সম্পাদকীয়
সেই ২০০৫ সালে ক্যানভাস আলোর মুখ দেখেছিল। চোখের পলকে কতোগুলো বছর পার হয়ে গেল! চড়াই-উতরাই, আনন্দ-বেদনার সব স্মৃতি আনমনা করে তোলে। এই জার্নিতে সংগ্রামটা গুরুত্বপূর্ণ। এবং সফলতা পেরিয়েই সার্থকতা। একে অন্যের পরিপূরক। এর মধ্য দিয়েই পূর্ণতা পায় জীবনের বৃত্ত। পৃথিবীতে অনেক উদ্যোগ ও চেষ্টা কম-বেশি সফল হয়; কিন্তু সার্থক কাজ সে-তুলনায় খুব কম। সার্থক হতে গেলে উদ্দেশ্য হতে হয় সুন্দর এবং সমাজ-সংস্কৃতিতে এর গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠা জরুরি। ক্যানভাস ম্যাগাজিন প্রকাশের পেছনে আমার এবং সহকর্মীদের এই চেতনা ও প্রতিজ্ঞা সব সময় সক্রিয় রাখতে চেয়েছি। জানি না কতোটা সার্থক হতে পেরেছি। সে-বিচারের ভার আপনাদেরই হাতে। আপনারা কেবল পাঠক নন, বৃহৎ পরিবারের অংশ। সুহৃদ; পথপ্রদর্শকও।
সর্বোপরি সময়। এর চেয়ে বড় অংশীদার, বড় বিচারক আর কিছু হতে পারে না। তাই সময়ের সঙ্গে থাকি, সামনেও থাকতে চাই। এই যে দুই রঙিন মলাটের মাঝখানে এত কিছু সাজাই, তা তো সময়ের চাহিদারই প্রতিফলন। মানে, আপনাদের মর্জির প্রকাশ!
বর্ষপূর্তির এই সংখ্যায় তেমনই আবার দেখবেন, আশা করি। যেমন, এবারের কভারস্টোরি ‘টিউব জেনারেশন’। আবারও সময়কে শিরোধার্য করা হয়েছে এই রচনার আয়োজনে। এখনকার এবং ভবিষ্যতের যে ডিজিটাল প্রজন্ম, তার সংস্কৃতি, প্রয়োজন আর চিন্তাধারার বাহক আলোচ্য ইউটিউব জেনারেশন। সারা দুনিয়া এক লহমায় এখানে আছড়ে পড়ছে। একে উপেক্ষা করার উপায় আছে কি? এবারের কভারস্টোরিতে এর উত্তর নানাভাবে দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া ক্যানভাসের বর্ষপূর্তি উদ্যাপন সার্থক করে তোলার জন্য বিশেষ আয়োজন তো রয়েছেই।
ঈদুল আজহার উৎসব সামনে রেখে সংখ্যাটি প্রকাশ পাচ্ছে। সেই আনন্দে আপনাদের সঙ্গী হিসেবে পাওয়ার প্রয়াসও করা হয়েছে বিশেষ কিছু ফিচারের সন্নিবেশ ঘটিয়ে। পুরো সংখ্যাজুড়েই রয়েছে বর্ষপূর্তির ঐশ্বর্য ও ঈদের আনন্দ।
এবারের পোর্টফোলিওতে আরও একবার উপস্থাপিত হলো বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য পাঁচটি বয়ন-ঐতিহ্যে ঋদ্ধ সৃজনশীলতা। অন্যের নয়, নিজেদের ঐশ্বর্যেই উৎসবকে যে আনন্দময় করে তোলা যায়, সেই দৃষ্টান্ত স্থাপনই এই আয়োজনের উদ্দেশ্য। বাঙালির উপলক্ষ পেলেই হয়। তার ওপর উৎসব; তাই রসনা ছাড়া ভাবাই যায় না। এ জন্য থাকছে ভরপুর বৈচিত্র্যে বহুমাত্রিক পদ- উৎসবসম্মত ও উপাদেয়।
কিছু অনিয়মিত কথার মধ্য দিয়ে এবারের সম্পাদকীয় শুরু করেছিলাম। দু-চারটা কথার সুবাদে আপনাদের সঙ্গে এখানে আরেকটু থাকতে চাই। মনে রাখবেন, জীবন খুব ছোট; কিন্তু পৃথিবীটা অনেক বড়। মানুষ আরও বড় ও অফুরন্ত। যা কিছুই করি না কেন, তাতে যদি মানুষের কল্যাণ মর্মে রাখি, হৃদয়ে লালন করে চলি; উপলব্ধ হবে জীবন অনেক বড় হয়ে উঠেছে আর পৃথিবী হয়ে এসেছে ছোট। এ-জায়গায় যে পৌঁছতে পারে, সে-ই সব থেকে সার্থক।
পরিবহনকর্মীদের দায়িত্বহীনতায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা আগের সব উদাহরণকে ছাড়িয়ে গেছে। এই বেদনাদায়ক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাস্তায় নেমেছে ছাত্রছাত্রীরা। সহপাঠীর জন্য এই সহমর্মিতার মধ্য দিয়ে তারা আনতে চায় বদল। দূর করতে চায় পরিবহন খাতের নৈরাজ্য। এই দায়িত্ববোধ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে আমাকে আশাবাদী করে।
আমাদের সব সময়ই চেষ্টা থাকে নতুন কিছু উপহার দিতে। সূচনা থেকেই আমাদের সেই প্রয়াস অব্যাহত। নতুন বছর তথা চতুর্দশ বছরে পা রেখে ক্যানভাস আপনাদের দিচ্ছে আরও চমকজাগানো উপহার। ক্যানভাসের ম্যাগাজিন সংস্করণ বরাবরের মতো আপনাদের সঙ্গে থাকছে। তবে বাড়তি হলো, চলতি মাস থেকে বাংলাদেশের প্রথম লাইফস্টাইল ডেইলি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে ক্যানভাস ওয়েবসাইট। অতএব, এখন থেকে প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ আমরা আছি আপনাদের সঙ্গে।
শেষটা আসলে মন ভার করা খবরেই করতে হচ্ছে। উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক রমাপদ চৌধুরী আমাদের মাঝে নেই। এ ছাড়া আমরা হারিয়েছে দেশের একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক এ এইচ এম মোয়াজ্জেম হোসেনকে। তাঁদের অবদানের প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা জানাই।
পরিশেষে প্রত্যাশা, ফেলে আসা ১৩টি বছরের মতো সামনেও আপনারা থাকবেন ক্যানভাস পরিবারের পাশে। সঙ্গী হবেন আমাদের প্রতিটি উদ্যোগে।
সবাইকে ঈদের আগাম শুভেচ্ছা।
i need few copy from 2006 2007