সঙ্গানুষঙ্গ I চমকের অনুষঙ্গ
অনুষঙ্গেও এসেছে পরিবর্তন। তা স্টাইলিংয়ে সৃষ্টি করেছে চমক। ম্যাচি ম্যাচি লুকের বদৌলতে
নতুন সিজন এলেই ফ্যাশনপ্রেমীরা উন্মুখ হয়ে থাকেন ট্রেন্ডে কী কী ইন হচ্ছে। শোগুলোতে তাদের নজর মডেলদের পোশাকে শুধু নয়, তারা কী অ্যাকসেসরিজ পরে রানওয়েতে আসছে, তার ওপরও নিবদ্ধ থাকে। ইতিমধ্যে নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকের পর্দা আনুষ্ঠানিকভাবে নামার সঙ্গে সঙ্গে নির্ধারিত হয়ে গেছে এই বছরের ফ্যাশন ট্রেন্ড। অ্যাকসেসরিজও এর বাইরে নয়।
সাধারণত অ্যাকসেসরিজের ক্ষেত্রে হ্যান্ডব্যাগ, হ্যাট ইত্যাদি নিয়ে আগ্রহ থাকে বেশি। এবারও ব্যতিক্রম নয়। স্ট্রিট স্টাইলের তারকারা এরই মধ্যে দেখিয়ে দিয়েছেন, তাদের ব্যাগের ট্রেন্ড কেমন হবে। এ ক্ষেত্রে এবার ট্রেন্ডে এসেছে যত ছোট তত ভালোর ভাবনা। বিশাল টোট বা ওভারসাইজড বাকেট ব্যাগের পরিবর্তে শো শেষে তারা ক্যারি করেছেন শ্রাংকেন ভার্সন। এমন স্টাইল যে আগে দেখা যায়নি তা নয়, কিন্তু এই ছোট্ট আকারের ব্যাগগুলো বেশ জাঁকজমকের সঙ্গেই প্রত্যাবর্তন করেছে। এবারকার শোতে বেশ কিছু ডিজাইন ফ্যাশনমোদিদের আকৃষ্ট করেছে। তবে এগুলোর মধ্যে মেটালিক রিং হ্যান্ডলের ক্লোয়ি নাইল মিনোডিয়ার ব্যাগটি স্বতন্ত্র আর স্ট্যান্ডআউট স্টাইলের ছিল। প্রদর্শনের পর থেকেই এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া আলেকজান্ডার ওয়াংয়ের কুল মাইক্রো পেটেন্ট বাকেট ব্যাগ ও গুচির আকর্ষণীয় টপ-হ্যান্ডল লোগো ব্যাগও এবারকার ট্রেন্ডে ভালোভাবেই জায়গা করে নিয়েছে। তাই দেরি না করে মাইক্রো মিনি ব্যাগের সম্ভার থেকে নিজের পছন্দেরটি সংগ্রহ করে নিন। কেননা এই স্টাইল বছরের শেষ পর্যন্ত ট্রেন্ডে নিজের জায়গা বহাল রাখবে বলেই ফ্যাশনবোদ্ধারা মনে করছেন।
হ্যাট বা হেডগিয়ারে এবার এসেছে প্রিন্টেড হেডওয়্যার। ফুলেল বা জিওমেট্রিক নানান প্রিন্টের হেডওয়্যারে মডেলরা এবার মঞ্চ কাঁপিয়েছে। আর এই সিজনে এমন স্টেটমেন্ট স্টাইলে লুকটা যে সেরা হবে, তাতে সন্দেহ নেই। এই অ্যাকসেসরিজে ডিজাইনাররা ক্ল্যাসিক স্টাইলে প্রাণিত হয়েছেন। বিশেষ করে সত্তরের হেডকার্ভস, গ্রোভি বাকেট হ্যাট ও রিসোর্ট-রেডি হেডওয়্যারের এখন জয়জয়কার। এ জন্য ধন্যবাদ দিতে হবে মাইকেল কোরস কালেকশন ও কেট স্পেড নিউইয়র্ককে। এদের কল্যাণে পুরোনো এই স্টাইলগুলোর উচ্ছল উত্থান ঘটেছে।
অনেকেই ভাববেন ওল্ড ফ্যাশন। অন্যদিকে মেইন স্ট্রিট ফ্যাশনে জুতার সঙ্গে ব্যাগ ম্যাচিং করে চলেছে। এটাও ঠিক যে ফ্যাশন ওয়েভ সিমেট্রি, কালার ইউনিটি ও ক্রোম্যাটিক হারমনির ধারণা মুছে ফেলে এবং একটি নতুন অ্যাজেন্ডা পুশ করে। সে জায়গা থেকে বলা যায়, ম্যাচি ম্যাচি স্টাইল বাদ পড়তে যাচ্ছে। কিন্তু ইতিহাস মাঝে মাঝে পুনরাবৃত্তি করে, আর সেই ধারাতেই স্টাইলটি ফিরে এসেছে এই শিক্ষা দেওয়ার জন্য যে কিছু কিছু ক্ল্যাসিক স্টাইল কখনো পুরোনো বা শেষ হয়ে যায় না। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রিচার্ড কুইনের লন্ডন ফ্যাশন উইক শোতে উপস্থিত রানির পরনে ছিল অ্যাঞ্জেলা কেলির ডাক-এগ-ব্লু স্যুট এবং কালো গ্লাভস, মিড-হিল পাম্পস ও লুনারের কালো হ্যান্ডব্যাগ। তার নাতবউ ডাচেস অব কেমব্রিজও সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে বেছে নিয়েছিলেন ম্যাচি ম্যাচি অ্যাকসেসরিজ। তিনি অ্যাসিমেট্রিক রেড প্রিন এবং একটি রাগ বক্স ক্লাচ ও কোর্ট শুতে প্রগাঢ় লালের সিম্ফনি ঘটিয়েছিলেন।
জ্যাকি কেনেডি আবার মাথা থেকে পা মেলাতে একধাপ এগিয়ে। হ্যাট, গ্লাভস, শু ও হ্যান্ডব্যাগের কালার কোটের রঙের সঙ্গে মিলিয়েছেন। মশিনোর অটাম-উইন্টার শোর জন্য মডেলরা তাদের স্কার্ট স্যুট, পিলবক্স হ্যাট, রিস্ট লেন্থ গ্লাভস থেকে শুরু করে বাকলড হিল- সবই ছিল পেপারমিন্ট গ্রিন, ক্যাডবেরি পার্পল ও ট্যানজারিন কালারের।
হতে পারে সেকেলে ফ্যাশন কিন্তু ম্যাচি ম্যাচি অ্যাকসেসরিজ এই সিজনের জন্য সেরা চমক। নেট-এ-পোর্টারের ফ্যাশন ডিরেক্টর লিসা আইকেন অ্যাকসেসরিজ স্টাইলে সাইমন মিলারের রেড বুটের সঙ্গে মিলিয়ে ঘড়ি, সমানভাবে উজ্জ্বল লাঞ্চব্যাগ ক্ল্যাচ নিয়ে উপস্থিত হন প্যারিস শোতে। তবে ম্যাচি ম্যাচি স্টাইলে পোশাক বাদ দিয়ে অ্যাকসেসরিজগুলোর একটির সঙ্গে আরেকটির মিল রাখাই ভালো। সে ক্ষেত্রে রঙের দিকে খেয়াল রাখাটা জরুরি। যেমন ফরেস্ট গ্রিনের সঙ্গে প্রাইমারি রেড কালার বেশ বৈপরীত্যের সৃষ্টি করবে, যা ফ্যাশন চমক হিসেবে গ্রাহ্য নয়। এর বদলে সাদা, ব্রাউন কিংবা হালকা হলুদ ধরনের রঙগুলো একটি কিউট কম্বো তৈরিতে ভালো কাজ দেবে।
তো এবার নিজেকে ট্রেন্ডি করে তুলতে অ্যাকসেসরিজ কালেকশনে ওল্ড ফ্যাশন বলে সব বাদ না দিয়ে ব্যবহারের ট্রেন্ডি উপায়গুলো দেখে নিন ফ্যাশন ব্লগগুলোতে। দেখবেন কতটা চমক অপেক্ষা করছে।
তাসমিন আহমেদ
মডেল: মাইশা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব ও অ্যাকসেসরিজ: নোয়া
ছবি: সৈয়দ অয়ন