বাংলাদেশি ব্র্যান্ড আজুরা। ফ্যাশন ডিজাইনার শান্তা কবিরের ব্রেইন চাইল্ড। মূলত প্রাকৃতিক রং নিয়ে কাজ করেন এই ডিজাইনার। ফ্যাব্রিকে দেশি বুননকে দেন গুরুত্ব। আনকোরা নকশায় আকর্ষণীয় পণ্য তৈরি করেন। ব্র্যান্ডের নিজস্বতায় ক্রেতা আকর্ষণ করে চলেছেন নিয়মিত। ক্যানভাসের সঙ্গে আলাপনে জানিয়েছেন নিজের লেবেল সম্পর্কে বিস্তারিত।
বিশেষত্ব
‘দেশি কাপড় আর প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক ট্রেন্ডের পোশাক তৈরি করে আজুরা। এটাই আমার কাছে আজুরার প্রধান বিশেষত্ব,’ বলেছেন শান্তা।
নামে সুনামে
শান্তা বলেন, ‘আজুরা শব্দটির বাংলা অর্থ মজুরি। বাংলা একাডেমির অভিধানের প্রথম দিকের শব্দ এটা । শব্দটাকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং আমার কাজের পারিশ্রমিক বুঝে নেওয়া– দুটি বিষয়কেই আমি গুরুত্ব দিয়েছি।’
বুনন-বয়ন
শান্তার দাবি, ‘হাত-তাঁতের কাপড়ের প্রতি আমার বিশেষ টান আছে। জুট, কটন, এন্ডিসিল্ক, মসলিন আর খাদিতে আমার ভীষণ আগ্রহ! এর কারণ প্রধানত চারটি– প্রাকৃতিক রঙে সহজে রাঙানো যায়, আরামদায়ক, ইকো ফ্রেন্ডলি এবং আনকোরা।’
প্রোডাক্ট লাইন
‘টপ আর বটম– দুটি নিয়েই কাজ করি আমি। নকশা করার ক্ষেত্রে চেষ্টা করি আন্তর্জাতিক ফ্যাশনের প্রতিফলন ঘটাতে। মূলত বর্তমান সময়ের চাহিদাকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকি। প্যান্ট, শার্ট, স্কার্ট, টপস, কো-অরডিনেটেড ড্রেস, স্কার্ফ, লং কোট, টুপি, শ্রাগ ইত্যাদি সব-ই থাকে আমার আয়োজনে,’ বলেছেন এই নকশাকার।
উৎসব নাকি ঋতু
শান্তা কবিরের ভাষ্য, ‘আমি পুরো বছরের জন্যে কাজ করি। কোনো উৎসব কিংবা ঋতু কখনোই আমার সংগ্রহের মূল কেন্দ্রবিন্দু নয়। আমার বেশির ভাগ কাজ সুতার বুননে তৈরি, যা এ দেশের মানুষের জন্যে সারা বছরই ব্যবহার উপযোগী। আজুরা তাই কোনো উৎসব কিংবা ঋতুর সঙ্গে বাঁধা পড়ে না। ক্রেতাদের জন্য উপযুক্ত পোশাক তৈরির চেষ্টা থাকে সব সময়।’
ক্রেতা সন্তুষ্টি
‘আজুরার কাছে ক্রেতা-সন্তুষ্টি সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আয়ের উৎস তারাই। এই ব্র্যান্ড সংশ্লিষ্ট সকলে মজুরি নির্ভরশীল। ক্রেতার কাছ থেকেই সেটা পাওয়া যায়। তাই ক্রেতা-সন্তুষ্টি এবং আরাম আজুরার কাছে সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ,’ দাবি শান্তার।
প্রাকৃতিক রং
শান্তা বলেন, ‘প্রাকৃতিক রং আমার কাছে পুরাটাই জাদুর মতো। যেখানে প্রত্যেকটা শেড আমাকে বিভিন্নভাবে মুগ্ধ করেছে। সৃজনশীলতা এখানে মুখ্য। নান্দনিক নকশা, রঙের বিন্যাস তৈরিতে শিল্পী মনের কারসাজি আবশ্যক। আমার কাছে তাই প্রাকৃতিক রং একটি জাদুর বাক্স। এক-একটি রং আমাকে এক-এক জগৎ ঘুরিয়ে আনে।’
আগ্রহ থেকে আস্বাদন
‘আমার কাছে ফ্যাশনের মানে নিজেকে নতুন করে প্রতি মুহূর্তে সাজিয়ে নেওয়া। আমি মনে করি, পৃথিবীর সমস্ত মানুষের সঙ্গে সহজ যোগাযোগমাধ্যম ফ্যাশন অ্যাকটিভিটি । এসব ভেবে আমি আগ্রহী হয়েছি রঙিন এই দুনিয়ার রহস্য আস্বাদনে,’ বলেন শান্তা।
উৎসাহে-অনুপ্রেরণায়
শান্তার ভাষ্য, ‘আজুরা নিয়ে আমার যাত্রা দীর্ঘ ২৪ বছরের। এই সময়ে আমার বাবা-মা, জীবনসঙ্গী আর তিন সন্তান আমাকে উৎসাহিত করেছে কাজে। আমি সাহস পেয়েছি স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে।’
দর্শন
‘আজুরাই আমার ইকিগাই। আমার পারপাস অব লাইফ। আমার সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষগুলোর জীবিকা আমার উছিলায় । আমার পোশাক পরে মানুষ তার ফ্যাশন ও স্টাইলকে আরও সমৃদ্ধ করবে এটাই আমার আনন্দ,’ বলেছেন তিনি।
- সারাহ্ দীনা/ক্যানভাস অনলাইন
ছবি: শান্তা কবিরের সৌজন্যে