ত্বকচর্চা I বয়সের সাথে
বুড়িয়ে যাওয়া না-যাওয়াটা নিজের কাছে। নিয়মিত এবং সহজ সব পরিচর্যায় ত্বকের তারুণ্য অটুট থাকুক দীর্ঘ সময়
আয়নার সামনে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে কপালের ভাঁজ। দু’গালের হাসির রেখাটাও এখন অনেকটাই পাকাপোক্ত হয়েছে। নজর এড়ানো যাচ্ছে না চোখের কোণের ক্রোস ফিট থেকেও। সহজেই দাগ পড়ে যায় ত্বকে। আরও মুশকিল, চটজলদি সেরেও ওঠে না। কখনো শুষ্কতা তো কখনো প্যাচপ্যাচে তৈলাক্ততা। হরহামেশাই ওঠানামা করে ত্বকস্তরের পারদ। যদি এমনটাই হয় অবস্থা, বুঝতে হবে ত্বক বয়স বাড়ার জানান দিচ্ছে। কিন্তু হতাশ হওয়ার কিছু নেই। পুরোনো আমির সঙ্গে নতুন আমির হিসাব মেলাতে গেলেই ফেঁসে যাবেন। পুরো প্রক্রিয়াটি স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারলে বরং সহজ হবে সুন্দর থাকার কাজ। সেই সঙ্গে মাথায় রাখা চাই বয়স আর বুড়িয়ে যাওয়া মোটেই সমার্থক নয়। বয়স বেড়ে চলা থামানো অসম্ভব আর বুড়িয়ে যাওয়া না-যাওয়া কিন্তু হাতেই। হঠাৎ একদিন ঘুম থেকে উঠে রূপচর্চা শুরু করবেন আর চটজলদি ফল চাইলে তা হবে হাস্যকর। এটা বিরামহীন ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এ ছাড়া অনেকেই ভাবেন, বয়সের ছাপ চল্লিশের আগে পড়ে। ধারণাটা ভুল। ২৭ থেকে ২৮ বছরেই কিন্তু বয়সের ছাপ একটু একটু করে স্পষ্ট হতে শুরু করে। তাই যদি চল্লিশ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করেন আর ভাবেন এবার নিজের যত্ন নেবেন, তাহলে কোনো লাভ হবে না। রোজকার রূপচর্চার পাশাপাশি খানিকটা বাড়তি যত্নআত্তিতেই ত্বক থাকবে তারুণ্যোজ্জ্বল।
রোজকার রুটিন
সকালের শুরুটা হোক ক্লিনজিং দিয়ে। ফেনাবিহীন, অ্যালকোহল ও সুগন্ধিমুক্ত কোমল ক্লিনজিং লোশন বা মিল্ক- বুড়িয়ে যাওয়া ত্বকের যত্নে সবচেয়ে কার্যকর। হালকা হাতে, খুব বেশি ঘষামাজা না করে এগুলো ব্যবহার করা উচিত। তারপর ঠান্ডা পানির বদলে ঈষদুষ্ণ পানিতে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। মাইসেলার ওয়াটারও বুড়িয়ে যাওয়া ত্বক পরিষ্কারের দারুণ অপশন। এগুলো ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট করে না। ভিটামিন ইনফিউজড ক্লিনজিং ইমালশন ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো ত্বকের গভীর থেকে দূষণ দূর করে। সরায় মৃত কোষ। বুড়িয়ে যাওয়া ত্বকের টোনিং করতে হবে খুব খেয়াল করে। অ্যালকোহল, ইথানল, আইসোপ্রোপাইলের মতো উপাদানগুলো যেন না থাকে টোনারে। বরং এএইচএ এবং বিএইচএ যুক্ত টোনারগুলো ব্যবহার করতে পারলে ভালো। এগুলো ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতেও কার্যকর। তারপর দিতে হবে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সেরাম। লাইকোরাইস আর ভিটামিন সি যুক্ত সেরামগুলো কোলাজেন ভেঙে যাওয়া প্রতিরোধ করে। ফলে ত্বক স্বাস্থ্যোজ্জ্বল দেখায়। আর ময়শ্চারাইজার মাস্ট। হায়ালুরনিক অ্যাসিড, গ্লিসারিন আর অ্যালগির মতো উপাদানগুলো ত্বককোষে পানি ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে তা আর্দ্র থাকে, থাকে মসৃণ। সকালে এসপিএফ যুক্ত ময়শ্চারাইজারগুলো রুক্ষতার হ্যাপা কমায়। নতুবা আলাদা করে অবশ্যই এসপিএফ মাখতে হবে। কারণ, সূর্যের রশ্মি ত্বক বুড়িয়ে যাওয়ার বড় একটি কারণ। তাই বয়স ধরে রাখতে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে বাড়তি সুরক্ষা খুব প্রয়োজন।
এ ধরনের ত্বকের রাতের রুটিনও প্রায় একই। শুধু ক্লিনজিং আর টোনিংয়ের পাশাপাশি ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর বা স্ক্রাব যোগ করতে হবে। কারণ, বুড়িয়ে যাওয়া ত্বকে মৃত কোষ জমার মাত্রাও বেশি থাকে। তাই প্রতিদিন তা পরিষ্কার করে ফেললে ত্বক সুন্দর দেখায়। তারপর মাখতে হবে সেরাম। রাতে রেনিটল যুক্ত সেরামই বেশি কার্যকর। এগুলো দ্রুত ত্বক শুষে নেয়। কোষ পুনরুৎপাদনে সাহায্য করে। স্কিন টোন এবং টেক্সচার ভালো রাখতে সহায়ক। সূ² রেখা ও বলিরেখা বাড়তে দেয় না। রাতে পেপটাইডযুক্ত আইক্রিমও মাখতে হবে চোখে। এগুলো কোলাজেন উৎপাদনের মাত্রা বাড়ায়। ফলে চোখের চারপাশের সংবেদনশীল ত্বক সুন্দর থাকে। সঙ্গে বাড়তি আর্দ্রতার জোগান দিতে হাইড্রেটিং ময়শ্চারাইজার জরুরি। সবচেয়ে ভালো হয় যদি রেনিটলযুক্ত ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা যায়। এগুলো ত্বকের প্রাকৃতিক লিপিডের মাত্রা বাড়ায়। রাতভর ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক সারাইয়ের কাজ করে। ত্বকে আর্দ্রতার মাত্রা বাড়ায়। বলিরেখা সারায়, বাড়তেও দেয় না। মুখত্বক তো বটেই, একইভাবে গলার ত্বকেরও যত্ন নিতে হবে। কারণ, বয়স বেড়ে যাওয়ার ছাপ এই অংশে সবার প্রথমে দেখা দেয়।
সপ্তাহ শেষে
বয়স বাড়ার সঙ্গে ত্বকে মৃতকোষ জমার হারও বাড়তে শুরু করে। ফলে এক্সফোলিয়েশন খুব জরুরি। সপ্তাহে অন্তত একবার গ্লাইকোলিক পিল দিয়ে অ্যাট হোম পিল ট্রিটমেন্ট সেরে নিতে পারেন। এগুলো দ্রুত এবং কার্যকর উপায়ে মৃত কোষ সারাইয়ে সাহায্য করে। বুড়িয়ে যাওয়ার উপসর্গগুলো, যেমন- বলিরেখা, বিবর্ণতা আর দৃশ্যমান লোমকূপের মতো সমস্যাগুলো সারাইয়ে সাহায্য করে। যাদের কালো দাগছোপ আর হাইপারপিগমেন্টেশনের সমস্যা আছে, ত্বকে তারা সপ্তাহে দু-একবার ব্রাইটেনিং সেরাম ব্যবহারের অভ্যাস করতে পারেন। ফেস অয়েলও খুব উপকারী এ ধরনের ত্বকের যত্নে। ক্যামেলিয়া, রোজহিপ, আরগান, জোজোবা, বেকুচোল কিংবা ক্যামোমাইল অয়েলগুলো ছাড়াও প্ল্যান্টবেসড কোলাজেন আছে এমন ফেশিয়াল অয়েল রুখে দেয় বয়সের ছাপ। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকে কাজ করে জাদুর মতো।
পনেরো দিন পর
শুধু মুখত্বক নয়; গলা, ঘাড়, পিঠসহ অন্যান্য অংশের বাড়তি যত্ন প্রয়োজন পনেরো দিন পরপর। বিটা আর আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড পিলের মিশ্রণ তৈরি ও ব্যবহার করা যেতে পারে ঘরে বসেই। যা ত্বকে জমে থাকা মৃত কোষ সরিয়ে দিতে সাহায্য করবে। দেবে দীপ্তিময় নতুন ত্বক।
মাসে একবার
অ্যান্টি-এজিং ফেশিয়ালগুলো এ ধরনের ত্বকে দারুণ উপযোগী। মাইক্রোডার্মাবেশন, বিভিন্ন ধরনের লাইট থেরাপি, এক্সফোলিয়েটিং, কোলাজেন কিংবা গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ফেশিয়াল করিয়ে নেওয়া যেতে পারে। তবে অভিজ্ঞ কারও সঙ্গে অবশ্যই পরামর্শ করে নিতে হবে।
জাহেরা শিরীন
মডেল: তৃণ
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যাড্রোব: সিকোসো
ছবি: সৈয়দ অয়ন