ফিচার কুর্তির ফুর্তি
ফ্যাশনে এখন কুর্তির জয়জয়কার। আর এই গ্রীষ্মের ঈদে কেমন কুর্তি সংগ্রহ করা যাবে?
খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে যে ওয়েস্টকোট বা কটি পরা হতো, সেটাই আজকের কুর্তা আর কুর্তি। ছেলেরা পরে কুর্তা, মেয়েরা কুর্তি। ঊর্ধ্বাঙ্গের এই পোশাক পাঞ্জাব অঞ্চলে বিশেষ জনপ্রিয়তা পায়। পরে ছড়ায় বিভিন্ন অঞ্চলে। কুর্তা আর কুর্তির অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। পাঞ্জাবি, শার্ট ও কামিজও কুর্তা-কুর্তির বৃহত্তর ব্র্যাকেটভুক্ত হয়েছে।
বর্তমানে মেয়েদের পোশাকে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচের আধিপত্য। ফলে পোশাকের ধরন বদলেছে। এখন আর থ্রিপিস কেউ পরতে চান না। এই প্রবণতা মূলত সিঙ্গল পিস আর সিঙ্গল কুর্তি বা কামিজকে জনপ্রিয় করেছে। এগুলোর কাট আর প্যাটার্ন আলাদা। পরাও সুবিধা। প্যান্ট, টাইটস, সালোয়ার, জিনস, ট্রাউজারে মানিয়ে যায়। ফলে এই ওয়ান পিস এখন জনপ্রিয় এবং ফ্যাশনেবল।
নব্বইয়ের দশকে সিঙ্গল পিস পরতে দেখা গেছে ঢাকাই ছবির নায়িকাদের। বর্তমান শতাব্দীর শুরুতে ফ্যাশনেবল তরুণীদের কেউ না কেউ এটি পরেছেন। তবে অনেকেরই ধারণা, এই সিঙ্গল পিস ঢাকায় প্রচলন করেন ডিজাইনার আনিলা হক। বছর দুয়েক হলো কে ক্র্যাফট, অঞ্জন’সও এই কুর্তি নিয়ে কাজ করেছে। পরে অবশ্য এই স্রোতে অনেকেই গা ভাসিয়েছে। আজকাল সিনিয়ররাও পরছেন সিঙ্গল পিস। আসলে ব্যস্ত জীবনে সহজ পরিধেয়র বিকল্প নেই। তাই এখন সিঙ্গল পিসের খুব কদর। পাশাপাশি আছে নানা ধরনের বটম আর দোপাট্টা। কাট আর প্যাটার্নের নান্দনিক উপস্থাপনায় এই টপগুলো আকর্ষক আর ফ্যাশনেবল। সমসময়ের ফ্যাশনে দারুণ মানানসইও।
পরা যায় অফিসে, ক্লাসে এমনকি ইনফরমাল পার্টিতেও। দৌড়ঝাঁপের জন্য আদর্শ। কেবল সাদামাটা নয়, গর্জাস আউটলুকের কুর্তিও রয়েছে। এগুলো নির্দ্বিধায় যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়া যায়। এই কুর্তিকে আসলে মিনিমাল ফ্যাশনের সমকালীন দৃষ্টান্ত বলা যেতে পারে। তবে যেকোনো কুর্তিকে অসাধারণ বানিয়ে নেওয়া যায় বাহারি জিপার, লেস ও বেল্টের কারুকাজে। রুচি ও আত্মবিশ্বাস হলো আসল, তাহলেই যেকোনো পোশাকে নিজেকে প্রকাশ করতে পারা যাবে অসংকোচে।
তবে ফ্যাশন হাউজের কুর্তিতে এবং কাট প্যাটার্নের সৌন্দর্যের পাশাপাশি হালকা এম্ব্রয়ডারি, প্রিন্টের ভ্যালু অ্যাডিশন নজর কাড়ার মতোই।
স্টাইলিং
কুর্তিকে প্যান্ট, সালোয়ার কিংবা জিনসের সঙ্গে কীভাবে ম্যাচ করানো যায়, তা জানা থাকা প্রয়োজন। সালোয়ারের সঙ্গে কুর্তি পরতে না চাইলে সিগারেট প্যান্ট কিংবা স্কিন টাইট জিনসের সঙ্গে অনায়াসে পরা যেতে পারে। এতে সামগ্রিভাবে পোশাক ফরমাল লুক পাবে। পালাজো, প্যান্ট, চুড়িদার কিংবা প্রিন্টেড- যেকোনো বটমের সঙ্গেও পরা যায়। এখন আবার সালোয়ার আছে নানা প্যাটার্নের। শুধু তা-ই নয়, দোপাট্টা বা ওড়নাও বেছে নেওয়া যেতে পারে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে। তাহলে ট্রেন্ডি দেখাবে।
রঙ
এখন গ্রীষ্ম। হালকা রঙের কুর্তিই এখন মানানসই। রাতের অনুষ্ঠানের জন্য গাঢ় রঙই আদর্শ। রঙ বাছাইয়ে সামার কালার প্যালেট অনুসরণ করাই শ্রেয়। কিছু রঙ আছে যেগুলো ক্ল্যাসিক; যেমন সাদা, কালো, সোনালি, লাল। এগুলো কুর্তিতে বেশ মানানসই। তবে এখনকার ট্রেন্ডি রঙ প্যাস্টেল, পিচ ইত্যাদিও এই পোশাকে সমকালীনতা দেবে।
কুর্তি সাদামাটা হলে দোপাট্টা একটু গর্জাস হতে পারে। জমকালো কুর্তিতে উল্টোটা। দোপাট্টা বেছে নিতে পারেন জামদানি, লিনেন, সুতি ও জর্জেট থেকে।
মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ
সিঙ্গল পিস কিংবা কুর্তির সঙ্গে কন্ট্রাস্ট ফ্যাশনের সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গি। কুর্তির রঙের একদম বিপরীত রঙের ওড়না মিলিয়ে পরলে বেশ লাগবে। এখন আর সেই ম্যাচিংয়ের জমানা নেই। তা হবে অন্যভাবে, যেটাকে বলা হচ্ছে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ। প্যান্টের ক্ষেত্রেও কথাটা প্রযোজ্য।
কোথায় পাবেন
ফ্যাশন হাউজগুলোয় এখন শোভা পাচ্ছে ঈদ কালেকশন। তাতে সিঙ্গল পিসও স্থান করে নিয়েছে। আড়ংয়ের তাগা, কে ক্র্যাফট-এর ইয়াংকে, অঞ্জন’স-এর নতুন ব্র্যান্ড মার্জিন, নিপুণ-এর মাকু, এক্সট্যাসি, ইয়েলো, লা রিভ, টুয়েলভ, সেইলর, ক্লাবহাউজ, রঙ বাংলাদেশ, বিবিআনার কুর্তিগুলো চমৎকার। কাট প্যাটার্নের সঙ্গে ফ্যাব্রিক আর রঙের সমন্বয়ে সুন্দর। ট্রেন্ডিও বটে। পাশাপাশি বিভিন্ন হাউজের রেগুলার কালেকশনে রয়েছে সিনিয়রদের জন্য সিঙ্গল পিস। আজকাল ঘরে বসে পছন্দসই পোশাক হাতে পেতে বিভিন্ন অনলাইন ফ্যাশন হাউজ যেমন আছে, তেমনি আছে শীর্ষ ফ্যাশন হাউজগুলোর পোশাক কেনার ভার্চ্যুয়াল সুবিধা।
আর নিজেই নিজের ফ্যাশন ডিজাইনার হলে পছন্দমতো কাপড় কিনে বানিয়ে ফেলা যাবে কুর্তি।
অনুষঙ্গ
একেক ধরনের কুর্তির সঙ্গে একেক অনুষঙ্গ মানাবে। ক্লাসে কিংবা বন্ধুদের আড্ডায় একরঙা কুর্তির সঙ্গে প্রিন্টেড ওড়না আর মানানসই দুল পরা যেতে পারে। অফিসে চাই অনুষঙ্গের পরিমিতি। কানে ছোট টপই শ্রেয়। অনুষ্ঠানের জন্য হলে ব্রেসলেট বা আংটি মন্দ হবে না। কেশসজ্জা হবে পরিবেশ অনুযায়ী। আসলে টোটালিটিই তো স্টাইল।
মডেল: ওশিন
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন