওয়ার পর যদি পেমেন্ট করতে পারেন।
I নাজমুল হক ইমন
ছবি : মর্তুজা আলম ও সংগ্রহ