ফুড বেনিফিট I খেজুরের রস
গ্রামবাংলার অতি পরিচিত সুস্বাদু পানীয়। স্বাস্থ্যকর, শক্তির জোগানদাতা। সুলভ শীতকালে
হেমন্ত-শীত মৌসুমে খেজুরগাছগুলোতে ঝুলতে দেখা যায় মাটির ছোট ছোট কলসি। এগুলোকে রসের হাঁড়িও বলে। কাকডাকা ভোরে গাছিরা শীত উপেক্ষা করে গাছ থেকে নামিয়ে আনেন রসে টইটুম্বুর হাঁড়িগুলো। গ্রামের প্রান্তিক চাষিদের জীবন-জীবিকার সঙ্গে এই কাজ ওতপ্রোত।
তাজা ও খাঁটি খেজুরের রস পান করতে চাইলে শীতকালে গ্রামে চলে যাওয়াই ভালো। গাছ থেকে নামানো রস সরাসরি বা জ্বাল দিয়ে পান করার কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারিতা আছে।
খেজুরের রস প্রচুর খনিজ ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। এটি পান করলে অনিদ্রা, কোষ্ঠকাঠিন্য ও শারীরিক দুর্বলতা দূর হয়। এতে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ দ্রবীভূত শর্করা থাকে।
খেজুরের রস গাছ থেকে নামিয়ে যত দ্রুত সম্ভব পান করা উচিত। নইলে সময় যত গড়ায়, ততই এর ফারমেন্টেশন বা গাঁজন প্রক্রিয়া চলতে থাকে। রসের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। অম্লতা বাড়ে। রাতের অন্ধকারে গাঁজন প্রক্রিয়া কম হয়, কিন্তু দিনের আলোতে বেশি হয়। তাই ভোর কেটে যাওয়ার পর রস খাওয়া অনুচিত। এতে বমিসহ পেটের নানা সমস্যা হতে পারে।
যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের খেজুরের রস পান করা অনুচিত। কেননা এতে চিনির পরিমাণ খুব বেশি। একজন সুস্থ মানুষের জন্য দিনে দুই গ্লাসের বেশি রস পান করা উচিত হবে না।
খেজুরের রস যেহেতু খোলা অবস্থায় গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়, তাই এতে জীবাণু থাকতে পারে। হতে পারে অস্বাস্থ্যকর। এ জন্য খেজুরের রস হালকা আঁচে জ্বাল দিয়ে বা ফুটিয়ে পান করাই ভালো। পোকামাকড় থেকে দূরে রাখা জরুরি। বিশেষত বাদুড়। কেননা এই প্রাণী নিপাহ ভাইরাসের বাহক। খেজুরগাছে ঝুলন্ত রসের হাঁড়িতে বাদুড় মুখ দেয় কিংবা প্রস্র্রাব করে। ওই রস পান করলে মানবদেহে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ হয়। এই ভাইরাস মানুষের মস্তিষ্ক ও শ্বাসযন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। তাই খেজুরের রস ফুটিয়ে পান করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। সতর্ক থাকতে চাইলে সরাসরি খেজুরের রস পান না করে গুড় তৈরি করে খাওয়া ভালো। গুড় খেলে রক্ত পরিষ্কার হয়। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক থাকে। ফলে দূষিত রক্তের কারণে শরীরে যেসব রোগ হয়, সেগুলো থেকে রেহাই পাওয়া যায়। গুড়ে প্রচুর আয়রন রয়েছে। খেজুরের গুড় অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। নারীদের নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দূর করে খেজুরের গুড়। এটি নিয়মিত খেলে হজমের সমস্যা থাকে না। গুড় লিভার রাখে সুস্থ। এতে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম ও সোডিয়াম, যা পেশিকে শক্তিশালী করে। পাশাপাশি অতিরিক্ত মেদ ঝরায়। ফলে, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করে খেজুরের গুড়।
ত্বক মসৃণ রাখতে এবং বয়স ধরে রাখতে খেজুরের রস দিয়ে তৈরি গুড়ের জুড়ি নেই। ফুসকুড়ি ও ব্রণ নিরাময়ে নিয়মিত খেজুর গুড় খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া প্রতিদিন শরীরে যে পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন, তার ৪ শতাংশই আসে গুড় থেকে। খেজুর রসের গুড় স্নায়ুতন্ত্রের প্রক্রিয়া সচল রাখে। ফলে, স্নায়বিক নানা রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়।
শিবলী আহমেদ
ছবি: ইন্টারনেট