কভারস্টোরি I অবয়বসম্মত
কোন রঙ, ফ্যাব্রিক বা স্টাইল বিশেষ দিনটিতে অনন্য করে তুলবে বর-কনেকে? অজস্র অপশনের মধ্যে তা বুঝে ওঠা মুশকিল। কিন্তু অসম্ভব নয়। অঙ্কটা কষে নিতে হবে আগেই। দেহের ভাঁজগুলোর মাপ মেনে। দেহাবয়বের আদলে তৈরি হোক স্বতন্ত্র সিগনেচার স্টাইল। নতুন প্রেক্ষিতে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কারের শুভসূচনায় সহায়ক হয়েছেন জাহেরা শিরীন
বর-কনের পোশাক। হওয়া চাই বিশেষ এবং ব্যতিক্রম। আর সেই চেষ্টাতেই খোঁজ, দ্য সার্চ চলে দেশীয় বিয়ে বাজারের আনাচ-কানাচে। চাঁদনী চক, গাউছিয়া, গুলশান পিঙ্ক সিটি থেকে মিরপুরের বেনারসিপল্লি- বিয়ের বাজার হিসেবে পরিচিত সব কটি স্থানে ঢুঁ মারা কর্তব্য হয়ে যায়। সেখানে সুবিধা করতে না পারলে হানা পড়ে ডিজাইনারদের ডেরায়। তাতেও যদি হয় ‘সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল’ অবস্থা, তখন অনেকেই ছুটে যান দেশের বাইরে। বিয়ের কাক্সিক্ষত পোশাকটির খোঁজে। একসময় এক বেনারসিতেই সেরে নেওয়া যেত বিয়ের বিগ ইভেন্ট। সঙ্গে দু-একটা কাতান, সিল্ক আর সুতি শাড়িতে কমপ্লিট কনের স্যুটকেস। অন্যদিকে পাঞ্জাবি, শেরওয়ানি আর পাগড়ি চাপালেই তৈরি বর। কিন্তু এখন সময়টা ভিন্ন। দেশীয় শাড়ির বৈচিত্র্য তো আছেই, সঙ্গে প্রতিবেশী দেশের বিভিন্ন প্রদেশের নানান রঙ আর ঢঙের শাড়ি দেখলে চোখ ছানাবড়া হওয়ার অবস্থা। আর যদি শুধু শাড়িতেই থেমে থাকতো পছন্দের ফিরিস্তি! তালিকায় ঢুকে গেছে লেহেঙ্গা, গাউন, শারারা স্যুট এমনকি ট্র্যাডিশনাল স্টাইল থ্রি-পিসও। বরের পোশাকেও এসেছে বিপুল পরিবর্তন। শেরওয়ানির বদলে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন আঙরাখা, প্রিন্সকোট আর স্যুটও। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিয়ের বাজারে প্রচলিত এসব পোশাককেও পরতে হচ্ছে কড়া কম্পিটিশনের মুখে- ডিজাইনারদের বদৌলতে। যারা প্রতিনিয়ত তৈরি করে যাচ্ছেন কাস্টমাইজড সব ব্রাইডাল ডিজাইনার ওয়্যার। শাড়ি গাউন, রেডি টু ওয়্যার শাড়ি আর এক্সপেরিমেন্টাল কাট-প্যাটার্নে তৈরি বরের পোশাকে স্বচ্ছন্দ করে তুলছেন স্টাইল সচেতন, প্রত্যয়ী বর-কনেদের। ফলে অপশন বেড়েছে বটে, বেড়েছে ঝামেলাও। পোশাক বাছাইয়ের ঝক্কি। তবে নির্দিষ্ট কিছু মানদন্ড মেনে চলতে পারলে সহজ হবে কাজটা। যেকোনো ধরনের পোশাক বাছাইয়ের আগে বডিশেপটাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এমনটা বিশেষজ্ঞরাই বলছেন। ব্রাইডাল ওয়্যারও এর ব্যতিক্রম নয়। বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং জমজমাট সেলিব্রেশনে বরং তা আরও বেশি জরুরি। কারণ, বিয়ের দিনগুলোর শোডাউনে বর-কনেই কিন্তু শো-স্টপার। বডিশেপের হেরফেরে ভুল পোশাকটা গায়ে উঠলে বিপদ। সাধের সাজটাই মাটি। তাই সচেতন থাকা চাই শপিংয়ের শুরু থেকে।
অ্যাপিলিং অ্যাপল
দেহের নিচের অংশের চেয়ে তুলনামূলকভাবে চওড়া এবং বড় হয় অ্যাপল শেপড নারীদের উপরের অংশ। অর্থাৎ কাঁধ ও বুকের অংশটাই বেশি দৃশ্যমান হয়। সাধারণত খুব বেশি বাঁক থাকে না কোমরেও। এ ধরনের দেহাবয়বের কনেরা শাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ম্যাটেরিয়াল হিসেবে বেছে নিতে পারেন সিল্ক অথবা জর্জেট। তালিকায় থাকতে পারে শিফন আর ক্রেপের মতো নাজুক ফ্যাব্রিকও। জমিনজুড়ে থাকুক ভারী এম্ব্রয়ডারড নকশার ফোঁড়। বড় বড় প্রিন্ট থাকলেও মন্দ দেখাবে না। তবে খুব বেশি জমকালো শাড়ি না চাইলে থাকছে সে অপশনও। সে ক্ষেত্রে শুধু আঁচলের অংশজুড়ে ভারী কাজ থাকলেই চলবে। সঙ্গে লং ব্লাউজটাই বেশি মানাবে এ ধরনের কনেদের। কোমরের উপরের অংশ অব্দি লম্বাই যথেষ্ট। শাড়ির সঙ্গে কনট্রাস্ট করেও নেওয়া যাবে ব্লাউজ। শাড়ি পরার সময় একটু উঁচু থেকে অর্থাৎ কোমরটা ঢেকে পরলেই ভালো দেখাবে। খুব বেশি কারসাজির দরকার নেই ড্রেপিংয়ে। সনাতনী স্টাইলে সামনে আঁচল টেনে পরা যেতে পারে। ভালো লাগবে ডাবল আঁচল দিয়ে শাড়ি পরলেও। সাজে যোগ হবে বাড়তি নাটকীয়তা।
আর লেহেঙ্গা পরতে চাইলে বেছে নিতে হবে এম্পায়ার লেন্থেরগুলো। সঙ্গে থাকুক ডিপ নেকলাইন দেওয়া চোলি। যেন সিডাকশন অ্যাট ইটস বেস্ট। এত খোলামেলায় স্বচ্ছন্দ না হলে বেছে নেওয়া যেতে পারে ‘ইউ’ অথবা ‘ভি’ নেকলাইনের লম্বা চোলি। লেহেঙ্গায়ও ব্রোকেড আর টিস্যুর বদলে বেছে নিতে হবে শিফন অথবা জর্জেটের মতো পলকা ফ্যাব্রিকগুলো।
পারফেক্ট পিয়ার শেপ
চাপানো কাঁধ, সরু কোমর আর চওড়া নিতম্ব- পিয়ার শেপ বডির বিশেষ বৈশিষ্ট্য। মূলত দেহের আপার ও লোয়ার পোরশনে ভারসাম্য তৈরি করবে এমন পোশাক পরা চাই এ রকম দেহাবয়বে। চওড়া পাড়ের শিফন আর জর্জেট শাড়ি এ ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ। সিল্ক-সুতির মিশ্রণ কিংবা ক্রেপের মতো ফ্লোয়ি ফ্যাব্রিকে তৈরি শাড়িও থাকতে পারে বিয়ের উইশলিস্টে। জমিনজুড়ে ছড়িয়ে থাকতে পারে এমব্রয়ডারড কিংবা প্রিন্টেড মোটিফ। খুব বেশি ঘন কাজ করা না কেনাই ভালো। বেনারসি সিল্ক শাড়িও দারুণ দেখায় এ ধরনের বডি শেপে। নজর দিতে হবে ব্লাউজের দিকেও। ‘ভি’ নেকের শর্ট স্টাইল ব্লাউজে হাইলাইটেড হবে কোমরের অংশ। টেক্সচারড অথবা প্যাডেড ব্লাউজ রাখা চাই তালিকায়। স্ট্রাকচারড এবং টেইলরড পেটিকোটও প্রয়োজন পিয়ার শেপড কনের জন্য। কিন্তু মারমেইড কাট পেটিকোট পরা যাবে না। ড্রেপিংয়ের সময় ছোট ছোট কুঁচিতে শাড়ি সেট করে নিলে ভালো দেখাবে। গুজরাটি স্টাইলেও পরা যেতে পারে।
লেহেঙ্গা পরতে চাইলে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে স্কার্টের দিকে। হরাইজন্টাল ডিটেইল দেওয়া স্কার্ট পুরো লুকে ভারসাম্য এনে দেবে। খুব বেশি কাজ করা স্কার্ট এ ক্ষেত্রে বেছে না নেওয়াই ভালো। প্লেইন, ফ্লোয়ি স্কার্টগুলো সাজে দেবে সমানুপাতিকতা। ফিশটেইলড স্কার্ট একদম এড়িয়ে যাওয়া উচিত। লেহেঙ্গার ব্লাউজটাকে হাইলাইটেড করা চাই। প্যাডিং দেওয়া ডিপ নেকের ব্লাউজগুলো কিন্তু দারুণ দেখাবে। দেহের উপর এবং নিচের অংশে ভারসাম্য তৈরিতেও সাহায্য করবে। কেপ স্টাইল, হাইনেক, অফ শোল্ডার অথবা স্লিভলেস ব্লাউজও পরে নেওয়া যাবে আরামসে। কেপ দোপাট্টা নিতে পারেন লেহেঙ্গার সঙ্গে। তবে সেটি যেন নিচের দিকে গিয়ে জমা না হয়। এতে করে আরও ভারী দেখাবে পিয়ার শেপড কনের দেহের নিচের অংশ। তবে শাড়ি বা লেহেঙ্গা যা-ই পরা হোক না কেন, নাভির নিচ থেকে পরা চাই। এতে সুন্দর বাঁক তৈরি হবে সাজে।
রক ইন রেকটেঙ্গেল
নিচ আর উপরের অংশ সমানে সমান হয় এ ধরনের দেহাবয়বে। সটান সোজা, বাঁকবিহীন, অ্যাথলেট বডি। তাই দেহে বাঁক তৈরিই চ্যালেঞ্জ। পুরো সলিড কালারের শাড়ি একদমই পরা যাবে না। এতে আরও চাপা দেখাবে শরীর। ক্রেপ, অরগ্যাঞ্জা কিংবা স্যাটিনের জমিনে এমব্রয়ডারি অথবা প্রিন্ট করা শাড়িই বেশি জুতসই এ দেহের কনেদের জন্য। এগুলো শরীরের সঙ্গে মিশে থাকলেও ড্রেপিংয়ের পর সুন্দর বাঁক তৈরি করে। দেয় ফুলার ফিগারের ইলিউশন। ভারী কাজ করা পাড়ের শাড়িও বেছে নিতে পারেন। ব্লাউজের ক্ষেত্রেও থাকতে পারে বৈচিত্র্য। ব্যাকলেস, স্লিভলেস, হল্টারনেকের মতো ব্লাউজগুলো বেশ দেখাবে।
কনের লেহেঙ্গাও এমন হওয়া চাই, যা কার্ভি দেখাতে সাহায্য করবে। সে ক্ষেত্রে লেহেঙ্গার স্কার্ট হওয়া চাই ফুলার ফর্মের। যা দেহের নিচের অংশে ভলিউম তৈরি করবে। স্টিফ ফ্যাব্রিক, যেমন র সিল্কে তৈরি স্কার্ট এ ক্ষেত্রে পারফেক্ট অপশন। আর ফুলার ভাব তৈরির জন্য যথেষ্ট ক্যানক্যান ব্যবহার করা চাই। এতে বাড়তি ফ্লোয়ি ভাবও তৈরি হবে। সঙ্গে পরতে হবে প্লাঞ্জিং নেকলাইনের লো কাট ব্লাউজ। কার্ভি ইলিউশন তৈরির জন্য। এ ধরনের বডি শেপের কনের কাঁধ তুলনামূলকভাবে চওড়া হয়। তাই শক্ত জমাট হয়ে থাকবে এমন নয়, বেছে নিতে হবে নরম, ফ্লোয়ি ফ্যাব্রিকের দোপাট্টা। যা পুরো লুকে যোগ করবে কোমলতা।
অ্যামেজিং আওয়ারগ্লাস শেপ
পারফেক্ট বডি শেপ। বাস্ট এবং হিপ লাইন সমসাইজের। সঙ্গে সরু কোমর। কনের দেহের বাঁকগুলো সুন্দরভাবে বোঝা যায় এমন দেহাবয়বে। তাই স্টাইলিং সহজ। জর্জেট, শিফন, ক্রেপ কিংবা নেট- শাড়ির ম্যাটেরিয়াল বেছে নেওয়া যাবে পছন্দমাফিক। এমবেলিশমেন্ট হিসেবে থাকতে পারে ভারী এমব্রয়ডারি, জারদৌসি এমনকি গোটাপাত্তি ওয়ার্কও। বেনারসিটা না পরাই ভালো। বাড়তি নজর দিতে হবে ব্লাউজে। ওয়েল ফিটেড এবং বাস্ট লাইন অব্দি ব্লাউজ এ ধরনের দেহে দারুণ দেখায়। এ ছাড়া সুইট হার্ট হল্টার নেক, ভি নেক অথবা স্কুপ নেকও বেছে নেওয়া যেতে পারে। স্বচ্ছন্দ থাকলে স্ট্র্যাপলেস করসেট স্টাইল ব্লাউজও মন্দ দেখাবে না।
কনেরা লেহেঙ্গা পরতে চাইলে তা-ও বেছে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ভেলভেট, জর্জেট কিংবা শিফনের মতো ফ্লুইড ফ্যাব্রিকে তৈরি ‘এ-লাইন’ স্কার্ট বেছে নেওয়ার পরামর্শ থাকলো। সঙ্গে কোমর দেখানো শর্ট চোলি স্টাইল ব্লাউজ পারফেক্ট কম্বিনেশন। ভারী এমব্রয়ডারি করা দোপাট্টার ড্রেপিং এমন হওয়া চাই, যেন তা কোমর না ঢাকে। কমনীয় আকর্ষণ তৈরি হবে এতে।
ওভারসাইজড ওয়ান্ডার
তুলনামূলকভাবে মোটা হন এ বডি শেপের কনেরা। পেট ও কোমরে বাড়তি মেদ এ দেহাবয়বের মূল সমস্যা। সে ক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন জর্জেট, শিফন, ক্রেপ কিংবা নেটের মতো ফ্লোয়ি ফ্যাব্রিকের শাড়ি। তবে ভেলভেট থেকে দূরে থাকুন। গাঢ় ডিপ টোনের জুয়েল হিউয়ের শাড়ি ভারিক্কি কনেদের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। তাতে থাকুক ডেলিকেট এমব্রয়ডারি। জড়ানো থাকতে পারে পুঁতি আর পাথরও। খুব বেশি স্বচ্ছ ফ্যাব্রিকের শাড়ি যেন পরে ফেলবেন না। বাড়তি কোনো আবেদন তো তৈরি হবেই না, উল্টো অশোভন দেখাতে পারে। ব্লাউজের ক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন ক্রিস ক্রস স্ট্রিং দেওয়া ডিজাইন। আঁটসাঁট হওয়ায় স্লিম ফিগারের ইফেক্ট তৈরি হবে এতে। তবে খোলামেলায় স্বচ্ছন্দ না হলে ভি অথবা সুইটহার্ট নেকলাইনের ফুল স্লিভ ব্লাউজও পরে নিতে পারেন। ফ্ল্যাব টু ফ্যাব হয়ে উঠতে।
শারারা কাট লেহেঙ্গা এ বডি শেপের কনেদের জন্য পারফেক্ট অপশন। হিপ অব্দি লম্বা টপের সঙ্গে ফ্লুইড ফ্যাব্রিকের স্কার্ট দারুণ মানিয়ে যাবে। মূলত স্কার্টের নিচের অংশে ফ্রিলের বাড়তি যোগ থাকে এসব লেহেঙ্গায়। এ ছাড়া বেছে নেওয়া যেতে পারে হাই ওয়েস্টেড স্কার্টের স্টাইলও। লেহেঙ্গার ব্লাউজ এমনভাবে বানাতে হবে, যেন পেট বা কোমর কোনোটাই দেখা না যায়। দোপাট্টার ড্রেপিংও হওয়া চাই দেহের সমস্যাযুক্ত অংশ যেমন মেদবহুল পেট কিংবা ভারী বাস্ট লাইন ঢেকে নেওয়ার উপযোগী।
কনে তো সাজবেনই, বরই বা পিছিয়ে থাকবেন কেন? সে জন্য বাজেট যে কিছু কম বরাদ্দ হয়, তা নয়। পারফেক্ট কনের পাশে তাই বরকেও হওয়া চাই টেন অন টেন। ব্যক্তিগত পছন্দ আর ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশেই প্রাধান্য দেওয়া হয় বরের পোশাক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে। তবে মাপজোকের ব্যাপারটা যেন মাথা থেকে উবে না যায়। বডি শেপ অনুযায়ী বেছে নিতে হবে পোশাক। করতে হবে সঠিক স্টাইলিং-
বলিষ্ঠ বন্দন
বড়সড় চওড়া শরীরে বরদের জন্য এমন পোশাক প্রয়োজন, যা তাদের চিকন দেখাতে সাহায্য করবে। যদি শরীরের উপরের অংশ ভারী হয়, সে ক্ষেত্রে ফ্লোয়ি ফ্যাব্রিকের কুর্তা বা পাঞ্জাবি বেছে নিতে পারলে ভালো। আঁটসাঁট স্ট্রাকচারড শেরওয়ানি গায়ে না-ই চাপালেন। বেশি চাপাচাপিতে ভারিক্কি ভাব আরও বাড়বে, বরং শপিং লিস্টে থাকুক রিল্যাক্সড স্টাইলের শেরওয়ানি। হালকা কাজ করা সিল্কের পাঞ্জাবি যেমন চলবে, চলবে লুজ ফিটেড শেরওয়ানি। বটম হিসেবে থাকতে পারে লুজ ফিটিং সালোয়ার কিংবা প্যান্ট। ঢিলেঢালা না চাইলে আঁটসাঁট চুড়িদার আর প্যান্ট দিয়ে পরলেও মন্দ দেখাবে না। প্যানেল দেওয়া আউটফিট এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। এতে চওড়া শরীর আরও বেশি চওড়া দেখাবে। কালার প্যালেটে মনোক্রোম ভাবটা যেন বজায় থাকে। উপরের অংশে কালো, মেরুন, নেভি ব্লুর মতো ডার্ক শেডগুলো চিকন দেখাতে সাহায্য করবে। সঙ্গে একই শেড নয়তো সাদা বেছে নেওয়া যেতে পারে বটম হিসেবে। ধুতি কিংবা প্রি-ফিটেড ধুতি স্টাইল বটমও দারুণ অপশন পাঞ্জাবি অথবা শেরওয়ানির সঙ্গে পরার জন্য। অ্যাডিশনাল পিস হিসেবে বুক খোলা লং জ্যাকেট, গলায় উত্তরীয় পরে নেওয়া যেতে পারে। ভারিক্কি ভাবটা কম দেখাবে।
চিকনে চমৎকার
এমন পোশাক পরা চাই চিকন বরদের, যা তাদের দেহে যোগ করবে ভারিক্কি ভাব। হরাইজন্টাল কাটের শিলুয়েট যুক্ত পোশাক এর জন্য পারফেক্ট অপশন। তুলনামূলকভাবে শর্ট কুর্তা বা পাঞ্জাবিতে ভালো দেখাবে শীর্ণকায় বরদের। সঙ্গে পরে নেওয়া যেতে পারে নেহরু জ্যাকেট। হিপ কাভারিং বন্ধ গলার শেরওয়ানিও মন্দ দেখাবে না। সঙ্গে সালোয়ার অথবা ধুতির মতো চওড়া বটম বেছে নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। লম্বা, স্ট্রেইট কাট শেরওয়ানি পরা একদমই মানা। রঙ এবং এমবেলিশমেন্টের ক্ষেত্রে পছন্দসইটি বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকছে। তবে গাঢ় রঙগুলো এড়িয়ে যাওয়া ভালো। এগুলো আরও স্লিম দেখায় বডি। বরং পরতে পারেন লাইট ব্লু, ক্রিমের মতো প্যাস্টেল শেডের পোশাক। মাল্টিকালারের পোশাকও এ ধরনের বডিতে দারুণ দেখায়। সিঙ্গেল কালারের আউটফিটের বদলে বেছে নিন এমন পোশাক, যার টপ ও বটম পার্টের রঙ আলাদা। সঙ্গে গায়ে জড়ানো যেতে পারে স্টোল। শাল এমনকি জ্যাকেটও। আরেকটু ভারিক্কি ভাব যোগ করার জন্য।
বেঁটে বরদের জন্য
বিয়েতে পোশাক বাছাইয়ের সময় সাবধান! আরও বেঁটে যেন না দেখায় আপনাকে। বরং লম্বা ভাবের ইলিউশন তৈরি হয়। তাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে পা ঢাকা বেশি লম্বা শেরওয়ানি বা পাঞ্জাবি না পরা। হাঁটু অব্দি হলেই ভালো। শর্ট কুর্তা, যোধপুরী বন্ধগলা, আচকান থাকতে পারে উইশলিস্টে। আর বেঁটে বরদের জন্য পাগড়ি মাস্ট। কালার প্যালেটের গাঢ় মনোক্রোমেটিক হিউ থাকুক পোশাকের জমিনে। এতে শরীরের শিলুয়েটে লম্বা ভাব তৈরি হবে।
তো, ধারণা তাহলে মোটামুটি মিলেই গেল। বিয়ের পোশাক বাছাইয়ের কাজ যতটা পাহাড়প্রমাণ মনে হচ্ছিল, এখন আর ততোটা নয় নিশ্চয়ই? এবার বাজেট ঠিক করে, এসথেটিক সেন্স আর হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে বেরিয়ে পড়–ন বিয়ের শপিংয়ে। শুভবিবাহ!
মডেল: অভিনেত্রী নাজিফা টুসি, তর্ষা, নীল, মিথি ও বোরহান
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: সারাহ করিম ও মানসা
জুয়েলারি: জড়োয়া হাউজ
ছবি: সৈয়দ অয়ন