কুন্তলকাহন I রুক্ষ ঋতুতে সতেজ চুল
শুষ্কতা চুলে যেসব উপদ্রব তৈরি করে, সেগুলো এড়ানোর জন্য চাই হেয়ার কেয়ার রুটিন। শীতের মৌসুমে যা জুতসই
জেঁকে বসেছে শীত। এক কাপ গরম কফির সঙ্গে আরামদায়ক, উষ্ণ সময় কাটাবার উপযুক্ত সময়। যখন প্রকৃতিকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন রোদের তীব্রতায় যতি টানবার জন্য, তখন নতুন কিছু অপেক্ষা করছে। কেননা গ্রীষ্ম চলে গেলেও শীত চুলে একটি নতুন সমস্যা হয়ে দেখা দেবে, যা মোকাবিলা করতে হবে আপনাকেই। তাই এ মৌসুম উপভোগ্য করে তুলতে চুলের যত্নের একটি রুটিন পরিকল্পনা করে ফেলুন।
সঠিক সুরক্ষার ব্যবস্থা না করলে শুষ্ক আবহাওয়া চুলের যে ব্যাপক ক্ষতির কারণ হতে পারে, তা উপেক্ষা করতে পারবেন না। এ সময় আর্দ্রতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে, চুল ভঙ্গুর ও ক্ষতিপ্রবণ হয়ে ওঠে। তবে, এসব সমস্যা এড়িয়ে যেতে পারবেন একটি সঠিক উইন্টার হেয়ার কেয়ার রুটিন সঙ্গে নিয়ে।
চুল ও মাথার ত্বক বেশ চাপে থাকে এ মৌসুমে। তাই এ সময় কীভাবে চুল হেলদি রাখা যায়, সে কৌশল জেনে নেওয়াটা জরুরি।
শীতল আবহাওয়ায় চুল আরও শুষ্ক হয়ে পড়ে। ক্ষতিকর উপাদান থেকে চুলরক্ষার সেরা উপায় হলো মাথা স্কার্ফ বা হ্যাট দিয়ে ঢেকে রাখা। তবে খেয়াল রাখুন, এটি যেন খুব আঁটোসাঁটো না হয়, যাতে মাথার ত্বকে রক্তসঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়। চুল উইন্টার হ্যাট স্ক্যাল্পে ঘামের কারণ হতে পারে, ফলে জ্বলুনি হতে পারে। তাই সুতি স্কার্ফ ও হ্যাট ব্যবহার করুন। অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করুন মাথায় খুশকি আক্রমণের আগেই।
এ সময় চুল ও মাথার ত্বক হাইড্রেট রাখা প্রয়োজন। যদি তা ভেতর থেকে হাইড্রেট থাকে, বাইরেও তাই থাকবে। প্রচুর পানি পান করুন। এ ছাড়া ব্যবহার করতে পারেন ড্রাই স্ক্যাল্প কেয়ার শ্যাম্পু, যা শীতে ভেতরে ও বাইরের তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে শুষ্ক হয়ে যাওয়া মাথার ত্বক আর্দ্র রাখবে।
চুল অতিরিক্ত সজ্জিত করা থেকে এবং স্টাইলিং উপকরণ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। হেয়ার ড্রায়ার, কার্লিং আয়রনের মতো সরঞ্জামগুলো এড়িয়ে চলুন বা সীমিত ব্যবহার করুন। কেননা এগুলো চুল ও মাথার ত্বক শুষ্ক করে তুলতে পারে। ড্যামেজের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
চুল নিয়মিত ট্রিম করে নিন। চুল ছোট হোক বা লম্বা, শীতের আবহাওয়া চুলের ডগা শুষ্ক ও ভঙ্গুর করে তুলতে পারে। চুলের ডগা নিয়মিত ট্রিম করে নিলে চুল ভালো থাকবে এবং ফেটে যাওয়ার শঙ্কা কমে যাবে।
স্বাভাবিক পানিতে চুল ধুয়ে নেওয়ার অভ্যাস করুন। গরম পানিতে চুল ধোয়া এড়িয়ে চলুন, চুলের ক্ষতি এড়াতে মৃদু উষ্ণ বা ঠান্ডা পানি ব্যবহার করুন। গরম পানি চুলকে শুষ্ক তো করেই, মাথার ত্বকের দুর্বল অংশকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা শীতের সময় অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারে।
ভেজা চুল নিয়ে বাইরে বের হবেন না। চুল শুকাতে যথেষ্ট সময় নিন বা সম্ভব হলে প্রাকৃতিকভাবে শুকিয়ে নিন বাইরে যাবার আগে। শীতল আবহাওয়ায় শুকাতে অনেক সময় নেয় আর চুল যদি জটযুক্ত হয়, তবে তা ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
শীতের সময় বাতাসে আর্দ্রতার অভাবে মাথার ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যেতে পারে। এতে খুশকি ও মাথার ত্বকে জ¦লুনির মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে, চুল ঝরে যেতে পারে। তবে বেশির ভাগ মানুষ সম্ভবত জানে না যে সঠিক যত্নে খুশকির সমস্যা ভালোভাবেই সামলানো যায়। এর জন্য প্রয়োজন দুই টেবিল চামচ অলিভ অয়েল বা কোকোনাট অয়েল এবং এক টেবিল চামচ লেবুর রস। তেল গরম করে তাতে লেবুর রস মিশিয়ে নিন। মাথার ত্বকে মিশ্রণটি ম্যাসাজ করে বিশ থেকে ত্রিশ মিনিট অপেক্ষা করুন। স্বাভাবিক পানিতে চুল ধুয়ে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করে আবার ধুয়ে নিন।
হুডি, সোয়েটার, স্কার্ফ গ্লাভস- সবকিছু যেন চুলের ওপর জেঁকে বসে একে নিশ্চল, জমাট আর এলোমেলো করে দেয়। এটি মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজন একটি ভেনটেড হেয়ার ব্রাশ। উষ্ণ পানিতে চুল ধুতে হবে, গরম পানিতে নয়; নতুবা চুলের প্রাকৃতিক তেল ধুয়ে চলে যাবে যা চুল সুরক্ষিত রাখে ও পুষ্টি জোগায়। চুল মসৃণ ও জটমুক্ত রাখতে ব্যবহার করতে পারেন লিভ-ইন কন্ডিশনার।
শীতে আর্দ্রতাহীনতা শুধু মাথার ত্বকই শুষ্ক ও জটযুক্ত করে না, চুলকে করে তোলে নিস্তেজ ও প্রাণহীন। জট ছাড়িয়ে নিতে ব্রাশ বা আঁচড়ে নেওয়ার কাজে চওড়া দাঁড়ার চিরুনি এবং চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত অপরিশোধিত মধু ব্যবহার করুন। এবার চুল শাওয়ার ক্যাপ বা তোয়ালে দিয়ে ঢেকে রাখুন ত্রিশ মিনিটের জন্য। হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। মধু চুলে ময়শ্চার ধরে রাখতে এবং নিস্তেজ ও ক্ষতিগ্রস্ত চুলের উজ্জ্বলতা ও বাউন্সি ভাব ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
শীতের সময় চুল ময়শ্চার রাখা জরুরি। সপ্তাহে অন্তত একবার তেল এবং ডিপ কন্ডিশনিং প্যাক চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যাবশ্যক। চুল ধোয়ার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করতেই হয়। শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এরপর চুলের মাঝামাঝি থেকে ডগা পর্যন্ত কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন। ক্ষতিগ্রস্ত চুলে যাতে ভালোভাবে লাগে সেদিকে খেয়াল রাখুন। কয়েক মিনিট পর হালকা গরম পানি বা স্বাভাবিক পানিতে কন্ডিশনার ধুয়ে ফেলুন। তবে স্বাভাবিক বা ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নেওয়াটা ভালো। এতে ময়শ্চার বজায় থাকে এবং চুল মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
এ ছাড়া ভেতর থেকেও পুষ্টির জোগান দেওয়াটা জরুরি। শীতের তাজা সবুজ শাকসবজি চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বেশ কার্যকর।
আহমেদ বুবলি
মডেল: মাইশা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন